বিবাহ অধ্যায় ঃ
নিকাহ এমন একটি চুক্তি যার মাধ্যমে নারী পুরুষ মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপন বৈধ হয় ।
★বিবাহ সুন্নতে মুয়াক্কাদা,যৌন উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলে বিবাহ করা ওয়াজিব।
★জুলুমের আশঙ্কা থাকলে বিবাহ করা মাকরুহ ।
★বিবাহের রুকন হল ইজাব ও কবুল ।
বিবাহের শর্ত ঃ
১.জ্ঞান বান হওয়া ,বালিক ও আজাদ হওয়া ।
২.পাত্রী বিবাহ যোগ্য হওয়া ।
৩.পাত্র পাত্রী উভয় উভয়ের কথা শ্রবণ করা ।
৪.সাক্ষী থাকা এবং সাক্ষী মুসলমান হওয়া ।
বর কনে অমুসলিম হলে সাক্ষী মুসলমান হওয়া শর্ত নয় ।
বিবাহের সাক্ষী একাধিক হওয়া শর্ত।
★নসব বা রক্তের সম্পর্কের দরুন যে যে মহিলাকে বিবাহ করা হারামঃব্যক্তির মা,বোন,মেয়ে,খালা, ফুফু,ভাগ্নি ও ভাতুষ্পুত্রী ইত্যাদি।
★যদি স্ত্রীর কামোদ্দীপনার সাথে লজ্জাস্থান চুম্বন করে তাহলে পুরো হুরমাত মুসাহারা বলে গণ্য হবে।একইভাবে যদি স্ত্রী স্বামীর লজ্জাস্থানের চুম্বন করে হুরমাত মুসাহারা বলে গন্য হবে।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ তা’আলা বলেন,
হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন। [সূরা আল-হুজুরাতঃ ১৩]
মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদেরজন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। [সূরা আন-নুরঃ৩০]
ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারাযেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদেরসৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবংতারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরেপদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাইআল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরাসফলকাম হও। [সূরা আন-নুরঃ ৩১]
আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ। [সূরাবনী-ইসরাইলঃ ৩২]
নির্লজ্জতার কাছেও যেয়ো না, প্রকাশ্য হোক কিংবা অপ্রকাশ্য [সূরা আল আন’আমঃ ১৫১]
যারা চায় যে, মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রচার ঘটুক তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আর আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না। [সূরাআন-নুরঃ ১৯]
মোহরের বিবরণ ঃ
★মহরের সর্বনিম্ন সীমা হচ্ছে স্ত্রীকে কিছু কোরআনের আয়াত শিক্ষা দেওওয়া
রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর মেয়ে ফাতেমা রাযি.-এর মহর ছিল পাঁচশত দেরহাম। যেমন, মুহাম্মদ ইবন ইবরাহিম রহ. বর্ণনা করেন,
كان صداق بنات رسول اللهﷺ ونساءه خمس مائة درهم ثِنْتَيْ عَشْرَةَ أُوقِيَّةً و نصف
রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর মেয়ে ও স্ত্রীগণের মহর ছিল পাঁচশত দেরহাম অর্থাৎ সাড়ে বার উকিয়া। ( তাবাকাতে ইবনে সাদ ৮/২২)
ইমাম নববী রহ. মাজমু’-গ্রন্থে বলেন,
والمستحب ألا يزيد على خمسمائة درهم، وهو صداق أزواج النبي ﷺ وبناته
মহর পাঁচশত দেরহামের বেশি না হওয়া মুস্তাহাব। এটা রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর স্ত্রীদের ও কন্যাদের মহর ছিল।
তবে মোহরের কোন নির্্দিষ্ট পরিমান নেই।
তালাকের বিবরনঃ
অর্থাৎ ‘হে নবী! (উম্মতকে বলুন) তোমরা যখন স্ত্রীদেরকে তালাক দিতে চাও, তখন তাদেরকে তালাক দিয়ো ইদ্দতের প্রতি
লক্ষ্য রেখে এবং ইদ্দত গণনা করো। তোমরা তোমাদের প্রতিপালক আল্লাাহকে ভয় করো। তাদেরকে তাদের গৃহ থেকে
বহিষ্কার করো না এবং তারাও যেন বের না হয় যদি না তারা কোন সুস্পষ্ট নির্লজ্জ কাজে লিপ্ত হয়। এগুলো আল্লাহরনির্ধারিত সীমা।
যে ব্যক্তি আল্লাহর সীমালংঘন করে, সে নিজেরই অনিষ্ট করে। তুমি জান না, হয়তো আল্লাহ এর পর কোননতুন উপায়
করে দেবেন। (সূরা তালাক, আয়াত নং-১)
উল্লেখিত আয়াতে দেখা যাচ্ছে যে,
স্ত্রীকে তালাক দিলে ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে (ইদ্দত হলো মহিলাদের রজঃস্রাব বা মাসিক চক্র)
ইদ্দত গননা করতে হবে (কয়টি ইদ্দত গণনা করতে হবে সে সম্পর্কে কিছুক্ষন পরে আয়াত পেশ করছি)
কোন সুস্পষ্ট নির্লজ্জ কাজে (যিনা/ব্যভিাচার) লিপ্ত না হলে স্ত্রীকে ঘর থেকে বের করো না অর্থাৎ তালাক দেয়া যাবে না
এ তিনটি বিষয় হলো আল্লাহ কর্তৃক তালাকের নির্ধারিত সীমা, যা লংঘন করলে নিজের অর্থাৎ তালাক প্রদানকারীরঅনিষ্ট হবে
উল্লেখিত তিনটি সীমা তালাকের জন্য নির্দিষ্ট। এর হেরফের হলে তালাক হবে না।
আল্লাহ কোন নতুন উপায় করে দেবেন’ এর ব্যাখ্যায় তাফসীরে মারেফুল কুরআনে বলা হয়েছে ‘
স্বামীর অন্তরেতালাকের ব্যাপারে অনুতপ্ত সৃষ্টি হবে’। ফলে হয়তো তারা আবার সংসার করতে পারবে।
এবার সূরাতালাকের ২নং আয়াতের দিকে লক্ষ্য করি। মহান আল্লাহ এরশাদ করেন,
তালাক
অর্থাৎ ‘অতঃপর তারা যখন তাদের ইদ্দতকালে পৌঁছে, তখন তাদেরকে যথোপযুক্ত পন্থায় রেখে দেবে অথবা যথোপযুক্তপন্থায় ছেড়ে দেবে
এবং তোমাদের মধ্য থেকে দু’জন নির্ভরযোগ্য লোককে সাক্ষী রাখবে।’ (সূরা তালাক-২)
উল্লেখিত আয়াতে দেখা যাচ্ছে যে,
ইদ্দতকালে পৌছলে স্ত্রীকে রাখাও যাবে অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রীর মিল হলে রাখা যাবে অথবা মনের অমিল হলে তালাক দিবে
তালাকের ক্ষেত্রে দুই জন সাক্ষী রাখতে হবে। অর্থাৎ একা একা তালাক তালাক উচ্চারণ করলে তালাক হবে না। আবারপুনরায় সংসার করতে হলেও দুই জন সাক্ষী রাখতে হবে। যদি কেউ বলে তালাকের জন্য কোন স্বাক্ষীর দরকার নেই,পুরুষ তালাক উচ্চারণ করলেই তালাক হবে। তবে তা সম্পূর্ণ কুরআন বিরোধী অর্থাৎ কুফুরী আকিদা।
এবার সূরা তালাকের ৪নং আয়াতের দিকে লক্ষ্য করি। মহান আল্লাহ এরশাদ করেন,
তালাক
অর্থাৎ ‘তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যাদের ঋতুবর্তী হওয়ার আশা নেই, তাদের ব্যাপারে সন্দেহ হলে তাদের ইদ্দত হবে তিনমাস। আর যারা এখনও ঋতুর বয়সে পৌঁছেনি, তাদেরও অনুরূপ ইদ্দতকাল হবে। গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসবপর্যন্ত। যে আল্লাকে ভয় করে, আল্লাহ তার কাজ সহজ করে দেন।’ (সূরা তালাক-৪)
উল্লেখিত আয়াতে দেখা যাচ্ছে যে,
বালেগা নারীদের ক্ষেত্রে ইদ্দত কাল হবে তিন মাসিক বা তিন রজস্রাব
নাবালেগা নারীদের ক্ষেত্রে ইদ্দত কাল হবে তিন মাস
গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে ইদ্দতকাল হবে সন্তান প্রসব পর্যন্ত।
উপরোক্ত সূরা তালাকের তিনটি আয়াত বিশ্লেষণ করলে আমরা পাই যে, স্পষ্ট নির্লজ্জ কাজ পরিলক্ষিত না হলে স্ত্রীকেতালাক
দেয়া যাবে না। আর তালাক দিলে সেক্ষেত্রে তিনটি ইদ্দত তথা মাসিক অপেক্ষা করতে হবে। প্রথম মাসে তালাকদিবে, যদি এর মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর মিল হয়ে যায় তবে তারা পুনরায় সংসার করবে। আর যদি মিল না হয় তবে দ্বিতীয় মাসেতালাক দিবে এবং অপেক্ষা করবে। যদি এবার মিল হয়ে যায় তবে সংসার করবে অথবা তৃতীয় মাসে পুনরায় তালাক দিবে।তৃতীয় মাস পূর্ণ হলে তারা যদি মনে করে সংসার করবে অথবা বিচ্ছিন্ন হবে তাহলে দুজন স্বাক্ষী রেখে চূড়ান্ত ফয়সালাকরবে। অর্থাৎ সংসার করলেও দুজন স্বাক্ষী রাখবে এবং বিচ্ছেদ ঘটালেও স্বাক্ষী রাখবে। তিন ইদ্দতকাল সময় অপেক্ষাকরার মধ্যে হেকমত লুকিয়ে আছে। কেননা নারী যদি গর্ভবতী হয়ে যায় তবে এ তিন মাসের মধ্যেই বোঝা যাবে। আরগর্ভবর্তী নারীদের ক্ষেত্রে ইদ্দতকাল হবে সন্তান প্রসব পর্যন্ত। অর্থাৎ তিন মাস অতিবাহিত হওয়ার পর যদি সন্তান প্রসব নাহয়, তবে সন্তান প্রসব পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সুবহানআল্লাহ! আল্লাহর কি অপার করুনা। সন্তান প্রসবের পরে যদিসন্তানের মুখের দিকে চেয়ে স্বামী-স্ত্রীর মিল হয়ে যায় তাই গর্ভবতীদের জন্য আল্লাহ প্রসব পর্যন্ত ইদ্দতকাল নির্দিষ্ট করেদিয়েছেন।
এখন সূরা বাকারা ২২৮নং আয়াত লক্ষ্য করি। মহান আল্লাহ এরশাদ করেন-
তালাক
অর্থাৎ ‘আর তালাকপ্রাপ্তা নারী নিজেকে অপেক্ষায় রাখবে তিন হায়েয পর্যন্ত। আর যদি সে আল্লাহ প্রতি এবং আখেরাতদিবসের ওপর ঈমানদার হয়ে থাকে, তাহলে আল্লাহ যা তার জরায়ুতে
সৃষ্টি করেছেন তা লুকিয়ে রাখা জায়েয নয়। আর যদিসদ্ভাব রেখে চলতে চায়, তাহলে তাদেরকে ফিরিয়ে নেবার অধিকার তাদের স্বামীরা সংরক্ষণ করে। আর পুরুষদের যেমনস্ত্রীদের ওপর অধিকার রয়েছে, তেমনিভাবে স্ত্রীদেরও অধিকার রয়েছে পুরুষদের ওপর নিয়ম অনুযায়ী। আর নারীদের ওপরপুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। আর আল্লাহ হচ্ছে পরাক্রমশালী,বিজ্ঞ। ।(সূরা বাকারা-২২৮)
উল্লেখিত আয়াতে দেখা যাচ্ছে যে,
এ আয়াতে তালাকের জন্য নারী তিন হায়েজ বা রজঃস্রাব পর্যন্ত অপেক্ষা করবে তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
তালাকপ্রাপ্তা নারী তিন মাস অপেক্ষা করে অর্থাৎ চূড়ান্ত তালাকের পরে অন্য কোথাও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে
তাৎক্ষনিক তালাক ও তাৎক্ষনিক বিবাহ সম্পুর্ণ কুরআন বিরোধী
তিন মাসের মধ্যে জরায়ুতে যা সৃষ্টি হয়েছে তথা গর্ভবতী হলে তা প্রকাশ পাবে
তিন মাসের মধ্যে যদি সদ্ভাব রেখে চলতে চায় তবে পুনরায় সংসার করতে পারে
তালাকের ব্যাপারে পুরুষদের যেমন অধিকার আছে নারীদের ক্ষেত্রেও অধিকার আছে
খন সূরা বাকারা ২২৯নং আয়াত লক্ষ্য করি। মহান আল্লাহ এরশাদ করেন-
তালাক
অর্থাৎ “তালাকে- ‘রজঈ’ হলে দুবার পর্যন্ত- তারপর হয় নিয়মানুযায়ী রাখবে, না হয় সহৃদয়তার সঙ্গে বর্জন করবে।
আরনিজের দেয়া সম্পদ থেকে কিছু ফিরিয়ে নেয়া তোমাদের জন্য জায়েয নয় তাদের কাছ থেকে। কিন্তু যে ক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রীউভয়েই এ ব্যাপারে ভয় করে যে, তারা আল্লাহর নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে না, অতঃপর যদি
তোমাদের ভয় হয় যে, তারাউভয়েই আল্লাহর নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে না, তাহলে সেক্ষেত্রে স্ত্রী যদি বিনিময় দিয়ে অব্যাহতি নিয়ে নেয়, তবেউভয়ের মধ্যে কারোরই কোন পাপ নেই। এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা। কাজেই একে অতিক্রম করো না। বস্তুতযারা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করবে, তারাই হলো জালিম।” (সূরা বাকারা-২২৯)
উল্লেখিত আয়াতে দেখা যাচ্ছে যে,
নিময় অনুযায়ী তালাক সম্পূর্ণ করতে হবে অর্থাৎ তিন ইদ্দত শেষ করে তালাক চূড়ান্ত করতে হবে (তাফসীরেজালালাইন শরীফে
উক্ত আয়াতের ব্যখ্যায় তিন হায়েজে তালাক সম্পূর্ণের কথা বলা আছে)
তালাকে রজঈ অর্থাৎ দুই তালাক তথা দুই ইদ্দত পালনের পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসবে
স্ত্রীকে দেয়া সম্পদ (দেন মোহর) ফিরিয়ে নেয়া নাজায়েজ
কোন ক্ষেত্রে স্ত্রী যদি ধন-সম্পদের বিনিময়ে তালাক নেয়, সেটাও জায়েজ। স্ত্রী যদি ধন-সম্পদের বিনিময়ে স্বামীর নিকটথেকে তালাক নেয়, তবে তাকে খুলআ তালাক বলে।
এখন সূরা বাকারা ২৩১নং আয়াত লক্ষ্য করি। মহান আল্লাহ এরশাদ করেন-
তালাক
অর্থাৎ “আর যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দিয়ে দাও, অতঃপর তারা নির্ধারিত ইদ্দত সমাপ্ত করে নেয়,
তখন তোমরানিয়ম অনুযায়ী তাদেরকে রেখে দাও, অথবা সহানুভূতির সাথে তাদেরকে মুক্ত করে দাও। আর তোমরা তাদেরকে জ্বালাতনও বাড়াবাড়ি করার উদ্দেশ্যে আটকে রেখো না। আর যারা এমন করবে,
নিশ্চয়ই তারা নিজেদেরই ক্ষতি করবে।” (সূরাবাকারা-২৩১)
প্রাক ইসলামী যুগে আরবে তালাকের প্রথাও ছিল। তবে সেই প্রথা ছিল সম্পূর্ণ পুরুষের দয়ার উপর। নারী চাইলেও
তালাকনিতে পারতো না। এমন কি সে সময়ে স্বামী স্বৈরাচারের মত স্ত্রীর সাথে তালাক নামক অস্ত্র নিয়ে নারীর বিড়ম্বনা বাড়িয়েদিত। যেমন যদি কোন স্বামী তার স্ত্রীকে বলতো আমি তোমাকে তালাক দিলাম, সে সময়েও আরবে
তালাক বলার সাথেসাথে তালাক কার্যকর হতো না। স্ত্রীকে তার মাসিকের পর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো। এমন অবস্থায় কোন অবিবেচক স্বামীস্ত্রীর মাসিক চলাকালে তার তালাক প্রত্যাহার করে নিত। এবং ঐ স্ত্রীকে ভোগ করে আবার তালাক দিত। আর এইভাবেএকের পর এক নাটক করে যেত, যার কারণে ঐ নারী তার অত্যাচারী স্বামীর হাত থেকে কখনও মুক্তি পেতে পারতো না।তাই নারীর প্রতি এই অমানবিক জুলুমকে প্রতিহত করে নারীকে মুক্তি দিতে বাধ্য করতে উপরোক্ত আয়াতে কারীমা নাজিলহয়। উপরোক্ত আয়াত দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হয় যে, নারীদের সম্মতিতে তাদেরকে তালাক দেয়া যাবে, তাদেরকে
আটকেরাখা যাবে না এবং জ্বালাতন করা যাবে না। উক্ত আয়াতের দ্বারা ইসলাম পুরুষকে সর্বমোট ৩ দফা তালাক দেয়াবাধ্যবাধকতার মধ্যে নিয়ে আসে,
যাতে কেউ আর নারীকে নিয়ে তালাক তালাক খেলা খেলতে না পারে।
আবার কোন নারীকে স্পর্শ করার পূর্বেই (বাসর রাতের পূর্বে) তালাক দেয়া হলে তার কোন ইদ্দতপালনের প্রয়োজন নেই। যেমন আল্লাহ এরশাদ করেন-
তালাক
অর্থাৎ ‘হে আমানুগণ! তোমরা যখন মুমিন নারীদেরকে বিবাহ কর, অতঃপর তাদেরকে স্পর্শ করার পূর্বে তালাক দিয়ে দাও,
তখন তাদের ইদ্দত পালনে বাধ্য করার অধিকার তোমাদের নেই। অতঃপর তোমারা তাদেরকে কিছু দেবে এবং উত্তম
পন্থায়বিদায় দেবে।” (সূরা আহযাব-৪৯)
যাহোক, সূরা বাকারার আয়াতেও তালাকের ব্যাপারে স্পষ্টতা ফুটে উঠেছে। তা সূরা তালাকের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যেখানেকুরআন শরীফে তালাকের ব্যাপারে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, সেখানে হাদিস শরীফ অনুসন্ধান না করলেও চলে। কেননাহাদিস দিয়ে কুরআনের আয়াত বাতিল করা যায় না। বরং কুরআনের আয়াত দিয়ে হাদিস বাতিল করা যায়। তবে আরওঅধিক বোঝার স্বার্থে হাদিস শরীফ অনুসন্ধান করা যায়, যদি তা সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সহায়ক হয়।
এবার দেখি তালাক সম্পর্কে হাদিস শরীফ কি বলে।
১. হাদিস শরীফে উলেখ আছে, রাগের বশবর্তী হয়ে অর্থাৎ রাগের মাথায় তালাক দিলে তা তালাক বলে গণ্য হবে না।যেমন আবু দাউদ শরীফের কিতাবুত তালাক অধ্যায়ের ‘বাবু ফিত তালাক্বি আ’লা গাইজী’ অর্থাৎ ‘রাগান্বিত অবস্থায়
তালাকদেয়া’ অনুচ্ছেদে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। হাদিস শরীফটি নিম্নরুপঃ
অর্থাৎ মুহাম্মাদ ইবনে উবায়দ ইবনে আবু সালিহ (র) হতে বর্ণিত, যিনি (সিরিয়ার) ইলিয়া নামক স্থানে বসবাস করতেন।তিনি বলেন, আমি সিরিয়া হতে আদী ইবনে আলী আল কিন্দীর সাথে বের হই। এরপর আমরা মক্কায় উপনীত হলে,আমাকে সাফিয়্যা বিনতে শায়বার নিকট তিনি প্রেরণ করেন।
যিনি আয়শা (রা) হতে এ হাদিসটি সংগ্রহ করেন। রাবী বলেন,আমি আয়শা (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেনঃ গিলাক অবস্থায়
কোন তালাক হয় না বা দাসমুক্ত করা যায় না। ইমাম আবু দাউদ (র) বলেন, গিলাক অর্থ রাগান্বিত অবস্থায় তালাক প্রদান করা। (আবু দাউদ শরীফ,৩য় খন্ড, ২১৯১ নং হাদিস)
২. এছাড়া নিদ্রিত ও উন্মাদ (নেশাগ্রস্থ বা রোগগ্রস্থ) অবস্থায় তালাক হয় না। (সুনানু নাসাই শরীফ-৩য় খন্ড,-৩৪৩৩ নংহাদিস এবং সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ-২য় খন্ড-২০৪১, ২০৪২ নং হাদিস)
৩. তালাক হায়েজ তথা রজঃস্রাবের সাথে সম্পর্কিত। এ সম্পর্কে আবু দাউদ শরীফের কিতাবুত তালাক অধ্যায়ের ‘
সুন্নততরিকায় তালাক’ অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে, “আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা) হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)
এর যুগে তাঁরস্ত্রীকে হায়েজ (রজঃস্রাব) অবস্থায় তালাক প্রদান করেন। তখন উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) এ ব্যাপার রাসূলুল্লাহ (সাঃ)
কেজিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, তুমি তাকে তার স্ত্রীকে
ফিরিয়ে আনতে বল এবং হায়েজ হতে পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তাকেনিজের কাছে রাখতে বল। এরপর সে
পুনরায় হায়েজ এবং পুনরায় হায়েজ হতে পবিত্র হলে সে তাকে চাইলে রাখতেও
পারেএবং যদি চায় তাকে তালাক দিতে পারে, এই তালাক অবশ্য তার সাথে সহবাসের পূর্বে পবিত্রাবস্থায়
দিতে হবে। আর এইদ্দত আল্লাহ তায়ালা নারীদের তালাক প্রদানের জন্য নির্ধারিত করেছেন।” (
আবু দাউদ শরীফ, ৩য় খন্ড, ২১৭৬ নং হাদিস)
৪. আবু দাউদ শরীফের কিতাবুত তালাক অধ্যায়ে ‘আলবাত্তাতা’ অর্থাৎ এক শব্দে তিন তালাক
প্রদান করা বিষয়ে উল্লেখিতআছে, “নাফি ইবনে উজায়র ইবনে আবদ ইয়াযীদ ইবনে রুকানা
(রা) হতে বর্ণিত। রুকানা ইবনে আবদ ইয়ায়ীদ তাঁর স্ত্রীসুহায়মাকে ‘আলবাত্তাতা’ (এক শব্দে তিন তালাক)
শব্দের দ্বারা তালাক প্রদান করে। তখন এতদসম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)অবহিত করা হয়। তখন তিনি বলেন,
আল্লাাহর শপথ! আমি এর দ্বারা এক তালাকের ইচ্ছা করি। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন,
আল্লাহর শপথ, তুমি কি এর দ্বারা এক তালাকের ইচ্ছা করেছ? তখন জবাবে রুকানা বলেন,আল্লাহর শপথ!
আমি এর দ্বারা এক তালাকের ইচ্ছা করি। এতদশ্রবণে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁকে স্বীয় স্ত্রী পুনরায় গ্রহণেরনির্দেশ
প্রদান করেন। অতঃপর তিনি উমার (রা) এর খিলাফতকালে তাকে দ্বিতীয় তালাক দেন এবং তৃতীয়
তালাক প্রদানকরেন উসমান (রাঃ) এর খিলাফত কালে।” (আবু দাউদ শরীফ, ৩য় খন্ড, ২২০৩ নং হাদিস)
একসাথে তিন তালাক উচ্চারণকে ইসলামী শরিয়ার পরিভাষায় তালাকে বিদা বলে। একসাথে
তিন তালাক উচ্চারণেতালাক হবে এ ধরণের কোন আইন নবীজি (সাঃ) এর সময়ে ছিল না।
আসলে শারিয়ার এ আইন বানানো হয়েছে নবীজীরঅনেক পরে। এ কথা বলেছেন কিছু বিশ্ববিখ্যাত শারিয়া-সমর্থকরাই।
যেমন, “নবীজীর ওফাতের বহু পরে তালাকের একনূতন নিয়ম দেখা যায়। স্বামী একসাথে তিন-তালাক উচ্চারণ
করে বা লিখিয়া দেয়। এই তালাকে অনুতাপ বা পুনর্বিবেচনারসুযোগ নাই। অজ্ঞ মুসলমানেরা এইভাবে গুনাহ্ করে।
নবীজী তীব্রভাবে ইহাতে বাধা দিয়াছেন”
“নবীজীর সময় থেকে শুরু করে হজরত আবু বকর ও হজরত ওমরের সময় পর্যন্ত একসাথে তিন-তালাক
উচ্চারণকেএক-তালাক ধরা হত। কিন্তু যেহেতু লোকে তাড়াতাড়ি ব্যাপারটার ফয়সালা চাইত তাই হজরত ওমর
একসাথে তিন-তালাককে বৈধ করেন এবং এই আইন চালু করেন” (সূত্রঃ আবু দাউদ শরীফ, ৩য় খন্ড, ২১৯৬নং হাদিস, মুসলিম শরীফ, ৫ম খন্ড, ৩৫৩৮ নং হাদিস)।
তালাক দেওয়া স্ত্রীকে পুনরায় বিয়ে
তালাকের নোটিশের পর পুনরায় বিয়ের ক্ষেত্রে দুই ধরনের অবস্থা হতে পারে। এক, তালাকের নোটিশ দেওয়া হয়েছে কিন্তু তালাক কার্যকর হয়নি। অথবা দুই, তালাক কার্যকর হয়েছে।
তালাকের নোটিশ দেওয়ার পর যে, ৯০ দিন সময় থাকে সেই সময়ের মধ্যে স্বামী-স্ত্রী যদি চান যে তারা আবার সংসার জীবন (conjugal life) শুরু করবেন তাহলে কোন আইনী বাঁধা নেই।
শুধু একটা আনুষ্ঠানিকতা অনুসরণ করতে হবে। স্বামী একটি আবেদনপত্রে বিয়ে রেজিস্ট্রি অফিসের মাধ্যমে নিজের ভুল স্বীকার করে নিলে পুনরায় তালাক দেয়া স্ত্রীকে গ্রহণ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকবে না। আগের মতো সংসার করতে পারবেন।
আর যদি তালাক কার্যকরের পর স্বামী-স্ত্রী আবার বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হতে চান তাহলে তারা নতুন করে বিয়ে করে নিলেই হবে। একটি নতুন সাধারণ বিয়ে যেভাবে হয় সেভাবে বিয়ে করে নিলেই হবে।
হিল্লা বিয়ে
অনেক মুসলিম সমাজেই হিল্লা বিয়ে নামক এক পদ্ধতির কথা বলা আছে। এ পদ্ধতি অনুযায়ী, তালাক প্রাপ্ত স্ত্রীকে যদি স্বামী আবার বিয়ে করতে চান তাহলে ঐ স্ত্রীকে স্বামী ব্যতীত অন্য আরেকজন ব্যক্তির সাথে আগে বিয়ে দিতে হবে। সেই বিয়ে কার্যকর করা হবে অর্থ্যাত স্বামী-স্ত্রী ‘কনজুগাল লাইফে’ প্রবেশ করবেন। তারপর পূর্বের ডিভোর্স দেওয়া স্বামীকে বিয়ে করতে পারবেন।
তবে ইসলাম ধর্ম মতেও, হিল্লা বিয়েকে সমর্থন করা হয় না। অনেক ইসলামিক মনীষী এর বিপক্ষে মত দিয়েছেন। মূলত, তালাক দেওয়া স্ত্রীকে পুনরায় বিয়ে করতে ঐ স্বামীর কোন আইনী বাঁধা নেই।
মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশের ৭ (৫) ধারায় বলা আছে, কোন আইনই স্ত্রীকে একই স্বামীকে, যার সাথে তালাক হয়েছে, বিয়ে করা থেকে বিরত করবে না। তবে তিনবার এমন কাজ করা যাবে। অর্থ্যাত সর্বোচ্চ তিনবার তালাক দেওয়া স্ত্রীকে একই স্বামী বিয়ে করতে পারবেন।
No comments:
Post a Comment