Monday, 27 January 2020

হজ্জ ও উমরাহর হজ্জের নিয়ম

★হজ্জ ফরজ হওয়ার শর্ত:

পবিত্র হজ্জ ইসলামের মহান একটি রূকন বা স্তম্ভ। আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজীদে পরিস্কার ভাষায় সামর্থবান মুসলিম নর-নারীর উপরে জীবনে একবার এ মহান ইবাদতটি ফরয করে দিয়েছেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন: “এবং সামর্থ্যবান মানুষের উপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ্জ করা ফরয। আর যে ব্যক্তি কুফরী করে, তবে আল্লাহ তো নিশ্চয় সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী।”
[সূরা আলে ইমরান-৯৭]

আর্থিক সামর্থ। অর্থাৎ পরিবার-পরিজন, চাকর-বাকরদের ভরণপোষণ নিশ্চিত করে কোন ব্যক্তির নিকট হজ্জে যাওয়া-আসা ও পাথেয় খরচ থাকলে তার উপর হজ্জ ফরয। বাসস্থান, প্রয়োজনীয় গৃহসামগ্রী, পোষাক-পরিচ্ছদ, ব্যবহৃত বাহন, পরিবার-পরিজন, চাকর-বাকরের যাবতীয় ব্যয় চালনার জন্য ন্যূনতম কৃষিজমি অথবা ন্যূনতম ব্যবসা অথবা চাকুরীর পর অতিরিক্ত যে স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি থাকে তা থেকে হজ্জের ব্যয় নির্বাহ সম্ভব হলেই হজ্জ ফরয হবে।

হজ্জের মাধ্যমে মু’মিনদের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সৌভাগ্যের দুয়ার খুলে যায়। ইহরাম গায়ে হাজীর লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক (আমি আপনার দরবারে হাজির হে আল্লাহ আমি হাজির) ধ্বনি মূলতঃ আল্লাহর নির্দেশিত ইবরাহীম (আঃ)-এর আহবানের সাড়া দিয়ে এগিয়ে যাওয়া।

আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেন- এবং (হে ইবরাহীম) মানুষের মধ্যে হজ্জের ঘোষণা দাও। তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সকল প্রকার কৃশকায় উটের পিঠে চড়ে দূর-দূরান্ত থেকে (সূরা হজ্জ, আয়াত-২৭)
এরপরই আল্লাহ ঘোষণা দেন – তাদের এ আগমন হবে যেন তারা তাদের কল্যাণের স্থানে পৌঁছে। (সুরা হজ্জ, আয়াত-২৮)

এ আয়াতে হজ্জের ব্যাপক উপকারিতার প্রতি ঈঙ্গিত করা হয়েছে।
বায়তুল্লাহ শরীফের হজ্জ আদায় করা ইসলামের অন্যতম একটি রুকন ও মূল ভিত্তি। দলীল হচ্ছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী:
“ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। এই সাক্ষ্য দেয়া যে, নেই কোন সত্য উপাস্য শুধু আল্লাহ ছাড়া এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল (বার্তাবাহক)। নামায কায়েম করা। যাকাত প্রদান করা। রমজান মাসে রোযা রাখা। বায়তুল্লাতে হজ্জ আদায় করা।”
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর হজ্জ ফরজ করেছেন। সুতরাং তোমরা হজ্জ আদায় করো।”

হজ্জ ফরজ হওয়ার শর্ত পাঁচটি:

এক: ইসলাম। ইসলামের বিপরীত হচ্ছে- কুফর। সুতরাং কাফেরের উপর হজ্জ ফরজ নয়। কাফের যদি হজ্জ আদায়ও করে তাহলে সে আমল কবুল হবে না।

দুই: সাবালগ হওয়া। সুতরাং যে সাবালগ হয়নি তার উপর হজ্জ ফরজ নয়। যদি নাবালগ কেউ হজ্জ আদায় করে তবে তা নফল হজ্জ হিসেবে আদায় হবে এবং সে এর সওয়াব পাবে। সে যখন সাবালগ হবে তখন ফরজ হজ্জ আদায় করতে হবে। কারণ সে সাবালগ হওয়ার আগে যে হজ্জ করেছে- এর দ্বারা ফরজ হজ্জ আদায় হবে না।

তিন: বিবেকবুদ্ধি। এর বিপরীত হচ্ছে- বিকারগ্রস্ততা। সুতরাং পাগলের উপর হজ্জ ফরজ নয় এবং পাগলকে হজ্জ আদায় করতে হবে না।

চার: স্বাধীন হওয়া। সুতরাং ক্রীতদাসের উপর হজ্জ ফরজ নয়। যদি সে হজ্জ আদায় করে তবে তার হজ্জ নফল হিসেবে আদায় হবে। যদি সে স্বাধীন হয়ে যায় তাহলে তাকে ফরজ হজ্জ আদায় করতে হবে। কারণ দাস থাকাকালীন সে যে হজ্জ আদায় করেছে সেটা দ্বারা ফরজ হজ্জ আদায় হবে না। তবে কিছু কিছু আলেম বলেছেন: যদি ক্রীতদাস তার মালিকের অনুমতি নিয়ে হজ্জ আদায় করে তাহলে সে হজ্জ দ্বারা তার ফরজ হজ্জ আদায় হয়ে যাবে। এটাই অগ্রগণ্য মত।

পাঁচ: শারীরিক ও আর্থিক সামর্থ্য থাকা। মহিলার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত একটি সামর্থ্য হলো- হজ্জের সঙ্গি হিসেবে কোন মোহরেম পাওয়া। যদি নারীর এমন কোন মোহরেম না থাকে তাহলে তার উপর হজ্জ ফরজ নয়।
★★হজ্জের ফরজ ৩টি★★
১। ইহরাম বাধা ২। উ’কুফে আ’রাফা (আরাফাতের ময়দানে অবস্থান) ৩। তাওয়াফুয্ যিয়ারাত
হজ্জের ওয়াজিব ৬টি
(১) ‘সাফা ও মারওয়া’ পাহাড় দ্বয়ের মাঝে ৭ বার সায়ী করা।
(২) অকুফে মুযদালিফায় (৯ই জিলহজ্জ) অর্থাৎ সুবহে সাদিক থেকে সুর্যদয় পর্যন্ত একমুহুর্তের জন্য
হলেও অবস্থান করা।
(৩) মিনায় তিন শয়তান (জামারাত) সমূহকে পাথর নিপে করা।
(৪) ‘হজ্জে তামাত্তু’ ও ‘কি্বরান’ কারীগণ ‘হজ্জ’ সমাপনের জন্য দমে শোকর করা।
(৫) এহরাম খোলার পূর্বে মাথার চুল মুন্ডানো।
(৬) মক্কা থেকে বিদায়কালীন তাওয়াফ করা।
এছাড়া আর যে সমস্ত আমল রয়েছে সব সুন্নাত অথবা মুস্তাহাব।
ওমরাহর ফরজ, ওয়াজিব
দুইটি ফরজ: (১) ইহরাম পরিধান করা (২) তাওয়াফ
দুইটি ওয়াজিব: (১) সাফা ও মারওয়া মধ্যবর্তী (সবুজ বাতি) স্থানে সাতবার সায়ী করা (২) মাথার চুল
মুন্ডানো বা ছাটা।
তালবিয়াঃহাদীসগ্রন্থে বর্ণীত তালবিয়ার শব্দগুলো নিম্নরূপঃ
لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لاَشَرِيْكَ لَكَ

”লাব্বাঈক আল্লাহুম্মা লাব্বাঈক, লাব্বাঈক, লা-শারীকা-লাকা লাব্বাঈক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্ নি’মাতা লাকা ওয়াল-মুল্ক, লা শারীকালাক।”
অর্থ: আমি হাজির হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত! আপনার ডাকে সাড়া দিতে আমি হাজির। আপনার কোন অংশীদার নেই। নিঃসন্দেহে সমস্ত প্রশংসা ও সম্পদরাজি আপনার এবং একচ্ছত্র আধিপত্য আপনার।
আপনার কোন অংশীদার নেই।
ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজঃ-
(১) সেলাইযুক্ত যে কোন কাপড় বা জুতা ব্যবহার, এক্ষেত্রে স্পঞ্জ সেন্ডেলের ব্যবহার করা।
(২) মস্তক ও মুখমন্ডল (ইহরামের কাপড়সহ যে কোন কাপড় দ্বারা) ঢাকা,
(৩) পায়ের পিঠ ঢেকে যায় এমন জুতা পরা।
(৪) চুলকাটা বা ছিড়ে ফেলা।
(৫) নখকাটা।
(৬) ঘ্রানযুক্ত তৈল বা আতর লাগানো।
(৭) স্ত্রীর সঙ্গে সংগম করা।
(৮) যৌন উত্তেজনামূলক কোন আচরণ বা কোন কথা বলা।
(৯) শিকার করা।
(১০) ঝগড়া বিবাদ বা যুদ্ধ করা।
(১১) চুল দাড়িতে চিরুনী বা আঙ্গুলী চালনা করা, যাতে ছিড়ার আশংকা থাকে।
(১২) শরীরে সাবান লাগানো।
(১৩) উকুন, ছারপোকা, মশা ও মাছিসহ কোন জীবজন্তু হত্যা করা বা মারা।
(১৪) কোন গুনাহের কাজ করা, ইত্যাদি।

হজ্জের প্রকার ও নিয়তসমূহঃ-
প্রথম প্রকার হজ্জে ইফরাদ
বর্ণনা: ওমরাহ্ ব্যতিত শুধু হজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধা এবং হজ্জের সাথে ওমরাহকে না মিলানো। (বদলী হজ্জের জন্যও এই হজ্জ)।
নিয়্যাত: আল্লাহুমা ইন্নী উরীদুল হাজ্জা ফায়াসছির হুলিওয়াতা কাব্বালহুমিনি্ন। (বাংলা নিয়ত- আল্লাহ আমি ইফরাদ হজ্জের উদ্দেশ্যে আপনার সন্তুষ্টির জন্য ইহরাম বাধলাম। তা সহজ করে দিন ও কবুল করে নিন)।
দ্বিতীয় প্রকার হজ্জে কি্বরান
বর্ণনা: একত্রে একই স্থান থেকে হজ্জ ও ওমরার নিয়্যাত করে হজ্জের সাথে ওমরাহকে মিলানো এবং একই ইহ্রামে উভয়টি আদায় করা।
নিয়্যাত: আল্লাহুমা ইন্নী উরীদুল উ’মরাতা ফায়াচ্ছির লী-ওয়াতাক্াব্বাল মিন্নী। বাংলা নিয়ত- হে আল্লাহ আমি আপনার উদ্দেশ্যে হজ্জে কি্বরানের জন্য ইহরাম বাধলাম তা সহজ করে দিন ও কবুল করে নিন।

★তৃতীয় প্রকার হজ্জে তামাত্তু
বর্ণনা: একই সফরে পৃথক পৃথক ভাবে ‘ইহরাম’ পরিধান করে ‘হজ্জ ও ওমরাহ’ আদায় করা। প্রথম ইহ্রামে ওমরাহর নিয়্যাত করে তা পালন শেষে চুল কেটে ‘ইহরাম’ খুলে হালাল হয়ে দ্বিতীয় বার নতুন করে হজ্জের নিয়্যাতে ৮ই জিলহজ্জ ‘মক্ক শরীফ’ থেকে হজ্জের জন্য ইহরাম বাধা। তামাত্তু করার ইচ্ছা থাকলে প্রথমে ওমরার নিয়্যাত করে এহরাম বাঁধুন।
শুধু ওমরাহর নিয়্যাত
আল্লাহুমা ইন্নী উরীদুল উম’রাতা ফায়াচ্ছির লী-ওয়াতাক্াব্বাল মিন্নী। বাংলা নিয়ত- হে আল্লাহ আমি ওমরাহ্ পালনের জন্য ইহরাম বাধলাম তা সহজ করে দিন এবং কবুল করে নিন।
শুধু হজ্জের নিয়্যাত
আল্লাহুম্মা ইন্নী উরীদুল হাজ্জা ফায়াচ্ছিরহু-লী অ-তাকাব্বালহু মিন্নী। বাংলা নিয়ত- হে আল্লাহ আমি পবিত্র হজ্জ পালনের জন্য ইহরাম বেধে নিয়ত করলাম তা সহজ করে দিন এবং কবুল করে নিন।১. আল্লাহর জন্য মুখলিস (একনিষ্ঠ) হওয়া। অর্থাৎ সে ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালকে উদ্দেশ্য করা; প্রদর্শনেচ্ছা বা প্রচারপ্রিয়তার উদ্দেশ্যেনা করা অথবা অন্য কোন দুনিয়াবী উদ্দেশ্যে না করা।

২. কথা ও কাজে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ বা আদর্শ জানা ছাড়া তাঁকে অনুসরণ করা সম্ভব নয়। সুতরাং যে ব্যক্তি উমরা, হজ্ব বা অন্যকোন ইবাদত পালনের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে চায় তার কর্তব্য হলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ শিখে নেয়া; যাতে তার আমল রাসূলের সুন্নাহ মোতাবেক হয়। নিম্নে আমরা সুন্নাহরআলোকেউমরা আদায়ের পদ্ধতি সংক্ষেপে তুলে ধরব।উমরার কাজ চারটি:

এক:ইহরাম

ইহরাম মানে হচ্ছে- নুসুকে তথা হজ্ব বা উমরাতে প্রবেশের নিয়ত।

কেউ যদি ইহরাম করতে চায় তখন সুন্নত হচ্ছে- সে ব্যক্তি কাপড়-চোপড় ছেড়ে ফরজ গোসলের মত গোসল করবে, মাথা বা দাঁড়িতে মিসক বা অন্য যে সুগন্ধি তার কাছে থাকে সেটা লাগাবে। সুগন্ধির আলামত যদি ইহরাম করার পরেও থেকে যায় তাতে কোন অসুবিধা নেই। যেহেতু সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ইহরাম করতে চাইতেন তখন নিজের কাছে সবচেয়ে ভাল যে সুগন্ধিটা আছে সেটা ব্যবহার করতেন। ইহরাম করার পরে আমি তাঁর মাথা ও দাঁড়িতে সে সুগন্ধির ঝিলিকদেখতে পেতাম।[সহিহ বুখারি (২৭১) ও সহিহ মুসলিম (১১৯০)] নর-নারী উভয়ের ক্ষেত্রে ইহরামের জন্য গোসল করা সুন্নত। এমনকি হায়েয ও নিফাসগ্রস্ত নারীদের ক্ষেত্রেও। কেননা আসমা বিনতে উমাইস (রাঃ) নিফাসগ্রস্ত ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে ইহরামের জন্য গোসল করার ও রক্ত প্রবাহের স্থান একটি কাপড় দিয়ে বেঁধে নিয়ে ইহরাম করার নির্দেশ দিয়েছেন।[সহিহ মুসলিম (১২০৯)]

গোসল ও সুগন্ধি ব্যবহারের পর ইহরামের কাপড় পরিধান করবে। এরপর ফরজ নামাযের ওয়াক্ত হলে ফরজ নামায আদায় করবে। ফরজ নামাযের ওয়াক্ত না হলে ওজুর সুন্নত হিসেবে দুই রাকাত নামায আদায় করবে। নামাযের পর কিবলামুখি হয়ে ইহরাম বাঁধবে। ইচ্ছা করলে বাহনে (গাড়ীতে) উঠে যাত্রার প্রাক্কালে ইহরাম করতে পারেন। তবে মীকাত থেকে মক্কার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার আগে ইহরাম করতে হবে। এরপর বলবেন:

لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ بِعُمْرَةٍ

লাব্বাইকাল্লাহুম্মা বি উমরাতিন (অর্থ- হে আল্লাহ! উমরাকারী হিসেবে আপনার দরবারে হাজির)। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে তালবিয়া পড়েছেন সেভাবে তালবিয়া পড়বে। সেই তালবিয়া হচ্ছে-

لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ ، لَبَّيْكَ لا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لا شَرِيكَ لَكَ

লাব্বাইকাল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইকালা শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক। লা শারিকা লাক।

(অর্থ- হে আল্লাহ! আমি আপনার দরবারে হাজির। আমি আপনার দরবারে হাজির। আমি আপনার দরবারে হাজির। আপনি নিরঙ্কুশ। আমি আপনার দরবারে হাজির। নিশ্চয় যাবতীয় প্রশংসা, যাবতীয় নেয়ামত আপনার-ই জন্য এবং রাজত্ব আপনার-ই জন্য। আপনি নিরঙ্কুশ।)

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামআরও একটি তালবিয়া পড়তেন সেটা হচ্ছে-

لَبَّيْكَ إِلَهَ الْحَقِّ

লাব্বাইকা ইলাহাল হাক্ব (অর্থ- ওগো সত্য উপাস্য! আপনার দরবারে হাজির)।

ইবনে উমর (রাঃ) আরেকটু বাড়িয়ে বলতেন:

لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ بِيَدَيْكَ وَالرَّغْبَاءُ إِلَيْكَ وَالْعَمَلُ

লাব্বাইকা ওয়া সাদাইক। ওয়াল খাইরু বি ইয়াদাইক। ওয়ার রাগবাউ ইলাইকা ওয়াল আমাল। (অর্থ- আমি আপনার দরবারে হাজির, আমি আপনার সৌজন্যে উপস্থিত। কল্যাণ আপনার-ই হাতে। আকাঙ্ক্ষা ও আমল আপনার প্রতি নিবেদিত)। পুরুষেরা উচ্চস্বরে তালবিয়া পড়বে। দলিল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: জিব্রাইল (আঃ) এসে আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন আমি যেন আমাদের সাহাবীদেরকে ও আমার সঙ্গিদেরকে উচ্চস্বরে তালবিয়া পড়ার আদেশ দিই।[সহিহ আবু দাউদ গ্রন্থে (১৫৯৯) আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন] আরেকটি দলিল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “উত্তম হজ্ব হচ্ছে আল-আজ্জ ও আল-সাজ্জ।”[সহিহুল জামে গ্রন্থে (১১১২) আলবানী হাদিসটিকে হাসান বলেছেন] আল-আজ্জ (العَجّ) শব্দের অর্থ হচ্ছে- উচ্চস্বরে তালবিয়া পড়া। আর আল-সাজ্জ (الثَجّ) শব্দের অর্থ হচ্ছে- হাদির রক্ত প্রবাহিত করা।

আর নারী এতটুকু জোরে তালবিয়াপড়বে যাতে পাশের লোক শুনতে পায়। তবে পাশে যদি কোন বেগানা পুরুষ থাকে তাহলে মনে মনে তালবিয়াপড়বে।

যে ব্যক্তি ইহরাম করতে যাচ্ছেন তিনি যদি কোন প্রতিবন্ধকতাযেমন রোগ, শত্রু বা গ্রেফতার ইত্যাদি কারণে নুসুকতথা হজ্ব বা উমরা শেষ করতে না পারার আশংকা করেন তাহলে ইহরাম বাঁধার সময় শর্ত করে নেয়া বাঞ্ছনীয়। ইহরামকালে তিনি বলবেন:

إِنْ حَبَسَنِيْ حَابِسٌ فَمَحِلِّيْ حَيْثইন হাবাসানি হাবেস ফা মাহিল্লি হাইসু হাবাসতানি (অর্থ- যদি কোন প্রতিবন্ধকতা- যেমন রোগ, বিলম্ব ইত্যাদি আমার হজ্ব পালনে- বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাহলে আমি যেখানেপ্রতিবন্ধকতার শিকার হই সেখানে ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যাব)। কেননা দুবাআ বিনতে যুবাইর (রাঃ) অসুস্থ থাকায় ইহরাম বাঁধাকালে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে শর্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন: “তুমি যে শর্ত করেছ সেটা তোমার রবের নিকটগ্রহণযোগ্য।”[সহিহ বুখারি (৫০৮৯) ও সহিহ মুসলিম (১২০৭)] যদি ইহরামকারী শর্ত করে থাকে এবং নুসুক সম্পন্ন করণে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয় তাহলে সে ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যাবে। এতে করে তার উপর অন্য কোন দায়িত্ব আসবে না। আর যদি নুসুক সম্পন্ন করণে কোন প্রতিবন্ধকতার আশংকা না থাকে তাহলে শর্ত না করাই বাঞ্ছনীয়। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শর্ত করেননি এবং সাধারণভাবে সবাইকে শর্ত করার নির্দেশ দেননি।দুবাআ বিনতে যুবাইর (রাঃ) অসুস্থ হওয়ার কারণে শুধু তাকে শর্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। ইহরামকারীর উচিত অধিক তালবিয়া পাঠ করা। বিশেষতঃ সময় ও অবস্থার পরিবর্তনগুলোতে। যেমন উঁচুতে উঠার সময়। নীচুতে নামার সময়। রাত বা দিনের আগমনকালে। তালবিয়া পাঠের পর আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত প্রার্থনা করা এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা।

উমরার ক্ষেত্রে ইহরামের শুরু থেকে তওয়াফ শুরু করার আগ পর্যন্ত তালবিয়া পড়া বিধান রয়েছে।তওয়াফ শুরু করলে তালবিয়া পড়া ছেড়ে দিবে।

মক্কায় প্রবেশের জন্য গোসল: মক্কার কাছাকাছি পৌঁছলে সম্ভব হলে মক্কায় প্রবেশের জন্য গোসল করে নিবে। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা প্রবেশের সময় গোসল করেছিলেন।[সহিহ মুসলিম (১২৫৯)]

দুই: তওয়াফ

মসজিদে হারামে প্রবেশের সময় ডান পা আগে দিবে এবং বলবে:

بِسْمِ اللهِ والصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ الَّلهُمَّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوْبِيْ وافْتَحْ لِى أَبْوَابَ رَحْمَتِكَأَعُوذُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ

(অর্থ- আল্লাহর নামে শুরু করছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক। হে আল্লাহ! আমার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিন। আমার জন্য আপনার রহমতের দুয়ারগুলো খুলে দিন। আমি বিতাড়িত শয়তান হতে মহান আল্লাহর কাছে তাঁর মহান চেহারারমাধ্যমে, তাঁর অনাদি রাজত্বেরমাধ্যমে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।)

এরপর তওয়াফ শুরু করার জন্য হাজারে আসওয়াদের দিকে এগিয়ে যাবে। ডান হাত দিয়ে হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করবে ও চুমু খাবে। যদি হাজারে আসওয়াদে চুমু খেতে না পারে হাত দিয়ে স্পর্শ করবে ও হাতে চুমু খাবে (স্পর্শ করার মানে হচ্ছে- হাত দিয়ে ছোঁয়া)। যদি হাত দিয়ে স্পর্শ করতে না পারে তাহলে হাজারে আসওয়াদের দিকে মুখ করে হাত দিয়ে ইশারা করবে এবং তাকবির বলবে; কিন্তু হাতে চুমু খাবে না। হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করার ফজিলত অনেক। দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “আল্লাহ তাআলা হাজার আসওয়াদকে পুনরুত্থিত করবেন। তার দুইটি চোখ থাকবে যে চোখ দিয়ে পাথরটি দেখতে পাবে।তার একটি জিহ্বা থাকবে যে জিহ্বা দিয়ে পাথরটি কথা বলতে পারবে। যে ব্যক্তি সঠিকভাবে পাথরটিকে স্পর্শ করেছে পাথরটি তার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে।[আলবানী আল-তারগীব ও আল-তারহীব (১১৪৪) গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

তবে উত্তম হচ্ছে- ভিড়না করা। মানুষকে কষ্ট না দেয়া এবং নিজেও কষ্ট না পাওয়া। যেহেতু হাদিসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে তিনি উমরকে লক্ষ্য করে বলেছেন- “হে উমর! তুমি শক্তিশালী মানুষ। হাজারে আসওয়াদের নিকট ভিড় করে দুর্বল মানুষকে কষ্ট দিও না। যদি ফাঁকা পাও তবে স্পর্শ করবে; নচেৎ হাজারে আসওয়াদমুখি হয়ে তাকবীর বলবে।[মুসনাদে আহমাদ (১৯১), আলবানী তাঁর ‘মানাসিকুল হাজ্জ ও উমরা’ গ্রন্থে হাদিসটিকে ‘কাওয়ি’ (শক্তিশালী) মন্তব্য করেছেন] এরপর ডানদিক ধরে চলতে থাকবে। বায়তুল্লাহকে বামদিকে রাখবে। যখন রুকনে ইয়ামেনীতে (হাজারে আসওয়াদের পর তৃতীয় কর্নার) পৌঁছবে তখন সে কর্নারটি চুমু ও তাকবীর ছাড়া শুধু স্পর্শ করবে। যদি স্পর্শ করা সম্ভব না হয় তাহলে তওয়াফ চালিয়ে যাবে; ভিড় করবে না। রুকনে ইয়ামেনী ও হাজারে আসওয়াদের মাঝখানে এলেবলবেন:

(رَبَّنَا آَتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآَخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ)

(অর্থ- হে আমাদের রব! আমাদিগকে দুনিয়াতেও কল্যাণ দান করুন এবং আখেরাতেও কল্যাণ দান করুন এবং আমাদিগকে দোযখের আযাব থেকে রক্ষা করুন।)[সুনানে আবু দাউদ, আলবানী ‘সহিহ আবু দাউদ’ গ্রন্থে হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন]

যখনই হাজারে আসওয়াদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করবে তখনই হাজারে আসওয়াদ অভিমুখী হয়ে তাকবীর বলবে। তওয়াফের অন্য অংশে যা কিছু খুশি যিকির, দুআ ও কুরআন তেলাওয়াত করবে।তওয়াফের মধ্যে পুরুষকে দুইটি জিনিশ করতে হয়।তাওয়াফের ওয়াজিব সমূহ
(১) শরীর পাক-সাফ রাখা, ওজু করা। মহিলাদের হায়েজ নেফাছ অবস্থায় তাওয়াফ করা জায়েজ নাই।
(২) ছতর ঢাকা। অর্থাৎ যেটুকু ঢাকা প্রত্যেক পুরুষ-নারীর জন্য ফরজ।
(৩) ‘হাতীমে কা’বার’ বাইরে থেকে ‘তাওয়াফ’ করা।
(৪) পায়ে হেঁটে ‘তাওয়াফ’ করা। অম ব্যক্তি খাটিয়ার মাধ্যমে ‘তাওয়াফ’ করতে পারেন।
(৫) ‘হাজ্রে আস্ওয়াদ’ থেকে শুরু করে ডানদিক দিয়ে ‘তাওয়াফ’ শুরু করা।
(৬) এক নাগাড়ে বিরতিহীন ভাবে ‘সাতবার চক্কর’ দিয়ে ‘তাওয়াফ’ পূর্ণ করা।
(৭) ‘সাত চক্করে’ এক ‘তাওয়াফ’, এটা পূর্ণ হলেই ‘তাওয়াফের’ নামাজ পড়া।
তাওয়াফের সুন্নত কার্যাবলী
(১) ‘তাওয়াফে’র শুরুতে ‘হাজারে আসওয়াদ’ এর দিকে মুখ করা।
(২) সম্ভব হলে ‘হাজ্রে আস্ওয়াদ’ চুম্বন করা। নতুবা হাত দ্বারা দূর থেকে ইশারা করা, এবং মুখে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আক্বার ওয়ালিল্লাহিল হ্ামদ’ বলা।
(৩) ‘হা্জ্রে অস্ওয়াদ’ বরাবর দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহরিমা’র ন্যায় উভয় হাত সিনা পর্যন্ত উঠান।
(৪) যে ‘তাওয়াফে’র পরে ‘সাঈ’ আছে তাতে ‘এযতেবা’ করা। অর্থাৎ ইহরামের চাদরের (উপরের অংশের) দুই মাথা ডান বগলের নিচ দিয়ে বাম কাঁধের উপর ফেলে দেওয়া।
(৫) ‘সাঈ’ যুক্ত ‘তাওয়াফে’র প্রথম তিন চক্করে ‘রমল’ করা। অথর্াৎ বীরের মত হেলে দুলে জোর ক্বদমে (একের পর এক পা ফেলে) চলা।
(৬) বাকী চার চক্কর সাধারণ গতিতে (ধীরে ধীরে) সম্পন্ন করা।
(৭) প্রত্যেক চক্কর তাওয়াফ শেষ করে এবং শেষ চক্করেরও পরে ‘হাজ্রে অস্ওয়াদ’কে চুম্বন করা।দোয়া সমুহ উচ্চস্বরে পড়া উচিত নয়। বরং এমন আওয়াজে পড়েন যাতে আপনার নিজ কানে শুনা যায়।

★১ম চক্কর তাওয়াফের দোয়াঃ-
তাওয়াফের সময় ১ম চক্করের দোয়ার মানে হল- আল্লাহ তায়ালা পাক পবিত্র, সকল প্রসংশা তার জন্য, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই, আল্লাহ মহান, গুনাহ থেকে বাঁচা ও নেকী করার তৌফিক আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়।যিনি মহান সম্মানিত, রহমত নাযিল হউক রাসুলুল্লাহর উপর, হে আল্লাহ তোমার প্রতি ঈমান এনে তোমার কিতাবের সত্যতা স্বীকার করে, তোমার সাথে কৃত ওয়াদা পুরন করতে, তোমার নবীর সুন্নতের অনুসরনে তাওয়াফ আরম্ভ করেছি। হে আল্লাহ আমি তোমার নিকট গুনাহ সমুহ থেকে  ক্ষমা প্রার্থনা করছি। বিপদ-আপদ থেকে সদা হেফাজতের, দ্বীন ও দুনিয়া এবং আখিরাতে এবং জান্নাত হাছিলে সফলতার এবং জাহান্নামের থেকে মুক্তির দরখাস্ত করছি।

এ তাওয়াফের দোয়া আপনি রোকনে এয়ামনিীতে পৌছার আগে আগে শেষ করে নিবেন, এখন আপনি রোকনে এয়ামানি থেকে রুকনে আসওয়াদ এর দিকে যাবেন। আর রোকনে এয়ামানী থেকে রুকনে আসওয়াদ পর্যন্ত এ জায়গাটা দোয়া কবুল হওয়ার জায়গা সুতরাং এ জায়গাটুকুতে আপনি চলতে চলতে দোয়া নিজের জন্য ও তামাম মুসলমানের জন্য দোয়া করবেন এবং দরুদ শরীফ পাঠ করে কুরআনের এ আয়াত পাঠ করবেন (রাব্বানা আতেনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতে হাসানাতাও ওয়াকেনা আজাবান নার)
মনে রাখবেন তাওয়াফ কালীন আপনি কাবাতুল্লাহর দিকে ফিরবেন না, আপনার সিনা যেন কাবার দিকে না হয়। তবে যদি কাবা ঘরের খুব কাছ দিয়ে তাওয়াফ করেন তখন হাত বাড়িয়ে রুকনে এয়ামানিকে ছুয়ে দিতে পারেন বরকতের জন্য। কিন্তু আপনি যদি দুরে থাকেন তখন সে দিকে ফিরে ইশারা করার প্রয়োজন নাই।
যখন আপনি রুকনে আসওয়াদ এর দিকে অগ্রসর হবেন দেখবেন দেওয়ালে সবুজ রং এর টিউব লাইট আছে। সেখানের বরাবর ফ্লোরে যে পাট্টি আছে তাতে এসে হাজরে আসওয়াদ এর দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে যাবেন, নামাজের তাকবিরের সময় যেভাবে হাত উঠাতে হয় সেভাবে হাত উঠায়ে পড়বেন “বিসমিল্লাহি ওয়ালহামদুলিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার ওয়াস্‌সালাতু ওয়াস্‌সলামু আলা রাসূলিল্লাহ” এটা পড়ার পর হাত নিচে করে নিবেন। এবং সম্ভব হলে হাজরে আসওয়াদকে চুমু দিবেন অথবা হাতে ইশারা করে হাতে চুমু খাবেন এটাকে এস্তেলাম বলে।  এবং হাজরে আসওয়াদ থেকে সামান্য ডান দিকে সরে গিয়ে যখন দেখবেন হাজরে আসওয়াদ আর আপনার সোজসোজি রইল না তখন সাথে সাথে আপনার দিক পরিবর্তন করে নিবেন ফলে কাবাতুল্লাহ আপনার বাম দিকে হয়ে যাবে। এখন আবার রমল করতে করতে ২য় চক্কর শুরু করবেন।
★২য় চক্কর তাওয়াফের দোয়া-
তাওয়াফের ২য় চক্করের দোয়ার বাংলা অনুবাদ- হে আল্লাহ এ ঘর তোমার ঘর, এ হারাম তোমার হারাম, এখানের নিরাপত্তা তোমার নিরাপত্তা, সকল বান্দা তোমারই বান্দা, আমিও তোমারই বান্দা, তোমারই এক বান্দার সন্তান, এ স্থানটা জাহান্নাম থেকে পানাহ চাওয়ার জায়গা, তুমি আমার শরীর ও শরীরের গোস্তকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দাও, হে আল্লাহ আমার জন্য ঈমানকে প্রিয় করে দাও, আমার অন্তরে তার আগ্রহ সৃষ্টি করে দাও,  আমার অন্তরে কুফুরী বদকারী ও নাফরমানিকে অপছন্দনীয় করে দাও, আমাকে হেদায়েতপ্রাপ্তদের মধ্যে গন্য করে নাও। হে আল্লাহ যেদিন তুমি তোমার বান্দাগনকে পুনরুজ্জিবীত করবে সেদিন আমাকে আযাব থেকে রক্ষা করিও, হে আল্লাহ তুমি আমাকে বিনা হিসাবে জান্নাত দান কর।
২য় চক্করের দোয়া রোকনে এয়ামনী পৌছাঁর আগে আগে শেষ করে নিবেন। রোকনে এয়ামানি থেকে রুকনে আসওয়াদ পর্যন্ত আপনার নিজের জন্য সহ সকল মুসলমানের জন্য দোয়া করবেন, এবং দরুদ শরীফ পাঠ করে কুরআনের এ আয়াত পাঠ করবেন (রাব্বানা আতেনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতে হাসানাতাও ওয়াকেনা আজাবান নার)
এরপর হাজরে আসওয়াদের দিকে ফিরে পাট্টির উপর দাঁড়াবেন দু হাত কান পর্যন্ত উঠায়ে (“বিসমিল্লাহি ওয়ালহামদুলিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার ওয়াস্‌সালাতু ওয়াস্‌সলামু আলা রাসূলিল্লাহ”) পড়ে হাত নামিয়ে ফেলবেন এরপর হাজরে আসওয়াদকে চুমু বা এস্তেলাম করবেন। এবার পুনরায় ৩য় চক্কর শুরু করবেন রমল সহকারে।

★৩য় চক্কর তাওয়াফের দোয়া- বাকী আমল আগের মত ...
তাওয়াফের ৩য় চক্করের দোয়ার বাংলা অনুবাদ- হে আল্লাহ আমি সন্দেহ, শিরিক, নেফাক, সত্যের বিরোধীতা, খারাপ চরিত্র, খারাপ দৃশ্য, পরিবার, মাল ও সন্তানদের উপর কু প্রভাব থেকে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে প্রভু আমি তোমার সন্তুষ্টি এবং জান্নাত প্রার্থনা করছি। তোমার গজব এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় পার্থনা করছি। হে প্রভু আমি কবরের দুঃখ এবং জীবনে এবং মৃত্যুর সময়কালীন ফিতনা থেকে তোমার আশ্রয় প্রাথনা করছি।

এবার পুনরায় ৪র্থ চক্কর শুরু করবেন তবে এখন থেকে পরবর্তী চক্করসমুহে আর রমল বা জোড়ে হেলেদুলে চলা লাগবে না। স্বাভাবিক ভাবে চলে দোয়া পড়তে পড়তে চলবেন।
★৪থ চক্কর তাওয়াফের দোয়া-

তাওয়াফের সময় ৪ নং চক্করের দোয়ার বাংলা অনুবাদ- হে আল্লাহ আমার হায়াত কে বরকতময় এবং আমার চেষ্টাসমুহকে সফলতা দান কর। গুনাহসমুহের ক্ষমার মাধ্যম এবং কবুলযোগ্য নেক আমল এবং ক্ষতিছাড়া তেজারত করে দাও। হে অন্তরযামী, আমাকে গুনাহের অন্ধকার থেকে ছাওয়াবের আলোর দিকে বের করে নাও। হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে তোমার রহমত হাছিলের বিষয়বস্তু এবং তোমার ক্ষমার বিষয়বস্তুসমুহ এবং সমস্ত গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে এবং সকল নেক আমলের তওফিক এবং জান্নাতে যাওয়া এবং জাহান্নামের থেকে মুক্তির দরখাস্ত করছি। হে আল্লাহ আমাকে দেওয়া রিযিকসমুহে বরকত দান কর। সকল ক্ষতিসমুহে তোমার দয়ায় আমার জন্য নেয়ামতে পরিবর্তন করে দাও

★৫ম চক্কর এর দোয়া-
তাওয়াফে ৫ম চক্করের দোয়ার বাংলা অনুবাদ- হে আল্লাহ আমাকে সে দিন আরশের ছায়ায় জায়গা দিও, যেদিন তোমার আরশের ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবেনা এবং তুমি ছাড়া কেহ বাকী থাকবেনা। নবী করিম (দঃ) এর হাউজে কাউছার থেকে এমন তৃপ্তির সাথে পান করাইও যাতে কখনো আমার পিপাসা না লাগে। হে আল্লাহ আমি তোমার নিকট সে সকল বিষয়ের ব্যাপারে মঙ্গল কামনা করছি যা তোমার নবী মুহাম্মদ (দঃ) তোমার নিকট  চেয়েছেন। েএবং ঐ সমস্ত বিষয়গুলোর খারাপ পরিনতি থেকে পানাহ চাচ্ছি যা থেকে তোমার নবী পানাহ চেয়েছেন। হে আল্লাহ আমি তোমার নিকট জান্নাত এবং তার নেয়ামতসমুহের এবং সে সকল কথা কাজ এবং আমলের তৌফিক এর প্রার্থনা করছি যা আমাকে জান্নাতের নিকটবর্তী করে দিবে। এবং সে সমস্ত কথা কাজ ও আমল থেকে পানাহ চাচ্ছি যা আমাকে দোযখের নিকট করে দিবে।

★৬ষ্ঠ চক্করের দোয়া
তাওয়াফের ৬ষ্ঠ চক্করের দোয়ার অনুবাদ- হে আল্লাহ আমার উপর তোমার অনেক হক রয়েছে যা তোমার ও আমার মাঝে রয়েছে যা তোমার ও তোমার সৃষ্টি সমুহের মাঝে রয়েছে এসব হকের মাঝে যা তোমার সাথে রয়েছে তার ভ্রান্তিসমুহ ক্ষমা কর। আর যে সমস্ত হক তোমার সৃষ্টির সাথে তার ক্ষমার ব্যাপারে তুমি জিম্মাদারী নাও। হে আল্লাহ আমাকে হালাল রিযিক দান কর, হারাম থেকে বাঁচিয়ে রাখ, তোমার অনুসরনের তৌফিক দান কর। দয়া করে পরমুখাপেক্ষী হতে বাঁচাও। হে আল্লাহ নিশ্চয়ই তোমার এ ঘর সম্মানিত ঘর। তুমি করিম তুমি হালিম তুমি আজিম। তুমি ক্ষমা করা পছন্দ কর হে প্রভু আমার ভ্রান্তিসমুহ ক্ষমা করে দাও।

★৭ম চক্করের দোয়া
তাওয়াফের সপ্তম চক্করের দোয়ার অনুবাদ- হে আল্লাহ আমি তোমার নিকট তোমার রহমতের উছিলায় পরিপূর্ণ ঈমান এবং সরল বিশ্বাস, প্রশস্থ রিযিক, বিনয়ী অন্তর, জিকিরকারী জবান, হালাল ও পাক পবিত্র রুজি, সরল তৌবা এবং মৃত্যু পূর্বে তাওবা এবং শান্তিময় মৃত্যু এবং মৃত্যুর পর ক্ষমা ও দয়া এবং হিসাবের সময় ক্ষমা এবং জান্নাত অর্জন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি কামনা করছি। হে সম্মানিত ক্ষমাদানকারী আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দাও এবং আমাকে নেককারদের অন্তভূক্ত করে নাও।

৭ম চক্কর পুরা হওয়ার পর হাজরে আসওয়াদের দিকে ফিরে পাট্টির উপর দাঁড়াবেন দু হাত কান পর্যন্ত উঠায়ে (“বিসমিল্লাহি ওয়ালহামদুলিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার ওয়াস্‌সালাতু ওয়াস্‌সলামু আলা রাসূলিল্লাহ”) পড়ে হাত নামিয়ে ফেলবেন এরপর হাজরে আসওয়াদকে চুমু বা এস্তেলাম করবেন। সুতরাং আপনার তাওয়াফ হল ৭টা আর এস্তেলাম হল ৮বার।
এখন আপনার তাওয়াফ সম্পূর্ণ হল এবার আপনি আপনার চাদর দ্বারা ডান কাঁধ ঢেকে নিন এবং মকামে  ইবরাহিম এর কাছে এসে পাঠ করুন সুরা বাকারার এ আয়াত-(ওয়াত্তাহিজু মিম মাকামে ইবরাহিমা মুছাল্লা) যার অর্থ- তোমরা ইবরাহিম এর দাঁড়ানোর জায়গাকে নামাজের জায়গা বানাও।

এখন আপনি যদি মকামে ইবরাহিম এর নিকট জায়গা পান তাহলে সেখানে দাঁড়িয়ে ২ রাকাত তাওয়াফের নামাজ আদায় করবেন। তবে যদি নিকটে জায়গা না পান তাহলে মসজিদে হারামের যেখানে জায়গা মিলে সেখানে দাঁড়িয়ে ২ রাকাত নামাজ আদায় করবেন তবে যেন মকরুহ ওয়াক্ত না হয়। প্রথম রাকাত সুরা ফাতেহার সাথে সুরা কাফেরুন এবং ২য় রাকাতে সুরা ফাতেহার সাথে সুরা এখলাছ পড়বেন। এ নামাজ ওয়াজিব যদি কোন সমস্যা না থাকে কিংবা মকরুহ ওয়াক্ত না হয় তাহলে তাওয়াফের পর পরই এ নামাজ আদায় করে নেয়া উত্তম। নতুবা পরে আদায় করে নিবেন। অনেক লোক দেখবেন কাঁদ খোলা রেখেই নামাজ পড়ে এটা মকরুহ। কাঁধ খোলা সে সকল তাওয়াফের সময় রাখতে হয় যে তাওয়াফের পর সায়ী করতে হয়।

মকামে ইবরাহীমে ২ রাকাত নামাজ আদায় করে এ দোয়া পাঠ করবেন, হাদীস শরীফে আছে (আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন- যে এ দোয়া করবেন আমি তার গুনাহ মাফ করে দিব, অভাব দুর করে দিব। দোয়া হল-

দোয়া করার পর এবার হজরে আসওয়াদ ও কাবার দরজার মধ্যবর্তী স্থানে এসে লেপ্টে যান এ স্থানটাকে মুলতাজিম বলে, সেখানে আপনি যথাসম্ভব আপনার সিনা, পিট, চেহেরা, হাত লাগান কান্না করেন চোখের পানি ছেড়ে দেন আর নিজের জন্য আর তামাম মুসলমানের জন্য নিজ ভাষায় দোয়া করুন। এটা দোয়া কবুল হওয়ার স্থান।

মুলতাজিমে দোয়া শেষে এবার চলে যাবেন জমজম এর পানি পান করার জন্য। কেবলামুখি হয়ে দাঁড়িয়ে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পাঠ কর।
সম্ভব না হলে দূর থেকে ইশারা করে বিসমিল্লাহে আল্লাহ আকবর ওয়ালিল্লাহিল হামদ্”দোয়াটি পাঠ করা এবং ৩ নং নিয়মের ন্যায় দাড়িয়ে ইশারা করে ‘তাওয়াফ’ শেষ করা।
তাওয়াফের নিয়্যাত
আল্লাহুম্মা ইন্নী উরীদু তাওয়াফা বাইতিকাল হারাম ফায়াচ্ছিরহু-লী, ওয়া তাক্বাব্বাল-হু-মিন্নী, সাবাআ’তা আশ্ওয়াতি্বন লিল্লাহি তায়া’লা। বাংলায় নিয়ত- হে আল্লাহ আমি তাওয়াফ পালনের জন্য নিয়ত করলাম।
সায়ীর নিয়ম
‘হজ্জ ও ওমরাহ’ ছাড়া নফল ‘তাওয়াফে’র কোন সায়ী নাই। কারো নামে ওমরাহ করতে হলেও সায়ী করতে হবে। সায়ী অর্থ দৌড়ানো। এটা ‘ছাফা’ পাহাড় থেকে প্রথমে শুরু করতে হবে। ছাফা থেকে মারওয়া।মারওয়া থেকে ছাফায়। এভাবে সাতবার সায়ীর সময় প্রথম তিন চক্কর সবুজ বাতির মাঝের অংশটুকু দৌড়ে দৌড়ে হেলে দুলে যাওয়া সুন্নাত (পুরুষদের জন্য)। পরের চার চক্কর সাধারণ গতিতে সম্পন্ন করতে হবে।
সায়ীর সহজ দোয়া
সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার ওয়া লা-হাওলা, ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহিল আ’লিয়্যিল আ’যীম, রাবি্বগফির ওয়ারহাম ওয়াআনতাল আ-আজ্জুল আকরাম।
সায়ীর কুরআনী দোয়া
‘ইন্নাছ্ ছাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন্ শাআ’ইরিল্লাহ্ ফামান হাজ্জাল বাইতা আও-ই’ তামারা ফালা জুনাহা আ’লাইহি আইয়াত্ত্বাওয়াফা বিহিমা ওমান তাত্বাওয়াআ খাইরান ফা-ইন্নাল্লাহা শাকিরুণ আ’লীম।” উপরোক্ত দুই দোয়া সাতবার চক্করের সময় হাটতে চলতে পড়তে হবে। পরেরটি না পারলে উপরেরটিই যথেষ্ট হবে।
হজ্জ ও ওমরাহর করনীয়
একনজরে তিন প্রকার হজ্জের জরুরী কাজ, হুকুম ও তারিখ সমূহ।
১ম প্রকার হজ্জে ইফরাদের ১১টি জরুরী কাজ
২য় প্রকার হজ্জে কেরানের জরুরী কাজ
৩য় প্রকার হজ্জে তামাত্তুর ১৫টি জরুরী কাজফরজ
৩টি ফরজ(১) ইহরাম (শুধু হজ্জের জন্য)।
(২) ৯ই জিলহজ্জ উ’কুফে আ’রাফা (সূর্য হেলার পর থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত)।
(৩) ১০ থেকে ১২ই জিলহজ্জ তাওয়াফে যিয়ারাত তবে ১০ই জি্বলহজ্ব তারিখই উত্তম।
(৪) অকুফে মুযদালেফায় ১০ই জিলহজ্জ সুবহে সাদেক সূর্য উদয় পর্যন্ত।
(৫) ১০ই জিলহজ্জ বড় শয়তানকে (জামারাতে আক্কাবায়) ৭টি কঙ্কর মারা। সুর্য হেলার পূর্বে দুপুর ১২টার আগে সুন্নত।
(৬) মাথা মুন্ডানো তবে দম দিতে হবে।
(৭) সায়ী ৯ তারিখের পূর্বে বা পরে) করে দিবেন।
(৮) ১১ তারিখে তিন শয়তানকে (প্রথম ছোট/মেঝ ও পড়ে বড়) ৭ক্ম৩=২১টি পাথর মারা।
(৯) ১২ তারিখে অনুরূপ তিন শয়তানকে ৭ক্ম৩= ২১টি পাথর মারা। সর্বমোট তিন দিনে ৭+২১+২১=৪৯টি কঙ্কর মারা।
(১০) ‘বিদায়ী তাওয়াফে’ (মক্কার বাইরের লোকদের জন্য) বিদায়ের পূর্বে। এটি ওয়াজিব।
(১১) তাওয়াফে কুদুম করা। (মক্কায় গিয়ে সর্বপ্রথম) ৩টি ফরজ
(১) ইহরাম (হজ্জ ও ওমরাহর জন্য)
(২) আরাফাতে অবস্থান।
(৩) তাওয়াফুয যিয়ারাত।১০টি ওয়াজিব
(৪) ওমরাহর তাওয়াফ
(৫) ওমরাহর সায়ী
(৬) হজ্জের সায়ী
(৭) অকুফে মুযদালিফায়
(৮) ১০ই জিলহজ্ব তারিখে বড় শয়তানকে ৭টি পাথর মারা (দুপুর ১২টার পূর্বে) সুন্নত।
(৯) দম দিতে হবে।
(১০) মাথা মুন্ডানো।
(১১) ১১ই জিলহজ্ব তারিখে তিন শয়তানকে পাথর মারা
(১২) ১২ তারিখে তিন শয়তানকে পূর্বের ছকের নিয়মে পৃথক পৃথক ভাবে সূর্য হেলার পরে নিয়ম অনুযায়ী পাথর মারা।
(১৩) বিদায়ী তাওয়াফ। ৪টি ফরজ
(১) ওমরাহর ইহরাম (বাংলাদেশ)।
(২) হজ্জের ইহরাম (৮ তারিখ মক্কায়)
(৩) উ,কুফে আরাফা (৯ই জিলহজ্জ সূর্য হেলার পর থেকে সুর্যস্তের পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত)।
(৪) তাওয়াফে জিয়ারত (১০ তারিখ অথবা ১১, ১২ তারিখ)১১টি ওয়াজিব
(৫) তাওয়াফে ওমরাহ (মক্কায় গিয়েই)
(৬) ওমরাহর সায়ী (ওমরাহ তাওয়াফের পরই)
(৭) মাথা মুন্ডানো (ওমরাহর পর)।
(৮) হজ্জের সায়ী
(৯) বড় শয়তানকে ৭টি পাথর মারা ( ১০ই জিলহজ্ব তারিখ সুর্য হেলার বা ১২টা পূর্বে) সুন্নত।
(১০) কুরবানী করা (পাথর মেরে ১০ তারিখ)।
(১১) মাথা মুন্ডানো দম দিতে হবে।
(১২) ১১ তারিখ তিন শয়তানকে ৭+৭+৭=২১টি পাথর মারা।
(১৩) ১২ তারিখে তিন শয়তানকে ৭+৭+৭=২১টি পাথর মারা (সর্বমোট তিন দিনে ৭+২১+২১=৪৯টি পাথর মারতে হবে)।
(১৪) বিদায়ী তাওয়াফ।
১ম দিন ৮ই জিলহজ্জ
ইহরাম অবস্থায় (ফরয) মক্কা থেকে হজ্জের নিয়্যাতে মিনায় রওয়ানা হোন।
এ দিনের কাজ দু’টি
(১) ইহরাম (ফরজ) (২) ৫ ওয়াক্ত নামাজ মিনায় আদায় করা (সুন্নাত)।
যোহর, আছর, মাগরিব, এশা ও ৯ তারিখ ফজর সর্বমোট ৫ ওয়াক্ত
২য় দিন ৯ই জিলহজ্জ
১। আরাফাতে অবস্থান (ফরজ)। ২। অকুফে মুযদালিফায় (ওয়াজিব)
আরাফাতে অবস্থান
–  ফজরের নামাজ মিনায় পড়ে আরাফাতের ময়দানের দিকে রওয়ানা হোন।
–  আরাফাতে সূর্য হেলার পর অর্থাৎ ১২টার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করা হজ্জের গুরুত্বপূর্ণ ফরজ।
–  ওয়াক্ত মত তাবুতে (মসজিদে নামেরায় না গেলে) বা আরাফার ময়দানে যে কোন স্থানে জোহরের সময় জোহর নামাজ আদায় করুন।
–  আসরের নামাজ আসরের সময় আদায় করুন, নির্দিষ্ট সময় বা আগে পরে, পৃথক পৃথক ভাবে।
–  উল্লেখ্য: ‘মসজিদে নামেরায়’ জোহর ও আসরের জামাত এক আযান দুই ইকামাতে একত্রে আদায় করলে একত্রে দুই ওয়াক্ত আদায় করতে হয়, ওটার নাম ‘জমে তাক্বদীম’। কিন্তু তাবুতে বা অন্য কোন স্থানে একত্রে নয়। ভিন্ন সময় ভিন্ন ভাবে ওয়াক্ত মত আদায় করতে হবে।)
অকুফে মুযদালিফায় (ওয়াজিব)
–  সূর্যাস্তের পর সাথে সাথে মাগরিব না পড়ে মুযদালিফায় রওয়ানা হোন।
–  মুযদালিফায় মাগরিব ও এশার নামাজ এক আযান দুই এক্বামাতে একত্রে আদায় করুন। এটা ওয়াজিব এটার নাম ‘জামে তাখীর জামাতে পড়া উত্তম। মুযদালিফায় অবস্থান (ওয়াজিব) মুযদালিফায় থাকাকালীন পাহাড়ে অথবা তার পাদদেশে যে কোন ঘাস দুবলা থেকে খুঁজে খুঁজে পাথর মারার জন্য ৭২টি (চানাবুটের ন্যায় কঙ্কর) ছোট ছোট পাথর সংগ্রহ করে ইহরামের কাপড়ে বেঁধে নিন।
১০/১১/১২ তিন দিনে (৪৯টি পাথর) তিন শয়তানকে মারতে হবে।
–  ১ম দিন ৭টি
–  ২য় দিন ২১টি
–  ৩য় দিন ২১টি
(সর্বমোট তিন দিনে ৭+২১+২১=৪৯টি )। তবে মিসিং হতে পারে বলে বেশী (৭২) নেওয়া সুন্নাত।
৩য় দিন ১০ই জিলহজ্জ
এ দিনের মোট কাজ ৪টি (১) বড় শয়তানকে পাথর মারা (২) কুরবানী (৩) মাথা মুন্ডানো (৪) তাওয়াফে যিয়ারাত করা
–  মুযদালিফায় ফজরের নামাজ পড়ে সূর্য উদয়ের আগ পর্যন্ত অবস্থান করুন (ওয়াজিব)।
–  মিনায় পৌছে বড় শয়তানকে ৭টি পাথর সূর্য হেলার আগে (১২টার পূর্বেই) মারুন। (সুন্নাত)।
–  তারপর তামাত্তু ও কি্বরান হজ্জকারীগণ কুরবানী করুন (ওয়াজিব)।
–  এরপর ইহরাম খুলে হালাল হয়ে স্বাভাবিক পোষাক পরিধান করুন। কিন্তু কোরবানী পূর্বে নয়। (তবে ইফরাদ হজ্জকারী কুরবানী না করলেও চলবে)।
–  চুল ছাড়া বা মুন্ডানোর পর মক্কায় গিয়ে (সম্ভব হলে উত্তম) আজই তাওয়াফে যিয়ারত করুন। আজ করা সর্বোত্তম। (এটা ফরজ)তাওয়াফ শেষে মিনায় এসে রাত্রি যাপন করুন সুন্নাত।
৪র্থ দিন ১১ই জিলহজ্জ
–  ১০ তারিখে কুরবানী, চুল ছাটা ও তাওয়াফে যিয়ারত না করে থাকলে আজ করুন।
–  সূর্য হেলার পর থেকে (১২টার পর) মিনায় তিন শয়তানকে সূর্যাস্তের পূর্বে (প্রথম ছোট, তারপর মেজ অতঃপর বড়) ৭+৭+৭=২১টি পাথর মারুন (ওয়াজিব)। মিনায় রাত্রি যাপন করুন (সুন্নাত)।
৫ম দিন ১২ই জিলহজ্জ
–  তাওয়াফে যিয়ারত ১০/১১ তারিখে না করে থাকলে আজ সূর্যাস্তের পূর্বে অবশ্যই করুন।
–  মিনায় সূর্য হেলার পর থেকে (সুন্নাত সময় হল) সূর্যাস্তের পূর্বে ৭+৭+৭=২১টি পাথর (ছোট, মেজ ও বড় ) শয়তানকে মেরে সূর্যাস্তের পূর্বে) মক্কায় রওয়ানার চেষ্টা করুন।


১. তওয়াফের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ইজতেবা করা। ইজতেবা মানে- ডান কাঁধ খালি রেখে চাদরের মাঝের অংশ বগলের নীচ দিয়ে এনে চাদরের পার্শ্ব বাম কাঁধের উপর ফেলে দেয়া। তওয়াফ শেষ করার পর চাদর পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিবে। কারণ ইজতেবা শুধু তওয়াফের মধ্যে করতে হয়।

২. তওয়াফের প্রথম তিন চক্করে রমল করা। রমল মানে হচ্ছে- ছোট ছোট পদক্ষেপে দ্রুত হাঁটা। আর বাকী চার চক্করে রমল নেই বিধায় স্বাভাবিক গতিতে হাঁটবে। সাত চক্কর তওয়াফ শেষ করার পর ডান কাঁধ ঢেকে নিয়ে মাকামে ইব্রাহিমে আসবে এবং পড়বে-

( وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِإِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى )

(অর্থ- আরতোমরা মাকামে ইব্রাহিমকে তথা ইব্রাহীমেরদাঁড়ানোরজায়গাকেনামাযেরজায়গাবানাও।) [সূরা বাকারা, আয়াত: ১২৫]অতঃপর মাকামে ইব্রাহিমের পিছনে দুই রাকাত নামায আদায় করবে। প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা কাফিরুন পড়বে। দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস পড়বে। নামায শেষ করার পর হাজারে আসওয়াদের নিকট এসে সম্ভব হলে হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করবে। এক্ষেত্রে শুধু স্পর্শ করা সুন্নত। যদি স্পর্শ করা সম্ভবপর না হয় তাহলে ফিরে আসবে; ইশারা করবে না।

তিন: সায়ী

এরপর মাসআ (সায়ীস্থল) তে আসবে। যখন সাফা পাহাড়ের নিকটবর্তী হবে তখন পড়বে

(إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ)

(অর্থ-“নিঃসন্দেহে সাফা ও মারওয়া আল্লাহ তা’আলার নিদর্শনগুলোর অন্যতম”)[সূরা বাকারা, আয়াত: ১৫৮]এরপর বলবে: (نبدأ بما بدأ الله به)(অর্থ- আল্লাহ যা দিয়ে শুরু করেছেন আমরাও তা দিয়ে শুরু করছি)

অতঃপর সাফা পাহাড়ে উঠবে যাতে করে কাবা শরিফ দেখতে পায়। কাবা নজরে আসলে কাবাকে সামনে রেখে দুই হাত তুলে দুআ করবে। দুআর মধ্যে আল্লাহর প্রশংসা করবে এবং যা ইচ্ছা দুআ করবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দুআর মধ্যে ছিল-

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ أَنْجَزَ وَعْدَهُ وَنَصَرَ عَبْدَهُ وَهَزَمَ الأَحْزَابَ وَحْدَهُ.

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহ। লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহ, আনজাযা ওয়াদাহ, ওয়া নাসারা আবদাহ, ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহদা।

(অর্থ- “নেই কোন উপাস্য এক আল্লাহ ব্যতীত। তিনি নিরঙ্কুশ। রাজত্ব তাঁর-ই জন্য। প্রশংসা তাঁর-ই জন্য। তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। নেই কোন উপাস্য এক আল্লাহ ছাড়া। তিনি প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছেন। তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং তিনি একাই সর্ব দলকে পরাজিত করেছেন।)[সহিহ মুসলিম (১২১৮)] এই যিকিরটি তিনবার উচ্চারণ করবেন এবং এর মাঝে দুআ করবেন। একবার এই যিকিরটি বলবেনএরপর দোয়া করেন। দ্বিতীয়বার যিকিরটি বলবেন এবং এরপর দুআ করবেন। তৃতীয়বার যিকিরটি বলে মারওয়া পাহাড়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে যাবেন। তৃতীয়বারে আর দুআ করবেন না। যখন সবুজ কালার চিহ্নিত স্থানে পৌঁছবেন তখন যত জোরে সম্ভব দৌঁড়াবেন। কিন্তু কাউকে কষ্ট দিবেন না। দলিল হচ্ছে- হাদিসে সাব্যস্ত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাফা-মারওয়ার মাঝখানে সায়ী (প্রদক্ষিণ) করেছেন এবং বলেছেন: “আবতাহ দৌঁড়িয়ে পার হতে হবে।” [সুনানে ইবনে মাজাহ (২৪১৯), আলবানী হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন] আবতাহ হচ্ছে- বর্তমানে দুইটি সবুজ রঙে চিহ্নিত স্থান। দ্বিতীয় সবুজ রঙ চিহ্নিত স্থান থেকে স্বাভাবিক গতি হাঁটবে। এভাবে মারওয়াতে পৌঁছবে। মারওয়ার উপরে উঠে কিবলামুখি হয়ে হাত তুলে দুআ করবে। সাফা পাহাড়ের উপর যা যা পড়েছে ও বলেছে এখানে তা তা পড়বে ও বলবে। এরপর মারওয়া থেকে নেমে সাফার উদ্দেশ্যে হেঁটে যাবে। স্বাভাবিকভাবে হাঁটার স্থানে হেঁটে পার হবে; আর দৌঁড়াবার স্থানে দৌঁড়ে পার হবে। সাফাতে পৌঁছার পর পূর্বে যা যা করেছে তা তা করবে। মারওয়ার উপরেও আগের মত তা তা করবে। এভাবে সাত চক্কর শেষ করবে। সাফা থেকে মারওয়া গেলে এক চক্কর। মারওয়া থেকে সাফাতে এলে এক চক্কর। তার সায়ীর মধ্যে যা খুশি যিকির, দুআ, কুরআন তেলাতেয়াত করতে পারবে।

জ্ঞাতব্যঃ

(إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ)

(অর্থ-“নিঃসন্দেহে সাফা ও মারওয়া আল্লাহ তা’আলার নিদর্শনগুলোর অন্যতম”)[সূরা বাকারা, আয়াত: ১৫৮] এই আয়াতটি শুধু সায়ীর শুরুতে সাফার নিকটবর্তী হলে পড়বে। সাফা-মারওয়াতে প্রতিবার আয়াতটি পড়বে না যেমনটি কিছু কিছু মানুষ করে থাকে।

চার: মাথা মুণ্ডন বা চুল ছোট করা:

সাত চক্কর সায়ী শেষ করার পর পুরুষ হলে মাথা মুণ্ডন করবে অথবা মাথার চুল ছোট করবে। মুণ্ডন করলে মাথার সর্বাংশের চুল মুণ্ডন করতে হবে। অনুরূপভাবে চুল ছোট করলে মাথার সর্বাংশের চুল ছোট করতে হবে। মাথা মুণ্ডন করা চুল ছোট করার চেয়ে উত্তম।

কোরআনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

০১) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনুল কারীমে কতটি সূরা আছে? উত্তরঃ ১১৪টি। ০২) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের প্রথম সূরার নাম কি? উত্তরঃ সূরা ফাতিহা। ০৩) প্রশ্ন...