Saturday, 1 February 2020

রাসুলুল্লাহ সাঃ কিসের তৈরী? মিলাদ কিয়াম জায়েজ কি না?

১.রাসুলুল্লাহ সাঃ কিসের তৈরি?
রাসুলুল্লাহ সাঃ নূর নাকি মাটির তৈরি তা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে।
হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সম্পর্কে বর্নিত আছে।
       মিশকাত শরীফ ৫১৩ পৃষ্ঠায় আছে-

عن العرباض بن ساريه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم انه قال انى عند الله مكتوب خاتم النبيين وان ادم لمنجدل فى طينته وساخبركم باول امرى دعوة ابراهيم وبشارة عيسى ورؤيا امى التى رأت حين وضعتنى وقد خرج لها نور اضاءلها منه قصور الشام- رواه فى شرح السنة ورواه احمد عن ابى امامة من قوله ساخبركم الى اخره- (دلائل النبوة ومعرفة احوال صاحب الشريفة للبيهقى ص ۲/۱۳٠ (مشكوة شريف ص ۵۱۳(

হযরত ইরবাদ্ধ ইবনে সারিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত।তিনি রাসূল (ﷺ)থেকে বর্ণনা করেছেন: “নিশ্চয় আঁমি আল্লাহ তায়ালার নিকট নবীগনের (আঃ) পরিসমাপ্তিকারী হিসেবে লিপিবদ্ধ এবং তখন হযরত আদম(আঃ) মাটির সাথে মিশ্রীত ছিলেন।আঁমি শ্রীঘ্রই তোমাদেরকে আঁমার প্রাথমিক অবস্থা সম্পর্কে সংবাদ দেবো।আর তা হচ্ছে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এঁর দোয়া এবং হযরত ঈসা(আঃ) এঁর সুসংবাদ এবং আঁমার মহিয়সী আম্মাজানের অবলোকন যা তিঁনি আঁমাকে প্রসবকালীন দেখেছেন এবং এমন একটি নূর বের হল যা দ্বারা সিরিয়ার বা শ্যাম প্রাসাদ সমূহ আলোকিত হয়ে গেল।
*****দলিল****
*(ক.) মিশকাত শরীফ ৫১৩ পৃষ্ঠা,হাদীস নং ৫৭৫৯
*(খ.) ইবনে হিশাম: আস-সিরাতুন নববীয়্যাহ(বৈরুত: দারু ইয়াহইয়ায়িত তুরাসিল’আরবী,৩য় সং,১৪২১ হিঃ,১ম খণ্ড, ১৯৪-১৯৫ পৃঃ  )যরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহ আনহুমা বলেন,

– ﻋﻦ ﺇﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ : ﻭﺗﻘﻠﺒﻚ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﺎﺟﺪﻳﻦ ، ﻗﺎﻝ : ﻣﻦ ﺻﻠﺐ ﻧﺒﻲ ﺇﻟﻰ ﻧﺒﻲ ﺣﺘﻰ ﺻﺮﺕ ﻧﺒﻴﺎً ، ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺰﺍﺭ ﻭﺭﺟﺎﻟﻪ ﺛﻘﺎﺕ

অর্থাৎ এক নবী থেকে আরেক নবীর পৃষ্টদেশে (অবস্থান করে) অবশেষে আঁপনি নবী হয়েছেন।
[মাজমাউয যাওয়াইদ/কিতাবুত তাফসীর ৭ম খন্ড/ ৮৬ পৃস্টা] হাদিসটি সহীহ।

★৫. তাফসীরে কবীরে সূরা বাকারার ২৫৩ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় আদম (আ:) এঁর উপর রাসূল (ﷺ) এঁর শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে:

أن الملائكة أمروا بالسجود لآدم لأجل أن نور محمد عليه السلام في جبهة آدم
নিশ্চয় ফেরেশতাদেরকে আদম (আ:) কে সেজদা করতে আদেশ করা হয়েছিল। কারণ, আদম (আ:) এঁর পেশানীতে মুহাম্মাদ (ﷺ) এঁর নূর ছিল।

*****দলিল*****
*(ক.) তাফসীরে কবীর,১ম খন্ড,পৃঃ ৩১৮
*(খ.) তাফসীরে লুবাব,৩য় খন্ড,
পৃ: ২৩৩
*(গ.) তাফসীরে নিশাপুরী,২য় খন্ড, পৃ:১০৭

হযরত আব্দুল্লাহ (রা:) এঁর পেশানীতে নবী (ﷺ) এঁর নূর মোবারক ছিল।

وأخبرنا وهب بن جرير بن حازم أخبرنا أبي قال سمعت أبا يزيد المدني قال نبئت أن عبد الله أبا رسول الله صلى الله عليه و سلم أتى على امرأة من خثعم فرأت بين عينيه نورا ساطعا إلى السماء فقالت هل لك في قال نعم حتى أرمي الجمرة فأنطلق فرمى الجمرة ثم أتى امرأته آمنة بنت وهب ثم ذكر يعني الخثعمية فأتاها فقالت هل أتيت امرأة بعدي قال نعم أمرأتي آمنة بنت وهب قالت فلا حاجة لي فيك انك مررت وبين عينيك نور ساطع إلى السماء فلما وقعت عليها ذهب فأخبرها أنها قد حملت خير أهل الأرض

রাসূল (ﷺ)এঁর পিতা আব্দুল্লাহ খাসয়াম গোত্রীয় এক মহিলার নিকট গেলে সে তাঁর দু’চোখের মাঝে আকাশ পর্যন্ত একটি উজ্জল নূর দেখতে পেল। সে বলল,তোমার কি আমাতে প্রয়োজন আছে ? তিনি বললেন,হ্যাঁ।তবে আমি জামরায় পাথর মারব। অত:পর তিনি জামরায় পাথর মেরে স্বীয় স্ত্রী আমেনা বিনতে ওহাব এর নিকট গেলেন।পরে যখন খাসয়ামী মহিলার কথা মনে পড়লে তিনি তার নিকট আসলেন। সে জিজ্ঞেস করল,তুমি কি আমার সাথে দেখা করার পরে কোন মহিলার সাথে মিলিত হয়েছিলে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমার স্ত্রী আমেনা বিনতে ওহাবের সাথে।সে বলল,তাহলে তোমাতে আমার কোন প্রয়োজন নাই। তুমি যখন যাচ্ছিলে আমি তোমার দু’চোখে মধ্যখানে আকাশ পর্যন্ত প্রলম্বিত একটি উজ্জল নূর দেখতে পেয়েছিলাম। আর যখন তুমি তার সাথে মিলিত হয়েছো,সে নূরটি চলে গিয়েছে। আর সে বলল, উক্ত আমেনা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিকে গর্ভধারণ করেছেন।এ নূরটি ছিল রাসুলুল্লাহ সাঃ  এর নূর।

তা ছাড়া আবার কিছু মানুষ কোরআন শরিফ  থেকে দলিল দেয় এবং বলে রাসুুলুল্লাহ সাঃ  মাটির তৈরি।
সূরা কাহাফের ১১০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَمَنْ كَانَ يَرْجُوا لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا (110

“Previous Verse Surah Al-Kahf : Verse No 110 of 110
Arabic Text,


Say you, 'apparently in facial outlook of a man, I am like you, I receive revelation that your God is one God,then who-so-ever hopes to meet his Lord, he should do noble deeds and associate not any one in the worshipof his Lord.(হে নবী!) আপনি বলুন, (দৈহিক দৃষ্টিতে) আমি তো তোমাদের মতই মানুষ, (তবে আত্মিক উৎকর্ষ ও ঐশী ধারণক্ষমতার অধিকারী হওয়ার কারণে) আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় তথা ওহী নাজিল হয় যে, আমার ও তোমাদের উপাস্য কেবল এক অদ্বিতীয় উপাস্য। সুতরাং যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাতের আশা করে সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার প্রতিপালকের উপাসনায় কাউকে তাঁর অংশী না করে।” (১৮:১১০)
সূরা সোয়াদ আয়াত নংإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِّن طِينٍ

স্মরণ করুন, যখন আপনার রব ফেরেশতাদেরকে বলেছিলেন, 'আমি মানুষ সৃষ্টি করছি কাদা থেকে,

When your Lord said to the angels; Surely I am going to create a mortal from dust.
এখানে রাসুলুল্লাহ সাঃ কে স্মরণ  বা মনে করার কথা বলা হয়েছে।তার মানে  রাসুলুল্লাহ সাঃ পূূূূর্বের থেকেই এ বিষয় সম্পর্কে জানতেন। এর মানে মাটির মানুষ সৃৃষ্টি র পূর্বেই   তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে।

خُلِقَ مِن مَّاءٍ دَافِقٍ

‘তাকে (মানুষকে) সৃষ্টি করা হয়েছে সবেগে-স্খলিত পানি থেকে।’ [সুরা ত্বারীক : আয়াত ৬]

    ثُمَّ كَانَ عَلَقَةً فَخَلَقَ فَسَوَّىٰ

‘তারপর সে হলো একটি রক্তপিন্ড, তারপর তিনি আকৃতি দান করলেন ও পূর্ণাঙ্গ করলেন।’ [সুরা কিয়ামাহ : আয়াত ৩৮]

    وَخَلَقْنَاكُمْ أَزْوَاجًا

‘আর আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি জোড়ায়-জোড়ায়।’ [সুরা নিসা : আয়াত ৮]

    أَيُشْرِكُونَ مَا لَا يَخْلُقُ شَيْئًا وَهُمْ يُخْلَقُونَ

‘তারা কি অংশীদার বসায় তাকে যে কিছুই সৃষ্টি করে না? বরং তাদেরই সৃষ্টি করা হয়েছে।’ [সুরা আ’রাফ : আয়াত ১৯১]

    وَقَدْ خَلَقَكُمْ أَطْوَارًا

‘অথচ তিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন স্তরে-স্তরে।’ [সুরা নুহ : আয়াত ১৪]

    أَفَمَن يَخْلُقُ كَمَن لَّا يَخْلُقُ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ

‘যিনি সৃষ্টি করেন তিনি কি তবে তার মতো যে সৃষ্টি করে না? তবুও কি তোমরা মনোযোগ দেবে না?’ [সুরা নাহল : আয়াত ১৭]

    خَلَقَ الْإِنسَانَ مِنْ عَلَقٍ

‘সৃষ্টি করেছেন মানুষকে এক রক্তপিন্ড থেকে।’ [সুরা আলাক : আয়াত ২]

    مِن نُّطْفَةٍ خَلَقَهُ فَقَدَّرَهُ

‘এক শুক্রকীট থেকে তিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন, তারপর তিনি তাকে সুসমঞ্জস করেছেন।’ [সুরা আবাসা :  আয়াত ১৯]

    فَلْيَنظُرِ الْإِنسَانُ مِمَّ خُلِقَ

‘সুতরাং মানুষ ভেবে দেখুক কি থেকে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে।’ [সুরা ত্বারীক : আয়াত ৫]

    لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ فِي كَبَدٍ

‘আমরা নিশ্চয়ই মানুষকে সৃষ্টি করেছি শ্রমনির্ভর করে।’ [সুরা বালাদ : আয়াত-৪]

    أَلَمْ نَخْلُقكُّم مِّن مَّاءٍ مَّهِينٍ

‘তোমাদের কি আমি সৃষ্টি করিনি এক তুচ্ছ জলীয় পদার্থ থেকে?’ [ সুরা মুরসালাত : আয়াত-২০]

এখানে সবগুলো দলিল হল  মানব সৃষ্টির ব্যাপারে কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাঃ কে কি দিয়ে সৃৃষ্টি করেছেন সে  ব্যাপারে কোন কোরানের  আয়াত নেই। তাই বলা যায় রাসুলুল্লাহ সাঃ মানুষ কিন্তু অসাধারণ ও উত্তম চরিত্রের মানুষ। যার সাথে সাধারণত মানুষের তুলনা করা যাবে না। রাসুলুল্লাহ সাঃ আল্লাহর সৃষ্টির একটি অন্যতম সৃষ্টি। ধারণার মাধ্যমে! তাকে কি দিয়ে আল্লাহপাক সৃষ্টি করেছেন? তা নিয়ে ফিতনা সৃষ্টি করা উচিত নয়। ★এই প্রসঙ্গে পবিত্র হাদিস শরীফে এরশাদ হয়েছে ,
 ” ﻋَﻦْ ﺍَﺑِﻰ ﻗَﺘَﺪَﺓَ ﺍﻻَﻧْﺼﺎَﺭِﻯ ﺭَﺿِﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﻨﻪُ ﺍَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ
ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺱﺀﻝ ﻋَﻦْ ﺻَﻮْﻡِ ﻳَﻮْﻡ ﺍﻻِﺛْﻨَﻴْﻦِ ﻗَﻞَ ﺫَﺍﻙَ ﻳَﻮْﻡٌ ﻭُﻟِﺪْﺕُ ﻓِﻴْﻪِ ﺑُﻌِﺜْﺖُ ﺍَﻭْﺍُﻧْﺰِﻝَ ﻋَﻠَﻰَّ ﻓِﻴْﻪِ –
অর্থাৎ হজরত আবু কাতাদা ( রা ) হতে বর্ণিত , একজন সাহাবী হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে আরজ করলেন ই রাসুলাল্লাহ , ইয়া হাবিবাল্লাহ আমার মাতা পিতা আপনার নূরের পাক কদমে কুরবান হোক | আপনি প্রতি সোমবার রোজা পালন করেন কেন ? জবাবে সরকারে দুজাহান নূরে মুজাস্সাম হাবিবুল্লাহ হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন , এই দিনে আমার জন্ম হয়েছে , এই দিনে আমি প্রেরিত হয়েছি এবং পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ এই দিনেই আমার উপর নাজিল হয়েছে | (সহীহ মুসলিম শরীফ ২য় খন্ড, ৮১৯ পৃষ্ঠা, বায়হাকী: আহসানুল কুবরা, ৪র্থ খন্ড ২৮৬ পৃ: মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল ৫ম খন্ড ২৯৭ পৃ: মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৪র্থ খন্ড ২৯৬পৃ: হিলিয়াতুল আউলিয়া ৯ম খন্ড ৫২ পৃ:)

বুখারী শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাকারী আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী , ইমাম বদরুদ্দিন আইনি বুখারী শরীফের ব্যাখ্যায় লিখেন ,

ﻭﺫﻛﺮ ﺍﻟﺴﻬﻴﻠﻲ ﺍﻥ ﺍﻟﻌﺒﺎﺱ ﻗﺎﻝ ﻟﻤﺎ ﻣﺎﺕ ﺍﺑﻮ ﻟﻬﺐ ﺭﺍﻳﺘﻪ ﻓﻲ
ﻣﻨﺎﻣﻲ ﺑﻌﺪ ﺣﻮﻝ ﻓﻲ ﺷﺮ ﺣﺎﻝ ﻓﻘﺎﻝ ﻣﺎ ﻟﻘﻴﺖ ﺑﻌﺪ
ﻛﻢ ﺭﺍﺣﺔ ﺍﻻ ﺍﻥ ﺍﻟﻌﺬﺍﺏ ﻳﺨﻔﻒ ﻋﻨﻲ ﻓﻲ ﻛﻞ ﻳﻮﻡ ﺍﺛﻨﻴﻦ ﻭﺫﻟﻚ ﺍﻥ
ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻭﻟﺪ ﻳﻮﻡ ﺍﻻﺛﻨﻴﻦ ﻭﻛﺎﻧﺖ ﺛﻮﻳﺒﺔ
ﺑﺸﺮﺕ ﺍﺑﺎ ﻟﻬﺐ ﺑﻤﻮﻟﺪﻩ ﻓﺎﻋﺘﻘﻬﺎ

অর্থাৎ হজরত আব্বাস ( রা ) বর্ণনা করেন , ” আবু লাহাবের মৃত্যুর এক বছর পর আমি তাকে স্বপ্নে দেখি | সে আমাকে বলে ভাই আব্বাস আমার মৃত্যুর পর থেকে কবরের জিন্দেগীতে আমি শান্তিতে নেই | কিন্তু প্রতি সোমবার এলেই আমার শাস্থি লাগব করে দেওয়া হয় | এই ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে হজরত আব্বাস ( রা ) বলেন আবু লাহাবের এই সোমবারের শাস্তি লাগবের কারণ হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিলাদত শরীফ উপলক্ষে হুজুর যেদিন জন্ম গ্রহণ করেছিলেন নবীজির শুভাগমনে খুশি হয়ে হজরত সুয়াইবা ( রা ) আজাদ করে ছিলেন | (ফাতহুল বারি সরহে সহীহুল বুখারী , অম্দাতুল কারী শরহে সহীহুল বুখারী )|

এখন কথা হলো আবু লাহাবের মত কাট্টা কাফের যদি নবীজির একদিনের বেলাদত শরীফে খুশি হয়ে প্রতি সপ্তাহে প্রতি সোমবার তার জাহান্নামের আজাব লাগব হয়ে যায় , আমরা যারা মুমিন মুসলমান তারা জীবনে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কতগুলা বেলাদত শরীফ খুশি মনে পালন করে তার বিনিময়ে কি জান্নাত পেতে পারিনা ?

★এই প্রসঙ্গে উপমহাদেশের প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ অলিয়ে কামেল শায়খ আব্দুল হক মহাদ্দেসে দেহলভী ( রহ ) বলেন ,

ﻣﻦ ﻋﻈﻢ ﻟﻴﻠﺔ ﻣﻮﻟﺪﻩ ﺑﻤﺎ ﺍﻣﻜﻨﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﺘﻌﻈﻴﻢ ﻭﺍﻻﻛﺮﺍﻡ ﻛﺎﻥ ﻣﻦ
ﺍﻟﻔﺎﺀﺯﻳﻦ ﺑﺪﺍﺭ ﺍﻟﺴﻼﻡ
অর্থাৎ যারা হাবিবুল্লাহ হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিলাদত শরীফকে সম্মান ও তাজিম করবে এবং খুশি মনে পালন করবে সে চির শান্তির জায়গা জান্নাতের অধিকারী হবে |
(মাছাবাতা বিস সুন্নাহ ১ম খন্ড, খুত্বায়ে ইবনে নাবাতা) |

অতএব হাদিস শরিফ থেকে মহা পবিত্র ঈদ উল আজম ঈদ ই মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বৈধতা স্পষ্টভাবে প্রমানিত হলো , এরপরও যদি কেউ পবিত্র মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিপক্ষে কথা বলে , বেদাতের ফতুয়া দেয় বুঝতে হবে সে হয়তো অন্ধ , মুর্খ নতুবা মুনাফেক রাসুল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জাত শত্রু | কেননা অন্ধ আর মূর্খর পক্ষে হাদিস পড়া সম্ভব না আর মুনাফেক ছাড়া কেউ রাসুল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শান মান তথাপি উনার পবিত্রজন্মদিনকে অস্বীকার করতে পারেনা !

হযরত আল্লামা জালাল উদ্দীন সূয়ুতী রাহিমামুল্লাহ আলাইহি যার সনদ সহ প্রায় ২ লক্ষ হাদিস শরীফ মুখস্থ ছিল সেই তাজুল মুফাস্সিরীন মোহাদ্দেস মুসান্নিফ সুয়ুতি রাহিমামুল্লাহ আলাইহি তিনি উনার বিখ্যাত কিতাব ” সুবলুল হুদা ফি মাওলেদে মুস্তাফা আলাইহি ওয়া সাল্লাম “” এ দুই খানা সহি হাদিস শরীফ বর্ণনা করেছেন |
পবিত্র হাদিস শরীফে এরশাদ হয়েছে “
ﻋَﻦْ ﺍَﺑِﻰ ﺍﻟﺪَّﺭْﺩَﺍﺀِ ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻪُ ﺍَﻧَّﻪﻣَﺮَّ ﻣَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ
ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺍِﻟٰﻰﺑَﻴْﺖِ ﻋَﺎﻣِﺮِ ﺍﻻَﻧْﺼَﺎﺭِﻯِّ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻳُﻌَﻠِّﻢُ ﻭَﻗَﺎﺋِﻊَﻭِﻻﺩَﺗﻪِ ﺻَﻠَّﻰ
ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻻَﺑْﻨَﺎﺋِﻪﻭَﻋَﺸﻪِﺗَﺮْﻴِ ﻭَﻳَﻘُﻮْﻝُ ﻫٰﺬَﺍ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﻫٰﺬَﺍ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَﻓَﻘَﺎﻝَ
ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺼَّﻠٰﻮﺓُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡُ ﺍِﻥَّ ﺍﻟﻠﻪَ ﻓَﺘَﺢَﻟَﻚَ ﺍَﺑْﻮَﺍﺏَ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﺔِ ﻭَﺍﻟْﻤَﻼﺋِﻜَﺔُ
ﻛُﻠُّﻬُﻢْﻳَﺴْﺘَﻐْﻔِﺮُﻭْﻥَ ﻟَﻚَ ﻣَﻦْ ﻓَﻌَﻞَ
ﻓِﻌْﻠَﻚَ ﻧَﺠٰﻰﻧَﺠٰﺘَﻚ
অর্থাৎ হজরত আবু দ্বারদা ( রা ) হতে বর্ণিত , হাবিবুল্লাহ হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন হজরত আমির আনসারী ( রা ) এর গৃহে গেলেন এবং হুজুর দেখতে পেলেন আমির আনসারী ( রা ) উনার পরিবার পরিজন ও আত্বীয় স্বজনদের নিয়ে        একত্রিত হয়ে খুশি মনে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিলাদত শরীফ পাঠ করছেন | অর্থাৎ নবীজি এইদিনে পৃথিবীতে আসছেন , পৃথিবীতে প্রত্যেকটা মাখলুক আনন্দিত হয়ে ইত্যাদি | এই ঘটনা শ্রবণ করে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত অনদিত হয়ে হজরত আমির আনসারীকে বললেন ,আল্লাহ পাক আপনার জন্য উনার রহমতের দরজা প্রশস্থ করেছেন এবং সমস্থ ফেরেস্থাগন আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন | যে আপনার জন্য এইরূপ কাজ করবে সেও আপনার মত নাজাত ( ফজিলত ) লাভ করবে | ( সুবহান আল্লাহ )

পবিত্র হাদিস শরীফে আরো এরশাদ হয়েছে “
ﻋَﻦْ ﺍِﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻬُﻤَﺎ ﺍَﻧَّﻪٗﻛَﺎﻥَ ﻳُﺤَﺪِّﺙُ ﺫَﺍﺕَ ﻳَﻮْﻡٍ
ﻓِﻰْ ﺑَﻴْﺘِﻪٖ ﻭَﻗَﺎﺋِﻊَﻭِﻻﺩَﺗٖﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻟِﻘَﻮْﻡٍ ، ﻓَﻴَﺴْﺘَﺒْﺸِﺮُﻭْﻥَ
ﻭَﻳُﺤَﻤِّﺪُﻭْﻥَ ﺍﻟﻠﻪَ ﻭَﻳُﺼَﻠُّﻮْﻥَﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓَﺎِﺫَﺍ ﺟَﺎﺀَﺍﻟﻨَّﺒِﻰُّ
ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ ﺣَﻠَّﺖْﻟَﻜُﻢْ ﺷَﻔَﺎﻋَﺘِﻰْ
অর্থাৎ হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ( রা ) নিজেই বর্ণনা করেন , একদা তিনি উনার গৃহে সাহাবায়ে কেরামদের নিয়ে একত্রিত হয়ে হুজুর পুর নূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিলাদত শরীফ পাঠ করছিলেন |( এই দিনে হুজুর পৃথিবীতে আসছেন , স্বয়ং আল্লাহ উনার হাবিবের উপর দুরুদ সালাম দিয়েছেন ) শ্রবন্কারীরাও তা শুনে আনন্দ পাচ্ছিলেন | ঠিক ওই সময় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে উপস্থিত হয়ে বললেন , তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেছে “|
এই হাদিসটি বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থে এসেছে যেমন : মাওলুদুল কবীর , আত তানভীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযার , হকিকতে মোহাম্মদী ( মিলাদ অধ্যায় ), দুররুল মুনাজ্জাম , ইশবাউল কালাম |

অতএব উপরোক্ত সহি হাদিসের মাধ্যমে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বৈধতা প্রমানিত হলো , এরপরও যদি কেউ পবিত্র মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিপক্ষে কথা বলে , বেদাতের ফতুয়া দেয় বুঝতে হবে সে হয়তো অন্ধ , মুর্খ নতুবা মুনাফেক রাসুল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জাত শত্রু | কেননা অন্ধ আর মূর্খর পক্ষে হাদিস পড়া সম্ভব না আর মুনাফেক ছাড়া কেউ রাসুল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শান মান তথাপি উনার পবিত্র জন্মদিনকে অস্বীকার করতে পারেনা !নবীগনের যুগে মিলাদুন্নবী:

★১। হযরত আদম আলাইহিস সালাম এর যুগে মিলাদ প্রত্যেক নবী নিজ নিজ যুগে আমাদের প্রিয়নবী ও আল্লাহর প্রিয় হাবিব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আবির্ভাবের সুসংবাদ দিয়ে গেছেন | হযরত আদম আলাইহিস সালাম তাঁর প্রিয় পুত্র ও প্রতিনিধি হযরত শীস আলাইহিস সালাম কে নুরে মুহাম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর তাজিম করার জন্য নিম্ন অসিয়ত করে গেছেন |

★★অনুবাদ অংশ টি নিম্নে বর্ননা করা হলোঃ

[” আদম আলাইহিস সালাম আপন পুত্র হযরত শীস আলাইহিস সালাম কে লক্ষ্য করে বললেন : হে প্রিয় বৎস , আমার পরে তুমি আমার খলিফা | সুতরাং এই খেলাফত কে তাকওয়ার তাজ ও দৃঢ় একিনের দ্বারা মজবুত করে ধরে রেখো | আর যখনই আল্লাহর নাম ঝিকির (উল্লেখ) করবে তাঁর সাথেই মুহাম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নামও উল্লেখ করবে | তাঁর কারন এই : আমি রূহ ও মাটির মধ্যবর্তী থাকা অবস্থায়ই তাঁর পবিত্র নাম আরশের পায়ায় (আল্লাহর নামের সাথে ) লিখিত দেখেছি | এরপর আমি সমস্ত আকাশ ভ্রমন করেছি | আকাশের এমন কোন স্থান ছিলনা যেখানে মুহাম্মাদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নাম অন্কিত পাইনি? আমার রব আমাকে বেহেস্তে বসবাস করতে দিলেন | বেহেস্তের এমন কোন প্রাসাদ ও কামরা পাইনাই যেখানে মুহাম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নাম ছিলনা ? আমি মুহাম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নাম আরোও লিখিত দেখেছি সমস্ত হয়রদের স্কন্ধ দেশে , বেহেস্তের সমস্ত বৃক্ষের পাতায় , বিশেষ করে তুলা বৃক্ষের পাতায় পাতায় , পর্দার কিনারায় এবং ফেরেসতাগনের চোখের মনিতে ঐ নাম অঙ্কিত দেখেছি | সুতরাং হে শীস ! তুমি এই নাম বেশী বেশী করে জপতে থাক | কেননা ,ফেরেস্তাগন পুর্ব হতেই এই নাম জপনে মশগুল রয়েছেন ” [ জুরকানি শরীফ ] |

উল্লেখ্য যে সর্ব প্রথম দুনিয়াতে ইহাই ছিল জিকরে মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম |

হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম এর মিলাদ পাঠ ও কেয়াম :

হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম যখন আল্লাহর ঘর  তৈরী করছিলেন , তখন ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম উক্ত ঘরের নির্মাণ কাজ কবুল করার জন্য নিজের ভবিষ্যৎ সন্তানাদিদের মুসলমান হয়ে থাকার জন্য আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করার পর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বা কেয়াম করে নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আবির্ভাব আরবে ও হযরত ইসমাইলের বংশে হওয়ার জন্য এভাবে দোয়া করেছেন |

অর্থাৎ হে আমার রব ! তুমি এই আরব ভুমিতে আমার ইসমাইলের বংশের মধ্যে তাদের মধ্যে হতেই সেই মহান রাসুলকে প্রেরণ করো- যিনি তোমার আয়াত সমুহ তাদের কাছে পাঠ করে শুনাবেন , তাদেরকে কোরআন সুন্নাহর বিশুদ্ধ জ্ঞান শিক্ষা দেবেন এবং বাহ্যিক ও আত্বিক অপবিত্রতা থেকে তাদের পবিত্র করবেন | [সুরাহ আল বাকারা ১২৯ আয়াত ]

এখানে দেখা যায় হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৪০০০ বৎসর পুর্বেই মুনাজাত আকারে তাঁর আবির্ভাব , তাঁর সারা জিন্দেগীর কর্ম চাঞ্চল্য ও মাণুষের আত্বার পরিশুদ্ধির ক্ষমতা বর্ননা করে হুজুর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আর মিলাদের সারাংশ পাঠ করেছেন এবং এই মুনাজাত বা মিলাদ দন্ডায়মান অবস্থাই করেছেন যা পুর্বের দুটি আয়াতের মর্মে বুঝা যায় |

ইবনে কাছির তাঁর আল্ বেদায়া ও নেহায়া গ্রন্থে ২য় খন্ডে ২৬১ পৃষ্ঠায় লিখেছেন ” দোয়া ইব্রাহিমু আলাইহি ওয়া সাল্লামু ওয়াহুয়া কায়েমুন

“অর্থাৎ উক্ত দোয়া করার সময় ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম দন্ডায়মান ছিলেন | নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেণ ” আনা দুয়াওতু ইব্রাহীমা ” আমি হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর দোয়ার ফসল |” হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম আল্লাহর নিকট থেকে চেয়ে আমাদের প্রিয় নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে আরবের ইসমাইল আলাইহিস সালাম এর বংশে নিয়ে এসেছেন | এটা উপলব্ধির বিষয় | আশেক ছাড়া এ মর্ম অন্য কেউ বুঝবে না | বর্তমান মিলাদ শরীফে রাসুলে পাঁকের আবির্ভাবের যে বর্ননা দেয়া হয় তা হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর দোয়ার তুলনায় সামান্যতম অংশ মাত্র | সুতরাং আমাদের মিলাদ শরিফ পাঠ ও কেয়াম হযরত ইব্রাহীম আলাহিস সালামেরই সুন্নাত । [ বেদায়া ও নেহায়া ২য় খন্ড ২৬১পৃষ্ঠ ]

হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম নবী করীম (সা) এর মিলাদ পাঠ ও কেয়াম:

নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ৫৭০ বৎসর পুর্বে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম আবির্ভাব | তিনি তাঁর উম্মত হাওয়ারী ( বনি ইসরাইল ) কে নিয়ে নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মিলাদ শরীফ পাঠ করেছেন | উম্মতের কাছে তিনি আখেরী জামানার পয়গম্বর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নাম ও সানা সিফাত এবং আগমন বার্তা এভাবে বর্নণা করেছেন : অর্থাৎ “

হে আমার প্রিয় রাসুল ! আপনি স্বরণ করে দেখুন ঐ সময়ের কথা যখন মরিয়মেম তনয়া ঈসা আলাইহিস সালাম বলেছেন :

হে বনী ইসরাইল , আমি তোমাদের কাছে নবী হয়ে প্রেরিত হয়েছি |
আমি আমার পূর্ববর্তী তাওরাত সত্যতার সাক্ষ্য দিচ্ছি এবং এমন এক মহান রাসুলের সুসংবাদ দিচ্ছি

যিনি আমার পরে আগমন করবেন এবং তাঁর নাম হবে আহমদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম [ সুরা আছ- ছফ ৬ আয়াত ]

হযরত ঈসা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ভাষন সাধারনত দন্ডায়মান হতো আর এটাই ভাষনের সাধারন রীতি ও বতে | ইবনে কাছির- আল বেদায়া ও নেহায়া গ্রন্থের ২য় খন্ডে ২৬১ পৃষ্ঠায়

উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন : ” আখাতোবা ঈসা আলাইহেস সালামু উম্মাতাহুল হাওয়ারিইনা কায়েমা”

” অর্থ্যাৎ হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম দন্ডায়মান (কেয়াম) অবস্থায় তাঁর উম্মৎ হাওয়ারীদেরকে নবীজীর আগমনের সুসংবাদ দিয়ে বক্তৃতা করেছেন ” |বুখারী শরীফের বিখ্যাত

ব্যক্ষাকারী আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী , এমাম বদরুদ্দিন আইনি বুখারী শরীফের ব্যক্ষায় লিখেন ,

ﻭﺫﻛﺮ ﺍﻟﺴﻬﻴﻠﻲ ﺍﻥ ﺍﻟﻌﺒﺎﺱ ﻗﺎﻝ ﻟﻤﺎ ﻣﺎﺕ ﺍﺑﻮ ﻟﻬﺐ ﺭﺍﻳﺘﻪ ﻓﻲ

ﻣﻨﺎﻣﻲ ﺑﻌﺪ ﺣﻮﻝ ﻓﻲ ﺷﺮ ﺣﺎﻝ ﻓﻘﺎﻝ ﻣﺎ ﻟﻘﻴﺖ ﺑﻌﺪ

ﻛﻢ ﺭﺍﺣﺔ ﺍﻻ ﺍﻥ ﺍﻟﻌﺬﺍﺏ ﻳﺨﻔﻒ ﻋﻨﻲ ﻓﻲ ﻛﻞ ﻳﻮﻡ ﺍﺛﻨﻴﻦ ﻭﺫﻟﻚ ﺍﻥ

ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻭﻟﺪ ﻳﻮﻡ ﺍﻻﺛﻨﻴﻦ ﻭﻛﺎﻧﺖ ﺛﻮﻳﺒﺔ

ﺑﺸﺮﺕ ﺍﺑﺎ ﻟﻬﺐ ﺑﻤﻮﻟﺪﻩ ﻓﺎﻋﺘﻘﻬﺎ

অর্থাৎ হজরত আব্বাস ( রা ) বর্ণনা করেন , ” আবু লাহাবের মৃত্যুর এক বছর পর আমি তাকে স্বপ্নে দেখি |

সে আমাকে বলে ভাই আব্বাস আমার মৃত্যুর পর থেকে কবরের জিন্দেগীতে আমি শান্তিতে নেই |

কিন্তু প্রতি সোমবার এলেই আমার শাস্থি লাগব করে দেওয়া হয় | এই ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে হজরত আব্বাস ( রা )

বলেন আবু লাহাবের এই সোমবারের শাস্তি লাগবের কারণ হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিলাদত শরীফ

উপলক্ষে হুজুর যেদিন জন্ম গ্রহণ করেছিলেন নবীজির শুভাগমনে খুশি হয়ে হজরত সুয়াইবা ( রা ) আজাদ করে ছিলেন | ( ফাতহুল বারি সরহে সহীহুল বুখারী , অম্দাতুলকারী শরহে সহীহুল বুখারী )|

এখন কথা হলো আবু লাহাবের মত কাট্টা কাফের যদি নবীজির একদিনের বেলাদত শরীফে খুশি হয়ে প্রতি সপ্তাহে প্রতি সোমবার তার জাহান্নামের আজাব লাগব হয়ে যায় ,

আমরা যারা মুমিন মুসলমান তারা জীবনে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কতগুলা বেলাদত শরীফ খুশি মনে পালন করে তার বিনিময়ে কি জান্নাত পেতে পারিনা বা নাজাত পেতে পারিনা ?

এই প্রসঙ্গে উপমহাদেশের প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ অলিয়ে কামেল শায়খ আব্দুল হক মহাদ্দেসে দেহলভী ( রহ ) বলেন ,

ﻣﻦ ﻋﻈﻢ ﻟﻴﻠﺔ ﻣﻮﻟﺪﻩ ﺑﻤﺎ ﺍﻣﻜﻨﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﺘﻌﻈﻴﻢ ﻭﺍﻻﻛﺮﺍﻡ ﻛﺎﻥ ﻣﻦ

ﺍﻟﻔﺎﺀﺯﻳﻦ ﺑﺪﺍﺭ ﺍﻟﺴﻼﻡ

অর্থাৎ যারা হাবিবুল্লাহ হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিলাদত শরীফকে সম্মান ও তাজিম করবে এবং খুশি মনে পালন করবে সে চির শান্তির জায়গা জান্নাতের অধিকারী হবে | – মাছাবাতা বিস সুন্নাহ ১ম খন্ড, খুত্বায়ে ইবনে নাবাতা ]

যেখানে হাদিস শরীফে স্বয়ং আল্লাহর হাবিব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিলাদুন্নবী পালনকারীদেরকে নাজাতের সুসংবাদ দিয়েছেন সেখানে বাতিল পন্থীরা বেদাতের ফতুয়া দিয়ে কি জাহান্নামের রাস্তা তৈরী করছেন

মুমিন মুসলমানের সকল ঈদের সেরা ঈদ ঈদুল আজম মহা পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মর্যাদা , মাহাত্ব ও ফজিলত বর্ণনা করে শেষ করা যাবেনা |

কেউ যদি এই ঈদে মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উপলক্ষ করে দান খয়রাত করে তার চেয়ে সেরা দান খয়রাত আর কিছুই হতে পারেনা ,

কেউ যদি এই মহা পবিত্র দিনকে উপলক্ষ করে কোন ইবাদত বন্দেগী বা খুশি প্রকাশ করে তার চেয়ে বড় ইবাদত বা খুশি আর কিছুই হতে পারেনা |

এই দিনকে যারা খুশি মনে উদযাপন করবে তাদের জন্য হুজুর পুর নূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আজ থেকে ১৫০০ শত বছর আগেই একটি সুসংবাদ দিয়ে গেছেন ,

আর তা হলো যারা এই দিনে খুশি উদযাপন করবে তার জন্য নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শাফায়েত ওয়াজিব হয়ে যাবে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের নূরের জবান মোবারক দিয়ে ঘোষণা করে গেছেন | পবিত্র হাদিস শরীফে এসেছে ,

পবিত্র হাদিস শরীফে আরো এরশাদ হয়েছে

 ” ﻋَﻦْ ﺍِﺑْﻦِ

ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻬُﻤَﺎ ﺍَﻧَّﻪٗﻛَﺎﻥَ ﻳُﺤَﺪِّﺙُ ﺫَﺍﺕَ ﻳَﻮْﻡٍ ﻓِﻰْ ﺑَﻴْﺘِﻪٖ

ﻭَﻗَﺎﺋِﻊَﻭِﻻﺩَﺗٖﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻟِﻘَﻮْﻡٍ ، ﻓَﻴَﺴْﺘَﺒْﺸِﺮُﻭْﻥَ ﻭَﻳُﺤَﻤِّﺪُﻭْﻥَ

ﺍﻟﻠﻪَ ﻭَﻳُﺼَﻠُّﻮْﻥَﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓَﺎِﺫَﺍ ﺟَﺎﺀَﺍﻟﻨَّﺒِﻰُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ

ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ ﺣَﻠَّﺖْﻟَﻜُﻢْ ﺷَﻔَﺎﻋَﺘِﻰْ

অর্থাৎ হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ( রা ) নিজেই বর্ণনা করেন , একদা তিনি উনার

গৃহে সাহাবায়ে কেরামদের নিয়ে একত্রিত হয়ে হুজুর পুর নূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিলাদত শরীফ পাঠ করছিলেন |( এই দিনে হুজুর পৃথিবীতে আসছেন , স্বয়ং আল্লাহ উনার হাবিবের উপর দুরুদ সালাম দিয়েছেন )

শ্রবন্কারীরাও তা শুনে আনন্দ পাচ্ছিলেন | ঠিক ওই সময় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে উপস্থিত হয়ে বললেন , তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেছে “

No comments:

Post a Comment

কোরআনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

০১) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনুল কারীমে কতটি সূরা আছে? উত্তরঃ ১১৪টি। ০২) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের প্রথম সূরার নাম কি? উত্তরঃ সূরা ফাতিহা। ০৩) প্রশ্ন...