আল্লাহ কে, কি তার পরিচয় ঃ-
মুসলিম ধর্ম অনুযায়ী আল্লাহ হচ্ছে তাদের সৃষ্টিকর্তা। যিনি আঠারো হাজার মাখলুকাত সৃষ্টি করছে ।তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ জীব হিসাবে মানুষকে ঘোষণা করেন।তিনি হচ্ছে সমগ্র পৃথিবী এবং মাখলুকের স্রষ্টা ।যে প্রকৃতি সম্পন্ন হওয়ার জন্য কোন সত্তাকে আল্লাহ্ বলে গণ্য করতে হবে তাঁর প্রথম পরিচয় হল সেই সত্তার অবশ্যই সৃষ্টি করার যোগ্যতা থাকতে হবে। “সূরা ৯৬, আয়াত ১”।
তবে একজন মানুষ যখন প্রকৃতির কোন জিনিসের সহযোগিতায় কোন যন্ত্র তৈরি করেন তখন তাঁকে স্রষ্টা (Creator) বলা যায় না। বরং তিনি একজন আবিস্কারক (Inventor)। স্রষ্টার গুণসম্পন্ন তাঁকেই বলা যাবে যিনি কোন কিছুর সাহায্য ছাড়া যখন খুশী, যেমন খুশী, যেভাবে খুশী, যা খুশী, তা সৃষ্টি করতে পারবেন। সেদিক থেকে আল্লাহ্ই একমাত্র সৃষ্টিকর্তা।আল্লাহ্ কুরআনে বলেন, 57:1
Whatever is in the heavens and earth exalts Allah, and He is the Exalted in Might, the Wise.
57:2
His is the dominion of the heavens and earth. He gives life and causes death, and He is over all things competent.
57:3
He is the First and the Last, the Ascendant and the Intimate, and He is, of all things, Knowing.
তিনি আরও বলেন “নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ্। নভোমন্ডল ও ভূম-লকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। “... শুনে রেখ, তাঁরই কাজ সৃষ্টি করা ও আদেশ দান করা।” “সূরা ৭, আয়াত ৫৮”।
কুরআন অন্যত্র বলা হচ্ছে, “আল্লাহ্ সব কিছুরই স্রষ্টা এবং তিনি সবকিছুর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।” “সূরা ৩৯, আয়াত ৬২”।
বলা বাহুল্য, সৃষ্টিকর্মে আল্লাহ্ কোন সহযোগিতা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। শুধু ইচ্ছা হলেই তিনি তৎক্ষণাৎ কোন কিছু সৃষ্টি করতে সক্ষম।” “সূরা ১৬, আয়াত ৪০”।
যিনি স্রষ্টা হবে তিনি সৃষ্টি করেই ক্ষান্ত হবেন না। তিনি সৃষ্টির জণ্য নির্ভূল বিধান প্রণয়ন করার ক্ষমতা রাখবেন। তাইত কুরআনে বলা হচ্ছে, “আমি বললাম, তোমরা সবাই এখান থেকে নেমে যাও। এরপর যখন আমার পক্ষ থেকে কোন হিদায়াতের বিধান তোমাদের কাছে পৌছাবে তখন যারা সেই বিধানের অণুসরণ করবে তাদের জন্য থাকবে না কোন ভয়, দুঃখ বেদনা।” “সূরা ২, আয়াত ৩৮”।
আল্লাহ্কে অবশ্যই স্বয়ম্ভূ ও চিরন্তর হতে হবে। অর্থাৎ তাকে অবশ্যই তার নিজের অস্তিত্বের কারণ হতে হবে। তাঁর অস্তিত্ব কারও উপর নির্ভর করবে না। “সূরা ১১২,; সূরা ৫৭, আয়াত ৩”।
আল্লাহ্ অবশ্যই এই জগতের উপর আধিপত্য থাকতে হবে, তাঁকে সর্বস্থানে বিদ্যমান থাকতে হবে এবং প্রত্যেক পুঙ্খানুপুঙ্খ বিষয় সম্পর্কে তাঁকে অবশ্যই অবগত থাকতে হবে। “সূরা ৩, আয়াত ১৮৯; সূরা ৮৫, আয়াত ১৬; সূরা ৪, আয়াত ২৬; সূরা ২, আয়াত ১১৫; সূরা ৪, আয়াত ১১”।
তাঁকে অবশ্যই পূর্ণাঙ্গ বিচক্ষণতা তথা প্রজ্ঞার অধিকারী হতে হবে যাতে তিনি মানুষের সব ধরণের কর্মকা- বিশেষ করে নৈতিক কর্মের নির্ভূল পথ প্রদর্শন করতে সক্ষম হন। “সূরা ৪৫, আয়াত ৩৭; সূরা ৭৬, আয়াত ৩০”।
তাকে হতে হবে সকল দোষত্রুটি, দুর্বলতা ও অক্ষমতা থেকে মুক্ত। “সূরা ১২, আয়াত ১০৮; সূরা ৩৭, আয়াত ৮০”।
জীবন ও মৃত্যু থাকবে তাঁরই করায়ত্বে। “সূরা ৭, আয়াত ১৫৮; সূরা ৯, আয়াত ১১৬”।
وْ أَرَادَ اللَّهُ أَنْ يَتَّخِذَ وَلَدًا لَاصْطَفَى مِمَّا يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ سُبْحَانَهُ هُوَ اللَّهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ39.4 আরবি উচ্চারণ ৩৯.৪। লাও আর-দাল্লা-হু আইঁ ইয়াত্তাখিযা অলাদাল্ লাছ্ত্বোয়াফা- মিম্মা-ইয়াখ্লুকু মা-ইয়াশা-য়ু সুব্হা-নাহ্; হুওয়া ল্লা-হুল্ ওয়া-হিদুল্ ক্বহ্হার্-। বাংলা অনুবাদ ৩৯.৪ আল্লাহ যদি সন্তান গ্রহণ করতে চাইতেন, তাহলে তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তা থেকে যাকে ইচ্ছা বেছে নিতেন; কিন্তু তিনি পবিত্র মহান। তিনিই আল্লাহ, তিনি এক, প্রবল পরাক্রান্ত।
যদি কোন স্রষ্টাকে অন্য কেউ সৃষ্টি করার দরকার হয় তবে ঐ স্রষ্টা আর স্রষ্টা থাকেনা তা সৃষ্টিতে রুপান্তরিত হয়, কেননা স্রষ্টা সৃষ্টি করে তাই তাঁকে স্রষ্টা বলা। তাই স্রষ্টার যদি কোন সৃষ্টিকর্তার দরকার হয় তবে তা মূলত ‘স্রষ্টার ডেফিনেশন’ এর সাথেই সাংঘর্ষিক।
যেমন কোন ‘পুরুষকে’ যদি প্রশ্ন করা হয় সে কতগুলো সন্তান প্রসব করেছে তবে তা অযৌক্তিক হবে। এবং কেউ যদি এই প্রশ্ন করে তবে তাকে পাগল বলা হবে কিংবা ব্রেইনলেস বলা হবে, কারণ পুরুষের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সে কখনো সন্তান প্রসব করেনা। যে সন্তান প্রসব করে সে পুরুষ নয়। সন্তান জন্ম দেয়ার জন্য নারীর দরকার হয়। স্রষ্টারও কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। তার মধ্যে একটা হচ্ছে স্রষ্টা (creator) এমন কেউ যে নিজে সৃষ্ট নয় (uncreated)। তাই স্রষ্টার ক্ষেত্রে তাঁর সৃষ্টিকর্তা কে এই প্রশ্ন করাটাই অযৌক্তিক কারণ এই প্রশ্ন স্রষ্টার ডেফিনেশন এর সাথেই সাংঘর্ষিক।সুরা আল- জ্বিন এর আয়াত : ৩ এ বলা হয়েছে, "And exalted be the Majesty of our Lord, He has taken neither a wife, nor a son (or offspring or children)" অর্থাত "এবং আরও বিশ্বাস করি যে, আমাদের পালনকর্তার মহান মর্যাদা সবার উর্ধে। তিনি কোন পত্নী গ্রহণ করেননি এবং তার কোন সন্তান নেই।" এখন প্রশ্ন হলো, "আল্লাহ কি পুরুষ?"
আল্লাহ পুরুষ নন, আবার নারীও নন- সকল লিঙ্গের ঊর্ধ্বে তিনি; কিন্তু , আমরা ইংরেজীতে তাঁকে লিখতে হলে সর্বনামের স্থানে HIS ব্যাবহার করি কেননা তাকে ক্ষমতাধর এবং শক্তিশালী হিসেবে গণ্য করা হয় আর সকল শক্তিশালী শব্দকেই HIS দ্বারা সম্বোধন করা হয়ে থাকে। আল্লাহ এক, অদ্বিতীয়- কোনো প্রোটোটাইপ পাবেন না; ইংরেজী অনুবাদের কারণে কিছুটা সমস্যা হয়- কারণ অদ্বৈত কোনো সত্বাকে উনি বা তিনি সম্বোধনে বোঝানো যায়- ইংরেজিতে His বা Her লাগে; আরবিতে সেটা শুধুই আল্লাহ।
ঐ আয়াতের আগে-পিছের কথা দেখলে অনেক কিছু পরিস্কার হবে, ঐ আয়াতটি আল্লাহর উক্তি নয়, বরং তা জ্বিনদের কথোপকথন। আসলে বাংলায় কোরানের যেসব অনুবাদ সহজলভ্য তার বেশিরভাগই অজস্র ভুলে ভরা।
'পত্নী' যেই শব্দটার অনুবাদ, সেটা আরবীতে পুরুষ এবং মহিলা দুজনকেই বুঝাতে ব্যবহৃত হয়। সত্যি যদি কোরান বুঝতে চান, তাহলে অনুরোধ করব আগে শুদ্ধ এরাবিক ল্যাংগুয়েজ জানুন, তারপর পড়ুন এবং তারপর প্রশ্ন করুন।]উপদেশ মেনে, আরবী ভাষা নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করছিলাম। কিন্তু, এতে আরো প্যাঁচের মধ্যে পড়লাম!! আশা করি, আপনারা যারা অনেক পড়েছেন, শুদ্ধ আরবী ভাষা সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখেন- তাঁরা হয়তো এই প্যাঁচ কাটাতে পারবেন।শুদ্ধ অনুবাদ নিয়ে যেহেতু প্রশ্ন উঠেছে, সেহেতু- বাজারে পাওয়া যায় এমন প্রায় ৭/৮ টি অনুবাদ পাশাপাশি দেখলাম, নেটে প্রাপ্ত অনুবাদও দেখলাম; সবকটিতেই পেলাম- তিনি স্ত্রী/পত্নী/সহচরী গ্রহণ করেননি বা He has taken neither a wife.....। বুঝলাম না, ভাবলাম শব্দটি সম্পর্কে একটু অনুসন্ধান চালাই। যে শব্দের বাংলা অনুবাদ করা হয়েছে স্ত্রী/পত্নী- সেটি হচ্ছে আরবী সাহিবাত, তিনটি ডিকশনারি (আরবী-বাংলা, আরবী-ইংরেজী) ঘেটে পেলাম- স্ত্রী, বান্ধবী, কর্ত্রী, ওয়ালী, অধিকারিণী, wife প্রভৃতি স্ত্রীবাচক শব্দ। আরো কনফিউজড হয়ে গেলাম।
ভাবলাম- আরবী ব্যকরণটি দেখি। এ শাখাটি আলোচিত হয়, ইলমুস সরফ বা মিজানুস সরফ ও মুনশায়িব গ্রন্থে। সেটি ঘেটে দেখলাম আরবী ভাষায়- ক্রিয়াটি(ফি'ল) শুধু কালের উপর নির্ভরশীল নয়, বরং তা কর্তার পুরুষ(নাম, মধ্যম, ও উত্তম), লিঙ্গ(পুং ও স্ত্রী), বচন(এক, দ্বি ও বহু)- এসবের উপরও নির্ভরশীল। এসব ভেদে ফি'ল এর বিভিন্ন রূপকে বলে সীগা। নামপুরুষ, একবচন পুং লিঙ্গ ও স্ত্রী লিঙ্গের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। একটি উদাহরণ দেই, অতীত কাল(ফি'লে মাজি), নামপুরুষ, একবচন, পুং লিঙ্গ একটি শব্দ নাসারা (সে (পুং) সাহায্য করলো), স্ত্রীলিঙ্গ হলে হয়ে যাবে, নাসারাত (সে (স্ত্রী) সাহায্য করলো)। অতীত কালে না বোধক বোঝাতে সামনে চলে আসবে মা। মা নাসারা বা মা নাসারাত মানে সে সাহায্য করেনি, যথাক্রমে পুং ও স্ত্রী লিঙ্গ বুঝাবে।
আলোচ্য সুরা আল-জ্বিন সুরা ৩ নং আয়াতের ক্রিয়াটি হচ্ছে, গ্রহণ করেননি। আরবীতে মা'ত্তাখাজা। এটির ক্রিয়া পদটি অতীত কালের একবচন, নাম পুরুষ, পুং লিঙ্গ না-বোধক এর সীগার অনুরূপ। স্ত্রীবাচক সীগাটি হবে, মা'ত্তাখাজাত।
তিনি আমাদের সব ধারণা-কল্পনার উর্ধ্বে। তাঁকে আমাদের পরিচিত কোন কিছু দিয়ে তুলনা করতে গিয়েই ভুল করে কিছু মানুষ। "অথচ তিনিই তাদের সৃষ্টিকর্তা। আর না জেনে না বুঝে তারা তাঁর জন্য পুত্র-কন্যা নির্দিষ্ট করে। তিনি তাঁর সম্পর্কে এরা যা বর্ণনা করে তা থেকে পবিত্র।" [আন'আম, ৬/১০০] "আল্লাহ্ কাউকে তাঁর সন্তান বানাননি আর দ্বীতিয় কোন খোদাও তাঁর সাথে শরীক নেই। যদি তা-ই হতো তবে এরা প্রত্যেকেই নিজের সৃষ্টি নিয়ে আলাদা হয়ে যেত এবং তারপর একে অন্যের উপর চড়াও হতো। মহান আল্লাহ পবিত্র এসব কথা থেকে যা এই লোকেরা তাঁর সম্পর্কে বলে।" (মু'মিনুন, ২৩/৯১)। "তোমার রব্ব, যিনি ইজ্জত-সম্মানের মালিক, পবিত্র সে সব বর্ণনা থেকে যা এরা তাঁর সম্পর্কে করে থাকে।" [আস-সাফফাত, ৩৭/১৮০]
তিনি মানুষের পরিচিত কোন কিছুর মত নন। তাঁর সত্ত্বা তাঁর সমস্ত সৃষ্টি থেকে আলাদা। আমরা তাঁর সত্ত্বা সম্পর্কে কোন ধারণা করতে পারিনা। লিঙ্গের ধারণা তাঁর সৃষ্টির জন্যই প্রযোজ্য, তাঁর জন্য নয়। আর তিনিই এই লিঙ্গভেদ সৃষ্টি করেছেন তাঁর সৃষ্টির মাঝে নিজের অসীম প্রজ্ঞা বলে। এজন্য তিনি তাঁর রসূলকে (সঃ) বলতে নির্দেশ দিচ্ছেন একথা বলার জন্য যে, "তোমাদের মাঝে যে ব্যাপারে মতভেদের সৃষ্টি হয়, তার ফয়সালা করা আল্লাহ্রই কাজ। সে আল্লাহ্ই আমার রব্ব, আমি তাঁর উপরই ভরসা করেছি এবং তাঁর দিকেই মনোনিবেশ করছি। [তিনি] আকাশমন্ডল ও জ়মীন সৃষ্টিকারী; তিনি তোমাদের নিজস্ব প্রজাতির মধ্য থেকে তোমাদের জন্য জুড়ি (স্ত্রী-পুরুষ) বানিয়েছেন এবং জন্তু-জানোয়ারের মাঝেও (তাদেরই নিজস্ব প্রজাতির) জুড়ি বানিয়ে দিয়েছেন; আর এভাবেই তিনি তোমাদের বংশবৃদ্ধি ও বিস্তার ঘটান। বিশ্বলোকের কোন কিছুতেই তাঁর সাযুজ্য নেই; আর তিনি সব কিছু শুনেন এবং দেখেন।" [আস-শূরা, ৪২/১০-১১]
কোরআনের অন্যান্য আয়াতসমূহেও (সব এখনও দেখতে পারিনি) দেখলাম, আল্লাহকে কেন্দ্র করে যত ক্রিয়া আছে - তাতে পুং লিঙ্গ এর সীগা অনুসরণ করা হয়েছে।
“আল্লাহই হচ্ছেন সব কিছুর (একক) স্রষ্টা” (আল-কোরআন ৩৯:৬২)
“আল্লাহ তা’আলাই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন” (আল-কোরআন ৩৭:৯৬)
এখানে স্রষ্টা আর সৃষ্টির ক্ষেত্রে পার্থক্য নির্ণয় জরুরি। স্রষ্টা ‘সৃষ্ট’ নন এবং সৃষ্টি ‘স্রষ্টা’ নয়। কোরআন বলছে, আল্লাহ ‘সবকিছু’র সৃষ্টি কর্তা, মানে সকল সৃষ্ট বস্তুর, সৃষ্ট মানে যার সৃষ্টির দরকার, যেমন-মানুষ, পাহাড়-পর্বত। আর আল্লাহ সৃষ্ট নয় তিনি স্রষ্টা, তাই তাঁর সম্পর্কে ‘সৃষ্ট’ শব্দটাই প্রযোজ্য নয়।
আল্লাহ্ নিজেই নিজের পরিচয় দিয়েছেন কুর'আনের বিভিন্ন জায়গায়। এখানে আমি কয়েকটা উদ্ধৃত করছি।
"[হে রসূল] আপনি বলুন, "আল্লাহ্ এক ও অদ্বীতিয়। আল্লাহ্ সব ধরণের অভাব মুক্ত। তিনি [সন্তান] জন্ম দেননা এবং [সন্তান হয়ে] জন্মও নেননি। তাঁর সাথে তুলনা করার মতও কেউ নেই"। [কুরআন, ১১২/১-৪]
"আল্লাহ্ হচ্ছেন সেই সত্ত্বা যিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ্ নেই। তিনি চিরঞ্জীব ও শাশ্বত-সুপ্রতিষ্ঠিত সত্ত্বা। তন্দ্রা ও নিদ্রা তাঁকে স্পর্শ করেনা। আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা সবই তাঁর। কে আছে এমন যে তাঁর দরবারে তাঁর অনুমতি ব্যতীত সুপারিশ করতে পারে? তাদের [তাঁর বান্দাহদের] সামনে এবং পেছনে যা আছে তা সবই তাঁর জানা। তাঁর জ্ঞাত বিষয়সমূহের মধ্য হতে কোন বিষয়ই তারা [তাঁর বান্দারা] আয়ত্ত্বাধীন করতে পারেনা, শধু তা ছাড়া যা তিনি নিজেই ইচ্ছে করে জানান। তার কুরসী [সাম্রাজ্য] সমগ্র আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীকে বেস্টন করে আছে। আর এসবের রক্ষণাবেক্ষণ করতে গিয়ে তিনি কখনো ক্লান্ত হয়ে পড়েন না। বস্তুতঃ তিনি এক মহান-সুউচ্চ শ্রেষ্ঠতম সত্ত্বা।" (বাকারা, ২/২৫৫)
"বরকতময় হচ্ছেন সেই সত্ত্বা যার হাতে রয়েছে সমস্ত রাজত্ব-কর্তৃত্ব। আর তিনি প্রতিটি বিষয়ের উপরই কর্তৃত্ববান। তিনিই মৃত্যু এবং জীবন সৃষ্টি করেছেন যাতে করে তিনি তোমাদের মধ্যে কারা সৎকর্মশীল তা যাচাই করে দেখতে পারেন। তিনি সর্বজয়ী-শক্তিমান এবং অত্যন্ত ক্ষমাশীল।" [মুল্ক, ৬৭/১-২]
"আল্লাহ্ আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর নূর"। [আন-নূর, ২৪/৩৫]
"তিনি-ই প্রথম, তিনি-ই শেষ। তিনি প্রকাশমান আবার তিনি গুপ্তও। আর তিনি প্রতিটি বিষয়ে অবহিত।" [আল-হাদীদ, ৫৭/৩]
"পূর্ব ও পশ্চিম সবই আল্লাহ্র। তুমি যেদিকেই মুখ ফিরাবে সেদিকেই রয়েছে আল্লাহ্র চেহরা। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ বিশালতার অধিকারী ও সর্বজ্ঞ।" [আল-বাকারা, ২/১১৫]
"আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা সবই আল্লাহ্র। আর আল্লাহ্ সব কিছুকে বেস্টন করে আছেন।" [আন-নিসা, ৪/১২৬]
"তিনি-ই আল্লাহ্; তিনি ছাড়া আর কোন মা'বূদ নেই; গোপন ও প্রকাশ্য সব কিছুই তিনি জানেন; তিনি রহমান ও রহীম। তিনি-ই আল্লাহ্ যিনি ছাড়া আর কোন মা'বূদ নেই; তিনি সব ভুল-ত্রুটির উর্ধ্বে থাকা সার্বভৌমত্বের অধিকারী [বাদশাহ্]; পুরোপুরি শান্তি-নিরাপত্তা; শান্তি-নিরাপত্তা দাতা; সংরক্ষক; সর্বজয়ী, নিজের নির্দেশ বিধান শক্তি প্রয়োগে কার্যকরকারী এবং স্বয়ং বড়ত্ব গ্রহনকারী। লোকেরা তার সাথে আর যে সমস্ত সত্ত্বাকে অংশীদার করে তিনি তা থেকে মুক্ত ও পবিত্র। তিনি আল্লাহ্ই যিনি সৃষ্টি পরিকল্পনাকারী ও এর বাস্তব রূপদানকারী এবং সে অনুযায়ী আকার-আকৃতি রচনাকারী। তাঁর জন্যই উত্তম নামসমূহ্। আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সব কিছুই তাঁর প্রশংসা করে; আর তিনি মহা পরাক্রান্ত ও অতীব প্রজ্ঞাময়।" [আল-হাশর, ৫৯/২২-২৪]
"তাঁর অসংখ্য নিদর্শনের মধ্যে এও রয়েছে যে, আকাশ এবং পৃথিবী তাঁরই হুকুমে সুপ্রতিষ্ঠিত রয়েছে। পরে যখনই তিনি তোমাদেরকে মাটি হতে আহবান করবেন, তখন শুধুমাত্র একটি আহবানেই তোমরা বের হয়ে আসবে। আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা সবই তাঁর বান্দাহ্। সবকিছুই তাঁর নির্দেশের অধীন। তিনিই সৃষ্টির সূচনা করেন আবার তিনিই এর পূনারাবৃত্তি করবেন। আর এটা করা তাঁর পক্ষে সহজতর। আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীতে তাঁর জন্যই রয়েছে সর্বোত্তম গুনাবলী। তিনি মহাপরাক্রমশালী ও সুবিজ্ঞ।" [আর-রূম, ৩০/২৫-২৭]
মহান আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর প্রজ্ঞাময় কিতাবে নিজের সম্পর্কে আরো বিবৃত করেছেন অনেকভাবে। আল্লাহ্ র বর্ণনা করা এ গুণগুলো তাঁর বিরাটত্ব ও মহানত্বেরই দিক নির্দেশনা দেয়। মানুষের ক্ষুদ্র জ্ঞান ও বুদ্ধিতে তাঁর বিরাট সত্ত্বা সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা তৈরী করা সম্ভব নয়। তিনি মহাবিশ্ব এবং এর মাঝে যা আছে তাঁর স্রষ্টা ও নিয়ন্ত্রনকারী।
প্রভুকে চেনার কষ্টিপাথরঃ-
কষ্টিপাথর হচ্ছে এমন একটি পাথর যার দ্বারা সোনা চিহ্নিত করা যায় । তেমনি আল্লাহ কে যাচাই করার কষ্টিপাথর হচ্ছে সূরাতুল ইখলাস ।قُلۡ هُوَ اللّٰہُ اَحَدٌ
اَللّٰہُ الصَّمَدُ
لَمۡ یَلِدۡۙ وَ لَمۡ یُوۡلَدۡ
وَ لَمۡ یَکُنۡ لَّہٗ کُفُوًا اَحَدٌ
কু’ল হুয়া ল্লা-হু আহাদ ৷
আল্লা-হু স্সামাদ ৷
লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইয়ুলাদ ৷
ওয়া লাম ইয়াকু ল-লাহু কুফুওয়ান আহাদ!
বলো, তিনিই আল্লাহ্, অদ্বিতীয়!
আল্লাহ অমুখাপেক্ষী ।
তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি।
তাঁর সমকক্ষ আর কিছুই নেই!
তাছাড়া তিনি তার সম্পর্কে সুরাতুল বাকারা 255 নাম্বার আয়াতে বর্ণনা করেন ঃاللّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلاَ نَوْمٌ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَاء وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ وَلاَ يَؤُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيم
আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বইয়্যুম লা তা’খুজুহু সিনাত্যু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিসসামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্। মান যাল্লাযী ইয়াস ফায়ু ইন দাহু ইল্লা বি ইজনিহি ইয়া লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খল ফাহুম ওয়ালা ইউ হিতুনা বিশাই ইম্ মিন ইল্ মিহি ইল্লা বিমা সাআ ওয়াসিয়া কুরসি ইউহুস সামা ওয়াতি ওয়াল আরদ্ ওয়ালা ইয়া উদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলিয়্যূল আজীম।
আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোনো কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।[২৫৫]সুরাতুল বাকারা
হিন্দু ধর্মের বেদে ঈশ্বরের পরিচয় ঃ
হিন্দু ধর্মগ্রন্থে সবখানেই আছে স্রষ্টার একেশ্বরবাদের কথা। জাকির নায়েকের দেয়া রেফারেন্স ছাড়াও আরো অনেক পাওয়া যাবে যেমন,
যজুর্বেদ ৪০.১: এই সমস্ত বিশ্ব শুধু মাত্র একজন ঈশ্বর দ্বারা সৃষ্টি ও পরিচালিত হচ্ছে।
যজুর্বেদ ১৩.৪: সমগ্র বিশ্বে শুধু একজনই হর্তাকর্তা রয়েছেন। শুধুমাত্র তিনিই পৃথিবী, আকাশ, এবং অন্যান্য সত্ত্বাকে ধারণ করেন। তিনি নিজেই পরম সুখী! তিনিই শুধু মাত্র! তিনিই আমাদের দ্বারা উপাসিত হবেন।
অথর্ববেদ ১৩.৪.১৬-২১: তিনি না দুই, না তিন, না চার, না পাঁচ, না ছয়, এমনকি না সাত, না আট, না নয়, না দশ। তিনি একজন এবং শুধুই একজন। তিনি ছাড়া অন্য কেউ ঈশ্বর নন।
কিন্তু এখন সেই একজন কে? তার নাম কি? তাকে আমরা কি বলে ডাকবো ? তার নামও রয়েছে বেদে,
Yajur veda 40:17, সেই সর্বব্যাপি সৃষ্টিকর্তার নাম 'ॐ;(ওম)
MANDUK UPANISHAD 1:1. সকল বেদ ও শাস্ত্রেই তার নাম 'ॐ;(ওম)
গীতা ১৭/২৪-২৫, "পরমাত্তাই 'ॐ;(ওম) ও তার নাম জপ কর"
KATH UPANISHAD 7:15 যার কাছে সমস্ত জ্ঞান ও সৎ কর্ম পরিচালিত, সেই স্রষ্টার নাম ॐ (ওম) এরকম আরো বহু রেফারেন্স আছে যে 'ॐ;(ওম) ই সৃষ্টিকর্তা।
এবার আসুন দেখি এই ॐ;(ওম) কি এবং কেন? বেদ বিশেষজ্ঞরাও এই নামকে Proper Noun হিসেবেই ব্যাখ্যা করেন অর্থাৎ যার কোন অনুবাদ হয় না। বেদে ব্রক্ষ্মা, শীব, বিষ্ণু নামে যে ঈশ্বরের ত্রিত্তবাদ পাওয়া যায় তা মূলত এই ঈশ্বরেরই তিনটি গুণ যথাক্রমে ব্রক্ষ্মা= সৃষ্টিকর্তা, বিষ্ণু= পালনকর্তা, শিব= ধ্বংসকর্তা। এগুলো প্রপার নাম নয় বরং এগুলো অর্থ ও গুনবাচক নাম। কিন্তু সেই একজনের মূল নাম লেখা হয়েছে ॐ;(ওম) যার কোন অর্থ নেই ও যার অনুবাদও সম্ভব নয়।
বাইবেল ঈশ্বরের পরিচয় ঃ
সেখানে কত দেবতা আছে?
হিব্রু শাস্ত্রগুলি কখনও কখনও দাবি করে যে কেবল এক ঈশ্বর আছে, এবং কখনও কখনও প্রভু অনেক দেবতাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। নিউ টেস্টামেন্টে বিষয়গুলো আরও বিভ্রান্তিকর হয়ে পড়ে, যেখানে যিশু এবং পবিত্র আত্মাকে ঈশ্বর হিসাবেও উল্লেখ করা হয়। "পার্থক্য ট্রিনিটি" ধারণাটি এই দ্বন্দ্বটির সমাধান করার জন্য তৈরি হয়েছিল, কিন্তু পিতার, পুত্র এবং পবিত্র আত্মা আজ খ্রিস্টানদের বিভক্ত করতে থাকেন।
কেবল এক ঈশ্বর আছে.
তোমার কাছে এটা প্রকাশিত হয়েছিল, যেন তুমি জানতে পার যে, তিনিই আল্লাহ্। তার পাশে অন্য কেউ নেই। দ্বিতীয় বিবরণ 4:35
তিনি স্বর্গের উপরে ও নীচে পৃথিবীতে ঈশ্বর, তিনি ছাড়া আর কেউ নেই। দ্বিতীয় বিবরণ 4:39
হে ইস্রায়েল, হে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু! দ্বিতীয় বিবরণ 6: 4
এখন দেখো যে, আমিও তিনি, আর আমার কোন উপাস্য নেই। দ্বিতীয় বিবরণ 3২:39
প্রভু, তিনি ঈশ্বর হয়; প্রভু, তিনি ঈশ্বর। 1 রাজাবলি 18:39
আমিই তিনি, আমার আগে কোন ঈশ্বরই ছিলেন না, আমার পরেও সেখানে থাকবে না। যিশাইয় 43:10
আমিই সদাপ্রভু, আর আর কেউ নেই ... আমার পাশে কেউ নেই। আমিই সদাপ্রভু, আর অন্য কেউ নেই। ইশাইয়া 44: 8
আমিই প্রভু, আর অন্য কেউ নেই, আমার পাশে কোন ঈশ্বর নেই। যিশাইয় 45: 5-6
আমার পাশে আর কোন ঈশ্বর নেই ... আমার পাশে কেউ নেই। যিশাইয় 45:২1
আমিই আল্লাহ্, আর অন্য কেউ নেই; আমিই আল্লাহ্, আর আমার মত আর কেউ নেই। যিশাইয় 46: 9
প্রভু আমাদের ঈশ্বর এক পালনকর্তা। মার্ক 12:29
এক ঈশ্বর আছে; এবং তিনি ছাড়া অন্য কেউ নেই। মার্ক 12:32
যাতে তারা আপনাকে একমাত্র সত্য ঈশ্বর জানতে পারে। জন 17: 3
কিন্তু আমাদের কাছে কেবল এক ঈশ্বর, পিতা, যাঁর মধ্যে সব কিছু, এবং আমরা তাঁর মধ্যে। 1 করিন্থীয় 8: 6
Deuteronomy 6:4 Or The Lord our God is one Lord; or The Lord is our God, the Lord is one; or The Lord is our God, the Lord alone
Subscribe to:
Comments (Atom)
কোরআনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
০১) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনুল কারীমে কতটি সূরা আছে? উত্তরঃ ১১৪টি। ০২) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের প্রথম সূরার নাম কি? উত্তরঃ সূরা ফাতিহা। ০৩) প্রশ্ন...
-
ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) ছিলেন হযরত নূহ (আঃ)-এর সম্ভবত: এগারোতম অধঃস্তন পুরুষ। নূহ থেকে ইবরাহীম পর্যন্ত প্রায় ২০০০ বছরের ব্যবধান ছিল। হযরত ছা...
-
০১) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনুল কারীমে কতটি সূরা আছে? উত্তরঃ ১১৪টি। ০২) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের প্রথম সূরার নাম কি? উত্তরঃ সূরা ফাতিহা। ০৩) প্রশ্ন...