ইসলাম ও তার ইতিহাস- Muhammad MH RIPON
Friday, 13 March 2020
কোরআনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
০১) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনুল কারীমে কতটি সূরা আছে? উত্তরঃ ১১৪টি। ০২) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের প্রথম সূরার নাম কি? উত্তরঃ সূরা ফাতিহা। ০৩) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে বড় সূরার নাম কি? উত্তরঃ সূরা বাকারা। ০৪) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে ছোট সূরার নাম কি? উত্তরঃ সূরা কাওছার। ০৫) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের মধ্যে সবচেয়ে বড় আয়াত কোনটি কোন সূরায়? উত্তরঃ সূরা বাক্বারার ২৮২ নং আয়াত। ০৬) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের মধ্যে সবচেয়ে ফযীলতপূর্ণ আয়াত কোনটি? উত্তরঃ আয়াতুল কুরসী। (সূরা বাক্বারা ২৫৫ নং আয়াত। ০৭) প্রশ্নঃ ফরয নামাযান্তে কোন আয়াতটি পাঠ করলে, মৃত্যু ছাড়া জান্নাতে যেতে কোন বাধা থাকে না? উত্তরঃ আয়াতুল কুরসী। ০৮) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন্ সূরাটি পাঠ করলে কবরের আযাব থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে? উত্তরঃ সূরা মুলক। (৬৭নং সূরা) ০৯) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরাটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান? উত্তরঃ সূরা ইখলাছ। (112 নং সূরা) ১০) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরার প্রতি ভালবাসা মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে? উত্তরঃ সূরা ইখলাছ। ১১) প্রশ্নঃ কোন সূরাটি পবিত্র কুরআনের চতুর্থাংশের সমপরিমাণ উত্তরঃ সূরা কাফেরূন। (109 নং সূরা) ১২. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরাটি জুমআর দিন বিশেষভাবে পাঠ করা মুস্তাহাব? উত্তরঃ সূরা কাহাফ (18 নং সূরা)) ১৩ প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরার প্রথমাংশ তেলাওয়াতকারীকে দাজ্জালের ফেতনা থেকে রক্ষা করবে? উত্তরঃ সূরা কাহাফের প্রথম দশটি আয়াত। (18 নং সূরা)) ১৪) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন দু’টি সূরা জুমআর দিন ফজরের নামাযে তেলাওয়াত করা সুন্নাত? উত্তরঃ সূরা সাজদা ও দাহার। ১৫ প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন দু’টি সূরা জুমআর নামাযে তেলাওয়াত করা সুন্নাত? উত্তরঃ সূরা আ’লা ও গাশিয়া। ১৬) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআন কত বছরে নাযিল হয়? উত্তরঃ তেইশ বছরে। ১৭) প্রশ্নঃ ‘মুহাম্মাদ’ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরনাম পবিত্র কুরআনে কত স্থানে উল্লেখ হয়েছে? উত্তরঃ চার স্থানে। (১) সূরা আল ইমরান আয়াত- ১৪৪। (২) সূরা আহযাব আয়াত নং ৪০।(৩) সূরা মুহাম্মাদ আয়াত নং ২। (৪) সূরা ফাতাহ্ আয়াত নং ২৯। ১৮) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের সর্বপ্রথম কোন আয়াত নাযিল হয়? উত্তরঃ সূরা আলাকের প্রথম পাঁচটি আয়াত। ইক্বরা বিসমি রাব্বিকাল্লাযী….. ১৯) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন আয়াতটি সর্বশেষ নাযিল হয়? উত্তরঃ আল্লাহ্ বলেন, ( ﻭَﺍﺗَّﻘُﻮﺍ ﻳَﻮْﻣًﺎ ﺗُﺮْﺟَﻌُﻮﻥَ ﻓِﻴﻪِ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺛُﻢَّ ﺗُﻮَﻓَّﻰ ﻛُﻞُّ ﻧَﻔْﺲٍ ﻣَﺎ ﻛَﺴَﺒَﺖْ ﻭَﻫُﻢْ ﻟَﺎ ﻳُﻈْﻠَﻤُﻮﻥَ) সূরা বাক্বারার ২৮১ নং আয়াত।(ইবনু আবী হাতেম সাঈদ বিন জুবাইর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, এই আয়াত নাযিল হওয়ার পর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নয় দিন জীবিত ছিলেন।- আল ইতক্বান ফি উলূমিল কুরআন) ২০) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের সর্বপ্রথম কোন সূরাটি পূর্ণাঙ্গরূপে নাযিল হয়? উত্তরঃ সূরা ফাতিহা। ২১) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআন প্রথম যুগে কিভাবে সংরক্ষিত ছিল? উত্তরঃ ছাহাবায়ে কেরামের স্মৃতিতে, লিখিত অবস্থায় চামড়ায়, হাড়ে, পাতায় এবং পাথরে। ২৩) প্রশ্নঃ সর্বপ্রথম কে কুরআন একত্রিত করেন? উত্তরঃ আবু বকর (রাঃ)। ২৪) প্রশ্নঃ কোন সাহাবীকে কুরআন একত্রিত করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল? উত্তরঃ যায়েদ বিন ছাবেত (রাঃ)কে। ২৫) প্রশ্নঃ কার পরামর্শে এই কুরআন একত্রিত করণের কাজ শুরু হয়? উত্তরঃ ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ) ২৬) প্রশ্নঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর ওহী লেখক কে কে ছিলেন? উত্তরঃ আলী বিন আবী তালেব, মুআবিয়া বিন আবী সুফিয়ান, যায়েদ বিন ছাবেত ও উবাই বিন কা’ব প্রমুখ (রাঃ)। ২৭) প্রশ্নঃ কোন যুগে কার নির্দেশে কুরআনের অক্ষরে নকতা দেয়া হয়? উত্তরঃ উমাইয়া খলীফা আবদুল মালিকের যুগে হাজ্জাজ বিন ইউসূফের নির্দেশে একাজ হয়। ২৮) প্রশ্নঃ কুরআনে নকতা দেয়ার কাজটি কে করেন? উত্তরঃ নসর বিন আছেম বিন ই’য়ামার (রহঃ)। ২৯) প্রশ্নঃ কুরআনে কে হরকত (যের যবর পেশ ইত্যাদি) সংযোজন করেন? উত্তরঃ খলীল বিন আহমাদ আল ফারাহীদী (রহঃ)। ৩০) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতবার ‘দুনিয়া’ শব্দটি এসেছে? উত্তরঃ ১১৫ বার। ৩১) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতবার ‘আখেরাত’ শব্দটি এসেছে? উত্তরঃ ১১৫ বার। ৩২) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতটি অক্ষর রয়েছে? উত্তরঃ ৩২৩৬৭১টি। প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতটি শব্দ আছে? উত্তরঃ ৭৭৪৩৯টি। ৩৩) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতটি আয়াত আছে? উত্তরঃ ৬২৩৬টি। ৩৪) প্রশ্নঃ কোন সূরার শেষ দু’টি আয়াত কোন মানুষ রাত্রে পাঠ করলে তার জন্য যথেষ্ট হবে? উত্তরঃ সূরা বাক্বারার শেষের আয়াত দু’টি। (285 ও ২৮৬ নং আয়ত) ৩৫) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতটি সিজদা আছে এবং কোন কোন সূরায়? উত্তরঃ১৫টি। আ’রাফ (২০৬নং আয়াত), রা’দ (১৫নং আয়াত), নাহাল (৪৯নং আয়াত), ইসরা (১০৭নং আয়াত), মারইয়াম (৫৮নং আয়াত), হাজ্জ (১৮ ও ৭৭ নং আয়াত), ফুরক্বান (৬০নং আয়াত), নামাল (২৫নং আয়াত), সজিদা (১৫নং আয়াত), সোয়াদ (২৪নং আয়াত), হা-মীম আস সাজদাহ (৩৭নং আয়াত), নাজম (৬২নং আয়াত), ইনশক্বিাক (২১নং আয়াত), আলাক (১৯নং আয়াত)। ৩৬) প্রশ্নঃ কোন সূরায় দু’টি সিজদা রয়েছে? উত্তরঃ সূরা হজ্জ। (18 ও ৭৭ নং আয়াত) ৩৭) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতবার ‘রহমান’ শব্দের উল্লেখ হয়েছে? উত্তরঃ ৫৭ বার। ৩৮)প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতবার ‘জান্নাত’ শব্দ এসেছে? উত্তরঃ ১৩৯ বার। (একবচন, দ্বিবচন ও বহুবচন শব্দে) ৩৯) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতবার ‘জাহান্নাম’ শব্দ এসেছে? উত্তরঃ ৭৭বার। ৪০) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতবার ‘নার বা আগুন’ শব্দ এসেছে? উত্তরঃ ১২৬বার। ৪১. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতবার ‘আল হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’ বাক্যটি এসেছে? উত্তরঃ ৬বার। ৪২. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন্আ য়াতে আরবী ২৯টি অক্ষরই রয়েছে? উত্তরঃ সূরা ফাতাহ এর ২৯ নং আয়াতে। ৪৩. প্রশ্নঃ সূরা ফাতিহায় ‘মাগযূবে আলাইহিম’ বলতে কাদেরকে বোঝানো হয়েছে এবং ‘দ অল লীন’ বলতে কাদেরকে বোঝানো হয়েছে? উত্তরঃ ‘মাগ দ বি আলাইহিম’ বলতে ইহুদীদেরকে এবং ‘দ অল লীন ’ বলতে খৃষ্টানদেরকে বোঝানো হয়েছে। ৪৪. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরায় ‘মীম’ অক্ষরটি নেই? উত্তরঃ সূরা কাওছার। ৪৫. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরায় ﻙ ‘কাফ’ অক্ষরটি নেই? উত্তরঃ সূরা কুরায়িশ, ফালাক ও আছর। ৪৬. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরায় দুবার বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম রয়েছে? উত্তরঃ সূরা নামল। (২৭ নং সূরা) ৪৭. প্রশ্নঃ কুরআনের কোন সূরার প্রথমে বিসমিল্লাহ নেই? উত্তরঃ সূরা তাওবা। (৯নং সূরা) ৪৮. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে মোট কতবার ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম রয়েছে? উত্তরঃ ১১৪ বার। ৪৯. প্রশ্নঃ কোন্ সূরা সম্পর্কে ইমাম শাফেঈ বলেন, “মানুষের জন্য এ সূরাটি ব্যতীত অন্য সূরা নাযিল না হলেও যথেষ্ট ছিল”? উত্তরঃ সূরা আছর। ৫০. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতজন নবীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে? উত্তরঃ ২৫ জন। ৫১. প্রশ্নঃ মাক্কী সূরা ও মাদানী সূরা বলতে কি বুঝায়? উত্তরঃ মাক্কীঃ মদীনায় হিজরতের পূর্বে যা নাযিল হয়েছে। মাদানীঃ মদীনায় হিজরতের পর যা নাযিল হয়েছে। ৫২. প্রশ্নঃ মাক্কী সূরার মৌলিক বৈশিষ্ট কি কি? উত্তরঃ ১) তাওহীদ এবং আল্লাহর ইবাদতের প্রতি আহবান। জান্নাত-জাহান্নামের আলোচনা এবং মুশরিকদের সাথে বিতর্ক। ২) মুশরকিদের খুন-খারাবী, ইয়াতীমের সম্পদ ভক্ষণ প্রভৃতি কর্মের নিন্দাবাদ। ৩) সংক্ষিপ্ত বাক্য অথচ অতি উচ্চাঙ্গের সাহিত্য সমৃদ্ধ। ৪) নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)কে সান্তনা দেয়া ও উপদেশ গ্রহণ করার জন্য ব্যাপকভাবে নবী-রাসূলদের কাহিনীর অবতারনা, এবং কিভাবে তাঁদের সমপ্রদায়ের লোকেরা তাঁদেরকে মিথ্যাবাদী বলেছে ও কষ্ট দিয়েছে তার বর্ণনা। ৫৩. প্রশ্নঃ মাদানী সূরার মৌলিক বৈশিষ্ট কি কি? উত্তরঃ (১) ইবাদত, আচার-আচরণ, দন্ডবিধি, জিহাদ, শান্তি, যুদ্ধ, পারিবারিক নিয়ম-নীতি, শাসন প্রণালী অন্যান্য বিধি-বিধানের আলোচনা। (২) আহলে কিতাব তথা ইহুদী খৃষ্টানদেরকে ইসলামের প্রতি আহবান। (৩) মুনাফেকদের দ্বিমুখী নীতির মুখোশ উম্মোচন এবং ইসলামের জন্য তারা কত ভয়ানক তার আলোচনা। (৪) সংবিধান প্রণয়ণের ধারা ও তার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নির্ধারণ করার জন্য দীর্ঘ আয়াতের অবতারণা। ৫৪. প্রশ্নঃ মাদানী সূরা পরিচয়ের নিয়ম কি? উত্তরঃ (১) যে সকল সূরায় কোন কিছু ফরয করা হয়েছে বা দন্ডবিধির আলোচনা করা হয়েছে। (২) যে সকল সূরায় মুনাফেকদের সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। (৩) যে সকল সূরায় আহলে কিতাবদের সাথে বিতর্ক করা হয়েছে। (৪) যে সকল সূরা “ইয়া আইয়্যুহাল্লাযীনা আমানূ” দ্বারা আরম্ভ হয়েছে। ৫৫. প্রশ্নঃ মাক্কী সূরার সংখ্যা কতটি? উত্তরঃ ৮৬টি সূরা। ৫৬. প্রশ্নঃ মাদানী সূরার সংখ্যা কতটি? উত্তরঃ ২৮টি সূরা। ৫৭. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন্ সূরার প্রতিটি আয়াতে ‘আল্লাহ্ শব্দ আছে? উত্তরঃ সূরা মুজাদালা। (৫৮ নং সূরা) ৫৮. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন্ কোন্সূরা ‘আল হামদুলিল্লাহ দ্বারা শুরু হয়েছে? উত্তরঃ সূরা ফাতিহা, সূরা আনআম, সূরা কাহাফ, সূরা সাবা ও সূরা ফাতির। (সূরা নং যথাক্রমে, ১,৬,১৮,৩৪ ও ৩৫) ৫৯. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে ছয়জন ব্যক্তির নাম উল্লেখ আছে যাঁরা সকলেই নবীর পুত্র নবী ছিলেন। উত্তরঃ (১) ইবরাহীমের পুত্র ইসমাঈল (২) ইবরাহীমের পুত্র ইসহাক, (৩) ইসহাকের পুত্র ইয়াকূব (৪) ইয়াকূবের পুত্র ইউসুফ, (৫) যাকারিয়ার পুত্র ইয়াহইয়া ও (৬) দাউদের পুত্র সুলাইমান (আলাইহিমুস্সালাম) ৬০. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে জাহান্নামের ৬টি নাম উল্লেখ হয়েছে। উহা কি কি? উত্তরঃ (১) জাহান্নাম (সূরা নাবা: 21) (২) সাঈর (সূরা নিসা: 10) (৩) হুতামা (হুমাযা: 4) (৪) লাযা (সূরা মাআরেজ: 15) (৫) সাক্বার (সূরা মুদ্দাসসির: 42) (৬) হাভিয়া (সূরা কারিয়া: 9)৬১. প্রশ্নঃ কুরআনের কোন সূরায় মুবাহালার আয়াত রয়েছে? উত্তরঃ সূরা আলে ইমরান- আয়াত নং- ৬১। মুবাহালা: হক ও বাতিলের মাঝে দ্বন্দ্ব হলে, বাতিল পন্থীর সামনে যাবতীয় দলীল-প্রমাণ উপস্থাপন করার পরও সে যদি হঠকারিতা করে, তবে তাকে মুবাহালার জন্য আহবান করা হবে। তার নিয়ম হচ্ছেঃ উভয় পক্ষ নিজের স্ত্রী, সন্তান-সন্ততিকে উপস্থিত করবে, অতঃপর প্রত্যেক পক্ষ বলবে, আমরা যদি বাতিল পন্থা উপর প্রতিষ্ঠিত থাকি, তবে মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর লা’নত (অভিশাপ)। এটাকেই বলে মুবাহালা। ৬২. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন্ সূরার কোন্ আয়াতে ব্যভিচারের দন্ডবিধির আলোচনা আছে? উত্তরঃ সূরা নূর- আয়াত নং- ২। ৬৩. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরার কত নং আয়াতে ওযুর ফরয সমূহ উল্লেখ করা হয়েছে? উত্তরঃ সূরা মায়েদা- আয়াত নং- ৬। ৬৪. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরার কোন আয়াতে চুরির দন্ডবিধি উল্লেখ হয়েছে? উত্তরঃ সূরা মায়েদা- আয়াত নং- ৩৮। ৬৫. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরার কোন আয়াতে মিথ্যা অপবাদের শাস্তির বিধান উল্লেখ হয়েছে? উত্তরঃ সূরা নূর- আয়াত নং- ৪। ৬৬. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরার কোন আয়াতে মুমিন নারী-পুরুষকে দৃষ্টি অবনত রেখে চলাফেরা করতে বলা হয়েছে? উত্তরঃ সূরা নূর- আয়াত নং ৩০-৩১। ৬৭. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরার কোন আয়াতে মীরাছ (উত্তরাধীকার সম্পদ বন্টন) সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে? উত্তরঃ সূরা নিসা- আয়াত নং- ১১, ১২ ও ১৭৬। ৬৮. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরার কোন আয়াতে বিবাহ হারাম এমন নারীদের পরিচয় দেয়া হয়েছে? উত্তরঃ সূরা নিসা- আয়াত নং- ২৩, ২৪। ৬৯. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরার কোন আয়াতে যাকাত বন্টনের খাত সমূহ আলোচনা করা হয়েছে? উত্তরঃ সূরা তওবা- আয়াত নং- ৬০। ৭০. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরার কোন আয়াতে ছিয়াম সম্পর্কিত বিধি-বিধান উল্লেখ হয়েছে? উত্তরঃ সূরা বাক্বারা- আয়াত নং ১৮৩-১৮৭। ৭১. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরার কোন আয়াতে বাহনে আরোহনের দুআ উল্লেখ করা হয়েছে? উত্তরঃ সূরা যুখরুফ- আয়াত নং- ১৩। ৭২. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরার কোন আয়াতে নবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রতি দরূদ পড়ার আদেশ করা হয়েছে? উত্তরঃ সূরা আহযাব- আয়াত নং ৫৬। ৭৩. প্রশ্নঃ কোন সূরার কোন আয়াতে হুনায়ন যুদ্ধের কথা আলোচনা করা হয়েছে? উত্তরঃ সূরা তওবা- আয়াত নং- ২৫, ২৬। ৭৪. প্রশ্নঃ কোন সূরায় বদর যুদ্ধের ঘটনাবলী উল্লেখ করা হয়েছে? উত্তরঃ সূরা আনফাল। (আয়াত নং : 5-19, 41-48, 67-69) ৭৫. প্রশ্নঃ কোন সূরায় বনী নযীরের যুদ্ধের ঘটনা উল্লেখ আছে? উত্তরঃ সূরা হাশর।(আয়াত নং ২-১৪) ৭৬. প্রশ্নঃ কোন সূরায় খন্দক যুদ্ধের ঘটনা উল্লেখ আছে? উত্তরঃ সূরা আহযাব (আয়াত নং ৯-২৭)। ৭৭. প্রশ্নঃ কোন সূরায় তাবুক যুদ্ধের ঘটনা উল্লেখ আছে? উত্তরঃ সূরা তওবা (আয়াত নং ৩৮-১২৯)। ৭৮. প্রশ্নঃ কোন সূরায় নবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হিজরতের ঘটনা উল্লেখ আছে? উত্তরঃ সূরা তওবা (আয়াত নং ৪০) ৭৯. প্রশ্নঃ কোন সূরার কোন আয়াতে হারূত-মারূতের ঘটনা উল্লেখ আছে? উত্তরঃ সূরা বাক্বারা- আয়াত নং- ১০২। ৮০. প্রশ্নঃ কোন সূরার কোন আয়াতে কারূনের কাহিনী উল্লেখ আছে? উত্তরঃ সূরা ক্বাছাছ আয়াত ৭৬-৮৩। ৮১. প্রশ্নঃ কোন সূরার কোন আয়াতে সুলায়মান (আঃ)এর সাথে হুদহুদ পাখীর ঘটনা উল্লেখ আছে? উত্তরঃ সূরা নমল আয়াত নং ২০, ৪৪। ৮২. প্রশ্নঃ কোন সূরার কোন আয়াতে ক্বিবলা পরিবর্তনের ঘটনা উল্লেখ আছে? উত্তরঃ সূরা বাক্বারা- আয়াত নং ১৪২-১৫০। ৮৩. প্রশ্নঃ কোন সূরায় নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ইসরা-মেরাজের ঘটনা উল্লেখ আছে? উত্তরঃ সূরা বানী ইসরাঈল (আয়াত নং ১) ও সূরা নজম (আয়াত: ৮-১৮) ৮৪. প্রশ্নঃ কোন সূরায় হস্তি বাহিনীর ঘটনা উল্লেখ আছে? উত্তরঃ সূরা ফীল। ৮৫. প্রশ্নঃ কোন সূরার কোন আয়াতে যুল ক্বারানাইন বাদশাহর ঘটনা উল্লেখ আছে? উত্তরঃ সূরা কাহাফ- আয়াত নং- ৮৩-৯৮। ৮৬. প্রশ্নঃ কোন সূরার কোন আয়াতে ত্বালুত ও জালুতের ঘটনা উল্লেখ আছে? উত্তরঃ সূরা বাক্বারা- আয়াত নং-২৪৬-২৫২। ৮৭. প্রশ্নঃ কোন সূরার কোন আয়াতে মসজিদে আক্বসার কথা উল্লেখ আছে উত্তরঃ সূরা বানী ইসরাঈল- আয়াত নং-১ ৮৮. প্রশ্নঃ কোন সূরার কোন আয়াতে পিতা-মাতার ঘরে প্রবেশের জন্য অনুমতি নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে? উত্তরঃ সূরা নূর- আয়াত নং- ৫৮, ৫৯ ৮৯. প্রশ্নঃ সর্বপ্রথম কোন সাহাবী মক্কায় উচ্চ:স্বরে কুরআন পাঠ করেন? উত্তরঃ আবদুল্লাহ্ বিন মাসউদ (রাঃ)। ৯০. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরাটি ওমর (রাঃ)এর ইসলাম গ্রহণের কারণ ছিল? উত্তরঃ সূরা ত্বাহা। ৯১. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের মধ্যে কোন পরিবর্তন-পরিবর্ধন হবে না। আল্লাহ নিজেই তার হেফাযতের দায়িত্ব নিয়েছেন। কথাটি কোন সূরার কত নং আয়াতে আছে? উত্তরঃ সূরা হিজর ৯ নং আয়াত।
Friday, 21 February 2020
জান্নাত বা বেহেশতের বর্ণনা ।
ইসলামে জান্নাহ (আরবি: جنّة জান্নাহ; বহুবচন: জান্নাত তুর্কি: সেন্ট), লিট। "জান্নাত, উদ্যান" হ'ল ধার্মিকগণ এবং ঈমানদারদের চূড়ান্ত আবাস, তবে আদনের উদ্যান, যেখানে আদম ও হাওয়া বাস করত । ফিরদৌস (আরবি: فردوس) আক্ষরিক শব্দটি স্বর্গের অর্থ, তবে কুরআন সাধারণত জান্নাত শব্দটি ব্যবহার করে প্রতীকীভাবে জান্নাতকে বোঝায়। তবে "ফিরদৌস" স্বর্গের সর্বোচ্চ স্তরকেও নির্ধারণ করে।সর্বমোট আটটি জান্নাত আছেঃ
৮টি জান্নাতের নাম গুলো হল
১) জান্নাতুল ফেরদাউস
২) দারুস সালাম
৩) দারুল খুলদ
৪) দারুল মোকাত
৫) জান্নাতুল মাওয়া
৬) জান্নাতুন নাঈম
৭) জান্নাতের আদন
৮) দারুল আকার।
৭টি জাহান্নামের নাম গুলো হলঃ
১) ছায়ীর
২) লাজা
৩) ছাক্কার
৪) জাহীম
৫) জাহান্নামু
৬) হাবিয়া
৭) হোতামা।
জান্নাত বিপরীতে জাহান্নাম ও নর শব্দটি নরকের ধারণাকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। স্বর্গ ও জাহান্নাম উভয়ের জন্য আরবি ভাষার অনেক শব্দ রয়েছে এবং সেই শব্দগুলি কুরআনের।
🕌 কেমন হবে জান্নাতঃ-
★ জান্নাতী_রমণী
জান্নাতি মহিলারা তাদের স্বামীদের সমবয়স্কা
হবে।
জান্নাতে প্রবেশকারী মহিলাদের আল্লাহ
নতুনভাবে সৃষ্টি করবেন আর তারা কুমারী অবস্থায়
জান্নাতে যাবে।
জান্নাতি রমণীগণ যদি একবার দুনিয়ার দিকে উঁকি
দেয় তবে পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সমস্ত
জায়গা আলোকিত হয়ে যাবে।
রমণীগণ এতো সুন্দর হবে যে তাদের
দেহের ভিতরের হাড্ডির মজ্জা বাহির থেকে
দৃষ্টিগোচর হবে।
জান্নাতী মহিলারা তাদের স্বামীর সাথে
মিলনের পরো চিরকাল কুমারী থাকবে।
★ হুরেঈন
হুরেরা ডিমের ভিতর লুকায়িত সূক্ষ্ম চামড়ার
চেয়েও অধিক নরম হবে। (সূরা আস সাফফাত ৪৮-৪৯
হুরগণ তাদের স্বামীদের সমবয়স্কা হবে।
হুরেরা এতো লজ্জাশীল হবে যে স্বীয়
স্বামী ছাড়া অন্য কারো দিকে চোখ তুলে
তাকাবেনা।
হুরগণ ডাগর ডাগর চোখবিশিষ্ট হবে, চোখের
কালো অংশ একেবারে কালো, এবং সাদা অংশ
একেবারে সাদা হবে।
সূূরা ওয়াকিয়াহঃ
aashabu almaymanati ma ashabu almaymanati
যারা ডান দিকে, কত ভাগ্যবান তারা।
56:9
وَأَصْحَٰبُ ٱلْمَشْـَٔمَةِ مَآ أَصْحَٰبُ ٱلْمَشْـَٔمَةِ
Waashabu almashamati ma ashabu almashamati
এবং যারা বামদিকে, কত হতভাগা তারা।
56:10
وَٱلسَّٰبِقُونَ ٱلسَّٰبِقُونَ
Waalssabiqoona alssabiqoona
অগ্রবর্তীগণ তো অগ্রবর্তীই।
56:11
أُو۟لَٰٓئِكَ ٱلْمُقَرَّبُونَ
Olaika almuqarraboona
তারাই নৈকট্যশীল,
56:12
فِى جَنَّٰتِ ٱلنَّعِيمِ
Fee jannati alnnaAAeemi
অবদানের উদ্যানসমূহে,
56:13
ثُلَّةٌ مِّنَ ٱلْأَوَّلِينَ
Thullatun mina alawwaleena
তারা একদল পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে।
56:14
وَقَلِيلٌ مِّنَ ٱلْءَاخِرِينَ
Waqaleelun mina alakhireena
এবং অল্পসংখ্যক পরবর্তীদের মধ্যে থেকে।
56:15
عَلَىٰ سُرُرٍ مَّوْضُونَةٍ
AAala sururin mawdoonatin
স্বর্ণ খচিত সিংহাসন।
56:16
مُّتَّكِـِٔينَ عَلَيْهَا مُتَقَٰبِلِينَ
Muttakieena AAalayha mutaqabileena
তারা তাতে হেলান দিয়ে বসবে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে।
56:17
يَطُوفُ عَلَيْهِمْ وِلْدَٰنٌ مُّخَلَّدُونَ
Yatoofu AAalayhim wildanun mukhalladoona
তাদের কাছে ঘোরাফেরা করবে চির কিশোরেরা।
56:18
بِأَكْوَابٍ وَأَبَارِيقَ وَكَأْسٍ مِّن مَّعِينٍ
Biakwabin waabareeqa wakasin min maAAeenin
পানপাত্র কুঁজা ও খাঁটি সূরাপূর্ণ পেয়ালা হাতে নিয়ে,
56:19
لَّا يُصَدَّعُونَ عَنْهَا وَلَا يُنزِفُونَ
La yusaddaAAoona AAanha wala yunzifoona
যা পান করলে তাদের শিরঃপীড়া হবে না এবং বিকারগ্রস্ত ও হবে না।
56:20
وَفَٰكِهَةٍ مِّمَّا يَتَخَيَّرُونَ
Wafakihatin mimma yatakhayyaroona
আর তাদের পছন্দমত ফল-মুল নিয়ে,
56:21
وَلَحْمِ طَيْرٍ مِّمَّا يَشْتَهُونَ
Walahmi tayrin mimma yashtahoona
এবং রুচিমত পাখীর মাংস নিয়ে।
56:22
وَحُورٌ عِينٌ
Wahoorun AAeenun
তথায় থাকবে আনতনয়না হুরগণ,
56:23
كَأَمْثَٰلِ ٱللُّؤْلُؤِ ٱلْمَكْنُونِ
Kaamthali allului almaknooni
আবরণে রক্ষিত মোতির ন্যায়,
56:24
جَزَآءًۢ بِمَا كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ
Jazaan bima kanoo yaAAmaloona
তারা যা কিছু করত, তার পুরস্কারস্বরূপ।
56:25
لَا يَسْمَعُونَ فِيهَا لَغْوًا وَلَا تَأْثِيمًا
La yasmaAAoona feeha laghwan wala tatheeman
তারা তথায় অবান্তর ও কোন খারাপ কথা শুনবে না।
56:26
إِلَّا قِيلًا سَلَٰمًا سَلَٰمًا
Illa qeelan salaman salaman
কিন্তু শুনবে সালাম আর সালাম।
56:27
وَأَصْحَٰبُ ٱلْيَمِينِ مَآ أَصْحَٰبُ ٱلْيَمِينِ
Waashabu alyameeni ma ashabu alyameeni
যারা ডান দিকে থাকবে, তারা কত ভাগ্যবান।
56:28
فِى سِدْرٍ مَّخْضُودٍ
Fee sidrin makhdoodin
তারা থাকবে কাঁটাবিহীন বদরিকা বৃক্ষে।
56:29
وَطَلْحٍ مَّنضُودٍ
Watalhin mandoodin
এবং কাঁদি কাঁদি কলায়,
56:30
وَظِلٍّ مَّمْدُودٍ
Wathillin mamdoodin
এবং দীর্ঘ ছায়ায়।
56:31
وَمَآءٍ مَّسْكُوبٍ
Wamain maskoobin
এবং প্রবাহিত পানিতে,
56:32
وَفَٰكِهَةٍ كَثِيرَةٍ
Wafakihatin katheeratin
ও প্রচুর ফল-মূলে,
56:33
لَّا مَقْطُوعَةٍ وَلَا مَمْنُوعَةٍ
La maqtooAAatin wala mamnooAAatin
যা শেষ হবার নয় এবং নিষিদ্ধ ও নয়,
56:34
وَفُرُشٍ مَّرْفُوعَةٍ
Wafurushin marfooAAatin
আর থাকবে সমুন্নত শয্যায়।
56:35
إِنَّآ أَنشَأْنَٰهُنَّ إِنشَآءً
Inna anshanahunna inshaan
আমি জান্নাতী রমণীগণকে বিশেষরূপে সৃষ্টি করেছি।
56:36
فَجَعَلْنَٰهُنَّ أَبْكَارًا
FajaAAalnahunna abkaran
অতঃপর তাদেরকে করেছি চিরকুমারী।56:37
عُرُبًا أَتْرَابًا
AAuruban atraban
কামিনী, সমবয়স্কা।56:38
لِّأَصْحَٰبِ ٱلْيَمِينِ
Liashabi alyameeni
ডান দিকের লোকদের জন্যে।
★ জান্নাতের গাছপালা
জান্নাতের সব ধরনের ফলের গাছ
থাকবে, তবে খেজুর, ডালিম, আংগুরের গাছ অধিক
পরিমাণে থাকবে।
জান্নাতের বৃক্ষ কন্টকমুক্ত হবে।
কলা ও কুল জান্নাতের বৃক্ষ।
জান্নাতে বৃক্ষ সমূহের ছায়া অনেক দীর্ঘ
হবে।
জান্নাতের সব গাছের মূল স্বর্ণের হবে।
(তিরমিযি)
তুবা জান্নাতের একটি গাছের নাম যার ছায়া শত
বছরের রাস্তার সমান দৈর্ঘ্য। এই বৃক্ষের ফলের
খোসা দিয়ে জান্নাতিদের বস্ত্র তৈরি করা হবে।
# জান্নাতের_ফল_ফলাদিঃ
জান্নাতে মৌসুমি সর্বপ্রকার ফল থাকবে।
কলা ও কুল জান্নাতের ফল। (সূরা ওয়াক্বিয়াহ
২৭-৩২)
জান্নাতি ফলের শীষ এত বড় হবে যে, তা যদি
দুনিয়াতে আসত তবে সাহাবাগণ কিয়ামত পর্যন্ত তা
খেয়ে শেষ করতে পারতো না! (মুসলিম-কিতাব
সালাতিন খুসুফ)
আঙ্গুর, খেজুর, ডালিম জান্নাতি ফল। (সূরা নাবা
৩১-৩১)
জান্নাতি যখন কোনো বৃক্ষের ফল পাড়বে
তখন সঙ্গে সঙ্গে উক্ত স্থানে অপর এক নতুন
ফল ধরবে। (তাবারানি)
জান্নাতের ফলমূল কখনো ফুড়িয়ে যাবে না এবং
নষ্টও হবে না। সুবহানাল্লাহ।
★ জান্নাতের_প্রাসাদসমূহঃ
জান্নাতের অট্টালিকাসমূহ সোনা-চাঁদির ইট দিয়ে নির্মিত হবে।
জান্নাতের কংকরসমূহ হবে মোতি ও
ইয়াকুতের, আর মাটি হবে জাফরানের ।
সকল জান্নাতির অট্টালিকায় তাঁবু থাকবে, আর
সেখানে হুরেরা অবস্থান করবে।
জান্নাতের প্রতিটি তাঁবু ৬০ মাইল বিস্তৃত হবে।
ভিতরে খুব সুন্দর মোতি খোদিত থাকবে।
★ জান্নাতের নদীসমূহ
জান্নাতে সুস্বাদু পানি, সুস্বাদু দুধ, সুমিষ্ট শরাব ও
স্বচ্ছ মধুর নদী প্রবাহিত হবে।
জান্নাতের নদীসমূহের পানির রঙ ও স্বাদ
সবসময় একই থাকবে।
সাইহান, জাইহান, ফুরাত ও নীল জান্নাতি নদী।
(মুসলিম)
কাওসার আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূল
ﷺ কে প্রদত্ত উপহার। কাওসার
নদীর পানি দুধ অপেক্ষা শুভ্র এবং মধু অপেক্ষা
মিষ্টি!
জান্নাতি এক নদীর নাম হায়াত, যার পানি জাহান্নাম
হতে মুক্তিপ্রাপ্তদের শরীরে ঢালা হবে, ফলে
তারা দ্বিতীয়বার চারা গাছের ন্যায় সজিব হয়ে
উঠবে।
,★ জান্নাতের_ঝর্ণাসমূহঃ
জান্নাতের একটি ঝর্ণার নাম সালসাবিল যার
পানিতে আদা মিশ্রিত স্বাদ পাওয়া যাবে৷
জান্নাতের একটি ঝর্ণার নাম "কাফুর", যার পানি পানে জান্নাতিরা আত্মতৃপ্তি অনুভব করবে।
★ তাসনিম জান্নাতের আরেকটি ঝর্ণা। যার স্বচ্ছ পানি শুধু আল্লাহর বিশেষ বান্দাদের জন্য বরাদ্দহবে।
★ জান্নাতির বাজারঃ
জান্নাতে প্রত্যেক জুমু'আর দিন বাজার জমবে।
জুমুয়ার দিন বাজারে অংশগ্রহণকারী
জান্নাতীগণের সৌন্দর্য পূর্বের চেয়ে বৃদ্ধি
পাবে।
মহিলারা শুক্রবারের বাজারে উপস্থিত হবে না
তবে বসে থাকা অবস্থায়ই আল্লাহ তাদের লাবণ্যতা বৃদ্ধি করবেন। (মুসলিম)
★ জান্নাতিদের খানাপিনাঃ
জান্নাতিদের সর্বপ্রথম খাদ্য হলো মাছ, এরপর
গরুর গোশত।জান্নাতে সর্বোৎকৃষ্ট পানীয় হলো
তাসনীম যা শুধু আল্লাহর বিশেষ বান্দাদের
পরিবেশন করা হবে।জান্নাতের পরিষ্কার ও স্বচ্ছ শরাব " রাহিক" পানে সকল জান্নাতিরা আত্মতৃপ্তি লাভ করবে। রাহিক পান
করার পর জান্নাতির মুখে মিশক আম্বরের সুঘ্রাণ অনুভব করবে। শরাব পানে তাদের মাথায় কোনো প্রতিক্রিয়া হবে না।
সকল জান্নাতিদের একশো ব্যক্তির খাবারের
শক্তি দেওয়া হবে। (তাবারানি)হাউজে কাউসারে উড়ে বেড়ানো পাখির
গোশত ভক্ষণে জান্নাতিরা আত্মতৃপ্তি লাভ করবে।সকাল সন্ধ্যায় জান্নাতিদের খাবার পরিবেশনেরনিয়ম চালু থাকবে। (সূরা মারইয়াম ৬২)।
★ জান্নাতিদের_পোশকঃ
জান্নাতিরা সূক্ষ্ম ও পুরু সবুজ রেশমের কাপড়
পড়বে।
জান্নাতিরা হাতে সোনার অলংকার পড়বে।
খাঁটি রেশমী কাপড়ের পোশাক, খাঁটি স্বর্ণের
অলংকার, খাঁটি মোতির অলংকার এবং মোতিখচিত স্বর্ণের অলংকারও জান্নাতিরা পড়বে।পোশাক কখনো পুরাতন হবেনা।
জান্নাতি মহিলাদের ওড়না মান ও দামের দিক
থেকে পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ থেকে মূল্যবান
হবে।
জান্নাতিরা রেশমি রুমাল ব্যবহার করবে।(বুখারী)
★ জান্নাতিদের_সেবকঃ
জান্নাতিদের সেবকরা কৈশর বয়সী হবে।
জান্নাতিদের সেবক এমন সুন্দর হবে যে,
চলতে ফিরতে মনে হবে যেন বিক্ষিপ্ত মোতি।
সুরক্ষিত মোতি সদৃশ কিশোররা জান্নাতিদের
সেবা করান ও হাদিসেও উপস্থিত রয়েছে।
সূরা নাবাঃ
إِنَّ لِلْمُتَّقِينَ مَفَازًا
Inna lilmuttaqeena mafazan
পরহেযগারদের জন্যে রয়েছে সাফল্য।
78:32
حَدَآئِقَ وَأَعْنَٰبًا
Hadaiqa waaAAnaban
উদ্যান, আঙ্গুর,
78:33
وَكَوَاعِبَ أَتْرَابًا
WakawaAAiba atraban
সমবয়স্কা, পূর্ণযৌবনা তরুণী।
78:34
وَكَأْسًا دِهَاقًا
Wakasan dihaqan
এবং পূর্ণ পানপাত্র।
78:35
لَّا يَسْمَعُونَ فِيهَا لَغْوًا وَلَا كِذَّٰبًا
La yasmaAAoona feeha laghwan wala kiththaban
তারা তথায় অসার ও মিথ্যা বাক্য শুনবে না।
78:36
جَزَآءً مِّن رَّبِّكَ عَطَآءً حِسَابًا
Jazaan min rabbika AAataan hisaban
এটা আপনার পালনকর্তার তরফ থেকে যথোচিত দান,
78:37
رَّبِّ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا ٱلرَّحْمَٰنِ لَا يَمْلِكُونَ مِنْهُ خِطَابًا
Rabbi alssamawati waalardi wama baynahuma alrrahmani la yamlikoona minhu khitaban
যিনি নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর পালনকর্তা, দয়াময়, কেউ তাঁর সাথে কথার অধিকারী হবে না।
৮টি জান্নাতের নাম গুলো হল
১) জান্নাতুল ফেরদাউস
২) দারুস সালাম
৩) দারুল খুলদ
৪) দারুল মোকাত
৫) জান্নাতুল মাওয়া
৬) জান্নাতুন নাঈম
৭) জান্নাতের আদন
৮) দারুল আকার।
৭টি জাহান্নামের নাম গুলো হলঃ
১) ছায়ীর
২) লাজা
৩) ছাক্কার
৪) জাহীম
৫) জাহান্নামু
৬) হাবিয়া
৭) হোতামা।
জান্নাত বিপরীতে জাহান্নাম ও নর শব্দটি নরকের ধারণাকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। স্বর্গ ও জাহান্নাম উভয়ের জন্য আরবি ভাষার অনেক শব্দ রয়েছে এবং সেই শব্দগুলি কুরআনের।
🕌 কেমন হবে জান্নাতঃ-
★ জান্নাতী_রমণী
জান্নাতি মহিলারা তাদের স্বামীদের সমবয়স্কা
হবে।
জান্নাতে প্রবেশকারী মহিলাদের আল্লাহ
নতুনভাবে সৃষ্টি করবেন আর তারা কুমারী অবস্থায়
জান্নাতে যাবে।
জান্নাতি রমণীগণ যদি একবার দুনিয়ার দিকে উঁকি
দেয় তবে পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সমস্ত
জায়গা আলোকিত হয়ে যাবে।
রমণীগণ এতো সুন্দর হবে যে তাদের
দেহের ভিতরের হাড্ডির মজ্জা বাহির থেকে
দৃষ্টিগোচর হবে।
জান্নাতী মহিলারা তাদের স্বামীর সাথে
মিলনের পরো চিরকাল কুমারী থাকবে।
★ হুরেঈন
হুরেরা ডিমের ভিতর লুকায়িত সূক্ষ্ম চামড়ার
চেয়েও অধিক নরম হবে। (সূরা আস সাফফাত ৪৮-৪৯
হুরগণ তাদের স্বামীদের সমবয়স্কা হবে।
হুরেরা এতো লজ্জাশীল হবে যে স্বীয়
স্বামী ছাড়া অন্য কারো দিকে চোখ তুলে
তাকাবেনা।
হুরগণ ডাগর ডাগর চোখবিশিষ্ট হবে, চোখের
কালো অংশ একেবারে কালো, এবং সাদা অংশ
একেবারে সাদা হবে।
সূূরা ওয়াকিয়াহঃ
aashabu almaymanati ma ashabu almaymanati
যারা ডান দিকে, কত ভাগ্যবান তারা।
56:9
وَأَصْحَٰبُ ٱلْمَشْـَٔمَةِ مَآ أَصْحَٰبُ ٱلْمَشْـَٔمَةِ
Waashabu almashamati ma ashabu almashamati
এবং যারা বামদিকে, কত হতভাগা তারা।
56:10
وَٱلسَّٰبِقُونَ ٱلسَّٰبِقُونَ
Waalssabiqoona alssabiqoona
অগ্রবর্তীগণ তো অগ্রবর্তীই।
56:11
أُو۟لَٰٓئِكَ ٱلْمُقَرَّبُونَ
Olaika almuqarraboona
তারাই নৈকট্যশীল,
56:12
فِى جَنَّٰتِ ٱلنَّعِيمِ
Fee jannati alnnaAAeemi
অবদানের উদ্যানসমূহে,
56:13
ثُلَّةٌ مِّنَ ٱلْأَوَّلِينَ
Thullatun mina alawwaleena
তারা একদল পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে।
56:14
وَقَلِيلٌ مِّنَ ٱلْءَاخِرِينَ
Waqaleelun mina alakhireena
এবং অল্পসংখ্যক পরবর্তীদের মধ্যে থেকে।
56:15
عَلَىٰ سُرُرٍ مَّوْضُونَةٍ
AAala sururin mawdoonatin
স্বর্ণ খচিত সিংহাসন।
56:16
مُّتَّكِـِٔينَ عَلَيْهَا مُتَقَٰبِلِينَ
Muttakieena AAalayha mutaqabileena
তারা তাতে হেলান দিয়ে বসবে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে।
56:17
يَطُوفُ عَلَيْهِمْ وِلْدَٰنٌ مُّخَلَّدُونَ
Yatoofu AAalayhim wildanun mukhalladoona
তাদের কাছে ঘোরাফেরা করবে চির কিশোরেরা।
56:18
بِأَكْوَابٍ وَأَبَارِيقَ وَكَأْسٍ مِّن مَّعِينٍ
Biakwabin waabareeqa wakasin min maAAeenin
পানপাত্র কুঁজা ও খাঁটি সূরাপূর্ণ পেয়ালা হাতে নিয়ে,
56:19
لَّا يُصَدَّعُونَ عَنْهَا وَلَا يُنزِفُونَ
La yusaddaAAoona AAanha wala yunzifoona
যা পান করলে তাদের শিরঃপীড়া হবে না এবং বিকারগ্রস্ত ও হবে না।
56:20
وَفَٰكِهَةٍ مِّمَّا يَتَخَيَّرُونَ
Wafakihatin mimma yatakhayyaroona
আর তাদের পছন্দমত ফল-মুল নিয়ে,
56:21
وَلَحْمِ طَيْرٍ مِّمَّا يَشْتَهُونَ
Walahmi tayrin mimma yashtahoona
এবং রুচিমত পাখীর মাংস নিয়ে।
56:22
وَحُورٌ عِينٌ
Wahoorun AAeenun
তথায় থাকবে আনতনয়না হুরগণ,
56:23
كَأَمْثَٰلِ ٱللُّؤْلُؤِ ٱلْمَكْنُونِ
Kaamthali allului almaknooni
আবরণে রক্ষিত মোতির ন্যায়,
56:24
جَزَآءًۢ بِمَا كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ
Jazaan bima kanoo yaAAmaloona
তারা যা কিছু করত, তার পুরস্কারস্বরূপ।
56:25
لَا يَسْمَعُونَ فِيهَا لَغْوًا وَلَا تَأْثِيمًا
La yasmaAAoona feeha laghwan wala tatheeman
তারা তথায় অবান্তর ও কোন খারাপ কথা শুনবে না।
56:26
إِلَّا قِيلًا سَلَٰمًا سَلَٰمًا
Illa qeelan salaman salaman
কিন্তু শুনবে সালাম আর সালাম।
56:27
وَأَصْحَٰبُ ٱلْيَمِينِ مَآ أَصْحَٰبُ ٱلْيَمِينِ
Waashabu alyameeni ma ashabu alyameeni
যারা ডান দিকে থাকবে, তারা কত ভাগ্যবান।
56:28
فِى سِدْرٍ مَّخْضُودٍ
Fee sidrin makhdoodin
তারা থাকবে কাঁটাবিহীন বদরিকা বৃক্ষে।
56:29
وَطَلْحٍ مَّنضُودٍ
Watalhin mandoodin
এবং কাঁদি কাঁদি কলায়,
56:30
وَظِلٍّ مَّمْدُودٍ
Wathillin mamdoodin
এবং দীর্ঘ ছায়ায়।
56:31
وَمَآءٍ مَّسْكُوبٍ
Wamain maskoobin
এবং প্রবাহিত পানিতে,
56:32
وَفَٰكِهَةٍ كَثِيرَةٍ
Wafakihatin katheeratin
ও প্রচুর ফল-মূলে,
56:33
لَّا مَقْطُوعَةٍ وَلَا مَمْنُوعَةٍ
La maqtooAAatin wala mamnooAAatin
যা শেষ হবার নয় এবং নিষিদ্ধ ও নয়,
56:34
وَفُرُشٍ مَّرْفُوعَةٍ
Wafurushin marfooAAatin
আর থাকবে সমুন্নত শয্যায়।
56:35
إِنَّآ أَنشَأْنَٰهُنَّ إِنشَآءً
Inna anshanahunna inshaan
আমি জান্নাতী রমণীগণকে বিশেষরূপে সৃষ্টি করেছি।
56:36
فَجَعَلْنَٰهُنَّ أَبْكَارًا
FajaAAalnahunna abkaran
অতঃপর তাদেরকে করেছি চিরকুমারী।56:37
عُرُبًا أَتْرَابًا
AAuruban atraban
কামিনী, সমবয়স্কা।56:38
لِّأَصْحَٰبِ ٱلْيَمِينِ
Liashabi alyameeni
ডান দিকের লোকদের জন্যে।
★ জান্নাতের গাছপালা
জান্নাতের সব ধরনের ফলের গাছ
থাকবে, তবে খেজুর, ডালিম, আংগুরের গাছ অধিক
পরিমাণে থাকবে।
জান্নাতের বৃক্ষ কন্টকমুক্ত হবে।
কলা ও কুল জান্নাতের বৃক্ষ।
জান্নাতে বৃক্ষ সমূহের ছায়া অনেক দীর্ঘ
হবে।
জান্নাতের সব গাছের মূল স্বর্ণের হবে।
(তিরমিযি)
তুবা জান্নাতের একটি গাছের নাম যার ছায়া শত
বছরের রাস্তার সমান দৈর্ঘ্য। এই বৃক্ষের ফলের
খোসা দিয়ে জান্নাতিদের বস্ত্র তৈরি করা হবে।
# জান্নাতের_ফল_ফলাদিঃ
জান্নাতে মৌসুমি সর্বপ্রকার ফল থাকবে।
কলা ও কুল জান্নাতের ফল। (সূরা ওয়াক্বিয়াহ
২৭-৩২)
জান্নাতি ফলের শীষ এত বড় হবে যে, তা যদি
দুনিয়াতে আসত তবে সাহাবাগণ কিয়ামত পর্যন্ত তা
খেয়ে শেষ করতে পারতো না! (মুসলিম-কিতাব
সালাতিন খুসুফ)
আঙ্গুর, খেজুর, ডালিম জান্নাতি ফল। (সূরা নাবা
৩১-৩১)
জান্নাতি যখন কোনো বৃক্ষের ফল পাড়বে
তখন সঙ্গে সঙ্গে উক্ত স্থানে অপর এক নতুন
ফল ধরবে। (তাবারানি)
জান্নাতের ফলমূল কখনো ফুড়িয়ে যাবে না এবং
নষ্টও হবে না। সুবহানাল্লাহ।
★ জান্নাতের_প্রাসাদসমূহঃ
জান্নাতের অট্টালিকাসমূহ সোনা-চাঁদির ইট দিয়ে নির্মিত হবে।
জান্নাতের কংকরসমূহ হবে মোতি ও
ইয়াকুতের, আর মাটি হবে জাফরানের ।
সকল জান্নাতির অট্টালিকায় তাঁবু থাকবে, আর
সেখানে হুরেরা অবস্থান করবে।
জান্নাতের প্রতিটি তাঁবু ৬০ মাইল বিস্তৃত হবে।
ভিতরে খুব সুন্দর মোতি খোদিত থাকবে।
★ জান্নাতের নদীসমূহ
জান্নাতে সুস্বাদু পানি, সুস্বাদু দুধ, সুমিষ্ট শরাব ও
স্বচ্ছ মধুর নদী প্রবাহিত হবে।
জান্নাতের নদীসমূহের পানির রঙ ও স্বাদ
সবসময় একই থাকবে।
সাইহান, জাইহান, ফুরাত ও নীল জান্নাতি নদী।
(মুসলিম)
কাওসার আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূল
ﷺ কে প্রদত্ত উপহার। কাওসার
নদীর পানি দুধ অপেক্ষা শুভ্র এবং মধু অপেক্ষা
মিষ্টি!
জান্নাতি এক নদীর নাম হায়াত, যার পানি জাহান্নাম
হতে মুক্তিপ্রাপ্তদের শরীরে ঢালা হবে, ফলে
তারা দ্বিতীয়বার চারা গাছের ন্যায় সজিব হয়ে
উঠবে।
,★ জান্নাতের_ঝর্ণাসমূহঃ
জান্নাতের একটি ঝর্ণার নাম সালসাবিল যার
পানিতে আদা মিশ্রিত স্বাদ পাওয়া যাবে৷
জান্নাতের একটি ঝর্ণার নাম "কাফুর", যার পানি পানে জান্নাতিরা আত্মতৃপ্তি অনুভব করবে।
★ তাসনিম জান্নাতের আরেকটি ঝর্ণা। যার স্বচ্ছ পানি শুধু আল্লাহর বিশেষ বান্দাদের জন্য বরাদ্দহবে।
★ জান্নাতির বাজারঃ
জান্নাতে প্রত্যেক জুমু'আর দিন বাজার জমবে।
জুমুয়ার দিন বাজারে অংশগ্রহণকারী
জান্নাতীগণের সৌন্দর্য পূর্বের চেয়ে বৃদ্ধি
পাবে।
মহিলারা শুক্রবারের বাজারে উপস্থিত হবে না
তবে বসে থাকা অবস্থায়ই আল্লাহ তাদের লাবণ্যতা বৃদ্ধি করবেন। (মুসলিম)
★ জান্নাতিদের খানাপিনাঃ
জান্নাতিদের সর্বপ্রথম খাদ্য হলো মাছ, এরপর
গরুর গোশত।জান্নাতে সর্বোৎকৃষ্ট পানীয় হলো
তাসনীম যা শুধু আল্লাহর বিশেষ বান্দাদের
পরিবেশন করা হবে।জান্নাতের পরিষ্কার ও স্বচ্ছ শরাব " রাহিক" পানে সকল জান্নাতিরা আত্মতৃপ্তি লাভ করবে। রাহিক পান
করার পর জান্নাতির মুখে মিশক আম্বরের সুঘ্রাণ অনুভব করবে। শরাব পানে তাদের মাথায় কোনো প্রতিক্রিয়া হবে না।
সকল জান্নাতিদের একশো ব্যক্তির খাবারের
শক্তি দেওয়া হবে। (তাবারানি)হাউজে কাউসারে উড়ে বেড়ানো পাখির
গোশত ভক্ষণে জান্নাতিরা আত্মতৃপ্তি লাভ করবে।সকাল সন্ধ্যায় জান্নাতিদের খাবার পরিবেশনেরনিয়ম চালু থাকবে। (সূরা মারইয়াম ৬২)।
★ জান্নাতিদের_পোশকঃ
জান্নাতিরা সূক্ষ্ম ও পুরু সবুজ রেশমের কাপড়
পড়বে।
জান্নাতিরা হাতে সোনার অলংকার পড়বে।
খাঁটি রেশমী কাপড়ের পোশাক, খাঁটি স্বর্ণের
অলংকার, খাঁটি মোতির অলংকার এবং মোতিখচিত স্বর্ণের অলংকারও জান্নাতিরা পড়বে।পোশাক কখনো পুরাতন হবেনা।
জান্নাতি মহিলাদের ওড়না মান ও দামের দিক
থেকে পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ থেকে মূল্যবান
হবে।
জান্নাতিরা রেশমি রুমাল ব্যবহার করবে।(বুখারী)
★ জান্নাতিদের_সেবকঃ
জান্নাতিদের সেবকরা কৈশর বয়সী হবে।
জান্নাতিদের সেবক এমন সুন্দর হবে যে,
চলতে ফিরতে মনে হবে যেন বিক্ষিপ্ত মোতি।
সুরক্ষিত মোতি সদৃশ কিশোররা জান্নাতিদের
সেবা করান ও হাদিসেও উপস্থিত রয়েছে।
সূরা নাবাঃ
إِنَّ لِلْمُتَّقِينَ مَفَازًا
Inna lilmuttaqeena mafazan
পরহেযগারদের জন্যে রয়েছে সাফল্য।
78:32
حَدَآئِقَ وَأَعْنَٰبًا
Hadaiqa waaAAnaban
উদ্যান, আঙ্গুর,
78:33
وَكَوَاعِبَ أَتْرَابًا
WakawaAAiba atraban
সমবয়স্কা, পূর্ণযৌবনা তরুণী।
78:34
وَكَأْسًا دِهَاقًا
Wakasan dihaqan
এবং পূর্ণ পানপাত্র।
78:35
لَّا يَسْمَعُونَ فِيهَا لَغْوًا وَلَا كِذَّٰبًا
La yasmaAAoona feeha laghwan wala kiththaban
তারা তথায় অসার ও মিথ্যা বাক্য শুনবে না।
78:36
جَزَآءً مِّن رَّبِّكَ عَطَآءً حِسَابًا
Jazaan min rabbika AAataan hisaban
এটা আপনার পালনকর্তার তরফ থেকে যথোচিত দান,
78:37
رَّبِّ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا ٱلرَّحْمَٰنِ لَا يَمْلِكُونَ مِنْهُ خِطَابًا
Rabbi alssamawati waalardi wama baynahuma alrrahmani la yamlikoona minhu khitaban
যিনি নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর পালনকর্তা, দয়াময়, কেউ তাঁর সাথে কথার অধিকারী হবে না।
Thursday, 20 February 2020
পৃথিবী সৃষ্টির ইতিহাস।
⏩🌍পৃথিবীর ইতিহাসঃ
পৃথিবীর ইতিহাস বলতে পৃথিবী নামক গ্রহটির উৎপত্তি থেকে আরম্ভ করে বর্তমান সময় পর্যন্ত সমগ্র সময়কালকেই বোঝানো হয়। অতীতের মূল ঘটনাগুলোর সম্পর্কে বুঝতে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের সমস্ত শাখাই মানুষকে সাহায্য করেছে। পৃথিবীর বয়স মহাবিশ্বের বয়সের কমবেশি এক তৃতীয়াংশ । এই বিপুল সময়ের মধ্যে অজস্র ভূতত্ত্বীয় পরিবর্তন পৃৃথিবীতে ঘটে গেছে, জীবনের উদ্ভব হয়েছে এবং সেই জীবনে এসেছে বিবর্তন।
পৃথিবীর সৃষ্টি সম্পর্কে কেউ সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেননি। সম্পাদনা
পৃথিবী সৃষ্টির শুরুর দিকে কোনো পাথর টিকে নেই, তাই সঠিক করে বলা সম্ভভ নয় কখন পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছিল। তবে ধারণা করা হয় সৌরজগৎ সৃষ্টির মোটামুটি ১০০ মিলিয়ন বছর পর একগুচ্ছ সংঘর্ষের ফল হলো পৃথিবী। আজ থেকে ৪.৫৪ বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবী নামের গ্রহটি আকৃতি পায়, পায় লৌহের একটি কেন্দ্র এবং একটি বায়ুমণ্ডল।
🌏পৃথিবী সৃষ্টির ইতিহাসঃ
● মহাবিশ্বের সৃষ্টি সংক্রান্ত বিজ্ঞানকে
বলে – Cosmology
● মহাবিশ্ব সৃষ্টি পূর্বমুহূর্তকে বলা হয় – টাইম
জিরো বা জিরো আওয়ার।
● বিগ ব্যাং সৃষ্টির আগের মুহূর্তের সীমকে
বলে – পাঙ্ক ওয়াল।
● বিজ্ঞানের বিষয় হিসেবে বিশ্ব
সৃষ্টিতত্ত্বের জন্ম শুরু হয় – ১৯১৬ সালে আলবার্ট
আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব
প্রণয়নের পর থেকে।
● এডউইন হাবলস মহাবিশ্বের প্রসারণ আবিষ্কার
করেন – ১৯২৯ সালে।
● আজ থেকে ১৫০০-২০০০ কোটি বছর আগে
মহাবিশ্বের আকৃতি ছিল – ডিম্বাকার।
● অভ্যন্তরীণ বিপুল তাপ ও চাপের কারণে পচন্ড
শব্দে ডিম্বাকার বস্তুর মহাবিস্ফোরণ ঘটে, এই
বিষ্ফোরণের ফলেই সৃষ্টি হয়েছিল আমাদের
এই মহাবিশ্ব এটাই – বিগ ব্যাং তত্ত্ব।
● বিগ ব্যাং এর ফলে সৃষ্টি হয় – সময়, স্থান,
শক্তি, পদার্থ।
● বিগ ব্যাং এর কারণে সৃষ্ট খণ্ডগুলো হলো –
গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্র, উল্কা, ধুমকেতু ইত্যাদি যা
প্রতিনিয়ত পরস্পর থেকে দুরে সরে যাচ্ছে।
● বিগ ব্যাং তত্ত্বের প্রবক্তা – জি
ল্যামেটার (১৯২৭ সাল)
● জি ল্যামেটার যে দেশের বিজ্ঞানী –
বেলজিয়াম।
● বিগ ব্যাং তত্ত্বের আধুনিক তত্ত্ব ব্যাখ্যা
উপস্থাপন করেন – স্টিফেন হকিং।
● স্টিফেন হকিং বিশ্বের একজন অতিশয়
বিখ্যাত – পদার্থবিজ্ঞানী।
● বিগ ব্যাং তত্ত্বের ব্যাখ্যা সংম্বলিত
স্টিফেন হকিং এর বিখ্যাত বই – A Brief History of
Time
● জ্যোতির্বিজ্ঞানের জনক হলে –
হিপ্পার্কাস।
● মহাজাগতিক মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে –
হিপ্পাকার্স এর নামে।
● হিপ্পাকার্স ম্যাপ হলো – নতুন মহাজাগতিক
মানচিত্র।
● বিজ্ঞানী হাবল মহাবিশ্ব সম্পর্কে বলেন –
‘মহাবিশ্ব প্রতিনিয়তই সম্প্রসারিত হচ্ছে’।
● টলেমি ছিলেন – জ্যোতির্বিদ।
● গ্যালাক্সির কেন্দ্রীভূত অংশের চতুর্দিকে
আবর্তন সম্পূর্ণ করতে সূর্যের সময় লাগে – ২২৫
মিলিয়ন বছর।
● গ্যালাক্সির ক্ষুদ্র অংশ যে নামে পরিচিত
তা হলো – ছায়াপথ।
● মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় নক্ষত্র হলো –
বেটেলগম।
● আকাশের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র হলো – লুব্ধক।
● লুব্ধকের ইউরোপীয় নাম হলো – সিরিয়াস।
● পৃথিবীর নিকটতম নক্ষত্র হলো – সূর্য।
● সূর্য হতে পৃথিবীর দুরত্ব প্রায় – ১৫ কোটি
কিলোমিটার।
● সপ্তর্ষিমন্ডল আকাশে – জিজ্ঞাসা
চিহ্নের মতো দেখায়।
● যে নিউট্রন তারকা রেডিও তরঙ্গ বিকিরণ
করে তাকে বলে – পালসার।
● সূর্য তার নিজ ছায়াপথকে কেন্দ্র করে ঘুরে
আসতে যে সময় নেয় তাকে বলে – কসমিক
ইয়ার।
● আমাদের সূর্যের কসমিক ইয়ারে অতিক্রান্ত
দূরত্ব হলো – ২০ কোটি আলোকবর্ষ।
● শীতের সন্ধ্যারাত্রে পূর্ব আকাশে মনুষ্য
আকৃতির একটি নক্ষত্র দেখা যায়, একে বলে –
কালপুরুষ।
পৃথিবী-চাঁদ সংঘর্ষ সম্পাদনা
“থিয়া” নামের মোটামুটি মঙ্গলের আকৃতির একটা গ্রহাণুর সাথে সংঘর্ষ হয় পৃথিবীর। পৃথিবী মোটামুটি আস্তই থাকে কিন্তু বায়ুমণ্ডল উবে যায় আর ধ্বংস হয়ে যায় এই গ্রহাণুটি। এর ধ্বংসাবশেষ থেকে তৈরি হয় চাঁদ।
গলিত লাভার সমুদ্র সম্পাদনা
থিয়ার সাথে সংঘর্ষের ফলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পৃথিবী। গলিত লাভার টগবগ করতে থাকা সমুদ্র চারিদিকে। শুক্র গ্রহের অবস্থা এখন যেমন, তখন পৃথিবীর অবস্থা ছিলো তেমন। আস্তে আস্তে ঠাণ্ডা হয় পৃথিবী, লাভা জমাট বেঁধে তৈরি করে পাথর আর পানি জমতে শুরু করে পৃথিবীর প্রথম সাগরে। এ সময়ে তৈরি হয় পৃথিবীর প্রাচীনতম খনিজ, জিরকন। এদের বয়স মোটামুটি ৪.৪ বিলিয়ন বছর।
প্রথম মহাদেশ সম্পাদনা
এখন পৃথিবীর বিভিন্ন মহাদেশ বসে আছে অতিকায় সব টেকটোনিক প্লেটের ওপরে। আদিম টেক্টোনিক প্লেট ছিলো অনেক ছোট। এদের মাঝে অনেক সময়ে প্রচুর পরিমাণে স্বর্ণ- রৌপ্যের মতো দামি ধাতু পাওয়া যায়। আজ থেকে প্রায় ৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে তৈরি হয়েছিলো প্রথম এসব মহাদেশ।
প্রাণের প্রথম নিঃশ্বাস সম্পাদনা
মোটামুটি ৩.৫ বিলিয়ন বছর আগে সালোকসংশ্লেষণ থেকে আসে প্রথম অক্সিজেন। পাথরের ওপরে জন্মানো সায়ানোব্যাকটেরিয়া বা নীলচে সবুজ শ্যাওলা থেকে প্রথম অক্সিজেন আসে। তবে এটা আসলে ভালো কিছু করেনি। এই অক্সিজেনের উপস্থিতির কারণে এমন কিছু ব্যাকটেরিয়া মরে যায় যারা অক্সিজেন এর উপস্থিতি সহ্য করতে পারে না। আর এভাবে ২.৪ বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে অক্সিজেন অনেক বেশি বেড়ে যায় যাকে বলে হয়ে থাকে “Great Oxygenation Crisis”।
নিরুপদ্রব এক বিলিয়ন বছর সম্পাদনা
প্রথম মহাদেশ তৈরি হবার পর এক বিলিয়ন বছর তেমন কিছুই হয়নি পৃথিবীতে। একেবারে একঘেয়ে একটা সময় গেছে। মহাদেশগুলো আটকে ছিলো একটা ট্রাফিক জ্যামে অর্থাৎ তেমন একটা নড়াচড়া করেনি। প্রাণের তেমন কোন উন্নতিও ঘটেনি এ সময়ে।
মহা-মহাদেশ সম্পাদনা
মহা-মহাদেশের মাঝে একটি হলো প্যানগায়া।প্যানগায়ার মাধ্যমে অখণ্ড মহাদেশটি বিভক্ত হয়ে তৈরী করে অনেকগুলো মহাদেশ।এখনো বিভিন্ন পর্বতমালা দেখে গবেষকেরা বের করতে পারেন ঠিক কিভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকা একত্রে যুক্ত থেকে এসব বিশাল মহা-মহাদেশের সৃষ্টি করেছিলো।
ভয়ংকর শীতকাল সম্পাদনা
৭৫০ মিলিয়ন বছর আগে হঠাৎ করেই একটা বড় মহাদেশ অন্যদের থেকে আলাদা হয়ে বের হয়ে যায়। এ সময়ে পৃথিবী একেবারে ঠাণ্ডা হয়ে একটা বিশাল বরফের গোলায় রূপান্তরিত হয়। এ সময়ে হিমবাহ দিয়ে ঢাকা ছিলো ভূপৃষ্ঠ। এমনকি বিষুবীয় অঞ্চলেও ছিলো হিমবাহ।
প্রাণের বিস্ফোরণ সম্পাদনা
৬৫০ মিলিয়ন বছর আগে বায়ুমণ্ডলে আবারো বাড়তে শুরু করে অক্সিজেন এবং এ সময়ে বিভিন্ন প্রাণীর উদ্ভব হতে থাকে। এককোষী প্রাণীর পাশাপাশি এসে পড়ে বহুকোষী প্রাণী। এই সময়সীমার মাঝেই শিকার এবং শিকারির উদ্ভব হয়।
প্রাণীজগতের বিলুপ্তি সম্পাদনা
পৃথিবীর ইতিহাসে সবচাইতে বড় বিলুপ্তির ঘটনা ঘটে আজ থেকে ২৫২ মিলিয়ন বছর আগে পারমিয়ান পিরিয়ডে। মাত্র ৬০ হাজার বছরের মাঝে প্রায় ৯০ শতাংশ জীবের বিলুপ্তি ঘটে। ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে ক্রেটেশাস পিরিয়ডে বিলুপ্তি ঘটে ডায়নোসর সহ ৮৫ শতাংশ জীবের। পারমিয়ান পিরিয়ডে এই বিলুপ্তির কারণ ছিলো সাইবেরিয়ায় এক বিশাল অগ্ন্যুৎপাত। পরিবেশ পরিবর্তনের কারণেও বিলুপ্তি ঘটতে দেখা গেছে। ৪৫০ মিলিয়ন বছর আগে বড়সড় একটা তুষার যুগের কারণে বিলুপ্তি ঘটে ৭৫ শতাংশ জীবের।
বরফ যুগ সম্পাদনা
পাঁচটি বড় বরফ যুগ দেখা যায় পৃথিবীর ইতিহাসে। আপনি কি জানেন, এখনও আমরা একটি বরফ যুগের মাঝে বাস করছি? আজ থেকে প্রায় ১১,৫০০ বছর আগে শুরু হয়েছিলো এই বরফ যুগ।
প্লাস্টিক যুগ? সম্পাদনা
বর্তমান সময়ে প্লাস্টিকের এতো বেশি আবর্জনা জমে গেছে যে অনেক বিজ্ঞানী একে প্লাস্টিক যুগ বা প্লাস্টিসিন পিরিয়ড বলে আখ্যা দিচ্ছেন।
📖কোরআনের ভাষায় পৃথিবীঃ
‘বিগ ব্যাং’ অর্থ্যাৎ মহা বিস্ফোরণ। বিজ্ঞানীরা দাবী করে আসছে পৃথিবী একটি মহা বিস্ফোরণের মাধ্যেমে সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু একজন মুসলমান হিসেবে কি বিজ্ঞানীদের এই দাবি বিশ্বাস করা যায়? পৃথিবী সৃষ্টির সঠিক তথ্য আছে পবিত্র কোরআনে।
পৃথিবী সৃষ্টি প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক আল কোরআনে সূরা আম্বিয়ায় বলেছেন, ‘সত্য প্রত্যাখানকারীরা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলি ও পৃথিবী মিশে ছিল ওতপ্রোতভাবে; অত:পর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম’ (আম্বিয়া:৩০)।
আয়াতটি আমাদেরকে একেবারে পরিস্কারভাবে বলছে পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্রেরা একসময় একজায়গায় পুঞ্জিভুত ছিল। এবং একটা নির্দিষ্ট সময়ে এদের জন্ম হয়।
আজকের বিজ্ঞান কি বলে এ সম্বন্ধে ? ষ্টিফেন হকিং এর বিগ ব্যাং থিওরী আজ সর্বময় স্বীকৃত। এ থিওরী অনুযায়ী মহাবিশ্বের সকল দৃশ্য অদৃশ্য গ্রহ নক্ষত্র সৃষ্টির শুরুতে একটি বিন্দুতে পুঞ্জিভুত ছিল। এবং একটা বিশাল বিষ্ফোরণের মাধ্যমে এরা চারিদেকে ছড়িয়ে যেতে থাকে। কিভাবে মরুভুমির বুকে সংকলিত দেড় হাজার বছর আগের একটি বই এই বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাটা ধারণ করতে পারল ?
ড:মিলার বলেছেন, এই আয়াতটি নিয়ে চিন্তা-গবেষণার পর কোরআন যে ঐশী গ্রন্থ তা মেনে নিতে বাধ্য হই। যারা প্রচার চালাচ্ছে কোরআন হযরত মুহাম্মদ (সা) এর নিজস্ব বক্তব্য তাদের দাবি নাকচ করার জন্য এই একটি আয়াতই যথেষ্ট।
ড:মিলার বলেছেন, দেড় হাজার বছর আগে ইসলামের নবীর পক্ষে কিভাবে মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য নিয়ে কথা বলা সম্ভব, যিনি কোন দিন কোন স্কুলে পড়ালেখা করেন নি। কারণ এটি এমন এক বৈজ্ঞানিক বিষয়, যা সম্পর্কে তত্ত্ব আবিষ্কার করে মাত্র কয়েক বছর আগে ১৯৭৩ সালে নোবেল পুরুস্কার পেয়েছেন এক বিজ্ঞানী। মিলারের মতে এই আয়াতে সেই বিগ ব্যাং এর কথাই বলা হয়েছে যার মাধ্যমে পৃথিবী, আকাশমন্ডলী ও তারকারাজি সৃষ্টি হয়েছে।54 إِنَّ رَبَّكُمُ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَىٰ عَلَى الْعَرْشِ يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ يَطْلُبُهُ حَثِيثًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالنُّجُومَ مُسَخَّرَاتٍ بِأَمْرِهِ ۗ أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ ۗ تَبَارَكَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ
নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ। তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আরশের উপর অধিষ্টিত হয়েছেন। তিনি পরিয়ে দেন রাতের উপর দিনকে এমতাবস্থায় যে, দিন দৌড়ে রাতের পিছনে আসে। তিনি সৃষ্টি করেছেন সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্র দৌড় স্বীয় আদেশের অনুগামী। শুনে রেখ, তাঁরই কাজ সৃষ্টি করা এবং আদেশ দান করা। আল্লাহ, বরকতময় যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক।আল্লাহ تعالى পৃথিবীর সবকিছু মানুষের জন্য যে তৈরি করেছেন শুধু তাই নয়, তিনি পৃথিবীকে একদম শুরু থেকে ধাপে ধাপে গঠন করেছেন যেন একদিন পৃথিবীতে মানুষ থাকতে পারে। পৃথিবীর বিলিয়ন বছরের ইতিহাস দেখলে পরিষ্কার প্রমাণ পাওয়া যায় যে, একদম শুরু থেকেই এই গ্রহটি প্রস্তুতি নিচ্ছিল যে এখানে একদিন মানুষ থাকবে।
সাতটি আকাশ
আয়াতটির পরের অংশে আল্লাহ تعالى বলছেন—
তারপর তিনি নির্দেশ করেছিলেন আকাশের প্রতি এবং তাদেরকে সাতটি/অনেক আকাশে গঠন করেছেন।
নাস্তিকরা এই আয়াতটি দেখিয়ে বলে, “দেখ! তোমাদের কু’রআনে ভুল আছে? কু’রআন বলে আকাশ সৃষ্টি হয়েছে পৃথিবী সৃষ্টির পরে!”
এই আয়াতটি বলে না যে, আকাশ সৃষ্টি হয়েছে পৃথিবী সৃষ্টির পরে, এটি বলে যে, আগে যে আকাশ ছিল তাকে সাতটি আকাশে গঠন করা হয়েছে।[৪] পৃথিবীর ইতিহাস দেখলে দেখা যায়, প্রথমে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল পুরোটা জুড়ে ছিল শুধুই হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম, কোনো স্তর ছিল না। তারপর কয়েক বিলিয়ন বছরের প্রক্রিয়ায় বায়ুমণ্ডলের স্তরগুলো তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে অক্সিজেন এসেছে ব্যাকটেরিয়া আসার পরে, অনেক উঁচু পর্বত তৈরি হবার পর।[22]
আরবি নিয়ে আগ্রহীদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার। اِسْتَوَىٰ অর্থ হয় সোজা, সমান, নিয়মিত করা। কিন্তু اِسْتَوَىٰ এর পরে যখন إلى আসে, তখন তার অর্থ হয় ‘মনোনিবেশ করা’, যা আল্লাহর تعالى ক্ষেত্রে ব্যবহার করাটা উচিত হবে না। তাই অনুবাদে ‘নির্দেশ করা’ বলা হয়েছে।[৫] আর আরবিতে سبع ব্যবহার করা হয় সাত বা অনেক—দুই ক্ষেত্রেই।[২]
এখন এই সাতটি আকাশ নিয়ে দুটি প্রতিষ্ঠিত মত রয়েছে। একটি হলো—এখানে আল্লাহ বায়ুমণ্ডলের ৭টি স্তরের কথা বলেছেন বা পৃথিবীর কাছাকাছি যে আকাশ রয়েছে, তাকে সাতটি স্তরে ভাগ করাকে বুঝিয়েছেন।[৪] বায়ুমণ্ডলে কয়টি স্তর রয়েছে, তা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। অনেকে ‘ওজন স্তর’-কে একটি আলাদা স্তর দাবি করেন, অনেকে করেন না। অনেকে এক্সস্ফিয়ারকে একটি স্তর গোনেন, অনেকে বলেন এটা কোনো স্তর হতে পারে না। তাই এই ধারণা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। কিন্তু উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো, আমরা যদি উপরের দিকে যেতে থাকি, তাহলে দেখা যায় বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা ঠিক সাত বার পরিবর্তন হয়। প্রথমে তাপমাত্রা কমতে থাকে, তারপর প্রায় ৬ মাইল উচ্চতা পর্যন্ত তা মোটামুটি একই থাকে, তারপর তা বাড়তে থাকে, আবার অনেক উচ্চতা পর্যন্ত একই থাকে, আবার কমে। নীচে লাল দাগটি দেখুন, তা ঠিক সাত বার পরিবর্তন হয়—
হয়তো আল্লাহ تعالى বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রার এই সাত বার পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সাতটি স্তরের কথাই বলেছেন।[21]
আরেকটি মত হলো, প্রথম আকাশটি হচ্ছে আসলে আমাদের দৃশ্যমান মহাবিশ্ব। এরকম আরও ছয়টি মহাবিশ্ব রয়েছে। এর স্বপক্ষে প্রমাণ দেখাতে গিয়ে সূরা ফুসসিলাত-এর ১২ নম্বর আয়াত দেখানো হয়, যেখানে আল্লাহ تعالى বলেছেন:
وَزَيَّنَّا ٱلسَّمَآءَ ٱلدُّنْيَا بِمَصَٰبِيحَ
আমি প্রথম আকাশকে সাজিয়েছি বহু প্রদীপ দিয়ে।
অনেকে বলেন এই প্রদীপ বলতে সূর্য, নক্ষত্র, গ্যালাক্সি—এগুলো বোঝানো হয়েছে। কিন্তু এই মতের বিপক্ষে প্রমাণ দেখাতে গিয়ে অনেকে বলেন, বাকারার আয়াতে ثُمَّ (তারপর) ব্যবহার করা হয়েছে, যার অর্থ পৃথিবী আগে ছিল, ‘তারপর’ বায়ুমণ্ডলকে (আকাশকে) সাতটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে। এছাড়াও আব্দেল হালিমের কু’রআনের অনুবাদ অনুসারে ফুসসিলাতের আয়াতটির অর্থ আসলে হবে, “আমি কাছের আকাশটিকে সুন্দরভাবে উজ্জ্বল করেছি”—এখানে প্রদীপের কোনো উল্লেখ নেই। আরেকটি প্রমাণ হলো, সূরা নুহ ১৫-১৬ আয়াতে বলা হয়েছে —
কখনও চিন্তা করে দেখেছো: কীভাবে আল্লাহ সাতটি আকাশ সৃষ্টি করেছেন—একটির উপর আরেকটি ? তিনি চাঁদকে তাদের (আকাশদের) মধ্যে একটি আলো হিসেবে দিয়েছেন এবং সূর্যকে একটি প্রদীপ হিসেবে? [নুহ ১৫-১৬]
এখানে ১৬ নম্বর আয়াতে فِيهِنَّ অর্থ “তিন বা তার অধিক আকাশের মধ্যে।” যার মানে দাঁড়ায়, প্রথম আকাশ পুরো মহাবিশ্ব হতে পারে না, কারণ চাদের আলো এই পুরো মহাবিশ্বকে আলোকিত করে না, করবেও না—আরও দুটি মহাবিশ্ব তো দূরের কথা। এই আয়াতের ব্যাখ্যা একটাই হতে পারে—চাঁদ বায়ুমণ্ডলের কমপক্ষে তিনটি স্তরে আলো হিসেবে রয়েছে। ১৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ تعالى আকাশকে সাতটি আকাশে তৈরির কথা বলেছেন এবং ১৬ নম্বর আয়াতে তিনি فِيهِنَّ বলতে সম্ভবত সেই সাতটি আকাশকেই বুঝিয়েছেন।
সুতরাং সাত আকাশ বলতে বায়ুমণ্ডলের সাতটি স্তর, যেখানে শেষ স্তরটি হচ্ছে মহাকাশ—এর পক্ষে এখন পর্যন্ত তিনটি যুক্তি রয়েছে।
আরেকটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো, “তারপর” একটি সময়ের ধারণা। আল্লাহর تعالى কাছে সময় এবং আমাদের কাছে সময় ভিন্ন ব্যাপার। তিনি সময়ের উর্ধে। তাই তার কাছে “তারপর” আর আমাদের কাছে “তারপর” এক নয়।[৮] যেমন কু’রআনে বহু জায়গায় আল্লাহ تعالى ভবিষ্যতের ঘটনাগুলো এমনভাবে বলেছেন, যেন তা ইতিপূর্বে ঘটে গেছে।কারণ আমাদের কাছে অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ যেরকম, তাঁর কাছে সেরকম নয়। আমাদের ভাষার শব্দভাণ্ডারে অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের বাইরে কোনো শব্দ নেই, কারণ আমরা এর বাইরে কোনো কিছু কল্পনা করতে পারি না। আমাদের সমস্ত চিন্তা, কল্পনা, অভিজ্ঞতা স্থান এবং কালের মধ্যে সীমাবদ্ধ। স্থান এবং কালের বাইরে যা কিছুই আছে, তা আমরা কখনই জানতে পারব না। একারণেই আল্লাহ تعالى বলেছেন—আর একমাত্র তিনিই সবকিছুর ব্যাপারে সব জানেন। [বাকারাহ ২৯]আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ
(আল্লাহ যথার্থরূপে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছেন। এতে নিদর্শন রয়েছে ঈমানদার সম্প্রদায়ের জন্যে)। (আনকাবুতঃ ৪৪)
এ ধরায় কত যে বিচিত্র প্রাণী রয়েছে যা গণনা করে শেষ করা যাবেনা। এ সব কিছু সৃষ্টির পিছনে কি হিকমত আছে বলে আপনি কি মনে করেন?! এ মহাবিশ্বে অনেক সুস্পষ্ট নিদর্শন রয়েছে যা আল্লাহর কুদরত ও তাঁর মহিমা প্রমাণ করে। আধুনিক বিজ্ঞান এখনো অনেক নতুন নতুন নিদর্শন আবিষ্কার করছে যা মানুষকে মহান সুনিপুণ প্রজ্ঞাময় স্রষ্টা আল্লাহর মহিমা বুঝিয়ে দেয়।
এডগার মিশেল
চাঁদে ষষ্ঠ বিচরণকারী
ইলাহের একটি দলিল
“আমাদের গ্রহের অবলোকন ছিল ঐশী আভাস।”
মানুষ যদি এ মহাবিশ্ব ও এর ভিতরে যা কিছু আছে তা নিয়ে একটু চিন্তা করে এবং গভীরভাবে গবেষণা করে তবে সে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করবে যে, এ বিশ্ব অত্যন্ত সুক্ষ্মভাবে সুবিন্যস্ত করে সৃষ্টি করা হয়েছে। একজন প্রজ্ঞাময়, সর্বশক্তিমান ও সর্বজ্ঞানী ইলাহ তা সৃষ্টি করেছেন, তিনি একে উত্তমরূপে সুপরিমিতভাবে বানিয়েছেন।
এ মহাবিশ্বের আকাশ, আকাশের তারকারাজি, গ্রহ নক্ষত্র ও ছায়াপথ আর জমিনে যা কিছু আছে ও যে সব নদ নদী, খাল বিল, পাহাড় পর্বত, পশুপাখি , গাছপালা ইত্যাদিযা কিছু মহান আল্লাহ তায়া’লা অস্তিত্বহীন থেকে সৃষ্টি করেছেন, এসব নিয়ে চিন্তা করলেই আমরা আল্লাহর কুদরত, জ্ঞান, প্রজ্ঞা বুঝতে সক্ষম হই। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ
(কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না? আমি পৃথিবীতে ভারী বোঝা রেখে দিয়েছি যাতে তাদেরকে নিয়ে পৃথিবী ঝুঁকে না পড়ে এবং তাতে প্রশস্ত পথ রেখেছি, যাতে তারা পথ প্রাপ্ত হয়। আমি আকাশকে সুরক্ষিত ছাদ করেছি; অথচ তারা আমার আকাশস্থ নিদর্শনাবলী থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে। তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র। সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে)। (আম্বিয়াঃ ৩০-৩৩)
জেমস আরউইন
মহাকাশচারী
এটা আল্লাহর সৃষ্টি!!
“এটা দেখা মাত্র অবশ্যই মানুষের মাঝে পরিবর্তন আসবে সে আল্লাহর সৃষ্টিকে আল্লাহর ভালবাসাকে মূল্যায়ন করবে” তখন তিনি আলোচনা করেছিলেন জগত নিয়ে।
জ্ঞানীলোক যখন আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করে তখন সে নিশ্চিতভাবে জানতে পারে এ বিশ্বে যা কিছু আছে সব কিছুই আল্লাহর ইবাদত করে। সব সৃষ্টজীব আল্লাহর পবিত্রতা বর্ননা করে ও গুনকীর্তন করেন। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ (রাজ্যাধিপতি, পবিত্র, পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময় আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করে, যা কিছু আছে নভোমন্ডলে ও যা কিছু আছে ভূমন্ডলে)। (জুম’আঃ ১)
তারা সকলে আল্লাহর মহিমার সামনে সিজদাবনত হয়। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ
তুমি কি দেখনি যে, আল্লাহকে সেজদা করে যা কিছু আছে নভোমন্ডলে, যা কিছু আছে ভুমন্ডলে, সূর্য, চন্দ্র, তারকারাজি পর্বতরাজি বৃক্ষলতা, জীবজন্তু এবং অনেক মানুষ। আবার অনেকের উপর অবধারিত হয়েছে শাস্তি। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা লাঞ্ছিত করেন, তাকে কেউ সম্মান দিতে পারে না। আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন। (হাজ্বঃ ১৮)
ডেবোরা পটার
আমেরিকান সাংবাদিক
আল্লাহ কর্তৃক মানুষকে মর্যাদা প্রদান
“ইসলামই হল আল্লাহ তায়ালার বিধান, আমাদের চার পাশে প্রকৃতির মাঝে তা আমরা দেখতে পাই। এক মাত্র আল্লাহর নির্দেশে পাহাড় সমুদ্র গ্রহ নক্ষত্র বিচরণ করে এবং নিজ কক্ষ পথে সঠিক ভাবে পরিচালিত হয়। এ গুলো তাদের সৃষ্টি কর্তা আল্লাহর নির্দেশের অধীন। এমনিভাবে এই জগতের প্রতিটি অনু এমনকি জড় বস্তুও এ নিয়মের অধীন। ব্যতিক্রম শুধু মানুষ। কারণ আল্লাহ তায়ালা তাকে ইচ্ছার স্বাধীনতা দান করেছেন। তাই ইচ্ছা করলে সে আল্লাহর বিধানে চলতে পারে, ইচ্ছা করলে নিজে নিজের বিধান রচনা করবে এবং নিজের পছন্দের দীনের উপর চলতে পারে। দুঃখের বিষয় হল, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষ দ্বিতীয় পথটি গ্রহণ করেছে। “
এমনিভাবে সব সৃষ্টজীব মহান আল্লাহ তায়া’লার তাছবিহ পাঠ করে, তাঁর প্রতি বিনীত হয়ে তারই প্রশংসা করে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ
তুমি কি দেখ না যে, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যারা আছে, তারা এবং উড়ন্ত পক্ষীকুল তাদের পাখা বিস্তার করতঃ আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে? প্রত্যেকেই তার যোগ্য এবাদত এবং পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণার পদ্ধতি জানে। তারা যা করে, আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক জ্ঞাত। (নুরঃ ৪১)
অন্যদিকে মু’মিন ব্যক্তি দেখতে পায় যে, মহাবিশ্ব একটি কাফেলার মত একই দিকে চলমান, আল্লাহ তায়া’লার দিকে চলছে। ফলে সেও এ চলমান পবিত্র কাফেলার সাথে ঐকতানে চলে। এতে তার জীবন আনন্দময় হয় এবং তার বিবেক ও অনুভূতি স্থীর হয়।
মহাবিশ্ব সৃষ্টি আল্লাহর একত্ববাদের প্রমাণ
এ সুবিশাল মহাবিশ্ব, এর মধ্যকার সকল সৃষ্টি ও বিস্ময়কর বিষয়সমূহ আল্লাহর মহিমা ও কুদরত এবং তাঁর সুনিপুণ সৃষ্টির সবচেয়ে বড় প্রমাণ। এ সব কিছুই আল্লাহর একত্ববাদ প্রমাণ করে এবং প্রমাণ করে যে, তিনি ছাড়া কোন প্রতিপালক নেই, কোন উপাস্যনেই। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ
তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে এক নিদর্শন এই যে,তিনি মৃত্তিকা থেকে তোমাদের সৃষ্টি করেছেন। এখন তোমরা মানুষ, পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছ। আর এক নিদর্শন এই যে,তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। তাঁর আর ও এক নিদর্শন হচ্ছে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সৃজন এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র। নিশ্চয় এতে জ্ঞানীদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। তাঁর আরও নিদর্শনঃ রাতে ও দিনে তোমাদের নিদ্রা এবং তাঁর কৃপা অন্বেষণ। নিশ্চয় এতে মনোযোগী সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। তাঁর আরও নিদর্শনঃ তিনি তোমাদেরকে দেখান বিদ্যুৎ, ভয় ও ভরসার জন্যে এবং আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর তদ্দ্বারা ভূমির মৃত্যুর পর তাকে পুনরুজ্জীবিত করেন। নিশ্চয় এতে বুদ্ধিমান লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। তাঁর অন্যতম নিদর্শন এই যে, তাঁরই আদেশে আকাশ ও পৃথিবী প্রতিষ্ঠিত আছে। অতঃপর যখন তিনি মৃত্তিকা থেকে উঠার জন্যে তোমাদের ডাক দেবেন, তখন তোমরা উঠে আসবে। নভোমন্ডলে ও ভুমন্ডলে যা কিছু আছে, সব তাঁরই। সবাই তাঁর আজ্ঞাবহ। (সূরা রূমঃ২০-২৬)
আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ
বল, সকল প্রশংসাই আল্লাহর এবং শান্তি তাঁর মনোনীত বান্দাগণের প্রতি! শ্রেষ্ঠ কে? আল্লাহ না ওরা-তারা যাদেরকে শরীক সাব্যস্ত করে। বল তো কে সৃষ্টি করেছেন নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল এবং আকাশ থেকে তোমাদের জন্যে বর্ষণ করেছেন পানি; অতঃপর তা দ্বারা আমি মনোরম বাগান সৃষ্টি করেছি। তার বৃক্ষাদি উৎপন্ন করার শক্তিই তোমাদের নেই। অতএব, আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য আছে কি? বরং তারা সত্যবিচ্যুত সম্প্রদায়। বল তো কে পৃথিবীকে বাসোপযোগী করেছেন এবং তার মাঝে মাঝে নদ-নদী প্রবাহিত করেছেন এবং তাকে স্থিত রাখার জন্যে পর্বত স্থাপন করেছেন এবং দুই সমুদ্রের মাঝখানে অন্তরায় রেখেছেন। অতএব, আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য আছে কি? বরং তাদের অধিকাংশই জানে না। বল তো কে নিঃসহায়ের ডাকে সাড়া দেন যখন সে ডাকে এবং কষ্ট দূরীভূত করেন এবং তোমাদেরকে পৃথিবীতে পুর্ববর্তীদের স্থলাভিষিক্ত করেন। সুতরাং আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য আছে কি? তোমরা অতি সামান্যই ধ্যান কর। বল তো কে তোমাদেরকে জলে ও স্থলে অন্ধকারে পথ দেখান এবং যিনি তাঁর অনুগ্রহের পূর্বে সুসংবাদবাহী বাতাস প্রেরণ করেন? অতএব, আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য আছে কি? তারা যাকে শরীক করে, আল্লাহ তা থেকে অনেক ঊর্ধ্বে। বল তো কে প্রথমবার সৃষ্টি করেন, অতঃপর তাকে পুনরায় সৃষ্টি করবেন এবং কে তোমাদেরকে আকাশ ও জমিন থেকে রিযিক দান করেন। সুতরাং আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য আছে কি? বলুন, তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে তোমাদের প্রমাণ উপস্থিত কর। (সূরা নামলঃ৫৯-৬৪)
মানুষের অধীনস্তকরণ ও সম্মানিত করা
ডেবোরা পটার
আমেরিকান সাংবাদিক
নবুয়তের আলামত
“মুর্খ সমাজে বেড়ে ওঠা নিরক্ষর মুহাম্মাদ কিভাবে জগতের অলৌকিক বিষয় গুলো জানতে পেরেছিল? যা আল কোরআন বর্ণনা করেছে এবং আধুনিক বিজ্ঞান আজ পর্যন্ত আবিষ্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অতএব, অবশ্যই তা আল্লাহর কালাম ছাড়া আর কিছু হতে পারে না।”
আল্লাহ তায়া’লা বস্তুগত জিনিসের পূজা অর্চনা থেকে মানুষকে মুক্তি দান করেছেন। এ ধরায় যা কিছু আছে, আসমান জমিনে যা কিছু আছে সব কিছুকে মানুষের অধীনস্থ ও আয়ত্ত্বাধীন করে দিয়েছেন। এ সব কিছুই মানুষের জন্য তাঁর দয়া ও মমতা। তিনি জমিন আবাদ ও তাতে মানুষের পূর্ণ খেলাফত প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে এ সব কিছু করেছেন। অন্যদিকে মানুষ যেন তাঁর পরিপূর্ণ ইবাদাতের উপযুক্ত হয়। এখানে অধীনস্থ বলতে দুটো অর্থ বুঝায়ঃ আল্লাহকে জানা এবং তাঁর দয়া মমতা, সম্মান ও মর্যাদা বুঝার জন্য অধীনস্থ করা। অন্যটি হলোঃ অধীনস্থ বলতে মানুষের মর্যাদা অন্যান্য সব প্রাণী ও জিনিসের উপরে বুঝানো। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ
এবং আয়ত্ত্বাধীন করে দিয়েছেন তোমাদের, যা আছে নভোমন্ডলে ও যা আছে ভূমন্ডলে; তাঁর পক্ষ থেকে। (জাসিয়াঃ ১৩)
আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ
তিনিই আল্লাহ, যিনি নভোমন্ডল ও ভুমন্ডল সৃজন করেছেন এবং আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে অতঃপর তা দ্বারা তোমাদের জন্যে ফলের রিযিক উৎপন্ন করেছেন এবং নৌকাকে তোমাদের আজ্ঞাবহ করেছেন, যাতে তাঁর আদেশে সমুদ্রে চলা ফেরা করে এবং নদ-নদীকে তোমাদের সেবায় নিয়োজিত করেছেন। এবং তোমাদের সেবায় নিয়োজিত করেছেন সূর্যকে এবং চন্দ্রকে সর্বদা এক নিয়মে এবং রাত্রি ও দিবাকে তোমাদের কাজে লাগিয়েছেন। যে সকল বস্তু তোমরা চেয়েছ, তার প্রত্যেকটি থেকেই তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন। যদি আল্লাহর নেয়ামত গণনা কর, তবে গুণে শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয় মানুষ অত্যন্ত অন্যায়কারী, অকৃতজ্ঞ। (ইবরাহিমঃ ৩২-৩৪)
পৃথিবীর ইতিহাস বলতে পৃথিবী নামক গ্রহটির উৎপত্তি থেকে আরম্ভ করে বর্তমান সময় পর্যন্ত সমগ্র সময়কালকেই বোঝানো হয়। অতীতের মূল ঘটনাগুলোর সম্পর্কে বুঝতে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের সমস্ত শাখাই মানুষকে সাহায্য করেছে। পৃথিবীর বয়স মহাবিশ্বের বয়সের কমবেশি এক তৃতীয়াংশ । এই বিপুল সময়ের মধ্যে অজস্র ভূতত্ত্বীয় পরিবর্তন পৃৃথিবীতে ঘটে গেছে, জীবনের উদ্ভব হয়েছে এবং সেই জীবনে এসেছে বিবর্তন।
পৃথিবীর সৃষ্টি সম্পর্কে কেউ সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেননি। সম্পাদনা
পৃথিবী সৃষ্টির শুরুর দিকে কোনো পাথর টিকে নেই, তাই সঠিক করে বলা সম্ভভ নয় কখন পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছিল। তবে ধারণা করা হয় সৌরজগৎ সৃষ্টির মোটামুটি ১০০ মিলিয়ন বছর পর একগুচ্ছ সংঘর্ষের ফল হলো পৃথিবী। আজ থেকে ৪.৫৪ বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবী নামের গ্রহটি আকৃতি পায়, পায় লৌহের একটি কেন্দ্র এবং একটি বায়ুমণ্ডল।
🌏পৃথিবী সৃষ্টির ইতিহাসঃ
● মহাবিশ্বের সৃষ্টি সংক্রান্ত বিজ্ঞানকে
বলে – Cosmology
● মহাবিশ্ব সৃষ্টি পূর্বমুহূর্তকে বলা হয় – টাইম
জিরো বা জিরো আওয়ার।
● বিগ ব্যাং সৃষ্টির আগের মুহূর্তের সীমকে
বলে – পাঙ্ক ওয়াল।
● বিজ্ঞানের বিষয় হিসেবে বিশ্ব
সৃষ্টিতত্ত্বের জন্ম শুরু হয় – ১৯১৬ সালে আলবার্ট
আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব
প্রণয়নের পর থেকে।
● এডউইন হাবলস মহাবিশ্বের প্রসারণ আবিষ্কার
করেন – ১৯২৯ সালে।
● আজ থেকে ১৫০০-২০০০ কোটি বছর আগে
মহাবিশ্বের আকৃতি ছিল – ডিম্বাকার।
● অভ্যন্তরীণ বিপুল তাপ ও চাপের কারণে পচন্ড
শব্দে ডিম্বাকার বস্তুর মহাবিস্ফোরণ ঘটে, এই
বিষ্ফোরণের ফলেই সৃষ্টি হয়েছিল আমাদের
এই মহাবিশ্ব এটাই – বিগ ব্যাং তত্ত্ব।
● বিগ ব্যাং এর ফলে সৃষ্টি হয় – সময়, স্থান,
শক্তি, পদার্থ।
● বিগ ব্যাং এর কারণে সৃষ্ট খণ্ডগুলো হলো –
গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্র, উল্কা, ধুমকেতু ইত্যাদি যা
প্রতিনিয়ত পরস্পর থেকে দুরে সরে যাচ্ছে।
● বিগ ব্যাং তত্ত্বের প্রবক্তা – জি
ল্যামেটার (১৯২৭ সাল)
● জি ল্যামেটার যে দেশের বিজ্ঞানী –
বেলজিয়াম।
● বিগ ব্যাং তত্ত্বের আধুনিক তত্ত্ব ব্যাখ্যা
উপস্থাপন করেন – স্টিফেন হকিং।
● স্টিফেন হকিং বিশ্বের একজন অতিশয়
বিখ্যাত – পদার্থবিজ্ঞানী।
● বিগ ব্যাং তত্ত্বের ব্যাখ্যা সংম্বলিত
স্টিফেন হকিং এর বিখ্যাত বই – A Brief History of
Time
● জ্যোতির্বিজ্ঞানের জনক হলে –
হিপ্পার্কাস।
● মহাজাগতিক মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে –
হিপ্পাকার্স এর নামে।
● হিপ্পাকার্স ম্যাপ হলো – নতুন মহাজাগতিক
মানচিত্র।
● বিজ্ঞানী হাবল মহাবিশ্ব সম্পর্কে বলেন –
‘মহাবিশ্ব প্রতিনিয়তই সম্প্রসারিত হচ্ছে’।
● টলেমি ছিলেন – জ্যোতির্বিদ।
● গ্যালাক্সির কেন্দ্রীভূত অংশের চতুর্দিকে
আবর্তন সম্পূর্ণ করতে সূর্যের সময় লাগে – ২২৫
মিলিয়ন বছর।
● গ্যালাক্সির ক্ষুদ্র অংশ যে নামে পরিচিত
তা হলো – ছায়াপথ।
● মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় নক্ষত্র হলো –
বেটেলগম।
● আকাশের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র হলো – লুব্ধক।
● লুব্ধকের ইউরোপীয় নাম হলো – সিরিয়াস।
● পৃথিবীর নিকটতম নক্ষত্র হলো – সূর্য।
● সূর্য হতে পৃথিবীর দুরত্ব প্রায় – ১৫ কোটি
কিলোমিটার।
● সপ্তর্ষিমন্ডল আকাশে – জিজ্ঞাসা
চিহ্নের মতো দেখায়।
● যে নিউট্রন তারকা রেডিও তরঙ্গ বিকিরণ
করে তাকে বলে – পালসার।
● সূর্য তার নিজ ছায়াপথকে কেন্দ্র করে ঘুরে
আসতে যে সময় নেয় তাকে বলে – কসমিক
ইয়ার।
● আমাদের সূর্যের কসমিক ইয়ারে অতিক্রান্ত
দূরত্ব হলো – ২০ কোটি আলোকবর্ষ।
● শীতের সন্ধ্যারাত্রে পূর্ব আকাশে মনুষ্য
আকৃতির একটি নক্ষত্র দেখা যায়, একে বলে –
কালপুরুষ।
পৃথিবী-চাঁদ সংঘর্ষ সম্পাদনা
“থিয়া” নামের মোটামুটি মঙ্গলের আকৃতির একটা গ্রহাণুর সাথে সংঘর্ষ হয় পৃথিবীর। পৃথিবী মোটামুটি আস্তই থাকে কিন্তু বায়ুমণ্ডল উবে যায় আর ধ্বংস হয়ে যায় এই গ্রহাণুটি। এর ধ্বংসাবশেষ থেকে তৈরি হয় চাঁদ।
গলিত লাভার সমুদ্র সম্পাদনা
থিয়ার সাথে সংঘর্ষের ফলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পৃথিবী। গলিত লাভার টগবগ করতে থাকা সমুদ্র চারিদিকে। শুক্র গ্রহের অবস্থা এখন যেমন, তখন পৃথিবীর অবস্থা ছিলো তেমন। আস্তে আস্তে ঠাণ্ডা হয় পৃথিবী, লাভা জমাট বেঁধে তৈরি করে পাথর আর পানি জমতে শুরু করে পৃথিবীর প্রথম সাগরে। এ সময়ে তৈরি হয় পৃথিবীর প্রাচীনতম খনিজ, জিরকন। এদের বয়স মোটামুটি ৪.৪ বিলিয়ন বছর।
প্রথম মহাদেশ সম্পাদনা
এখন পৃথিবীর বিভিন্ন মহাদেশ বসে আছে অতিকায় সব টেকটোনিক প্লেটের ওপরে। আদিম টেক্টোনিক প্লেট ছিলো অনেক ছোট। এদের মাঝে অনেক সময়ে প্রচুর পরিমাণে স্বর্ণ- রৌপ্যের মতো দামি ধাতু পাওয়া যায়। আজ থেকে প্রায় ৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে তৈরি হয়েছিলো প্রথম এসব মহাদেশ।
প্রাণের প্রথম নিঃশ্বাস সম্পাদনা
মোটামুটি ৩.৫ বিলিয়ন বছর আগে সালোকসংশ্লেষণ থেকে আসে প্রথম অক্সিজেন। পাথরের ওপরে জন্মানো সায়ানোব্যাকটেরিয়া বা নীলচে সবুজ শ্যাওলা থেকে প্রথম অক্সিজেন আসে। তবে এটা আসলে ভালো কিছু করেনি। এই অক্সিজেনের উপস্থিতির কারণে এমন কিছু ব্যাকটেরিয়া মরে যায় যারা অক্সিজেন এর উপস্থিতি সহ্য করতে পারে না। আর এভাবে ২.৪ বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে অক্সিজেন অনেক বেশি বেড়ে যায় যাকে বলে হয়ে থাকে “Great Oxygenation Crisis”।
নিরুপদ্রব এক বিলিয়ন বছর সম্পাদনা
প্রথম মহাদেশ তৈরি হবার পর এক বিলিয়ন বছর তেমন কিছুই হয়নি পৃথিবীতে। একেবারে একঘেয়ে একটা সময় গেছে। মহাদেশগুলো আটকে ছিলো একটা ট্রাফিক জ্যামে অর্থাৎ তেমন একটা নড়াচড়া করেনি। প্রাণের তেমন কোন উন্নতিও ঘটেনি এ সময়ে।
মহা-মহাদেশ সম্পাদনা
মহা-মহাদেশের মাঝে একটি হলো প্যানগায়া।প্যানগায়ার মাধ্যমে অখণ্ড মহাদেশটি বিভক্ত হয়ে তৈরী করে অনেকগুলো মহাদেশ।এখনো বিভিন্ন পর্বতমালা দেখে গবেষকেরা বের করতে পারেন ঠিক কিভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকা একত্রে যুক্ত থেকে এসব বিশাল মহা-মহাদেশের সৃষ্টি করেছিলো।
ভয়ংকর শীতকাল সম্পাদনা
৭৫০ মিলিয়ন বছর আগে হঠাৎ করেই একটা বড় মহাদেশ অন্যদের থেকে আলাদা হয়ে বের হয়ে যায়। এ সময়ে পৃথিবী একেবারে ঠাণ্ডা হয়ে একটা বিশাল বরফের গোলায় রূপান্তরিত হয়। এ সময়ে হিমবাহ দিয়ে ঢাকা ছিলো ভূপৃষ্ঠ। এমনকি বিষুবীয় অঞ্চলেও ছিলো হিমবাহ।
প্রাণের বিস্ফোরণ সম্পাদনা
৬৫০ মিলিয়ন বছর আগে বায়ুমণ্ডলে আবারো বাড়তে শুরু করে অক্সিজেন এবং এ সময়ে বিভিন্ন প্রাণীর উদ্ভব হতে থাকে। এককোষী প্রাণীর পাশাপাশি এসে পড়ে বহুকোষী প্রাণী। এই সময়সীমার মাঝেই শিকার এবং শিকারির উদ্ভব হয়।
প্রাণীজগতের বিলুপ্তি সম্পাদনা
পৃথিবীর ইতিহাসে সবচাইতে বড় বিলুপ্তির ঘটনা ঘটে আজ থেকে ২৫২ মিলিয়ন বছর আগে পারমিয়ান পিরিয়ডে। মাত্র ৬০ হাজার বছরের মাঝে প্রায় ৯০ শতাংশ জীবের বিলুপ্তি ঘটে। ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে ক্রেটেশাস পিরিয়ডে বিলুপ্তি ঘটে ডায়নোসর সহ ৮৫ শতাংশ জীবের। পারমিয়ান পিরিয়ডে এই বিলুপ্তির কারণ ছিলো সাইবেরিয়ায় এক বিশাল অগ্ন্যুৎপাত। পরিবেশ পরিবর্তনের কারণেও বিলুপ্তি ঘটতে দেখা গেছে। ৪৫০ মিলিয়ন বছর আগে বড়সড় একটা তুষার যুগের কারণে বিলুপ্তি ঘটে ৭৫ শতাংশ জীবের।
বরফ যুগ সম্পাদনা
পাঁচটি বড় বরফ যুগ দেখা যায় পৃথিবীর ইতিহাসে। আপনি কি জানেন, এখনও আমরা একটি বরফ যুগের মাঝে বাস করছি? আজ থেকে প্রায় ১১,৫০০ বছর আগে শুরু হয়েছিলো এই বরফ যুগ।
প্লাস্টিক যুগ? সম্পাদনা
বর্তমান সময়ে প্লাস্টিকের এতো বেশি আবর্জনা জমে গেছে যে অনেক বিজ্ঞানী একে প্লাস্টিক যুগ বা প্লাস্টিসিন পিরিয়ড বলে আখ্যা দিচ্ছেন।
📖কোরআনের ভাষায় পৃথিবীঃ
‘বিগ ব্যাং’ অর্থ্যাৎ মহা বিস্ফোরণ। বিজ্ঞানীরা দাবী করে আসছে পৃথিবী একটি মহা বিস্ফোরণের মাধ্যেমে সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু একজন মুসলমান হিসেবে কি বিজ্ঞানীদের এই দাবি বিশ্বাস করা যায়? পৃথিবী সৃষ্টির সঠিক তথ্য আছে পবিত্র কোরআনে।
পৃথিবী সৃষ্টি প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক আল কোরআনে সূরা আম্বিয়ায় বলেছেন, ‘সত্য প্রত্যাখানকারীরা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলি ও পৃথিবী মিশে ছিল ওতপ্রোতভাবে; অত:পর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম’ (আম্বিয়া:৩০)।
আয়াতটি আমাদেরকে একেবারে পরিস্কারভাবে বলছে পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্রেরা একসময় একজায়গায় পুঞ্জিভুত ছিল। এবং একটা নির্দিষ্ট সময়ে এদের জন্ম হয়।
আজকের বিজ্ঞান কি বলে এ সম্বন্ধে ? ষ্টিফেন হকিং এর বিগ ব্যাং থিওরী আজ সর্বময় স্বীকৃত। এ থিওরী অনুযায়ী মহাবিশ্বের সকল দৃশ্য অদৃশ্য গ্রহ নক্ষত্র সৃষ্টির শুরুতে একটি বিন্দুতে পুঞ্জিভুত ছিল। এবং একটা বিশাল বিষ্ফোরণের মাধ্যমে এরা চারিদেকে ছড়িয়ে যেতে থাকে। কিভাবে মরুভুমির বুকে সংকলিত দেড় হাজার বছর আগের একটি বই এই বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাটা ধারণ করতে পারল ?
ড:মিলার বলেছেন, এই আয়াতটি নিয়ে চিন্তা-গবেষণার পর কোরআন যে ঐশী গ্রন্থ তা মেনে নিতে বাধ্য হই। যারা প্রচার চালাচ্ছে কোরআন হযরত মুহাম্মদ (সা) এর নিজস্ব বক্তব্য তাদের দাবি নাকচ করার জন্য এই একটি আয়াতই যথেষ্ট।
ড:মিলার বলেছেন, দেড় হাজার বছর আগে ইসলামের নবীর পক্ষে কিভাবে মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য নিয়ে কথা বলা সম্ভব, যিনি কোন দিন কোন স্কুলে পড়ালেখা করেন নি। কারণ এটি এমন এক বৈজ্ঞানিক বিষয়, যা সম্পর্কে তত্ত্ব আবিষ্কার করে মাত্র কয়েক বছর আগে ১৯৭৩ সালে নোবেল পুরুস্কার পেয়েছেন এক বিজ্ঞানী। মিলারের মতে এই আয়াতে সেই বিগ ব্যাং এর কথাই বলা হয়েছে যার মাধ্যমে পৃথিবী, আকাশমন্ডলী ও তারকারাজি সৃষ্টি হয়েছে।54 إِنَّ رَبَّكُمُ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَىٰ عَلَى الْعَرْشِ يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ يَطْلُبُهُ حَثِيثًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالنُّجُومَ مُسَخَّرَاتٍ بِأَمْرِهِ ۗ أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ ۗ تَبَارَكَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ
নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ। তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আরশের উপর অধিষ্টিত হয়েছেন। তিনি পরিয়ে দেন রাতের উপর দিনকে এমতাবস্থায় যে, দিন দৌড়ে রাতের পিছনে আসে। তিনি সৃষ্টি করেছেন সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্র দৌড় স্বীয় আদেশের অনুগামী। শুনে রেখ, তাঁরই কাজ সৃষ্টি করা এবং আদেশ দান করা। আল্লাহ, বরকতময় যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক।আল্লাহ تعالى পৃথিবীর সবকিছু মানুষের জন্য যে তৈরি করেছেন শুধু তাই নয়, তিনি পৃথিবীকে একদম শুরু থেকে ধাপে ধাপে গঠন করেছেন যেন একদিন পৃথিবীতে মানুষ থাকতে পারে। পৃথিবীর বিলিয়ন বছরের ইতিহাস দেখলে পরিষ্কার প্রমাণ পাওয়া যায় যে, একদম শুরু থেকেই এই গ্রহটি প্রস্তুতি নিচ্ছিল যে এখানে একদিন মানুষ থাকবে।
সাতটি আকাশ
আয়াতটির পরের অংশে আল্লাহ تعالى বলছেন—
তারপর তিনি নির্দেশ করেছিলেন আকাশের প্রতি এবং তাদেরকে সাতটি/অনেক আকাশে গঠন করেছেন।
নাস্তিকরা এই আয়াতটি দেখিয়ে বলে, “দেখ! তোমাদের কু’রআনে ভুল আছে? কু’রআন বলে আকাশ সৃষ্টি হয়েছে পৃথিবী সৃষ্টির পরে!”
এই আয়াতটি বলে না যে, আকাশ সৃষ্টি হয়েছে পৃথিবী সৃষ্টির পরে, এটি বলে যে, আগে যে আকাশ ছিল তাকে সাতটি আকাশে গঠন করা হয়েছে।[৪] পৃথিবীর ইতিহাস দেখলে দেখা যায়, প্রথমে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল পুরোটা জুড়ে ছিল শুধুই হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম, কোনো স্তর ছিল না। তারপর কয়েক বিলিয়ন বছরের প্রক্রিয়ায় বায়ুমণ্ডলের স্তরগুলো তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে অক্সিজেন এসেছে ব্যাকটেরিয়া আসার পরে, অনেক উঁচু পর্বত তৈরি হবার পর।[22]
আরবি নিয়ে আগ্রহীদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার। اِسْتَوَىٰ অর্থ হয় সোজা, সমান, নিয়মিত করা। কিন্তু اِسْتَوَىٰ এর পরে যখন إلى আসে, তখন তার অর্থ হয় ‘মনোনিবেশ করা’, যা আল্লাহর تعالى ক্ষেত্রে ব্যবহার করাটা উচিত হবে না। তাই অনুবাদে ‘নির্দেশ করা’ বলা হয়েছে।[৫] আর আরবিতে سبع ব্যবহার করা হয় সাত বা অনেক—দুই ক্ষেত্রেই।[২]
এখন এই সাতটি আকাশ নিয়ে দুটি প্রতিষ্ঠিত মত রয়েছে। একটি হলো—এখানে আল্লাহ বায়ুমণ্ডলের ৭টি স্তরের কথা বলেছেন বা পৃথিবীর কাছাকাছি যে আকাশ রয়েছে, তাকে সাতটি স্তরে ভাগ করাকে বুঝিয়েছেন।[৪] বায়ুমণ্ডলে কয়টি স্তর রয়েছে, তা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। অনেকে ‘ওজন স্তর’-কে একটি আলাদা স্তর দাবি করেন, অনেকে করেন না। অনেকে এক্সস্ফিয়ারকে একটি স্তর গোনেন, অনেকে বলেন এটা কোনো স্তর হতে পারে না। তাই এই ধারণা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। কিন্তু উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো, আমরা যদি উপরের দিকে যেতে থাকি, তাহলে দেখা যায় বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা ঠিক সাত বার পরিবর্তন হয়। প্রথমে তাপমাত্রা কমতে থাকে, তারপর প্রায় ৬ মাইল উচ্চতা পর্যন্ত তা মোটামুটি একই থাকে, তারপর তা বাড়তে থাকে, আবার অনেক উচ্চতা পর্যন্ত একই থাকে, আবার কমে। নীচে লাল দাগটি দেখুন, তা ঠিক সাত বার পরিবর্তন হয়—
হয়তো আল্লাহ تعالى বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রার এই সাত বার পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সাতটি স্তরের কথাই বলেছেন।[21]
আরেকটি মত হলো, প্রথম আকাশটি হচ্ছে আসলে আমাদের দৃশ্যমান মহাবিশ্ব। এরকম আরও ছয়টি মহাবিশ্ব রয়েছে। এর স্বপক্ষে প্রমাণ দেখাতে গিয়ে সূরা ফুসসিলাত-এর ১২ নম্বর আয়াত দেখানো হয়, যেখানে আল্লাহ تعالى বলেছেন:
وَزَيَّنَّا ٱلسَّمَآءَ ٱلدُّنْيَا بِمَصَٰبِيحَ
আমি প্রথম আকাশকে সাজিয়েছি বহু প্রদীপ দিয়ে।
অনেকে বলেন এই প্রদীপ বলতে সূর্য, নক্ষত্র, গ্যালাক্সি—এগুলো বোঝানো হয়েছে। কিন্তু এই মতের বিপক্ষে প্রমাণ দেখাতে গিয়ে অনেকে বলেন, বাকারার আয়াতে ثُمَّ (তারপর) ব্যবহার করা হয়েছে, যার অর্থ পৃথিবী আগে ছিল, ‘তারপর’ বায়ুমণ্ডলকে (আকাশকে) সাতটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে। এছাড়াও আব্দেল হালিমের কু’রআনের অনুবাদ অনুসারে ফুসসিলাতের আয়াতটির অর্থ আসলে হবে, “আমি কাছের আকাশটিকে সুন্দরভাবে উজ্জ্বল করেছি”—এখানে প্রদীপের কোনো উল্লেখ নেই। আরেকটি প্রমাণ হলো, সূরা নুহ ১৫-১৬ আয়াতে বলা হয়েছে —
কখনও চিন্তা করে দেখেছো: কীভাবে আল্লাহ সাতটি আকাশ সৃষ্টি করেছেন—একটির উপর আরেকটি ? তিনি চাঁদকে তাদের (আকাশদের) মধ্যে একটি আলো হিসেবে দিয়েছেন এবং সূর্যকে একটি প্রদীপ হিসেবে? [নুহ ১৫-১৬]
এখানে ১৬ নম্বর আয়াতে فِيهِنَّ অর্থ “তিন বা তার অধিক আকাশের মধ্যে।” যার মানে দাঁড়ায়, প্রথম আকাশ পুরো মহাবিশ্ব হতে পারে না, কারণ চাদের আলো এই পুরো মহাবিশ্বকে আলোকিত করে না, করবেও না—আরও দুটি মহাবিশ্ব তো দূরের কথা। এই আয়াতের ব্যাখ্যা একটাই হতে পারে—চাঁদ বায়ুমণ্ডলের কমপক্ষে তিনটি স্তরে আলো হিসেবে রয়েছে। ১৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ تعالى আকাশকে সাতটি আকাশে তৈরির কথা বলেছেন এবং ১৬ নম্বর আয়াতে তিনি فِيهِنَّ বলতে সম্ভবত সেই সাতটি আকাশকেই বুঝিয়েছেন।
সুতরাং সাত আকাশ বলতে বায়ুমণ্ডলের সাতটি স্তর, যেখানে শেষ স্তরটি হচ্ছে মহাকাশ—এর পক্ষে এখন পর্যন্ত তিনটি যুক্তি রয়েছে।
আরেকটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো, “তারপর” একটি সময়ের ধারণা। আল্লাহর تعالى কাছে সময় এবং আমাদের কাছে সময় ভিন্ন ব্যাপার। তিনি সময়ের উর্ধে। তাই তার কাছে “তারপর” আর আমাদের কাছে “তারপর” এক নয়।[৮] যেমন কু’রআনে বহু জায়গায় আল্লাহ تعالى ভবিষ্যতের ঘটনাগুলো এমনভাবে বলেছেন, যেন তা ইতিপূর্বে ঘটে গেছে।কারণ আমাদের কাছে অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ যেরকম, তাঁর কাছে সেরকম নয়। আমাদের ভাষার শব্দভাণ্ডারে অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের বাইরে কোনো শব্দ নেই, কারণ আমরা এর বাইরে কোনো কিছু কল্পনা করতে পারি না। আমাদের সমস্ত চিন্তা, কল্পনা, অভিজ্ঞতা স্থান এবং কালের মধ্যে সীমাবদ্ধ। স্থান এবং কালের বাইরে যা কিছুই আছে, তা আমরা কখনই জানতে পারব না। একারণেই আল্লাহ تعالى বলেছেন—আর একমাত্র তিনিই সবকিছুর ব্যাপারে সব জানেন। [বাকারাহ ২৯]আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ
(আল্লাহ যথার্থরূপে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছেন। এতে নিদর্শন রয়েছে ঈমানদার সম্প্রদায়ের জন্যে)। (আনকাবুতঃ ৪৪)
এ ধরায় কত যে বিচিত্র প্রাণী রয়েছে যা গণনা করে শেষ করা যাবেনা। এ সব কিছু সৃষ্টির পিছনে কি হিকমত আছে বলে আপনি কি মনে করেন?! এ মহাবিশ্বে অনেক সুস্পষ্ট নিদর্শন রয়েছে যা আল্লাহর কুদরত ও তাঁর মহিমা প্রমাণ করে। আধুনিক বিজ্ঞান এখনো অনেক নতুন নতুন নিদর্শন আবিষ্কার করছে যা মানুষকে মহান সুনিপুণ প্রজ্ঞাময় স্রষ্টা আল্লাহর মহিমা বুঝিয়ে দেয়।
এডগার মিশেল
চাঁদে ষষ্ঠ বিচরণকারী
ইলাহের একটি দলিল
“আমাদের গ্রহের অবলোকন ছিল ঐশী আভাস।”
মানুষ যদি এ মহাবিশ্ব ও এর ভিতরে যা কিছু আছে তা নিয়ে একটু চিন্তা করে এবং গভীরভাবে গবেষণা করে তবে সে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করবে যে, এ বিশ্ব অত্যন্ত সুক্ষ্মভাবে সুবিন্যস্ত করে সৃষ্টি করা হয়েছে। একজন প্রজ্ঞাময়, সর্বশক্তিমান ও সর্বজ্ঞানী ইলাহ তা সৃষ্টি করেছেন, তিনি একে উত্তমরূপে সুপরিমিতভাবে বানিয়েছেন।
এ মহাবিশ্বের আকাশ, আকাশের তারকারাজি, গ্রহ নক্ষত্র ও ছায়াপথ আর জমিনে যা কিছু আছে ও যে সব নদ নদী, খাল বিল, পাহাড় পর্বত, পশুপাখি , গাছপালা ইত্যাদিযা কিছু মহান আল্লাহ তায়া’লা অস্তিত্বহীন থেকে সৃষ্টি করেছেন, এসব নিয়ে চিন্তা করলেই আমরা আল্লাহর কুদরত, জ্ঞান, প্রজ্ঞা বুঝতে সক্ষম হই। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ
(কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না? আমি পৃথিবীতে ভারী বোঝা রেখে দিয়েছি যাতে তাদেরকে নিয়ে পৃথিবী ঝুঁকে না পড়ে এবং তাতে প্রশস্ত পথ রেখেছি, যাতে তারা পথ প্রাপ্ত হয়। আমি আকাশকে সুরক্ষিত ছাদ করেছি; অথচ তারা আমার আকাশস্থ নিদর্শনাবলী থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে। তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র। সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে)। (আম্বিয়াঃ ৩০-৩৩)
জেমস আরউইন
মহাকাশচারী
এটা আল্লাহর সৃষ্টি!!
“এটা দেখা মাত্র অবশ্যই মানুষের মাঝে পরিবর্তন আসবে সে আল্লাহর সৃষ্টিকে আল্লাহর ভালবাসাকে মূল্যায়ন করবে” তখন তিনি আলোচনা করেছিলেন জগত নিয়ে।
জ্ঞানীলোক যখন আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করে তখন সে নিশ্চিতভাবে জানতে পারে এ বিশ্বে যা কিছু আছে সব কিছুই আল্লাহর ইবাদত করে। সব সৃষ্টজীব আল্লাহর পবিত্রতা বর্ননা করে ও গুনকীর্তন করেন। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ (রাজ্যাধিপতি, পবিত্র, পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময় আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করে, যা কিছু আছে নভোমন্ডলে ও যা কিছু আছে ভূমন্ডলে)। (জুম’আঃ ১)
তারা সকলে আল্লাহর মহিমার সামনে সিজদাবনত হয়। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ
তুমি কি দেখনি যে, আল্লাহকে সেজদা করে যা কিছু আছে নভোমন্ডলে, যা কিছু আছে ভুমন্ডলে, সূর্য, চন্দ্র, তারকারাজি পর্বতরাজি বৃক্ষলতা, জীবজন্তু এবং অনেক মানুষ। আবার অনেকের উপর অবধারিত হয়েছে শাস্তি। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা লাঞ্ছিত করেন, তাকে কেউ সম্মান দিতে পারে না। আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন। (হাজ্বঃ ১৮)
ডেবোরা পটার
আমেরিকান সাংবাদিক
আল্লাহ কর্তৃক মানুষকে মর্যাদা প্রদান
“ইসলামই হল আল্লাহ তায়ালার বিধান, আমাদের চার পাশে প্রকৃতির মাঝে তা আমরা দেখতে পাই। এক মাত্র আল্লাহর নির্দেশে পাহাড় সমুদ্র গ্রহ নক্ষত্র বিচরণ করে এবং নিজ কক্ষ পথে সঠিক ভাবে পরিচালিত হয়। এ গুলো তাদের সৃষ্টি কর্তা আল্লাহর নির্দেশের অধীন। এমনিভাবে এই জগতের প্রতিটি অনু এমনকি জড় বস্তুও এ নিয়মের অধীন। ব্যতিক্রম শুধু মানুষ। কারণ আল্লাহ তায়ালা তাকে ইচ্ছার স্বাধীনতা দান করেছেন। তাই ইচ্ছা করলে সে আল্লাহর বিধানে চলতে পারে, ইচ্ছা করলে নিজে নিজের বিধান রচনা করবে এবং নিজের পছন্দের দীনের উপর চলতে পারে। দুঃখের বিষয় হল, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষ দ্বিতীয় পথটি গ্রহণ করেছে। “
এমনিভাবে সব সৃষ্টজীব মহান আল্লাহ তায়া’লার তাছবিহ পাঠ করে, তাঁর প্রতি বিনীত হয়ে তারই প্রশংসা করে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ
তুমি কি দেখ না যে, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যারা আছে, তারা এবং উড়ন্ত পক্ষীকুল তাদের পাখা বিস্তার করতঃ আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে? প্রত্যেকেই তার যোগ্য এবাদত এবং পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণার পদ্ধতি জানে। তারা যা করে, আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক জ্ঞাত। (নুরঃ ৪১)
অন্যদিকে মু’মিন ব্যক্তি দেখতে পায় যে, মহাবিশ্ব একটি কাফেলার মত একই দিকে চলমান, আল্লাহ তায়া’লার দিকে চলছে। ফলে সেও এ চলমান পবিত্র কাফেলার সাথে ঐকতানে চলে। এতে তার জীবন আনন্দময় হয় এবং তার বিবেক ও অনুভূতি স্থীর হয়।
মহাবিশ্ব সৃষ্টি আল্লাহর একত্ববাদের প্রমাণ
এ সুবিশাল মহাবিশ্ব, এর মধ্যকার সকল সৃষ্টি ও বিস্ময়কর বিষয়সমূহ আল্লাহর মহিমা ও কুদরত এবং তাঁর সুনিপুণ সৃষ্টির সবচেয়ে বড় প্রমাণ। এ সব কিছুই আল্লাহর একত্ববাদ প্রমাণ করে এবং প্রমাণ করে যে, তিনি ছাড়া কোন প্রতিপালক নেই, কোন উপাস্যনেই। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ
তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে এক নিদর্শন এই যে,তিনি মৃত্তিকা থেকে তোমাদের সৃষ্টি করেছেন। এখন তোমরা মানুষ, পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছ। আর এক নিদর্শন এই যে,তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। তাঁর আর ও এক নিদর্শন হচ্ছে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সৃজন এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র। নিশ্চয় এতে জ্ঞানীদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। তাঁর আরও নিদর্শনঃ রাতে ও দিনে তোমাদের নিদ্রা এবং তাঁর কৃপা অন্বেষণ। নিশ্চয় এতে মনোযোগী সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। তাঁর আরও নিদর্শনঃ তিনি তোমাদেরকে দেখান বিদ্যুৎ, ভয় ও ভরসার জন্যে এবং আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর তদ্দ্বারা ভূমির মৃত্যুর পর তাকে পুনরুজ্জীবিত করেন। নিশ্চয় এতে বুদ্ধিমান লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। তাঁর অন্যতম নিদর্শন এই যে, তাঁরই আদেশে আকাশ ও পৃথিবী প্রতিষ্ঠিত আছে। অতঃপর যখন তিনি মৃত্তিকা থেকে উঠার জন্যে তোমাদের ডাক দেবেন, তখন তোমরা উঠে আসবে। নভোমন্ডলে ও ভুমন্ডলে যা কিছু আছে, সব তাঁরই। সবাই তাঁর আজ্ঞাবহ। (সূরা রূমঃ২০-২৬)
আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ
বল, সকল প্রশংসাই আল্লাহর এবং শান্তি তাঁর মনোনীত বান্দাগণের প্রতি! শ্রেষ্ঠ কে? আল্লাহ না ওরা-তারা যাদেরকে শরীক সাব্যস্ত করে। বল তো কে সৃষ্টি করেছেন নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল এবং আকাশ থেকে তোমাদের জন্যে বর্ষণ করেছেন পানি; অতঃপর তা দ্বারা আমি মনোরম বাগান সৃষ্টি করেছি। তার বৃক্ষাদি উৎপন্ন করার শক্তিই তোমাদের নেই। অতএব, আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য আছে কি? বরং তারা সত্যবিচ্যুত সম্প্রদায়। বল তো কে পৃথিবীকে বাসোপযোগী করেছেন এবং তার মাঝে মাঝে নদ-নদী প্রবাহিত করেছেন এবং তাকে স্থিত রাখার জন্যে পর্বত স্থাপন করেছেন এবং দুই সমুদ্রের মাঝখানে অন্তরায় রেখেছেন। অতএব, আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য আছে কি? বরং তাদের অধিকাংশই জানে না। বল তো কে নিঃসহায়ের ডাকে সাড়া দেন যখন সে ডাকে এবং কষ্ট দূরীভূত করেন এবং তোমাদেরকে পৃথিবীতে পুর্ববর্তীদের স্থলাভিষিক্ত করেন। সুতরাং আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য আছে কি? তোমরা অতি সামান্যই ধ্যান কর। বল তো কে তোমাদেরকে জলে ও স্থলে অন্ধকারে পথ দেখান এবং যিনি তাঁর অনুগ্রহের পূর্বে সুসংবাদবাহী বাতাস প্রেরণ করেন? অতএব, আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য আছে কি? তারা যাকে শরীক করে, আল্লাহ তা থেকে অনেক ঊর্ধ্বে। বল তো কে প্রথমবার সৃষ্টি করেন, অতঃপর তাকে পুনরায় সৃষ্টি করবেন এবং কে তোমাদেরকে আকাশ ও জমিন থেকে রিযিক দান করেন। সুতরাং আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য আছে কি? বলুন, তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে তোমাদের প্রমাণ উপস্থিত কর। (সূরা নামলঃ৫৯-৬৪)
মানুষের অধীনস্তকরণ ও সম্মানিত করা
ডেবোরা পটার
আমেরিকান সাংবাদিক
নবুয়তের আলামত
“মুর্খ সমাজে বেড়ে ওঠা নিরক্ষর মুহাম্মাদ কিভাবে জগতের অলৌকিক বিষয় গুলো জানতে পেরেছিল? যা আল কোরআন বর্ণনা করেছে এবং আধুনিক বিজ্ঞান আজ পর্যন্ত আবিষ্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অতএব, অবশ্যই তা আল্লাহর কালাম ছাড়া আর কিছু হতে পারে না।”
আল্লাহ তায়া’লা বস্তুগত জিনিসের পূজা অর্চনা থেকে মানুষকে মুক্তি দান করেছেন। এ ধরায় যা কিছু আছে, আসমান জমিনে যা কিছু আছে সব কিছুকে মানুষের অধীনস্থ ও আয়ত্ত্বাধীন করে দিয়েছেন। এ সব কিছুই মানুষের জন্য তাঁর দয়া ও মমতা। তিনি জমিন আবাদ ও তাতে মানুষের পূর্ণ খেলাফত প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে এ সব কিছু করেছেন। অন্যদিকে মানুষ যেন তাঁর পরিপূর্ণ ইবাদাতের উপযুক্ত হয়। এখানে অধীনস্থ বলতে দুটো অর্থ বুঝায়ঃ আল্লাহকে জানা এবং তাঁর দয়া মমতা, সম্মান ও মর্যাদা বুঝার জন্য অধীনস্থ করা। অন্যটি হলোঃ অধীনস্থ বলতে মানুষের মর্যাদা অন্যান্য সব প্রাণী ও জিনিসের উপরে বুঝানো। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ
এবং আয়ত্ত্বাধীন করে দিয়েছেন তোমাদের, যা আছে নভোমন্ডলে ও যা আছে ভূমন্ডলে; তাঁর পক্ষ থেকে। (জাসিয়াঃ ১৩)
আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ
তিনিই আল্লাহ, যিনি নভোমন্ডল ও ভুমন্ডল সৃজন করেছেন এবং আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে অতঃপর তা দ্বারা তোমাদের জন্যে ফলের রিযিক উৎপন্ন করেছেন এবং নৌকাকে তোমাদের আজ্ঞাবহ করেছেন, যাতে তাঁর আদেশে সমুদ্রে চলা ফেরা করে এবং নদ-নদীকে তোমাদের সেবায় নিয়োজিত করেছেন। এবং তোমাদের সেবায় নিয়োজিত করেছেন সূর্যকে এবং চন্দ্রকে সর্বদা এক নিয়মে এবং রাত্রি ও দিবাকে তোমাদের কাজে লাগিয়েছেন। যে সকল বস্তু তোমরা চেয়েছ, তার প্রত্যেকটি থেকেই তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন। যদি আল্লাহর নেয়ামত গণনা কর, তবে গুণে শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয় মানুষ অত্যন্ত অন্যায়কারী, অকৃতজ্ঞ। (ইবরাহিমঃ ৩২-৩৪)
Saturday, 1 February 2020
রাসুলুল্লাহ সাঃ কিসের তৈরী? মিলাদ কিয়াম জায়েজ কি না?
১.রাসুলুল্লাহ সাঃ কিসের তৈরি?
রাসুলুল্লাহ সাঃ নূর নাকি মাটির তৈরি তা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে।
হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সম্পর্কে বর্নিত আছে।
মিশকাত শরীফ ৫১৩ পৃষ্ঠায় আছে-
عن العرباض بن ساريه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم انه قال انى عند الله مكتوب خاتم النبيين وان ادم لمنجدل فى طينته وساخبركم باول امرى دعوة ابراهيم وبشارة عيسى ورؤيا امى التى رأت حين وضعتنى وقد خرج لها نور اضاءلها منه قصور الشام- رواه فى شرح السنة ورواه احمد عن ابى امامة من قوله ساخبركم الى اخره- (دلائل النبوة ومعرفة احوال صاحب الشريفة للبيهقى ص ۲/۱۳٠ (مشكوة شريف ص ۵۱۳(
হযরত ইরবাদ্ধ ইবনে সারিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত।তিনি রাসূল (ﷺ)থেকে বর্ণনা করেছেন: “নিশ্চয় আঁমি আল্লাহ তায়ালার নিকট নবীগনের (আঃ) পরিসমাপ্তিকারী হিসেবে লিপিবদ্ধ এবং তখন হযরত আদম(আঃ) মাটির সাথে মিশ্রীত ছিলেন।আঁমি শ্রীঘ্রই তোমাদেরকে আঁমার প্রাথমিক অবস্থা সম্পর্কে সংবাদ দেবো।আর তা হচ্ছে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এঁর দোয়া এবং হযরত ঈসা(আঃ) এঁর সুসংবাদ এবং আঁমার মহিয়সী আম্মাজানের অবলোকন যা তিঁনি আঁমাকে প্রসবকালীন দেখেছেন এবং এমন একটি নূর বের হল যা দ্বারা সিরিয়ার বা শ্যাম প্রাসাদ সমূহ আলোকিত হয়ে গেল।
*****দলিল****
*(ক.) মিশকাত শরীফ ৫১৩ পৃষ্ঠা,হাদীস নং ৫৭৫৯
*(খ.) ইবনে হিশাম: আস-সিরাতুন নববীয়্যাহ(বৈরুত: দারু ইয়াহইয়ায়িত তুরাসিল’আরবী,৩য় সং,১৪২১ হিঃ,১ম খণ্ড, ১৯৪-১৯৫ পৃঃ )যরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহ আনহুমা বলেন,
– ﻋﻦ ﺇﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ : ﻭﺗﻘﻠﺒﻚ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﺎﺟﺪﻳﻦ ، ﻗﺎﻝ : ﻣﻦ ﺻﻠﺐ ﻧﺒﻲ ﺇﻟﻰ ﻧﺒﻲ ﺣﺘﻰ ﺻﺮﺕ ﻧﺒﻴﺎً ، ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺰﺍﺭ ﻭﺭﺟﺎﻟﻪ ﺛﻘﺎﺕ
অর্থাৎ এক নবী থেকে আরেক নবীর পৃষ্টদেশে (অবস্থান করে) অবশেষে আঁপনি নবী হয়েছেন।
[মাজমাউয যাওয়াইদ/কিতাবুত তাফসীর ৭ম খন্ড/ ৮৬ পৃস্টা] হাদিসটি সহীহ।
★৫. তাফসীরে কবীরে সূরা বাকারার ২৫৩ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় আদম (আ:) এঁর উপর রাসূল (ﷺ) এঁর শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে:
أن الملائكة أمروا بالسجود لآدم لأجل أن نور محمد عليه السلام في جبهة آدم
নিশ্চয় ফেরেশতাদেরকে আদম (আ:) কে সেজদা করতে আদেশ করা হয়েছিল। কারণ, আদম (আ:) এঁর পেশানীতে মুহাম্মাদ (ﷺ) এঁর নূর ছিল।
*****দলিল*****
*(ক.) তাফসীরে কবীর,১ম খন্ড,পৃঃ ৩১৮
*(খ.) তাফসীরে লুবাব,৩য় খন্ড,
পৃ: ২৩৩
*(গ.) তাফসীরে নিশাপুরী,২য় খন্ড, পৃ:১০৭
হযরত আব্দুল্লাহ (রা:) এঁর পেশানীতে নবী (ﷺ) এঁর নূর মোবারক ছিল।
وأخبرنا وهب بن جرير بن حازم أخبرنا أبي قال سمعت أبا يزيد المدني قال نبئت أن عبد الله أبا رسول الله صلى الله عليه و سلم أتى على امرأة من خثعم فرأت بين عينيه نورا ساطعا إلى السماء فقالت هل لك في قال نعم حتى أرمي الجمرة فأنطلق فرمى الجمرة ثم أتى امرأته آمنة بنت وهب ثم ذكر يعني الخثعمية فأتاها فقالت هل أتيت امرأة بعدي قال نعم أمرأتي آمنة بنت وهب قالت فلا حاجة لي فيك انك مررت وبين عينيك نور ساطع إلى السماء فلما وقعت عليها ذهب فأخبرها أنها قد حملت خير أهل الأرض
রাসূল (ﷺ)এঁর পিতা আব্দুল্লাহ খাসয়াম গোত্রীয় এক মহিলার নিকট গেলে সে তাঁর দু’চোখের মাঝে আকাশ পর্যন্ত একটি উজ্জল নূর দেখতে পেল। সে বলল,তোমার কি আমাতে প্রয়োজন আছে ? তিনি বললেন,হ্যাঁ।তবে আমি জামরায় পাথর মারব। অত:পর তিনি জামরায় পাথর মেরে স্বীয় স্ত্রী আমেনা বিনতে ওহাব এর নিকট গেলেন।পরে যখন খাসয়ামী মহিলার কথা মনে পড়লে তিনি তার নিকট আসলেন। সে জিজ্ঞেস করল,তুমি কি আমার সাথে দেখা করার পরে কোন মহিলার সাথে মিলিত হয়েছিলে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমার স্ত্রী আমেনা বিনতে ওহাবের সাথে।সে বলল,তাহলে তোমাতে আমার কোন প্রয়োজন নাই। তুমি যখন যাচ্ছিলে আমি তোমার দু’চোখে মধ্যখানে আকাশ পর্যন্ত প্রলম্বিত একটি উজ্জল নূর দেখতে পেয়েছিলাম। আর যখন তুমি তার সাথে মিলিত হয়েছো,সে নূরটি চলে গিয়েছে। আর সে বলল, উক্ত আমেনা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিকে গর্ভধারণ করেছেন।এ নূরটি ছিল রাসুলুল্লাহ সাঃ এর নূর।
তা ছাড়া আবার কিছু মানুষ কোরআন শরিফ থেকে দলিল দেয় এবং বলে রাসুুলুল্লাহ সাঃ মাটির তৈরি।
সূরা কাহাফের ১১০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَمَنْ كَانَ يَرْجُوا لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا (110
“Previous Verse Surah Al-Kahf : Verse No 110 of 110
Arabic Text,
Say you, 'apparently in facial outlook of a man, I am like you, I receive revelation that your God is one God,then who-so-ever hopes to meet his Lord, he should do noble deeds and associate not any one in the worshipof his Lord.(হে নবী!) আপনি বলুন, (দৈহিক দৃষ্টিতে) আমি তো তোমাদের মতই মানুষ, (তবে আত্মিক উৎকর্ষ ও ঐশী ধারণক্ষমতার অধিকারী হওয়ার কারণে) আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় তথা ওহী নাজিল হয় যে, আমার ও তোমাদের উপাস্য কেবল এক অদ্বিতীয় উপাস্য। সুতরাং যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাতের আশা করে সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার প্রতিপালকের উপাসনায় কাউকে তাঁর অংশী না করে।” (১৮:১১০)
সূরা সোয়াদ আয়াত নংإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِّن طِينٍ
স্মরণ করুন, যখন আপনার রব ফেরেশতাদেরকে বলেছিলেন, 'আমি মানুষ সৃষ্টি করছি কাদা থেকে,
When your Lord said to the angels; Surely I am going to create a mortal from dust.
এখানে রাসুলুল্লাহ সাঃ কে স্মরণ বা মনে করার কথা বলা হয়েছে।তার মানে রাসুলুল্লাহ সাঃ পূূূূর্বের থেকেই এ বিষয় সম্পর্কে জানতেন। এর মানে মাটির মানুষ সৃৃষ্টি র পূর্বেই তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
خُلِقَ مِن مَّاءٍ دَافِقٍ
‘তাকে (মানুষকে) সৃষ্টি করা হয়েছে সবেগে-স্খলিত পানি থেকে।’ [সুরা ত্বারীক : আয়াত ৬]
ثُمَّ كَانَ عَلَقَةً فَخَلَقَ فَسَوَّىٰ
‘তারপর সে হলো একটি রক্তপিন্ড, তারপর তিনি আকৃতি দান করলেন ও পূর্ণাঙ্গ করলেন।’ [সুরা কিয়ামাহ : আয়াত ৩৮]
وَخَلَقْنَاكُمْ أَزْوَاجًا
‘আর আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি জোড়ায়-জোড়ায়।’ [সুরা নিসা : আয়াত ৮]
أَيُشْرِكُونَ مَا لَا يَخْلُقُ شَيْئًا وَهُمْ يُخْلَقُونَ
‘তারা কি অংশীদার বসায় তাকে যে কিছুই সৃষ্টি করে না? বরং তাদেরই সৃষ্টি করা হয়েছে।’ [সুরা আ’রাফ : আয়াত ১৯১]
وَقَدْ خَلَقَكُمْ أَطْوَارًا
‘অথচ তিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন স্তরে-স্তরে।’ [সুরা নুহ : আয়াত ১৪]
أَفَمَن يَخْلُقُ كَمَن لَّا يَخْلُقُ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ
‘যিনি সৃষ্টি করেন তিনি কি তবে তার মতো যে সৃষ্টি করে না? তবুও কি তোমরা মনোযোগ দেবে না?’ [সুরা নাহল : আয়াত ১৭]
خَلَقَ الْإِنسَانَ مِنْ عَلَقٍ
‘সৃষ্টি করেছেন মানুষকে এক রক্তপিন্ড থেকে।’ [সুরা আলাক : আয়াত ২]
مِن نُّطْفَةٍ خَلَقَهُ فَقَدَّرَهُ
‘এক শুক্রকীট থেকে তিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন, তারপর তিনি তাকে সুসমঞ্জস করেছেন।’ [সুরা আবাসা : আয়াত ১৯]
فَلْيَنظُرِ الْإِنسَانُ مِمَّ خُلِقَ
‘সুতরাং মানুষ ভেবে দেখুক কি থেকে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে।’ [সুরা ত্বারীক : আয়াত ৫]
لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ فِي كَبَدٍ
‘আমরা নিশ্চয়ই মানুষকে সৃষ্টি করেছি শ্রমনির্ভর করে।’ [সুরা বালাদ : আয়াত-৪]
أَلَمْ نَخْلُقكُّم مِّن مَّاءٍ مَّهِينٍ
‘তোমাদের কি আমি সৃষ্টি করিনি এক তুচ্ছ জলীয় পদার্থ থেকে?’ [ সুরা মুরসালাত : আয়াত-২০]
এখানে সবগুলো দলিল হল মানব সৃষ্টির ব্যাপারে কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাঃ কে কি দিয়ে সৃৃষ্টি করেছেন সে ব্যাপারে কোন কোরানের আয়াত নেই। তাই বলা যায় রাসুলুল্লাহ সাঃ মানুষ কিন্তু অসাধারণ ও উত্তম চরিত্রের মানুষ। যার সাথে সাধারণত মানুষের তুলনা করা যাবে না। রাসুলুল্লাহ সাঃ আল্লাহর সৃষ্টির একটি অন্যতম সৃষ্টি। ধারণার মাধ্যমে! তাকে কি দিয়ে আল্লাহপাক সৃষ্টি করেছেন? তা নিয়ে ফিতনা সৃষ্টি করা উচিত নয়। ★এই প্রসঙ্গে পবিত্র হাদিস শরীফে এরশাদ হয়েছে ,
” ﻋَﻦْ ﺍَﺑِﻰ ﻗَﺘَﺪَﺓَ ﺍﻻَﻧْﺼﺎَﺭِﻯ ﺭَﺿِﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﻨﻪُ ﺍَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ
ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺱﺀﻝ ﻋَﻦْ ﺻَﻮْﻡِ ﻳَﻮْﻡ ﺍﻻِﺛْﻨَﻴْﻦِ ﻗَﻞَ ﺫَﺍﻙَ ﻳَﻮْﻡٌ ﻭُﻟِﺪْﺕُ ﻓِﻴْﻪِ ﺑُﻌِﺜْﺖُ ﺍَﻭْﺍُﻧْﺰِﻝَ ﻋَﻠَﻰَّ ﻓِﻴْﻪِ –
অর্থাৎ হজরত আবু কাতাদা ( রা ) হতে বর্ণিত , একজন সাহাবী হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে আরজ করলেন ই রাসুলাল্লাহ , ইয়া হাবিবাল্লাহ আমার মাতা পিতা আপনার নূরের পাক কদমে কুরবান হোক | আপনি প্রতি সোমবার রোজা পালন করেন কেন ? জবাবে সরকারে দুজাহান নূরে মুজাস্সাম হাবিবুল্লাহ হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন , এই দিনে আমার জন্ম হয়েছে , এই দিনে আমি প্রেরিত হয়েছি এবং পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ এই দিনেই আমার উপর নাজিল হয়েছে | (সহীহ মুসলিম শরীফ ২য় খন্ড, ৮১৯ পৃষ্ঠা, বায়হাকী: আহসানুল কুবরা, ৪র্থ খন্ড ২৮৬ পৃ: মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল ৫ম খন্ড ২৯৭ পৃ: মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৪র্থ খন্ড ২৯৬পৃ: হিলিয়াতুল আউলিয়া ৯ম খন্ড ৫২ পৃ:)
বুখারী শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাকারী আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী , ইমাম বদরুদ্দিন আইনি বুখারী শরীফের ব্যাখ্যায় লিখেন ,
ﻭﺫﻛﺮ ﺍﻟﺴﻬﻴﻠﻲ ﺍﻥ ﺍﻟﻌﺒﺎﺱ ﻗﺎﻝ ﻟﻤﺎ ﻣﺎﺕ ﺍﺑﻮ ﻟﻬﺐ ﺭﺍﻳﺘﻪ ﻓﻲ
ﻣﻨﺎﻣﻲ ﺑﻌﺪ ﺣﻮﻝ ﻓﻲ ﺷﺮ ﺣﺎﻝ ﻓﻘﺎﻝ ﻣﺎ ﻟﻘﻴﺖ ﺑﻌﺪ
ﻛﻢ ﺭﺍﺣﺔ ﺍﻻ ﺍﻥ ﺍﻟﻌﺬﺍﺏ ﻳﺨﻔﻒ ﻋﻨﻲ ﻓﻲ ﻛﻞ ﻳﻮﻡ ﺍﺛﻨﻴﻦ ﻭﺫﻟﻚ ﺍﻥ
ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻭﻟﺪ ﻳﻮﻡ ﺍﻻﺛﻨﻴﻦ ﻭﻛﺎﻧﺖ ﺛﻮﻳﺒﺔ
ﺑﺸﺮﺕ ﺍﺑﺎ ﻟﻬﺐ ﺑﻤﻮﻟﺪﻩ ﻓﺎﻋﺘﻘﻬﺎ
অর্থাৎ হজরত আব্বাস ( রা ) বর্ণনা করেন , ” আবু লাহাবের মৃত্যুর এক বছর পর আমি তাকে স্বপ্নে দেখি | সে আমাকে বলে ভাই আব্বাস আমার মৃত্যুর পর থেকে কবরের জিন্দেগীতে আমি শান্তিতে নেই | কিন্তু প্রতি সোমবার এলেই আমার শাস্থি লাগব করে দেওয়া হয় | এই ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে হজরত আব্বাস ( রা ) বলেন আবু লাহাবের এই সোমবারের শাস্তি লাগবের কারণ হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিলাদত শরীফ উপলক্ষে হুজুর যেদিন জন্ম গ্রহণ করেছিলেন নবীজির শুভাগমনে খুশি হয়ে হজরত সুয়াইবা ( রা ) আজাদ করে ছিলেন | (ফাতহুল বারি সরহে সহীহুল বুখারী , অম্দাতুল কারী শরহে সহীহুল বুখারী )|
এখন কথা হলো আবু লাহাবের মত কাট্টা কাফের যদি নবীজির একদিনের বেলাদত শরীফে খুশি হয়ে প্রতি সপ্তাহে প্রতি সোমবার তার জাহান্নামের আজাব লাগব হয়ে যায় , আমরা যারা মুমিন মুসলমান তারা জীবনে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কতগুলা বেলাদত শরীফ খুশি মনে পালন করে তার বিনিময়ে কি জান্নাত পেতে পারিনা ?
★এই প্রসঙ্গে উপমহাদেশের প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ অলিয়ে কামেল শায়খ আব্দুল হক মহাদ্দেসে দেহলভী ( রহ ) বলেন ,
ﻣﻦ ﻋﻈﻢ ﻟﻴﻠﺔ ﻣﻮﻟﺪﻩ ﺑﻤﺎ ﺍﻣﻜﻨﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﺘﻌﻈﻴﻢ ﻭﺍﻻﻛﺮﺍﻡ ﻛﺎﻥ ﻣﻦ
ﺍﻟﻔﺎﺀﺯﻳﻦ ﺑﺪﺍﺭ ﺍﻟﺴﻼﻡ
অর্থাৎ যারা হাবিবুল্লাহ হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিলাদত শরীফকে সম্মান ও তাজিম করবে এবং খুশি মনে পালন করবে সে চির শান্তির জায়গা জান্নাতের অধিকারী হবে |
(মাছাবাতা বিস সুন্নাহ ১ম খন্ড, খুত্বায়ে ইবনে নাবাতা) |
অতএব হাদিস শরিফ থেকে মহা পবিত্র ঈদ উল আজম ঈদ ই মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বৈধতা স্পষ্টভাবে প্রমানিত হলো , এরপরও যদি কেউ পবিত্র মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিপক্ষে কথা বলে , বেদাতের ফতুয়া দেয় বুঝতে হবে সে হয়তো অন্ধ , মুর্খ নতুবা মুনাফেক রাসুল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জাত শত্রু | কেননা অন্ধ আর মূর্খর পক্ষে হাদিস পড়া সম্ভব না আর মুনাফেক ছাড়া কেউ রাসুল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শান মান তথাপি উনার পবিত্রজন্মদিনকে অস্বীকার করতে পারেনা !
হযরত আল্লামা জালাল উদ্দীন সূয়ুতী রাহিমামুল্লাহ আলাইহি যার সনদ সহ প্রায় ২ লক্ষ হাদিস শরীফ মুখস্থ ছিল সেই তাজুল মুফাস্সিরীন মোহাদ্দেস মুসান্নিফ সুয়ুতি রাহিমামুল্লাহ আলাইহি তিনি উনার বিখ্যাত কিতাব ” সুবলুল হুদা ফি মাওলেদে মুস্তাফা আলাইহি ওয়া সাল্লাম “” এ দুই খানা সহি হাদিস শরীফ বর্ণনা করেছেন |
পবিত্র হাদিস শরীফে এরশাদ হয়েছে “
ﻋَﻦْ ﺍَﺑِﻰ ﺍﻟﺪَّﺭْﺩَﺍﺀِ ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻪُ ﺍَﻧَّﻪﻣَﺮَّ ﻣَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ
ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺍِﻟٰﻰﺑَﻴْﺖِ ﻋَﺎﻣِﺮِ ﺍﻻَﻧْﺼَﺎﺭِﻯِّ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻳُﻌَﻠِّﻢُ ﻭَﻗَﺎﺋِﻊَﻭِﻻﺩَﺗﻪِ ﺻَﻠَّﻰ
ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻻَﺑْﻨَﺎﺋِﻪﻭَﻋَﺸﻪِﺗَﺮْﻴِ ﻭَﻳَﻘُﻮْﻝُ ﻫٰﺬَﺍ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﻫٰﺬَﺍ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَﻓَﻘَﺎﻝَ
ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺼَّﻠٰﻮﺓُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡُ ﺍِﻥَّ ﺍﻟﻠﻪَ ﻓَﺘَﺢَﻟَﻚَ ﺍَﺑْﻮَﺍﺏَ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﺔِ ﻭَﺍﻟْﻤَﻼﺋِﻜَﺔُ
ﻛُﻠُّﻬُﻢْﻳَﺴْﺘَﻐْﻔِﺮُﻭْﻥَ ﻟَﻚَ ﻣَﻦْ ﻓَﻌَﻞَ
ﻓِﻌْﻠَﻚَ ﻧَﺠٰﻰﻧَﺠٰﺘَﻚ
অর্থাৎ হজরত আবু দ্বারদা ( রা ) হতে বর্ণিত , হাবিবুল্লাহ হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন হজরত আমির আনসারী ( রা ) এর গৃহে গেলেন এবং হুজুর দেখতে পেলেন আমির আনসারী ( রা ) উনার পরিবার পরিজন ও আত্বীয় স্বজনদের নিয়ে একত্রিত হয়ে খুশি মনে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিলাদত শরীফ পাঠ করছেন | অর্থাৎ নবীজি এইদিনে পৃথিবীতে আসছেন , পৃথিবীতে প্রত্যেকটা মাখলুক আনন্দিত হয়ে ইত্যাদি | এই ঘটনা শ্রবণ করে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত অনদিত হয়ে হজরত আমির আনসারীকে বললেন ,আল্লাহ পাক আপনার জন্য উনার রহমতের দরজা প্রশস্থ করেছেন এবং সমস্থ ফেরেস্থাগন আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন | যে আপনার জন্য এইরূপ কাজ করবে সেও আপনার মত নাজাত ( ফজিলত ) লাভ করবে | ( সুবহান আল্লাহ )
পবিত্র হাদিস শরীফে আরো এরশাদ হয়েছে “
ﻋَﻦْ ﺍِﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻬُﻤَﺎ ﺍَﻧَّﻪٗﻛَﺎﻥَ ﻳُﺤَﺪِّﺙُ ﺫَﺍﺕَ ﻳَﻮْﻡٍ
ﻓِﻰْ ﺑَﻴْﺘِﻪٖ ﻭَﻗَﺎﺋِﻊَﻭِﻻﺩَﺗٖﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻟِﻘَﻮْﻡٍ ، ﻓَﻴَﺴْﺘَﺒْﺸِﺮُﻭْﻥَ
ﻭَﻳُﺤَﻤِّﺪُﻭْﻥَ ﺍﻟﻠﻪَ ﻭَﻳُﺼَﻠُّﻮْﻥَﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓَﺎِﺫَﺍ ﺟَﺎﺀَﺍﻟﻨَّﺒِﻰُّ
ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ ﺣَﻠَّﺖْﻟَﻜُﻢْ ﺷَﻔَﺎﻋَﺘِﻰْ
অর্থাৎ হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ( রা ) নিজেই বর্ণনা করেন , একদা তিনি উনার গৃহে সাহাবায়ে কেরামদের নিয়ে একত্রিত হয়ে হুজুর পুর নূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিলাদত শরীফ পাঠ করছিলেন |( এই দিনে হুজুর পৃথিবীতে আসছেন , স্বয়ং আল্লাহ উনার হাবিবের উপর দুরুদ সালাম দিয়েছেন ) শ্রবন্কারীরাও তা শুনে আনন্দ পাচ্ছিলেন | ঠিক ওই সময় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে উপস্থিত হয়ে বললেন , তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেছে “|
এই হাদিসটি বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থে এসেছে যেমন : মাওলুদুল কবীর , আত তানভীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযার , হকিকতে মোহাম্মদী ( মিলাদ অধ্যায় ), দুররুল মুনাজ্জাম , ইশবাউল কালাম |
অতএব উপরোক্ত সহি হাদিসের মাধ্যমে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বৈধতা প্রমানিত হলো , এরপরও যদি কেউ পবিত্র মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিপক্ষে কথা বলে , বেদাতের ফতুয়া দেয় বুঝতে হবে সে হয়তো অন্ধ , মুর্খ নতুবা মুনাফেক রাসুল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জাত শত্রু | কেননা অন্ধ আর মূর্খর পক্ষে হাদিস পড়া সম্ভব না আর মুনাফেক ছাড়া কেউ রাসুল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শান মান তথাপি উনার পবিত্র জন্মদিনকে অস্বীকার করতে পারেনা !নবীগনের যুগে মিলাদুন্নবী:
★১। হযরত আদম আলাইহিস সালাম এর যুগে মিলাদ প্রত্যেক নবী নিজ নিজ যুগে আমাদের প্রিয়নবী ও আল্লাহর প্রিয় হাবিব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আবির্ভাবের সুসংবাদ দিয়ে গেছেন | হযরত আদম আলাইহিস সালাম তাঁর প্রিয় পুত্র ও প্রতিনিধি হযরত শীস আলাইহিস সালাম কে নুরে মুহাম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর তাজিম করার জন্য নিম্ন অসিয়ত করে গেছেন |
★★অনুবাদ অংশ টি নিম্নে বর্ননা করা হলোঃ
[” আদম আলাইহিস সালাম আপন পুত্র হযরত শীস আলাইহিস সালাম কে লক্ষ্য করে বললেন : হে প্রিয় বৎস , আমার পরে তুমি আমার খলিফা | সুতরাং এই খেলাফত কে তাকওয়ার তাজ ও দৃঢ় একিনের দ্বারা মজবুত করে ধরে রেখো | আর যখনই আল্লাহর নাম ঝিকির (উল্লেখ) করবে তাঁর সাথেই মুহাম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নামও উল্লেখ করবে | তাঁর কারন এই : আমি রূহ ও মাটির মধ্যবর্তী থাকা অবস্থায়ই তাঁর পবিত্র নাম আরশের পায়ায় (আল্লাহর নামের সাথে ) লিখিত দেখেছি | এরপর আমি সমস্ত আকাশ ভ্রমন করেছি | আকাশের এমন কোন স্থান ছিলনা যেখানে মুহাম্মাদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নাম অন্কিত পাইনি? আমার রব আমাকে বেহেস্তে বসবাস করতে দিলেন | বেহেস্তের এমন কোন প্রাসাদ ও কামরা পাইনাই যেখানে মুহাম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নাম ছিলনা ? আমি মুহাম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নাম আরোও লিখিত দেখেছি সমস্ত হয়রদের স্কন্ধ দেশে , বেহেস্তের সমস্ত বৃক্ষের পাতায় , বিশেষ করে তুলা বৃক্ষের পাতায় পাতায় , পর্দার কিনারায় এবং ফেরেসতাগনের চোখের মনিতে ঐ নাম অঙ্কিত দেখেছি | সুতরাং হে শীস ! তুমি এই নাম বেশী বেশী করে জপতে থাক | কেননা ,ফেরেস্তাগন পুর্ব হতেই এই নাম জপনে মশগুল রয়েছেন ” [ জুরকানি শরীফ ] |
উল্লেখ্য যে সর্ব প্রথম দুনিয়াতে ইহাই ছিল জিকরে মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম |
হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম এর মিলাদ পাঠ ও কেয়াম :
হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম যখন আল্লাহর ঘর তৈরী করছিলেন , তখন ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম উক্ত ঘরের নির্মাণ কাজ কবুল করার জন্য নিজের ভবিষ্যৎ সন্তানাদিদের মুসলমান হয়ে থাকার জন্য আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করার পর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বা কেয়াম করে নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আবির্ভাব আরবে ও হযরত ইসমাইলের বংশে হওয়ার জন্য এভাবে দোয়া করেছেন |
অর্থাৎ হে আমার রব ! তুমি এই আরব ভুমিতে আমার ইসমাইলের বংশের মধ্যে তাদের মধ্যে হতেই সেই মহান রাসুলকে প্রেরণ করো- যিনি তোমার আয়াত সমুহ তাদের কাছে পাঠ করে শুনাবেন , তাদেরকে কোরআন সুন্নাহর বিশুদ্ধ জ্ঞান শিক্ষা দেবেন এবং বাহ্যিক ও আত্বিক অপবিত্রতা থেকে তাদের পবিত্র করবেন | [সুরাহ আল বাকারা ১২৯ আয়াত ]
এখানে দেখা যায় হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৪০০০ বৎসর পুর্বেই মুনাজাত আকারে তাঁর আবির্ভাব , তাঁর সারা জিন্দেগীর কর্ম চাঞ্চল্য ও মাণুষের আত্বার পরিশুদ্ধির ক্ষমতা বর্ননা করে হুজুর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আর মিলাদের সারাংশ পাঠ করেছেন এবং এই মুনাজাত বা মিলাদ দন্ডায়মান অবস্থাই করেছেন যা পুর্বের দুটি আয়াতের মর্মে বুঝা যায় |
ইবনে কাছির তাঁর আল্ বেদায়া ও নেহায়া গ্রন্থে ২য় খন্ডে ২৬১ পৃষ্ঠায় লিখেছেন ” দোয়া ইব্রাহিমু আলাইহি ওয়া সাল্লামু ওয়াহুয়া কায়েমুন
“অর্থাৎ উক্ত দোয়া করার সময় ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম দন্ডায়মান ছিলেন | নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেণ ” আনা দুয়াওতু ইব্রাহীমা ” আমি হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর দোয়ার ফসল |” হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম আল্লাহর নিকট থেকে চেয়ে আমাদের প্রিয় নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে আরবের ইসমাইল আলাইহিস সালাম এর বংশে নিয়ে এসেছেন | এটা উপলব্ধির বিষয় | আশেক ছাড়া এ মর্ম অন্য কেউ বুঝবে না | বর্তমান মিলাদ শরীফে রাসুলে পাঁকের আবির্ভাবের যে বর্ননা দেয়া হয় তা হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর দোয়ার তুলনায় সামান্যতম অংশ মাত্র | সুতরাং আমাদের মিলাদ শরিফ পাঠ ও কেয়াম হযরত ইব্রাহীম আলাহিস সালামেরই সুন্নাত । [ বেদায়া ও নেহায়া ২য় খন্ড ২৬১পৃষ্ঠ ]
হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম নবী করীম (সা) এর মিলাদ পাঠ ও কেয়াম:
নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ৫৭০ বৎসর পুর্বে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম আবির্ভাব | তিনি তাঁর উম্মত হাওয়ারী ( বনি ইসরাইল ) কে নিয়ে নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মিলাদ শরীফ পাঠ করেছেন | উম্মতের কাছে তিনি আখেরী জামানার পয়গম্বর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নাম ও সানা সিফাত এবং আগমন বার্তা এভাবে বর্নণা করেছেন : অর্থাৎ “
হে আমার প্রিয় রাসুল ! আপনি স্বরণ করে দেখুন ঐ সময়ের কথা যখন মরিয়মেম তনয়া ঈসা আলাইহিস সালাম বলেছেন :
হে বনী ইসরাইল , আমি তোমাদের কাছে নবী হয়ে প্রেরিত হয়েছি |
আমি আমার পূর্ববর্তী তাওরাত সত্যতার সাক্ষ্য দিচ্ছি এবং এমন এক মহান রাসুলের সুসংবাদ দিচ্ছি
যিনি আমার পরে আগমন করবেন এবং তাঁর নাম হবে আহমদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম [ সুরা আছ- ছফ ৬ আয়াত ]
হযরত ঈসা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ভাষন সাধারনত দন্ডায়মান হতো আর এটাই ভাষনের সাধারন রীতি ও বতে | ইবনে কাছির- আল বেদায়া ও নেহায়া গ্রন্থের ২য় খন্ডে ২৬১ পৃষ্ঠায়
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন : ” আখাতোবা ঈসা আলাইহেস সালামু উম্মাতাহুল হাওয়ারিইনা কায়েমা”
” অর্থ্যাৎ হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম দন্ডায়মান (কেয়াম) অবস্থায় তাঁর উম্মৎ হাওয়ারীদেরকে নবীজীর আগমনের সুসংবাদ দিয়ে বক্তৃতা করেছেন ” |বুখারী শরীফের বিখ্যাত
ব্যক্ষাকারী আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী , এমাম বদরুদ্দিন আইনি বুখারী শরীফের ব্যক্ষায় লিখেন ,
ﻭﺫﻛﺮ ﺍﻟﺴﻬﻴﻠﻲ ﺍﻥ ﺍﻟﻌﺒﺎﺱ ﻗﺎﻝ ﻟﻤﺎ ﻣﺎﺕ ﺍﺑﻮ ﻟﻬﺐ ﺭﺍﻳﺘﻪ ﻓﻲ
ﻣﻨﺎﻣﻲ ﺑﻌﺪ ﺣﻮﻝ ﻓﻲ ﺷﺮ ﺣﺎﻝ ﻓﻘﺎﻝ ﻣﺎ ﻟﻘﻴﺖ ﺑﻌﺪ
ﻛﻢ ﺭﺍﺣﺔ ﺍﻻ ﺍﻥ ﺍﻟﻌﺬﺍﺏ ﻳﺨﻔﻒ ﻋﻨﻲ ﻓﻲ ﻛﻞ ﻳﻮﻡ ﺍﺛﻨﻴﻦ ﻭﺫﻟﻚ ﺍﻥ
ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻭﻟﺪ ﻳﻮﻡ ﺍﻻﺛﻨﻴﻦ ﻭﻛﺎﻧﺖ ﺛﻮﻳﺒﺔ
ﺑﺸﺮﺕ ﺍﺑﺎ ﻟﻬﺐ ﺑﻤﻮﻟﺪﻩ ﻓﺎﻋﺘﻘﻬﺎ
অর্থাৎ হজরত আব্বাস ( রা ) বর্ণনা করেন , ” আবু লাহাবের মৃত্যুর এক বছর পর আমি তাকে স্বপ্নে দেখি |
সে আমাকে বলে ভাই আব্বাস আমার মৃত্যুর পর থেকে কবরের জিন্দেগীতে আমি শান্তিতে নেই |
কিন্তু প্রতি সোমবার এলেই আমার শাস্থি লাগব করে দেওয়া হয় | এই ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে হজরত আব্বাস ( রা )
বলেন আবু লাহাবের এই সোমবারের শাস্তি লাগবের কারণ হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিলাদত শরীফ
উপলক্ষে হুজুর যেদিন জন্ম গ্রহণ করেছিলেন নবীজির শুভাগমনে খুশি হয়ে হজরত সুয়াইবা ( রা ) আজাদ করে ছিলেন | ( ফাতহুল বারি সরহে সহীহুল বুখারী , অম্দাতুলকারী শরহে সহীহুল বুখারী )|
এখন কথা হলো আবু লাহাবের মত কাট্টা কাফের যদি নবীজির একদিনের বেলাদত শরীফে খুশি হয়ে প্রতি সপ্তাহে প্রতি সোমবার তার জাহান্নামের আজাব লাগব হয়ে যায় ,
আমরা যারা মুমিন মুসলমান তারা জীবনে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কতগুলা বেলাদত শরীফ খুশি মনে পালন করে তার বিনিময়ে কি জান্নাত পেতে পারিনা বা নাজাত পেতে পারিনা ?
এই প্রসঙ্গে উপমহাদেশের প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ অলিয়ে কামেল শায়খ আব্দুল হক মহাদ্দেসে দেহলভী ( রহ ) বলেন ,
ﻣﻦ ﻋﻈﻢ ﻟﻴﻠﺔ ﻣﻮﻟﺪﻩ ﺑﻤﺎ ﺍﻣﻜﻨﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﺘﻌﻈﻴﻢ ﻭﺍﻻﻛﺮﺍﻡ ﻛﺎﻥ ﻣﻦ
ﺍﻟﻔﺎﺀﺯﻳﻦ ﺑﺪﺍﺭ ﺍﻟﺴﻼﻡ
অর্থাৎ যারা হাবিবুল্লাহ হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিলাদত শরীফকে সম্মান ও তাজিম করবে এবং খুশি মনে পালন করবে সে চির শান্তির জায়গা জান্নাতের অধিকারী হবে | – মাছাবাতা বিস সুন্নাহ ১ম খন্ড, খুত্বায়ে ইবনে নাবাতা ]
যেখানে হাদিস শরীফে স্বয়ং আল্লাহর হাবিব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিলাদুন্নবী পালনকারীদেরকে নাজাতের সুসংবাদ দিয়েছেন সেখানে বাতিল পন্থীরা বেদাতের ফতুয়া দিয়ে কি জাহান্নামের রাস্তা তৈরী করছেন
মুমিন মুসলমানের সকল ঈদের সেরা ঈদ ঈদুল আজম মহা পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মর্যাদা , মাহাত্ব ও ফজিলত বর্ণনা করে শেষ করা যাবেনা |
কেউ যদি এই ঈদে মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উপলক্ষ করে দান খয়রাত করে তার চেয়ে সেরা দান খয়রাত আর কিছুই হতে পারেনা ,
কেউ যদি এই মহা পবিত্র দিনকে উপলক্ষ করে কোন ইবাদত বন্দেগী বা খুশি প্রকাশ করে তার চেয়ে বড় ইবাদত বা খুশি আর কিছুই হতে পারেনা |
এই দিনকে যারা খুশি মনে উদযাপন করবে তাদের জন্য হুজুর পুর নূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আজ থেকে ১৫০০ শত বছর আগেই একটি সুসংবাদ দিয়ে গেছেন ,
আর তা হলো যারা এই দিনে খুশি উদযাপন করবে তার জন্য নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শাফায়েত ওয়াজিব হয়ে যাবে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের নূরের জবান মোবারক দিয়ে ঘোষণা করে গেছেন | পবিত্র হাদিস শরীফে এসেছে ,
পবিত্র হাদিস শরীফে আরো এরশাদ হয়েছে
” ﻋَﻦْ ﺍِﺑْﻦِ
ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻬُﻤَﺎ ﺍَﻧَّﻪٗﻛَﺎﻥَ ﻳُﺤَﺪِّﺙُ ﺫَﺍﺕَ ﻳَﻮْﻡٍ ﻓِﻰْ ﺑَﻴْﺘِﻪٖ
ﻭَﻗَﺎﺋِﻊَﻭِﻻﺩَﺗٖﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻟِﻘَﻮْﻡٍ ، ﻓَﻴَﺴْﺘَﺒْﺸِﺮُﻭْﻥَ ﻭَﻳُﺤَﻤِّﺪُﻭْﻥَ
ﺍﻟﻠﻪَ ﻭَﻳُﺼَﻠُّﻮْﻥَﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓَﺎِﺫَﺍ ﺟَﺎﺀَﺍﻟﻨَّﺒِﻰُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ
ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ ﺣَﻠَّﺖْﻟَﻜُﻢْ ﺷَﻔَﺎﻋَﺘِﻰْ
অর্থাৎ হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ( রা ) নিজেই বর্ণনা করেন , একদা তিনি উনার
গৃহে সাহাবায়ে কেরামদের নিয়ে একত্রিত হয়ে হুজুর পুর নূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিলাদত শরীফ পাঠ করছিলেন |( এই দিনে হুজুর পৃথিবীতে আসছেন , স্বয়ং আল্লাহ উনার হাবিবের উপর দুরুদ সালাম দিয়েছেন )
শ্রবন্কারীরাও তা শুনে আনন্দ পাচ্ছিলেন | ঠিক ওই সময় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে উপস্থিত হয়ে বললেন , তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেছে “
রাসুলুল্লাহ সাঃ নূর নাকি মাটির তৈরি তা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে।
হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সম্পর্কে বর্নিত আছে।
মিশকাত শরীফ ৫১৩ পৃষ্ঠায় আছে-
عن العرباض بن ساريه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم انه قال انى عند الله مكتوب خاتم النبيين وان ادم لمنجدل فى طينته وساخبركم باول امرى دعوة ابراهيم وبشارة عيسى ورؤيا امى التى رأت حين وضعتنى وقد خرج لها نور اضاءلها منه قصور الشام- رواه فى شرح السنة ورواه احمد عن ابى امامة من قوله ساخبركم الى اخره- (دلائل النبوة ومعرفة احوال صاحب الشريفة للبيهقى ص ۲/۱۳٠ (مشكوة شريف ص ۵۱۳(
হযরত ইরবাদ্ধ ইবনে সারিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত।তিনি রাসূল (ﷺ)থেকে বর্ণনা করেছেন: “নিশ্চয় আঁমি আল্লাহ তায়ালার নিকট নবীগনের (আঃ) পরিসমাপ্তিকারী হিসেবে লিপিবদ্ধ এবং তখন হযরত আদম(আঃ) মাটির সাথে মিশ্রীত ছিলেন।আঁমি শ্রীঘ্রই তোমাদেরকে আঁমার প্রাথমিক অবস্থা সম্পর্কে সংবাদ দেবো।আর তা হচ্ছে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এঁর দোয়া এবং হযরত ঈসা(আঃ) এঁর সুসংবাদ এবং আঁমার মহিয়সী আম্মাজানের অবলোকন যা তিঁনি আঁমাকে প্রসবকালীন দেখেছেন এবং এমন একটি নূর বের হল যা দ্বারা সিরিয়ার বা শ্যাম প্রাসাদ সমূহ আলোকিত হয়ে গেল।
*****দলিল****
*(ক.) মিশকাত শরীফ ৫১৩ পৃষ্ঠা,হাদীস নং ৫৭৫৯
*(খ.) ইবনে হিশাম: আস-সিরাতুন নববীয়্যাহ(বৈরুত: দারু ইয়াহইয়ায়িত তুরাসিল’আরবী,৩য় সং,১৪২১ হিঃ,১ম খণ্ড, ১৯৪-১৯৫ পৃঃ )যরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহ আনহুমা বলেন,
– ﻋﻦ ﺇﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ : ﻭﺗﻘﻠﺒﻚ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﺎﺟﺪﻳﻦ ، ﻗﺎﻝ : ﻣﻦ ﺻﻠﺐ ﻧﺒﻲ ﺇﻟﻰ ﻧﺒﻲ ﺣﺘﻰ ﺻﺮﺕ ﻧﺒﻴﺎً ، ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺰﺍﺭ ﻭﺭﺟﺎﻟﻪ ﺛﻘﺎﺕ
অর্থাৎ এক নবী থেকে আরেক নবীর পৃষ্টদেশে (অবস্থান করে) অবশেষে আঁপনি নবী হয়েছেন।
[মাজমাউয যাওয়াইদ/কিতাবুত তাফসীর ৭ম খন্ড/ ৮৬ পৃস্টা] হাদিসটি সহীহ।
★৫. তাফসীরে কবীরে সূরা বাকারার ২৫৩ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় আদম (আ:) এঁর উপর রাসূল (ﷺ) এঁর শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে:
أن الملائكة أمروا بالسجود لآدم لأجل أن نور محمد عليه السلام في جبهة آدم
নিশ্চয় ফেরেশতাদেরকে আদম (আ:) কে সেজদা করতে আদেশ করা হয়েছিল। কারণ, আদম (আ:) এঁর পেশানীতে মুহাম্মাদ (ﷺ) এঁর নূর ছিল।
*****দলিল*****
*(ক.) তাফসীরে কবীর,১ম খন্ড,পৃঃ ৩১৮
*(খ.) তাফসীরে লুবাব,৩য় খন্ড,
পৃ: ২৩৩
*(গ.) তাফসীরে নিশাপুরী,২য় খন্ড, পৃ:১০৭
হযরত আব্দুল্লাহ (রা:) এঁর পেশানীতে নবী (ﷺ) এঁর নূর মোবারক ছিল।
وأخبرنا وهب بن جرير بن حازم أخبرنا أبي قال سمعت أبا يزيد المدني قال نبئت أن عبد الله أبا رسول الله صلى الله عليه و سلم أتى على امرأة من خثعم فرأت بين عينيه نورا ساطعا إلى السماء فقالت هل لك في قال نعم حتى أرمي الجمرة فأنطلق فرمى الجمرة ثم أتى امرأته آمنة بنت وهب ثم ذكر يعني الخثعمية فأتاها فقالت هل أتيت امرأة بعدي قال نعم أمرأتي آمنة بنت وهب قالت فلا حاجة لي فيك انك مررت وبين عينيك نور ساطع إلى السماء فلما وقعت عليها ذهب فأخبرها أنها قد حملت خير أهل الأرض
রাসূল (ﷺ)এঁর পিতা আব্দুল্লাহ খাসয়াম গোত্রীয় এক মহিলার নিকট গেলে সে তাঁর দু’চোখের মাঝে আকাশ পর্যন্ত একটি উজ্জল নূর দেখতে পেল। সে বলল,তোমার কি আমাতে প্রয়োজন আছে ? তিনি বললেন,হ্যাঁ।তবে আমি জামরায় পাথর মারব। অত:পর তিনি জামরায় পাথর মেরে স্বীয় স্ত্রী আমেনা বিনতে ওহাব এর নিকট গেলেন।পরে যখন খাসয়ামী মহিলার কথা মনে পড়লে তিনি তার নিকট আসলেন। সে জিজ্ঞেস করল,তুমি কি আমার সাথে দেখা করার পরে কোন মহিলার সাথে মিলিত হয়েছিলে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমার স্ত্রী আমেনা বিনতে ওহাবের সাথে।সে বলল,তাহলে তোমাতে আমার কোন প্রয়োজন নাই। তুমি যখন যাচ্ছিলে আমি তোমার দু’চোখে মধ্যখানে আকাশ পর্যন্ত প্রলম্বিত একটি উজ্জল নূর দেখতে পেয়েছিলাম। আর যখন তুমি তার সাথে মিলিত হয়েছো,সে নূরটি চলে গিয়েছে। আর সে বলল, উক্ত আমেনা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিকে গর্ভধারণ করেছেন।এ নূরটি ছিল রাসুলুল্লাহ সাঃ এর নূর।
তা ছাড়া আবার কিছু মানুষ কোরআন শরিফ থেকে দলিল দেয় এবং বলে রাসুুলুল্লাহ সাঃ মাটির তৈরি।
সূরা কাহাফের ১১০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَمَنْ كَانَ يَرْجُوا لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا (110
“Previous Verse Surah Al-Kahf : Verse No 110 of 110
Arabic Text,
Say you, 'apparently in facial outlook of a man, I am like you, I receive revelation that your God is one God,then who-so-ever hopes to meet his Lord, he should do noble deeds and associate not any one in the worshipof his Lord.(হে নবী!) আপনি বলুন, (দৈহিক দৃষ্টিতে) আমি তো তোমাদের মতই মানুষ, (তবে আত্মিক উৎকর্ষ ও ঐশী ধারণক্ষমতার অধিকারী হওয়ার কারণে) আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় তথা ওহী নাজিল হয় যে, আমার ও তোমাদের উপাস্য কেবল এক অদ্বিতীয় উপাস্য। সুতরাং যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাতের আশা করে সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার প্রতিপালকের উপাসনায় কাউকে তাঁর অংশী না করে।” (১৮:১১০)
সূরা সোয়াদ আয়াত নংإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِّن طِينٍ
স্মরণ করুন, যখন আপনার রব ফেরেশতাদেরকে বলেছিলেন, 'আমি মানুষ সৃষ্টি করছি কাদা থেকে,
When your Lord said to the angels; Surely I am going to create a mortal from dust.
এখানে রাসুলুল্লাহ সাঃ কে স্মরণ বা মনে করার কথা বলা হয়েছে।তার মানে রাসুলুল্লাহ সাঃ পূূূূর্বের থেকেই এ বিষয় সম্পর্কে জানতেন। এর মানে মাটির মানুষ সৃৃষ্টি র পূর্বেই তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
خُلِقَ مِن مَّاءٍ دَافِقٍ
‘তাকে (মানুষকে) সৃষ্টি করা হয়েছে সবেগে-স্খলিত পানি থেকে।’ [সুরা ত্বারীক : আয়াত ৬]
ثُمَّ كَانَ عَلَقَةً فَخَلَقَ فَسَوَّىٰ
‘তারপর সে হলো একটি রক্তপিন্ড, তারপর তিনি আকৃতি দান করলেন ও পূর্ণাঙ্গ করলেন।’ [সুরা কিয়ামাহ : আয়াত ৩৮]
وَخَلَقْنَاكُمْ أَزْوَاجًا
‘আর আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি জোড়ায়-জোড়ায়।’ [সুরা নিসা : আয়াত ৮]
أَيُشْرِكُونَ مَا لَا يَخْلُقُ شَيْئًا وَهُمْ يُخْلَقُونَ
‘তারা কি অংশীদার বসায় তাকে যে কিছুই সৃষ্টি করে না? বরং তাদেরই সৃষ্টি করা হয়েছে।’ [সুরা আ’রাফ : আয়াত ১৯১]
وَقَدْ خَلَقَكُمْ أَطْوَارًا
‘অথচ তিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন স্তরে-স্তরে।’ [সুরা নুহ : আয়াত ১৪]
أَفَمَن يَخْلُقُ كَمَن لَّا يَخْلُقُ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ
‘যিনি সৃষ্টি করেন তিনি কি তবে তার মতো যে সৃষ্টি করে না? তবুও কি তোমরা মনোযোগ দেবে না?’ [সুরা নাহল : আয়াত ১৭]
خَلَقَ الْإِنسَانَ مِنْ عَلَقٍ
‘সৃষ্টি করেছেন মানুষকে এক রক্তপিন্ড থেকে।’ [সুরা আলাক : আয়াত ২]
مِن نُّطْفَةٍ خَلَقَهُ فَقَدَّرَهُ
‘এক শুক্রকীট থেকে তিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন, তারপর তিনি তাকে সুসমঞ্জস করেছেন।’ [সুরা আবাসা : আয়াত ১৯]
فَلْيَنظُرِ الْإِنسَانُ مِمَّ خُلِقَ
‘সুতরাং মানুষ ভেবে দেখুক কি থেকে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে।’ [সুরা ত্বারীক : আয়াত ৫]
لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ فِي كَبَدٍ
‘আমরা নিশ্চয়ই মানুষকে সৃষ্টি করেছি শ্রমনির্ভর করে।’ [সুরা বালাদ : আয়াত-৪]
أَلَمْ نَخْلُقكُّم مِّن مَّاءٍ مَّهِينٍ
‘তোমাদের কি আমি সৃষ্টি করিনি এক তুচ্ছ জলীয় পদার্থ থেকে?’ [ সুরা মুরসালাত : আয়াত-২০]
এখানে সবগুলো দলিল হল মানব সৃষ্টির ব্যাপারে কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাঃ কে কি দিয়ে সৃৃষ্টি করেছেন সে ব্যাপারে কোন কোরানের আয়াত নেই। তাই বলা যায় রাসুলুল্লাহ সাঃ মানুষ কিন্তু অসাধারণ ও উত্তম চরিত্রের মানুষ। যার সাথে সাধারণত মানুষের তুলনা করা যাবে না। রাসুলুল্লাহ সাঃ আল্লাহর সৃষ্টির একটি অন্যতম সৃষ্টি। ধারণার মাধ্যমে! তাকে কি দিয়ে আল্লাহপাক সৃষ্টি করেছেন? তা নিয়ে ফিতনা সৃষ্টি করা উচিত নয়। ★এই প্রসঙ্গে পবিত্র হাদিস শরীফে এরশাদ হয়েছে ,
” ﻋَﻦْ ﺍَﺑِﻰ ﻗَﺘَﺪَﺓَ ﺍﻻَﻧْﺼﺎَﺭِﻯ ﺭَﺿِﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﻨﻪُ ﺍَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ
ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺱﺀﻝ ﻋَﻦْ ﺻَﻮْﻡِ ﻳَﻮْﻡ ﺍﻻِﺛْﻨَﻴْﻦِ ﻗَﻞَ ﺫَﺍﻙَ ﻳَﻮْﻡٌ ﻭُﻟِﺪْﺕُ ﻓِﻴْﻪِ ﺑُﻌِﺜْﺖُ ﺍَﻭْﺍُﻧْﺰِﻝَ ﻋَﻠَﻰَّ ﻓِﻴْﻪِ –
অর্থাৎ হজরত আবু কাতাদা ( রা ) হতে বর্ণিত , একজন সাহাবী হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে আরজ করলেন ই রাসুলাল্লাহ , ইয়া হাবিবাল্লাহ আমার মাতা পিতা আপনার নূরের পাক কদমে কুরবান হোক | আপনি প্রতি সোমবার রোজা পালন করেন কেন ? জবাবে সরকারে দুজাহান নূরে মুজাস্সাম হাবিবুল্লাহ হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন , এই দিনে আমার জন্ম হয়েছে , এই দিনে আমি প্রেরিত হয়েছি এবং পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ এই দিনেই আমার উপর নাজিল হয়েছে | (সহীহ মুসলিম শরীফ ২য় খন্ড, ৮১৯ পৃষ্ঠা, বায়হাকী: আহসানুল কুবরা, ৪র্থ খন্ড ২৮৬ পৃ: মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল ৫ম খন্ড ২৯৭ পৃ: মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৪র্থ খন্ড ২৯৬পৃ: হিলিয়াতুল আউলিয়া ৯ম খন্ড ৫২ পৃ:)
বুখারী শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাকারী আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী , ইমাম বদরুদ্দিন আইনি বুখারী শরীফের ব্যাখ্যায় লিখেন ,
ﻭﺫﻛﺮ ﺍﻟﺴﻬﻴﻠﻲ ﺍﻥ ﺍﻟﻌﺒﺎﺱ ﻗﺎﻝ ﻟﻤﺎ ﻣﺎﺕ ﺍﺑﻮ ﻟﻬﺐ ﺭﺍﻳﺘﻪ ﻓﻲ
ﻣﻨﺎﻣﻲ ﺑﻌﺪ ﺣﻮﻝ ﻓﻲ ﺷﺮ ﺣﺎﻝ ﻓﻘﺎﻝ ﻣﺎ ﻟﻘﻴﺖ ﺑﻌﺪ
ﻛﻢ ﺭﺍﺣﺔ ﺍﻻ ﺍﻥ ﺍﻟﻌﺬﺍﺏ ﻳﺨﻔﻒ ﻋﻨﻲ ﻓﻲ ﻛﻞ ﻳﻮﻡ ﺍﺛﻨﻴﻦ ﻭﺫﻟﻚ ﺍﻥ
ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻭﻟﺪ ﻳﻮﻡ ﺍﻻﺛﻨﻴﻦ ﻭﻛﺎﻧﺖ ﺛﻮﻳﺒﺔ
ﺑﺸﺮﺕ ﺍﺑﺎ ﻟﻬﺐ ﺑﻤﻮﻟﺪﻩ ﻓﺎﻋﺘﻘﻬﺎ
অর্থাৎ হজরত আব্বাস ( রা ) বর্ণনা করেন , ” আবু লাহাবের মৃত্যুর এক বছর পর আমি তাকে স্বপ্নে দেখি | সে আমাকে বলে ভাই আব্বাস আমার মৃত্যুর পর থেকে কবরের জিন্দেগীতে আমি শান্তিতে নেই | কিন্তু প্রতি সোমবার এলেই আমার শাস্থি লাগব করে দেওয়া হয় | এই ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে হজরত আব্বাস ( রা ) বলেন আবু লাহাবের এই সোমবারের শাস্তি লাগবের কারণ হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিলাদত শরীফ উপলক্ষে হুজুর যেদিন জন্ম গ্রহণ করেছিলেন নবীজির শুভাগমনে খুশি হয়ে হজরত সুয়াইবা ( রা ) আজাদ করে ছিলেন | (ফাতহুল বারি সরহে সহীহুল বুখারী , অম্দাতুল কারী শরহে সহীহুল বুখারী )|
এখন কথা হলো আবু লাহাবের মত কাট্টা কাফের যদি নবীজির একদিনের বেলাদত শরীফে খুশি হয়ে প্রতি সপ্তাহে প্রতি সোমবার তার জাহান্নামের আজাব লাগব হয়ে যায় , আমরা যারা মুমিন মুসলমান তারা জীবনে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কতগুলা বেলাদত শরীফ খুশি মনে পালন করে তার বিনিময়ে কি জান্নাত পেতে পারিনা ?
★এই প্রসঙ্গে উপমহাদেশের প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ অলিয়ে কামেল শায়খ আব্দুল হক মহাদ্দেসে দেহলভী ( রহ ) বলেন ,
ﻣﻦ ﻋﻈﻢ ﻟﻴﻠﺔ ﻣﻮﻟﺪﻩ ﺑﻤﺎ ﺍﻣﻜﻨﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﺘﻌﻈﻴﻢ ﻭﺍﻻﻛﺮﺍﻡ ﻛﺎﻥ ﻣﻦ
ﺍﻟﻔﺎﺀﺯﻳﻦ ﺑﺪﺍﺭ ﺍﻟﺴﻼﻡ
অর্থাৎ যারা হাবিবুল্লাহ হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিলাদত শরীফকে সম্মান ও তাজিম করবে এবং খুশি মনে পালন করবে সে চির শান্তির জায়গা জান্নাতের অধিকারী হবে |
(মাছাবাতা বিস সুন্নাহ ১ম খন্ড, খুত্বায়ে ইবনে নাবাতা) |
অতএব হাদিস শরিফ থেকে মহা পবিত্র ঈদ উল আজম ঈদ ই মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বৈধতা স্পষ্টভাবে প্রমানিত হলো , এরপরও যদি কেউ পবিত্র মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিপক্ষে কথা বলে , বেদাতের ফতুয়া দেয় বুঝতে হবে সে হয়তো অন্ধ , মুর্খ নতুবা মুনাফেক রাসুল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জাত শত্রু | কেননা অন্ধ আর মূর্খর পক্ষে হাদিস পড়া সম্ভব না আর মুনাফেক ছাড়া কেউ রাসুল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শান মান তথাপি উনার পবিত্রজন্মদিনকে অস্বীকার করতে পারেনা !
হযরত আল্লামা জালাল উদ্দীন সূয়ুতী রাহিমামুল্লাহ আলাইহি যার সনদ সহ প্রায় ২ লক্ষ হাদিস শরীফ মুখস্থ ছিল সেই তাজুল মুফাস্সিরীন মোহাদ্দেস মুসান্নিফ সুয়ুতি রাহিমামুল্লাহ আলাইহি তিনি উনার বিখ্যাত কিতাব ” সুবলুল হুদা ফি মাওলেদে মুস্তাফা আলাইহি ওয়া সাল্লাম “” এ দুই খানা সহি হাদিস শরীফ বর্ণনা করেছেন |
পবিত্র হাদিস শরীফে এরশাদ হয়েছে “
ﻋَﻦْ ﺍَﺑِﻰ ﺍﻟﺪَّﺭْﺩَﺍﺀِ ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻪُ ﺍَﻧَّﻪﻣَﺮَّ ﻣَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ
ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺍِﻟٰﻰﺑَﻴْﺖِ ﻋَﺎﻣِﺮِ ﺍﻻَﻧْﺼَﺎﺭِﻯِّ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻳُﻌَﻠِّﻢُ ﻭَﻗَﺎﺋِﻊَﻭِﻻﺩَﺗﻪِ ﺻَﻠَّﻰ
ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻻَﺑْﻨَﺎﺋِﻪﻭَﻋَﺸﻪِﺗَﺮْﻴِ ﻭَﻳَﻘُﻮْﻝُ ﻫٰﺬَﺍ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﻫٰﺬَﺍ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَﻓَﻘَﺎﻝَ
ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺼَّﻠٰﻮﺓُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡُ ﺍِﻥَّ ﺍﻟﻠﻪَ ﻓَﺘَﺢَﻟَﻚَ ﺍَﺑْﻮَﺍﺏَ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﺔِ ﻭَﺍﻟْﻤَﻼﺋِﻜَﺔُ
ﻛُﻠُّﻬُﻢْﻳَﺴْﺘَﻐْﻔِﺮُﻭْﻥَ ﻟَﻚَ ﻣَﻦْ ﻓَﻌَﻞَ
ﻓِﻌْﻠَﻚَ ﻧَﺠٰﻰﻧَﺠٰﺘَﻚ
অর্থাৎ হজরত আবু দ্বারদা ( রা ) হতে বর্ণিত , হাবিবুল্লাহ হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন হজরত আমির আনসারী ( রা ) এর গৃহে গেলেন এবং হুজুর দেখতে পেলেন আমির আনসারী ( রা ) উনার পরিবার পরিজন ও আত্বীয় স্বজনদের নিয়ে একত্রিত হয়ে খুশি মনে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিলাদত শরীফ পাঠ করছেন | অর্থাৎ নবীজি এইদিনে পৃথিবীতে আসছেন , পৃথিবীতে প্রত্যেকটা মাখলুক আনন্দিত হয়ে ইত্যাদি | এই ঘটনা শ্রবণ করে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত অনদিত হয়ে হজরত আমির আনসারীকে বললেন ,আল্লাহ পাক আপনার জন্য উনার রহমতের দরজা প্রশস্থ করেছেন এবং সমস্থ ফেরেস্থাগন আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন | যে আপনার জন্য এইরূপ কাজ করবে সেও আপনার মত নাজাত ( ফজিলত ) লাভ করবে | ( সুবহান আল্লাহ )
পবিত্র হাদিস শরীফে আরো এরশাদ হয়েছে “
ﻋَﻦْ ﺍِﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻬُﻤَﺎ ﺍَﻧَّﻪٗﻛَﺎﻥَ ﻳُﺤَﺪِّﺙُ ﺫَﺍﺕَ ﻳَﻮْﻡٍ
ﻓِﻰْ ﺑَﻴْﺘِﻪٖ ﻭَﻗَﺎﺋِﻊَﻭِﻻﺩَﺗٖﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻟِﻘَﻮْﻡٍ ، ﻓَﻴَﺴْﺘَﺒْﺸِﺮُﻭْﻥَ
ﻭَﻳُﺤَﻤِّﺪُﻭْﻥَ ﺍﻟﻠﻪَ ﻭَﻳُﺼَﻠُّﻮْﻥَﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓَﺎِﺫَﺍ ﺟَﺎﺀَﺍﻟﻨَّﺒِﻰُّ
ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ ﺣَﻠَّﺖْﻟَﻜُﻢْ ﺷَﻔَﺎﻋَﺘِﻰْ
অর্থাৎ হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ( রা ) নিজেই বর্ণনা করেন , একদা তিনি উনার গৃহে সাহাবায়ে কেরামদের নিয়ে একত্রিত হয়ে হুজুর পুর নূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিলাদত শরীফ পাঠ করছিলেন |( এই দিনে হুজুর পৃথিবীতে আসছেন , স্বয়ং আল্লাহ উনার হাবিবের উপর দুরুদ সালাম দিয়েছেন ) শ্রবন্কারীরাও তা শুনে আনন্দ পাচ্ছিলেন | ঠিক ওই সময় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে উপস্থিত হয়ে বললেন , তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেছে “|
এই হাদিসটি বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থে এসেছে যেমন : মাওলুদুল কবীর , আত তানভীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযার , হকিকতে মোহাম্মদী ( মিলাদ অধ্যায় ), দুররুল মুনাজ্জাম , ইশবাউল কালাম |
অতএব উপরোক্ত সহি হাদিসের মাধ্যমে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বৈধতা প্রমানিত হলো , এরপরও যদি কেউ পবিত্র মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিপক্ষে কথা বলে , বেদাতের ফতুয়া দেয় বুঝতে হবে সে হয়তো অন্ধ , মুর্খ নতুবা মুনাফেক রাসুল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জাত শত্রু | কেননা অন্ধ আর মূর্খর পক্ষে হাদিস পড়া সম্ভব না আর মুনাফেক ছাড়া কেউ রাসুল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শান মান তথাপি উনার পবিত্র জন্মদিনকে অস্বীকার করতে পারেনা !নবীগনের যুগে মিলাদুন্নবী:
★১। হযরত আদম আলাইহিস সালাম এর যুগে মিলাদ প্রত্যেক নবী নিজ নিজ যুগে আমাদের প্রিয়নবী ও আল্লাহর প্রিয় হাবিব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আবির্ভাবের সুসংবাদ দিয়ে গেছেন | হযরত আদম আলাইহিস সালাম তাঁর প্রিয় পুত্র ও প্রতিনিধি হযরত শীস আলাইহিস সালাম কে নুরে মুহাম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর তাজিম করার জন্য নিম্ন অসিয়ত করে গেছেন |
★★অনুবাদ অংশ টি নিম্নে বর্ননা করা হলোঃ
[” আদম আলাইহিস সালাম আপন পুত্র হযরত শীস আলাইহিস সালাম কে লক্ষ্য করে বললেন : হে প্রিয় বৎস , আমার পরে তুমি আমার খলিফা | সুতরাং এই খেলাফত কে তাকওয়ার তাজ ও দৃঢ় একিনের দ্বারা মজবুত করে ধরে রেখো | আর যখনই আল্লাহর নাম ঝিকির (উল্লেখ) করবে তাঁর সাথেই মুহাম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নামও উল্লেখ করবে | তাঁর কারন এই : আমি রূহ ও মাটির মধ্যবর্তী থাকা অবস্থায়ই তাঁর পবিত্র নাম আরশের পায়ায় (আল্লাহর নামের সাথে ) লিখিত দেখেছি | এরপর আমি সমস্ত আকাশ ভ্রমন করেছি | আকাশের এমন কোন স্থান ছিলনা যেখানে মুহাম্মাদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নাম অন্কিত পাইনি? আমার রব আমাকে বেহেস্তে বসবাস করতে দিলেন | বেহেস্তের এমন কোন প্রাসাদ ও কামরা পাইনাই যেখানে মুহাম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নাম ছিলনা ? আমি মুহাম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নাম আরোও লিখিত দেখেছি সমস্ত হয়রদের স্কন্ধ দেশে , বেহেস্তের সমস্ত বৃক্ষের পাতায় , বিশেষ করে তুলা বৃক্ষের পাতায় পাতায় , পর্দার কিনারায় এবং ফেরেসতাগনের চোখের মনিতে ঐ নাম অঙ্কিত দেখেছি | সুতরাং হে শীস ! তুমি এই নাম বেশী বেশী করে জপতে থাক | কেননা ,ফেরেস্তাগন পুর্ব হতেই এই নাম জপনে মশগুল রয়েছেন ” [ জুরকানি শরীফ ] |
উল্লেখ্য যে সর্ব প্রথম দুনিয়াতে ইহাই ছিল জিকরে মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম |
হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম এর মিলাদ পাঠ ও কেয়াম :
হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম যখন আল্লাহর ঘর তৈরী করছিলেন , তখন ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম উক্ত ঘরের নির্মাণ কাজ কবুল করার জন্য নিজের ভবিষ্যৎ সন্তানাদিদের মুসলমান হয়ে থাকার জন্য আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করার পর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বা কেয়াম করে নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আবির্ভাব আরবে ও হযরত ইসমাইলের বংশে হওয়ার জন্য এভাবে দোয়া করেছেন |
অর্থাৎ হে আমার রব ! তুমি এই আরব ভুমিতে আমার ইসমাইলের বংশের মধ্যে তাদের মধ্যে হতেই সেই মহান রাসুলকে প্রেরণ করো- যিনি তোমার আয়াত সমুহ তাদের কাছে পাঠ করে শুনাবেন , তাদেরকে কোরআন সুন্নাহর বিশুদ্ধ জ্ঞান শিক্ষা দেবেন এবং বাহ্যিক ও আত্বিক অপবিত্রতা থেকে তাদের পবিত্র করবেন | [সুরাহ আল বাকারা ১২৯ আয়াত ]
এখানে দেখা যায় হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৪০০০ বৎসর পুর্বেই মুনাজাত আকারে তাঁর আবির্ভাব , তাঁর সারা জিন্দেগীর কর্ম চাঞ্চল্য ও মাণুষের আত্বার পরিশুদ্ধির ক্ষমতা বর্ননা করে হুজুর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আর মিলাদের সারাংশ পাঠ করেছেন এবং এই মুনাজাত বা মিলাদ দন্ডায়মান অবস্থাই করেছেন যা পুর্বের দুটি আয়াতের মর্মে বুঝা যায় |
ইবনে কাছির তাঁর আল্ বেদায়া ও নেহায়া গ্রন্থে ২য় খন্ডে ২৬১ পৃষ্ঠায় লিখেছেন ” দোয়া ইব্রাহিমু আলাইহি ওয়া সাল্লামু ওয়াহুয়া কায়েমুন
“অর্থাৎ উক্ত দোয়া করার সময় ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম দন্ডায়মান ছিলেন | নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেণ ” আনা দুয়াওতু ইব্রাহীমা ” আমি হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর দোয়ার ফসল |” হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম আল্লাহর নিকট থেকে চেয়ে আমাদের প্রিয় নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে আরবের ইসমাইল আলাইহিস সালাম এর বংশে নিয়ে এসেছেন | এটা উপলব্ধির বিষয় | আশেক ছাড়া এ মর্ম অন্য কেউ বুঝবে না | বর্তমান মিলাদ শরীফে রাসুলে পাঁকের আবির্ভাবের যে বর্ননা দেয়া হয় তা হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর দোয়ার তুলনায় সামান্যতম অংশ মাত্র | সুতরাং আমাদের মিলাদ শরিফ পাঠ ও কেয়াম হযরত ইব্রাহীম আলাহিস সালামেরই সুন্নাত । [ বেদায়া ও নেহায়া ২য় খন্ড ২৬১পৃষ্ঠ ]
হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম নবী করীম (সা) এর মিলাদ পাঠ ও কেয়াম:
নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ৫৭০ বৎসর পুর্বে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম আবির্ভাব | তিনি তাঁর উম্মত হাওয়ারী ( বনি ইসরাইল ) কে নিয়ে নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মিলাদ শরীফ পাঠ করেছেন | উম্মতের কাছে তিনি আখেরী জামানার পয়গম্বর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নাম ও সানা সিফাত এবং আগমন বার্তা এভাবে বর্নণা করেছেন : অর্থাৎ “
হে আমার প্রিয় রাসুল ! আপনি স্বরণ করে দেখুন ঐ সময়ের কথা যখন মরিয়মেম তনয়া ঈসা আলাইহিস সালাম বলেছেন :
হে বনী ইসরাইল , আমি তোমাদের কাছে নবী হয়ে প্রেরিত হয়েছি |
আমি আমার পূর্ববর্তী তাওরাত সত্যতার সাক্ষ্য দিচ্ছি এবং এমন এক মহান রাসুলের সুসংবাদ দিচ্ছি
যিনি আমার পরে আগমন করবেন এবং তাঁর নাম হবে আহমদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম [ সুরা আছ- ছফ ৬ আয়াত ]
হযরত ঈসা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ভাষন সাধারনত দন্ডায়মান হতো আর এটাই ভাষনের সাধারন রীতি ও বতে | ইবনে কাছির- আল বেদায়া ও নেহায়া গ্রন্থের ২য় খন্ডে ২৬১ পৃষ্ঠায়
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন : ” আখাতোবা ঈসা আলাইহেস সালামু উম্মাতাহুল হাওয়ারিইনা কায়েমা”
” অর্থ্যাৎ হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম দন্ডায়মান (কেয়াম) অবস্থায় তাঁর উম্মৎ হাওয়ারীদেরকে নবীজীর আগমনের সুসংবাদ দিয়ে বক্তৃতা করেছেন ” |বুখারী শরীফের বিখ্যাত
ব্যক্ষাকারী আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী , এমাম বদরুদ্দিন আইনি বুখারী শরীফের ব্যক্ষায় লিখেন ,
ﻭﺫﻛﺮ ﺍﻟﺴﻬﻴﻠﻲ ﺍﻥ ﺍﻟﻌﺒﺎﺱ ﻗﺎﻝ ﻟﻤﺎ ﻣﺎﺕ ﺍﺑﻮ ﻟﻬﺐ ﺭﺍﻳﺘﻪ ﻓﻲ
ﻣﻨﺎﻣﻲ ﺑﻌﺪ ﺣﻮﻝ ﻓﻲ ﺷﺮ ﺣﺎﻝ ﻓﻘﺎﻝ ﻣﺎ ﻟﻘﻴﺖ ﺑﻌﺪ
ﻛﻢ ﺭﺍﺣﺔ ﺍﻻ ﺍﻥ ﺍﻟﻌﺬﺍﺏ ﻳﺨﻔﻒ ﻋﻨﻲ ﻓﻲ ﻛﻞ ﻳﻮﻡ ﺍﺛﻨﻴﻦ ﻭﺫﻟﻚ ﺍﻥ
ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻭﻟﺪ ﻳﻮﻡ ﺍﻻﺛﻨﻴﻦ ﻭﻛﺎﻧﺖ ﺛﻮﻳﺒﺔ
ﺑﺸﺮﺕ ﺍﺑﺎ ﻟﻬﺐ ﺑﻤﻮﻟﺪﻩ ﻓﺎﻋﺘﻘﻬﺎ
অর্থাৎ হজরত আব্বাস ( রা ) বর্ণনা করেন , ” আবু লাহাবের মৃত্যুর এক বছর পর আমি তাকে স্বপ্নে দেখি |
সে আমাকে বলে ভাই আব্বাস আমার মৃত্যুর পর থেকে কবরের জিন্দেগীতে আমি শান্তিতে নেই |
কিন্তু প্রতি সোমবার এলেই আমার শাস্থি লাগব করে দেওয়া হয় | এই ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে হজরত আব্বাস ( রা )
বলেন আবু লাহাবের এই সোমবারের শাস্তি লাগবের কারণ হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিলাদত শরীফ
উপলক্ষে হুজুর যেদিন জন্ম গ্রহণ করেছিলেন নবীজির শুভাগমনে খুশি হয়ে হজরত সুয়াইবা ( রা ) আজাদ করে ছিলেন | ( ফাতহুল বারি সরহে সহীহুল বুখারী , অম্দাতুলকারী শরহে সহীহুল বুখারী )|
এখন কথা হলো আবু লাহাবের মত কাট্টা কাফের যদি নবীজির একদিনের বেলাদত শরীফে খুশি হয়ে প্রতি সপ্তাহে প্রতি সোমবার তার জাহান্নামের আজাব লাগব হয়ে যায় ,
আমরা যারা মুমিন মুসলমান তারা জীবনে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কতগুলা বেলাদত শরীফ খুশি মনে পালন করে তার বিনিময়ে কি জান্নাত পেতে পারিনা বা নাজাত পেতে পারিনা ?
এই প্রসঙ্গে উপমহাদেশের প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ অলিয়ে কামেল শায়খ আব্দুল হক মহাদ্দেসে দেহলভী ( রহ ) বলেন ,
ﻣﻦ ﻋﻈﻢ ﻟﻴﻠﺔ ﻣﻮﻟﺪﻩ ﺑﻤﺎ ﺍﻣﻜﻨﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﺘﻌﻈﻴﻢ ﻭﺍﻻﻛﺮﺍﻡ ﻛﺎﻥ ﻣﻦ
ﺍﻟﻔﺎﺀﺯﻳﻦ ﺑﺪﺍﺭ ﺍﻟﺴﻼﻡ
অর্থাৎ যারা হাবিবুল্লাহ হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিলাদত শরীফকে সম্মান ও তাজিম করবে এবং খুশি মনে পালন করবে সে চির শান্তির জায়গা জান্নাতের অধিকারী হবে | – মাছাবাতা বিস সুন্নাহ ১ম খন্ড, খুত্বায়ে ইবনে নাবাতা ]
যেখানে হাদিস শরীফে স্বয়ং আল্লাহর হাবিব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিলাদুন্নবী পালনকারীদেরকে নাজাতের সুসংবাদ দিয়েছেন সেখানে বাতিল পন্থীরা বেদাতের ফতুয়া দিয়ে কি জাহান্নামের রাস্তা তৈরী করছেন
মুমিন মুসলমানের সকল ঈদের সেরা ঈদ ঈদুল আজম মহা পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মর্যাদা , মাহাত্ব ও ফজিলত বর্ণনা করে শেষ করা যাবেনা |
কেউ যদি এই ঈদে মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উপলক্ষ করে দান খয়রাত করে তার চেয়ে সেরা দান খয়রাত আর কিছুই হতে পারেনা ,
কেউ যদি এই মহা পবিত্র দিনকে উপলক্ষ করে কোন ইবাদত বন্দেগী বা খুশি প্রকাশ করে তার চেয়ে বড় ইবাদত বা খুশি আর কিছুই হতে পারেনা |
এই দিনকে যারা খুশি মনে উদযাপন করবে তাদের জন্য হুজুর পুর নূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আজ থেকে ১৫০০ শত বছর আগেই একটি সুসংবাদ দিয়ে গেছেন ,
আর তা হলো যারা এই দিনে খুশি উদযাপন করবে তার জন্য নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শাফায়েত ওয়াজিব হয়ে যাবে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের নূরের জবান মোবারক দিয়ে ঘোষণা করে গেছেন | পবিত্র হাদিস শরীফে এসেছে ,
পবিত্র হাদিস শরীফে আরো এরশাদ হয়েছে
” ﻋَﻦْ ﺍِﺑْﻦِ
ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻬُﻤَﺎ ﺍَﻧَّﻪٗﻛَﺎﻥَ ﻳُﺤَﺪِّﺙُ ﺫَﺍﺕَ ﻳَﻮْﻡٍ ﻓِﻰْ ﺑَﻴْﺘِﻪٖ
ﻭَﻗَﺎﺋِﻊَﻭِﻻﺩَﺗٖﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻟِﻘَﻮْﻡٍ ، ﻓَﻴَﺴْﺘَﺒْﺸِﺮُﻭْﻥَ ﻭَﻳُﺤَﻤِّﺪُﻭْﻥَ
ﺍﻟﻠﻪَ ﻭَﻳُﺼَﻠُّﻮْﻥَﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓَﺎِﺫَﺍ ﺟَﺎﺀَﺍﻟﻨَّﺒِﻰُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ
ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ ﺣَﻠَّﺖْﻟَﻜُﻢْ ﺷَﻔَﺎﻋَﺘِﻰْ
অর্থাৎ হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ( রা ) নিজেই বর্ণনা করেন , একদা তিনি উনার
গৃহে সাহাবায়ে কেরামদের নিয়ে একত্রিত হয়ে হুজুর পুর নূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিলাদত শরীফ পাঠ করছিলেন |( এই দিনে হুজুর পৃথিবীতে আসছেন , স্বয়ং আল্লাহ উনার হাবিবের উপর দুরুদ সালাম দিয়েছেন )
শ্রবন্কারীরাও তা শুনে আনন্দ পাচ্ছিলেন | ঠিক ওই সময় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে উপস্থিত হয়ে বললেন , তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেছে “
Monday, 27 January 2020
হজ্জ ও উমরাহর হজ্জের নিয়ম
★হজ্জ ফরজ হওয়ার শর্ত:
পবিত্র হজ্জ ইসলামের মহান একটি রূকন বা স্তম্ভ। আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজীদে পরিস্কার ভাষায় সামর্থবান মুসলিম নর-নারীর উপরে জীবনে একবার এ মহান ইবাদতটি ফরয করে দিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন: “এবং সামর্থ্যবান মানুষের উপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ্জ করা ফরয। আর যে ব্যক্তি কুফরী করে, তবে আল্লাহ তো নিশ্চয় সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী।”
[সূরা আলে ইমরান-৯৭]
আর্থিক সামর্থ। অর্থাৎ পরিবার-পরিজন, চাকর-বাকরদের ভরণপোষণ নিশ্চিত করে কোন ব্যক্তির নিকট হজ্জে যাওয়া-আসা ও পাথেয় খরচ থাকলে তার উপর হজ্জ ফরয। বাসস্থান, প্রয়োজনীয় গৃহসামগ্রী, পোষাক-পরিচ্ছদ, ব্যবহৃত বাহন, পরিবার-পরিজন, চাকর-বাকরের যাবতীয় ব্যয় চালনার জন্য ন্যূনতম কৃষিজমি অথবা ন্যূনতম ব্যবসা অথবা চাকুরীর পর অতিরিক্ত যে স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি থাকে তা থেকে হজ্জের ব্যয় নির্বাহ সম্ভব হলেই হজ্জ ফরয হবে।
হজ্জের মাধ্যমে মু’মিনদের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সৌভাগ্যের দুয়ার খুলে যায়। ইহরাম গায়ে হাজীর লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক (আমি আপনার দরবারে হাজির হে আল্লাহ আমি হাজির) ধ্বনি মূলতঃ আল্লাহর নির্দেশিত ইবরাহীম (আঃ)-এর আহবানের সাড়া দিয়ে এগিয়ে যাওয়া।
আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেন- এবং (হে ইবরাহীম) মানুষের মধ্যে হজ্জের ঘোষণা দাও। তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সকল প্রকার কৃশকায় উটের পিঠে চড়ে দূর-দূরান্ত থেকে (সূরা হজ্জ, আয়াত-২৭)
এরপরই আল্লাহ ঘোষণা দেন – তাদের এ আগমন হবে যেন তারা তাদের কল্যাণের স্থানে পৌঁছে। (সুরা হজ্জ, আয়াত-২৮)
এ আয়াতে হজ্জের ব্যাপক উপকারিতার প্রতি ঈঙ্গিত করা হয়েছে।
বায়তুল্লাহ শরীফের হজ্জ আদায় করা ইসলামের অন্যতম একটি রুকন ও মূল ভিত্তি। দলীল হচ্ছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী:
“ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। এই সাক্ষ্য দেয়া যে, নেই কোন সত্য উপাস্য শুধু আল্লাহ ছাড়া এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল (বার্তাবাহক)। নামায কায়েম করা। যাকাত প্রদান করা। রমজান মাসে রোযা রাখা। বায়তুল্লাতে হজ্জ আদায় করা।”
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর হজ্জ ফরজ করেছেন। সুতরাং তোমরা হজ্জ আদায় করো।”
হজ্জ ফরজ হওয়ার শর্ত পাঁচটি:
এক: ইসলাম। ইসলামের বিপরীত হচ্ছে- কুফর। সুতরাং কাফেরের উপর হজ্জ ফরজ নয়। কাফের যদি হজ্জ আদায়ও করে তাহলে সে আমল কবুল হবে না।
দুই: সাবালগ হওয়া। সুতরাং যে সাবালগ হয়নি তার উপর হজ্জ ফরজ নয়। যদি নাবালগ কেউ হজ্জ আদায় করে তবে তা নফল হজ্জ হিসেবে আদায় হবে এবং সে এর সওয়াব পাবে। সে যখন সাবালগ হবে তখন ফরজ হজ্জ আদায় করতে হবে। কারণ সে সাবালগ হওয়ার আগে যে হজ্জ করেছে- এর দ্বারা ফরজ হজ্জ আদায় হবে না।
তিন: বিবেকবুদ্ধি। এর বিপরীত হচ্ছে- বিকারগ্রস্ততা। সুতরাং পাগলের উপর হজ্জ ফরজ নয় এবং পাগলকে হজ্জ আদায় করতে হবে না।
চার: স্বাধীন হওয়া। সুতরাং ক্রীতদাসের উপর হজ্জ ফরজ নয়। যদি সে হজ্জ আদায় করে তবে তার হজ্জ নফল হিসেবে আদায় হবে। যদি সে স্বাধীন হয়ে যায় তাহলে তাকে ফরজ হজ্জ আদায় করতে হবে। কারণ দাস থাকাকালীন সে যে হজ্জ আদায় করেছে সেটা দ্বারা ফরজ হজ্জ আদায় হবে না। তবে কিছু কিছু আলেম বলেছেন: যদি ক্রীতদাস তার মালিকের অনুমতি নিয়ে হজ্জ আদায় করে তাহলে সে হজ্জ দ্বারা তার ফরজ হজ্জ আদায় হয়ে যাবে। এটাই অগ্রগণ্য মত।
পাঁচ: শারীরিক ও আর্থিক সামর্থ্য থাকা। মহিলার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত একটি সামর্থ্য হলো- হজ্জের সঙ্গি হিসেবে কোন মোহরেম পাওয়া। যদি নারীর এমন কোন মোহরেম না থাকে তাহলে তার উপর হজ্জ ফরজ নয়।
★★হজ্জের ফরজ ৩টি★★
১। ইহরাম বাধা ২। উ’কুফে আ’রাফা (আরাফাতের ময়দানে অবস্থান) ৩। তাওয়াফুয্ যিয়ারাত
হজ্জের ওয়াজিব ৬টি
(১) ‘সাফা ও মারওয়া’ পাহাড় দ্বয়ের মাঝে ৭ বার সায়ী করা।
(২) অকুফে মুযদালিফায় (৯ই জিলহজ্জ) অর্থাৎ সুবহে সাদিক থেকে সুর্যদয় পর্যন্ত একমুহুর্তের জন্য
হলেও অবস্থান করা।
(৩) মিনায় তিন শয়তান (জামারাত) সমূহকে পাথর নিপে করা।
(৪) ‘হজ্জে তামাত্তু’ ও ‘কি্বরান’ কারীগণ ‘হজ্জ’ সমাপনের জন্য দমে শোকর করা।
(৫) এহরাম খোলার পূর্বে মাথার চুল মুন্ডানো।
(৬) মক্কা থেকে বিদায়কালীন তাওয়াফ করা।
এছাড়া আর যে সমস্ত আমল রয়েছে সব সুন্নাত অথবা মুস্তাহাব।
ওমরাহর ফরজ, ওয়াজিব
দুইটি ফরজ: (১) ইহরাম পরিধান করা (২) তাওয়াফ
দুইটি ওয়াজিব: (১) সাফা ও মারওয়া মধ্যবর্তী (সবুজ বাতি) স্থানে সাতবার সায়ী করা (২) মাথার চুল
মুন্ডানো বা ছাটা।
তালবিয়াঃহাদীসগ্রন্থে বর্ণীত তালবিয়ার শব্দগুলো নিম্নরূপঃ
لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لاَشَرِيْكَ لَكَ
”লাব্বাঈক আল্লাহুম্মা লাব্বাঈক, লাব্বাঈক, লা-শারীকা-লাকা লাব্বাঈক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্ নি’মাতা লাকা ওয়াল-মুল্ক, লা শারীকালাক।”
অর্থ: আমি হাজির হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত! আপনার ডাকে সাড়া দিতে আমি হাজির। আপনার কোন অংশীদার নেই। নিঃসন্দেহে সমস্ত প্রশংসা ও সম্পদরাজি আপনার এবং একচ্ছত্র আধিপত্য আপনার।
আপনার কোন অংশীদার নেই।
ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজঃ-
(১) সেলাইযুক্ত যে কোন কাপড় বা জুতা ব্যবহার, এক্ষেত্রে স্পঞ্জ সেন্ডেলের ব্যবহার করা।
(২) মস্তক ও মুখমন্ডল (ইহরামের কাপড়সহ যে কোন কাপড় দ্বারা) ঢাকা,
(৩) পায়ের পিঠ ঢেকে যায় এমন জুতা পরা।
(৪) চুলকাটা বা ছিড়ে ফেলা।
(৫) নখকাটা।
(৬) ঘ্রানযুক্ত তৈল বা আতর লাগানো।
(৭) স্ত্রীর সঙ্গে সংগম করা।
(৮) যৌন উত্তেজনামূলক কোন আচরণ বা কোন কথা বলা।
(৯) শিকার করা।
(১০) ঝগড়া বিবাদ বা যুদ্ধ করা।
(১১) চুল দাড়িতে চিরুনী বা আঙ্গুলী চালনা করা, যাতে ছিড়ার আশংকা থাকে।
(১২) শরীরে সাবান লাগানো।
(১৩) উকুন, ছারপোকা, মশা ও মাছিসহ কোন জীবজন্তু হত্যা করা বা মারা।
(১৪) কোন গুনাহের কাজ করা, ইত্যাদি।
হজ্জের প্রকার ও নিয়তসমূহঃ-
প্রথম প্রকার হজ্জে ইফরাদ
বর্ণনা: ওমরাহ্ ব্যতিত শুধু হজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধা এবং হজ্জের সাথে ওমরাহকে না মিলানো। (বদলী হজ্জের জন্যও এই হজ্জ)।
নিয়্যাত: আল্লাহুমা ইন্নী উরীদুল হাজ্জা ফায়াসছির হুলিওয়াতা কাব্বালহুমিনি্ন। (বাংলা নিয়ত- আল্লাহ আমি ইফরাদ হজ্জের উদ্দেশ্যে আপনার সন্তুষ্টির জন্য ইহরাম বাধলাম। তা সহজ করে দিন ও কবুল করে নিন)।
দ্বিতীয় প্রকার হজ্জে কি্বরান
বর্ণনা: একত্রে একই স্থান থেকে হজ্জ ও ওমরার নিয়্যাত করে হজ্জের সাথে ওমরাহকে মিলানো এবং একই ইহ্রামে উভয়টি আদায় করা।
নিয়্যাত: আল্লাহুমা ইন্নী উরীদুল উ’মরাতা ফায়াচ্ছির লী-ওয়াতাক্াব্বাল মিন্নী। বাংলা নিয়ত- হে আল্লাহ আমি আপনার উদ্দেশ্যে হজ্জে কি্বরানের জন্য ইহরাম বাধলাম তা সহজ করে দিন ও কবুল করে নিন।
★তৃতীয় প্রকার হজ্জে তামাত্তু
বর্ণনা: একই সফরে পৃথক পৃথক ভাবে ‘ইহরাম’ পরিধান করে ‘হজ্জ ও ওমরাহ’ আদায় করা। প্রথম ইহ্রামে ওমরাহর নিয়্যাত করে তা পালন শেষে চুল কেটে ‘ইহরাম’ খুলে হালাল হয়ে দ্বিতীয় বার নতুন করে হজ্জের নিয়্যাতে ৮ই জিলহজ্জ ‘মক্ক শরীফ’ থেকে হজ্জের জন্য ইহরাম বাধা। তামাত্তু করার ইচ্ছা থাকলে প্রথমে ওমরার নিয়্যাত করে এহরাম বাঁধুন।
শুধু ওমরাহর নিয়্যাত
আল্লাহুমা ইন্নী উরীদুল উম’রাতা ফায়াচ্ছির লী-ওয়াতাক্াব্বাল মিন্নী। বাংলা নিয়ত- হে আল্লাহ আমি ওমরাহ্ পালনের জন্য ইহরাম বাধলাম তা সহজ করে দিন এবং কবুল করে নিন।
শুধু হজ্জের নিয়্যাত
আল্লাহুম্মা ইন্নী উরীদুল হাজ্জা ফায়াচ্ছিরহু-লী অ-তাকাব্বালহু মিন্নী। বাংলা নিয়ত- হে আল্লাহ আমি পবিত্র হজ্জ পালনের জন্য ইহরাম বেধে নিয়ত করলাম তা সহজ করে দিন এবং কবুল করে নিন।১. আল্লাহর জন্য মুখলিস (একনিষ্ঠ) হওয়া। অর্থাৎ সে ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালকে উদ্দেশ্য করা; প্রদর্শনেচ্ছা বা প্রচারপ্রিয়তার উদ্দেশ্যেনা করা অথবা অন্য কোন দুনিয়াবী উদ্দেশ্যে না করা।
২. কথা ও কাজে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ বা আদর্শ জানা ছাড়া তাঁকে অনুসরণ করা সম্ভব নয়। সুতরাং যে ব্যক্তি উমরা, হজ্ব বা অন্যকোন ইবাদত পালনের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে চায় তার কর্তব্য হলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ শিখে নেয়া; যাতে তার আমল রাসূলের সুন্নাহ মোতাবেক হয়। নিম্নে আমরা সুন্নাহরআলোকেউমরা আদায়ের পদ্ধতি সংক্ষেপে তুলে ধরব।উমরার কাজ চারটি:
এক:ইহরাম
ইহরাম মানে হচ্ছে- নুসুকে তথা হজ্ব বা উমরাতে প্রবেশের নিয়ত।
কেউ যদি ইহরাম করতে চায় তখন সুন্নত হচ্ছে- সে ব্যক্তি কাপড়-চোপড় ছেড়ে ফরজ গোসলের মত গোসল করবে, মাথা বা দাঁড়িতে মিসক বা অন্য যে সুগন্ধি তার কাছে থাকে সেটা লাগাবে। সুগন্ধির আলামত যদি ইহরাম করার পরেও থেকে যায় তাতে কোন অসুবিধা নেই। যেহেতু সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ইহরাম করতে চাইতেন তখন নিজের কাছে সবচেয়ে ভাল যে সুগন্ধিটা আছে সেটা ব্যবহার করতেন। ইহরাম করার পরে আমি তাঁর মাথা ও দাঁড়িতে সে সুগন্ধির ঝিলিকদেখতে পেতাম।[সহিহ বুখারি (২৭১) ও সহিহ মুসলিম (১১৯০)] নর-নারী উভয়ের ক্ষেত্রে ইহরামের জন্য গোসল করা সুন্নত। এমনকি হায়েয ও নিফাসগ্রস্ত নারীদের ক্ষেত্রেও। কেননা আসমা বিনতে উমাইস (রাঃ) নিফাসগ্রস্ত ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে ইহরামের জন্য গোসল করার ও রক্ত প্রবাহের স্থান একটি কাপড় দিয়ে বেঁধে নিয়ে ইহরাম করার নির্দেশ দিয়েছেন।[সহিহ মুসলিম (১২০৯)]
গোসল ও সুগন্ধি ব্যবহারের পর ইহরামের কাপড় পরিধান করবে। এরপর ফরজ নামাযের ওয়াক্ত হলে ফরজ নামায আদায় করবে। ফরজ নামাযের ওয়াক্ত না হলে ওজুর সুন্নত হিসেবে দুই রাকাত নামায আদায় করবে। নামাযের পর কিবলামুখি হয়ে ইহরাম বাঁধবে। ইচ্ছা করলে বাহনে (গাড়ীতে) উঠে যাত্রার প্রাক্কালে ইহরাম করতে পারেন। তবে মীকাত থেকে মক্কার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার আগে ইহরাম করতে হবে। এরপর বলবেন:
لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ بِعُمْرَةٍ
লাব্বাইকাল্লাহুম্মা বি উমরাতিন (অর্থ- হে আল্লাহ! উমরাকারী হিসেবে আপনার দরবারে হাজির)। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে তালবিয়া পড়েছেন সেভাবে তালবিয়া পড়বে। সেই তালবিয়া হচ্ছে-
لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ ، لَبَّيْكَ لا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لا شَرِيكَ لَكَ
লাব্বাইকাল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইকালা শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক। লা শারিকা লাক।
(অর্থ- হে আল্লাহ! আমি আপনার দরবারে হাজির। আমি আপনার দরবারে হাজির। আমি আপনার দরবারে হাজির। আপনি নিরঙ্কুশ। আমি আপনার দরবারে হাজির। নিশ্চয় যাবতীয় প্রশংসা, যাবতীয় নেয়ামত আপনার-ই জন্য এবং রাজত্ব আপনার-ই জন্য। আপনি নিরঙ্কুশ।)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামআরও একটি তালবিয়া পড়তেন সেটা হচ্ছে-
لَبَّيْكَ إِلَهَ الْحَقِّ
লাব্বাইকা ইলাহাল হাক্ব (অর্থ- ওগো সত্য উপাস্য! আপনার দরবারে হাজির)।
ইবনে উমর (রাঃ) আরেকটু বাড়িয়ে বলতেন:
لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ بِيَدَيْكَ وَالرَّغْبَاءُ إِلَيْكَ وَالْعَمَلُ
লাব্বাইকা ওয়া সাদাইক। ওয়াল খাইরু বি ইয়াদাইক। ওয়ার রাগবাউ ইলাইকা ওয়াল আমাল। (অর্থ- আমি আপনার দরবারে হাজির, আমি আপনার সৌজন্যে উপস্থিত। কল্যাণ আপনার-ই হাতে। আকাঙ্ক্ষা ও আমল আপনার প্রতি নিবেদিত)। পুরুষেরা উচ্চস্বরে তালবিয়া পড়বে। দলিল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: জিব্রাইল (আঃ) এসে আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন আমি যেন আমাদের সাহাবীদেরকে ও আমার সঙ্গিদেরকে উচ্চস্বরে তালবিয়া পড়ার আদেশ দিই।[সহিহ আবু দাউদ গ্রন্থে (১৫৯৯) আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন] আরেকটি দলিল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “উত্তম হজ্ব হচ্ছে আল-আজ্জ ও আল-সাজ্জ।”[সহিহুল জামে গ্রন্থে (১১১২) আলবানী হাদিসটিকে হাসান বলেছেন] আল-আজ্জ (العَجّ) শব্দের অর্থ হচ্ছে- উচ্চস্বরে তালবিয়া পড়া। আর আল-সাজ্জ (الثَجّ) শব্দের অর্থ হচ্ছে- হাদির রক্ত প্রবাহিত করা।
আর নারী এতটুকু জোরে তালবিয়াপড়বে যাতে পাশের লোক শুনতে পায়। তবে পাশে যদি কোন বেগানা পুরুষ থাকে তাহলে মনে মনে তালবিয়াপড়বে।
যে ব্যক্তি ইহরাম করতে যাচ্ছেন তিনি যদি কোন প্রতিবন্ধকতাযেমন রোগ, শত্রু বা গ্রেফতার ইত্যাদি কারণে নুসুকতথা হজ্ব বা উমরা শেষ করতে না পারার আশংকা করেন তাহলে ইহরাম বাঁধার সময় শর্ত করে নেয়া বাঞ্ছনীয়। ইহরামকালে তিনি বলবেন:
إِنْ حَبَسَنِيْ حَابِسٌ فَمَحِلِّيْ حَيْثইন হাবাসানি হাবেস ফা মাহিল্লি হাইসু হাবাসতানি (অর্থ- যদি কোন প্রতিবন্ধকতা- যেমন রোগ, বিলম্ব ইত্যাদি আমার হজ্ব পালনে- বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাহলে আমি যেখানেপ্রতিবন্ধকতার শিকার হই সেখানে ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যাব)। কেননা দুবাআ বিনতে যুবাইর (রাঃ) অসুস্থ থাকায় ইহরাম বাঁধাকালে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে শর্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন: “তুমি যে শর্ত করেছ সেটা তোমার রবের নিকটগ্রহণযোগ্য।”[সহিহ বুখারি (৫০৮৯) ও সহিহ মুসলিম (১২০৭)] যদি ইহরামকারী শর্ত করে থাকে এবং নুসুক সম্পন্ন করণে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয় তাহলে সে ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যাবে। এতে করে তার উপর অন্য কোন দায়িত্ব আসবে না। আর যদি নুসুক সম্পন্ন করণে কোন প্রতিবন্ধকতার আশংকা না থাকে তাহলে শর্ত না করাই বাঞ্ছনীয়। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শর্ত করেননি এবং সাধারণভাবে সবাইকে শর্ত করার নির্দেশ দেননি।দুবাআ বিনতে যুবাইর (রাঃ) অসুস্থ হওয়ার কারণে শুধু তাকে শর্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। ইহরামকারীর উচিত অধিক তালবিয়া পাঠ করা। বিশেষতঃ সময় ও অবস্থার পরিবর্তনগুলোতে। যেমন উঁচুতে উঠার সময়। নীচুতে নামার সময়। রাত বা দিনের আগমনকালে। তালবিয়া পাঠের পর আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত প্রার্থনা করা এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা।
উমরার ক্ষেত্রে ইহরামের শুরু থেকে তওয়াফ শুরু করার আগ পর্যন্ত তালবিয়া পড়া বিধান রয়েছে।তওয়াফ শুরু করলে তালবিয়া পড়া ছেড়ে দিবে।
মক্কায় প্রবেশের জন্য গোসল: মক্কার কাছাকাছি পৌঁছলে সম্ভব হলে মক্কায় প্রবেশের জন্য গোসল করে নিবে। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা প্রবেশের সময় গোসল করেছিলেন।[সহিহ মুসলিম (১২৫৯)]
দুই: তওয়াফ
মসজিদে হারামে প্রবেশের সময় ডান পা আগে দিবে এবং বলবে:
بِسْمِ اللهِ والصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ الَّلهُمَّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوْبِيْ وافْتَحْ لِى أَبْوَابَ رَحْمَتِكَأَعُوذُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ
(অর্থ- আল্লাহর নামে শুরু করছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক। হে আল্লাহ! আমার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিন। আমার জন্য আপনার রহমতের দুয়ারগুলো খুলে দিন। আমি বিতাড়িত শয়তান হতে মহান আল্লাহর কাছে তাঁর মহান চেহারারমাধ্যমে, তাঁর অনাদি রাজত্বেরমাধ্যমে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।)
এরপর তওয়াফ শুরু করার জন্য হাজারে আসওয়াদের দিকে এগিয়ে যাবে। ডান হাত দিয়ে হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করবে ও চুমু খাবে। যদি হাজারে আসওয়াদে চুমু খেতে না পারে হাত দিয়ে স্পর্শ করবে ও হাতে চুমু খাবে (স্পর্শ করার মানে হচ্ছে- হাত দিয়ে ছোঁয়া)। যদি হাত দিয়ে স্পর্শ করতে না পারে তাহলে হাজারে আসওয়াদের দিকে মুখ করে হাত দিয়ে ইশারা করবে এবং তাকবির বলবে; কিন্তু হাতে চুমু খাবে না। হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করার ফজিলত অনেক। দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “আল্লাহ তাআলা হাজার আসওয়াদকে পুনরুত্থিত করবেন। তার দুইটি চোখ থাকবে যে চোখ দিয়ে পাথরটি দেখতে পাবে।তার একটি জিহ্বা থাকবে যে জিহ্বা দিয়ে পাথরটি কথা বলতে পারবে। যে ব্যক্তি সঠিকভাবে পাথরটিকে স্পর্শ করেছে পাথরটি তার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে।[আলবানী আল-তারগীব ও আল-তারহীব (১১৪৪) গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
তবে উত্তম হচ্ছে- ভিড়না করা। মানুষকে কষ্ট না দেয়া এবং নিজেও কষ্ট না পাওয়া। যেহেতু হাদিসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে তিনি উমরকে লক্ষ্য করে বলেছেন- “হে উমর! তুমি শক্তিশালী মানুষ। হাজারে আসওয়াদের নিকট ভিড় করে দুর্বল মানুষকে কষ্ট দিও না। যদি ফাঁকা পাও তবে স্পর্শ করবে; নচেৎ হাজারে আসওয়াদমুখি হয়ে তাকবীর বলবে।[মুসনাদে আহমাদ (১৯১), আলবানী তাঁর ‘মানাসিকুল হাজ্জ ও উমরা’ গ্রন্থে হাদিসটিকে ‘কাওয়ি’ (শক্তিশালী) মন্তব্য করেছেন] এরপর ডানদিক ধরে চলতে থাকবে। বায়তুল্লাহকে বামদিকে রাখবে। যখন রুকনে ইয়ামেনীতে (হাজারে আসওয়াদের পর তৃতীয় কর্নার) পৌঁছবে তখন সে কর্নারটি চুমু ও তাকবীর ছাড়া শুধু স্পর্শ করবে। যদি স্পর্শ করা সম্ভব না হয় তাহলে তওয়াফ চালিয়ে যাবে; ভিড় করবে না। রুকনে ইয়ামেনী ও হাজারে আসওয়াদের মাঝখানে এলেবলবেন:
(رَبَّنَا آَتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآَخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ)
(অর্থ- হে আমাদের রব! আমাদিগকে দুনিয়াতেও কল্যাণ দান করুন এবং আখেরাতেও কল্যাণ দান করুন এবং আমাদিগকে দোযখের আযাব থেকে রক্ষা করুন।)[সুনানে আবু দাউদ, আলবানী ‘সহিহ আবু দাউদ’ গ্রন্থে হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন]
যখনই হাজারে আসওয়াদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করবে তখনই হাজারে আসওয়াদ অভিমুখী হয়ে তাকবীর বলবে। তওয়াফের অন্য অংশে যা কিছু খুশি যিকির, দুআ ও কুরআন তেলাওয়াত করবে।তওয়াফের মধ্যে পুরুষকে দুইটি জিনিশ করতে হয়।তাওয়াফের ওয়াজিব সমূহ
(১) শরীর পাক-সাফ রাখা, ওজু করা। মহিলাদের হায়েজ নেফাছ অবস্থায় তাওয়াফ করা জায়েজ নাই।
(২) ছতর ঢাকা। অর্থাৎ যেটুকু ঢাকা প্রত্যেক পুরুষ-নারীর জন্য ফরজ।
(৩) ‘হাতীমে কা’বার’ বাইরে থেকে ‘তাওয়াফ’ করা।
(৪) পায়ে হেঁটে ‘তাওয়াফ’ করা। অম ব্যক্তি খাটিয়ার মাধ্যমে ‘তাওয়াফ’ করতে পারেন।
(৫) ‘হাজ্রে আস্ওয়াদ’ থেকে শুরু করে ডানদিক দিয়ে ‘তাওয়াফ’ শুরু করা।
(৬) এক নাগাড়ে বিরতিহীন ভাবে ‘সাতবার চক্কর’ দিয়ে ‘তাওয়াফ’ পূর্ণ করা।
(৭) ‘সাত চক্করে’ এক ‘তাওয়াফ’, এটা পূর্ণ হলেই ‘তাওয়াফের’ নামাজ পড়া।
তাওয়াফের সুন্নত কার্যাবলী
(১) ‘তাওয়াফে’র শুরুতে ‘হাজারে আসওয়াদ’ এর দিকে মুখ করা।
(২) সম্ভব হলে ‘হাজ্রে আস্ওয়াদ’ চুম্বন করা। নতুবা হাত দ্বারা দূর থেকে ইশারা করা, এবং মুখে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আক্বার ওয়ালিল্লাহিল হ্ামদ’ বলা।
(৩) ‘হা্জ্রে অস্ওয়াদ’ বরাবর দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহরিমা’র ন্যায় উভয় হাত সিনা পর্যন্ত উঠান।
(৪) যে ‘তাওয়াফে’র পরে ‘সাঈ’ আছে তাতে ‘এযতেবা’ করা। অর্থাৎ ইহরামের চাদরের (উপরের অংশের) দুই মাথা ডান বগলের নিচ দিয়ে বাম কাঁধের উপর ফেলে দেওয়া।
(৫) ‘সাঈ’ যুক্ত ‘তাওয়াফে’র প্রথম তিন চক্করে ‘রমল’ করা। অথর্াৎ বীরের মত হেলে দুলে জোর ক্বদমে (একের পর এক পা ফেলে) চলা।
(৬) বাকী চার চক্কর সাধারণ গতিতে (ধীরে ধীরে) সম্পন্ন করা।
(৭) প্রত্যেক চক্কর তাওয়াফ শেষ করে এবং শেষ চক্করেরও পরে ‘হাজ্রে অস্ওয়াদ’কে চুম্বন করা।দোয়া সমুহ উচ্চস্বরে পড়া উচিত নয়। বরং এমন আওয়াজে পড়েন যাতে আপনার নিজ কানে শুনা যায়।
★১ম চক্কর তাওয়াফের দোয়াঃ-
তাওয়াফের সময় ১ম চক্করের দোয়ার মানে হল- আল্লাহ তায়ালা পাক পবিত্র, সকল প্রসংশা তার জন্য, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই, আল্লাহ মহান, গুনাহ থেকে বাঁচা ও নেকী করার তৌফিক আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়।যিনি মহান সম্মানিত, রহমত নাযিল হউক রাসুলুল্লাহর উপর, হে আল্লাহ তোমার প্রতি ঈমান এনে তোমার কিতাবের সত্যতা স্বীকার করে, তোমার সাথে কৃত ওয়াদা পুরন করতে, তোমার নবীর সুন্নতের অনুসরনে তাওয়াফ আরম্ভ করেছি। হে আল্লাহ আমি তোমার নিকট গুনাহ সমুহ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। বিপদ-আপদ থেকে সদা হেফাজতের, দ্বীন ও দুনিয়া এবং আখিরাতে এবং জান্নাত হাছিলে সফলতার এবং জাহান্নামের থেকে মুক্তির দরখাস্ত করছি।
এ তাওয়াফের দোয়া আপনি রোকনে এয়ামনিীতে পৌছার আগে আগে শেষ করে নিবেন, এখন আপনি রোকনে এয়ামানি থেকে রুকনে আসওয়াদ এর দিকে যাবেন। আর রোকনে এয়ামানী থেকে রুকনে আসওয়াদ পর্যন্ত এ জায়গাটা দোয়া কবুল হওয়ার জায়গা সুতরাং এ জায়গাটুকুতে আপনি চলতে চলতে দোয়া নিজের জন্য ও তামাম মুসলমানের জন্য দোয়া করবেন এবং দরুদ শরীফ পাঠ করে কুরআনের এ আয়াত পাঠ করবেন (রাব্বানা আতেনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতে হাসানাতাও ওয়াকেনা আজাবান নার)
মনে রাখবেন তাওয়াফ কালীন আপনি কাবাতুল্লাহর দিকে ফিরবেন না, আপনার সিনা যেন কাবার দিকে না হয়। তবে যদি কাবা ঘরের খুব কাছ দিয়ে তাওয়াফ করেন তখন হাত বাড়িয়ে রুকনে এয়ামানিকে ছুয়ে দিতে পারেন বরকতের জন্য। কিন্তু আপনি যদি দুরে থাকেন তখন সে দিকে ফিরে ইশারা করার প্রয়োজন নাই।
যখন আপনি রুকনে আসওয়াদ এর দিকে অগ্রসর হবেন দেখবেন দেওয়ালে সবুজ রং এর টিউব লাইট আছে। সেখানের বরাবর ফ্লোরে যে পাট্টি আছে তাতে এসে হাজরে আসওয়াদ এর দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে যাবেন, নামাজের তাকবিরের সময় যেভাবে হাত উঠাতে হয় সেভাবে হাত উঠায়ে পড়বেন “বিসমিল্লাহি ওয়ালহামদুলিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার ওয়াস্সালাতু ওয়াস্সলামু আলা রাসূলিল্লাহ” এটা পড়ার পর হাত নিচে করে নিবেন। এবং সম্ভব হলে হাজরে আসওয়াদকে চুমু দিবেন অথবা হাতে ইশারা করে হাতে চুমু খাবেন এটাকে এস্তেলাম বলে। এবং হাজরে আসওয়াদ থেকে সামান্য ডান দিকে সরে গিয়ে যখন দেখবেন হাজরে আসওয়াদ আর আপনার সোজসোজি রইল না তখন সাথে সাথে আপনার দিক পরিবর্তন করে নিবেন ফলে কাবাতুল্লাহ আপনার বাম দিকে হয়ে যাবে। এখন আবার রমল করতে করতে ২য় চক্কর শুরু করবেন।
★২য় চক্কর তাওয়াফের দোয়া-
তাওয়াফের ২য় চক্করের দোয়ার বাংলা অনুবাদ- হে আল্লাহ এ ঘর তোমার ঘর, এ হারাম তোমার হারাম, এখানের নিরাপত্তা তোমার নিরাপত্তা, সকল বান্দা তোমারই বান্দা, আমিও তোমারই বান্দা, তোমারই এক বান্দার সন্তান, এ স্থানটা জাহান্নাম থেকে পানাহ চাওয়ার জায়গা, তুমি আমার শরীর ও শরীরের গোস্তকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দাও, হে আল্লাহ আমার জন্য ঈমানকে প্রিয় করে দাও, আমার অন্তরে তার আগ্রহ সৃষ্টি করে দাও, আমার অন্তরে কুফুরী বদকারী ও নাফরমানিকে অপছন্দনীয় করে দাও, আমাকে হেদায়েতপ্রাপ্তদের মধ্যে গন্য করে নাও। হে আল্লাহ যেদিন তুমি তোমার বান্দাগনকে পুনরুজ্জিবীত করবে সেদিন আমাকে আযাব থেকে রক্ষা করিও, হে আল্লাহ তুমি আমাকে বিনা হিসাবে জান্নাত দান কর।
২য় চক্করের দোয়া রোকনে এয়ামনী পৌছাঁর আগে আগে শেষ করে নিবেন। রোকনে এয়ামানি থেকে রুকনে আসওয়াদ পর্যন্ত আপনার নিজের জন্য সহ সকল মুসলমানের জন্য দোয়া করবেন, এবং দরুদ শরীফ পাঠ করে কুরআনের এ আয়াত পাঠ করবেন (রাব্বানা আতেনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতে হাসানাতাও ওয়াকেনা আজাবান নার)
এরপর হাজরে আসওয়াদের দিকে ফিরে পাট্টির উপর দাঁড়াবেন দু হাত কান পর্যন্ত উঠায়ে (“বিসমিল্লাহি ওয়ালহামদুলিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার ওয়াস্সালাতু ওয়াস্সলামু আলা রাসূলিল্লাহ”) পড়ে হাত নামিয়ে ফেলবেন এরপর হাজরে আসওয়াদকে চুমু বা এস্তেলাম করবেন। এবার পুনরায় ৩য় চক্কর শুরু করবেন রমল সহকারে।
★৩য় চক্কর তাওয়াফের দোয়া- বাকী আমল আগের মত ...
তাওয়াফের ৩য় চক্করের দোয়ার বাংলা অনুবাদ- হে আল্লাহ আমি সন্দেহ, শিরিক, নেফাক, সত্যের বিরোধীতা, খারাপ চরিত্র, খারাপ দৃশ্য, পরিবার, মাল ও সন্তানদের উপর কু প্রভাব থেকে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে প্রভু আমি তোমার সন্তুষ্টি এবং জান্নাত প্রার্থনা করছি। তোমার গজব এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় পার্থনা করছি। হে প্রভু আমি কবরের দুঃখ এবং জীবনে এবং মৃত্যুর সময়কালীন ফিতনা থেকে তোমার আশ্রয় প্রাথনা করছি।
এবার পুনরায় ৪র্থ চক্কর শুরু করবেন তবে এখন থেকে পরবর্তী চক্করসমুহে আর রমল বা জোড়ে হেলেদুলে চলা লাগবে না। স্বাভাবিক ভাবে চলে দোয়া পড়তে পড়তে চলবেন।
★৪থ চক্কর তাওয়াফের দোয়া-
তাওয়াফের সময় ৪ নং চক্করের দোয়ার বাংলা অনুবাদ- হে আল্লাহ আমার হায়াত কে বরকতময় এবং আমার চেষ্টাসমুহকে সফলতা দান কর। গুনাহসমুহের ক্ষমার মাধ্যম এবং কবুলযোগ্য নেক আমল এবং ক্ষতিছাড়া তেজারত করে দাও। হে অন্তরযামী, আমাকে গুনাহের অন্ধকার থেকে ছাওয়াবের আলোর দিকে বের করে নাও। হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে তোমার রহমত হাছিলের বিষয়বস্তু এবং তোমার ক্ষমার বিষয়বস্তুসমুহ এবং সমস্ত গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে এবং সকল নেক আমলের তওফিক এবং জান্নাতে যাওয়া এবং জাহান্নামের থেকে মুক্তির দরখাস্ত করছি। হে আল্লাহ আমাকে দেওয়া রিযিকসমুহে বরকত দান কর। সকল ক্ষতিসমুহে তোমার দয়ায় আমার জন্য নেয়ামতে পরিবর্তন করে দাও
★৫ম চক্কর এর দোয়া-
তাওয়াফে ৫ম চক্করের দোয়ার বাংলা অনুবাদ- হে আল্লাহ আমাকে সে দিন আরশের ছায়ায় জায়গা দিও, যেদিন তোমার আরশের ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবেনা এবং তুমি ছাড়া কেহ বাকী থাকবেনা। নবী করিম (দঃ) এর হাউজে কাউছার থেকে এমন তৃপ্তির সাথে পান করাইও যাতে কখনো আমার পিপাসা না লাগে। হে আল্লাহ আমি তোমার নিকট সে সকল বিষয়ের ব্যাপারে মঙ্গল কামনা করছি যা তোমার নবী মুহাম্মদ (দঃ) তোমার নিকট চেয়েছেন। েএবং ঐ সমস্ত বিষয়গুলোর খারাপ পরিনতি থেকে পানাহ চাচ্ছি যা থেকে তোমার নবী পানাহ চেয়েছেন। হে আল্লাহ আমি তোমার নিকট জান্নাত এবং তার নেয়ামতসমুহের এবং সে সকল কথা কাজ এবং আমলের তৌফিক এর প্রার্থনা করছি যা আমাকে জান্নাতের নিকটবর্তী করে দিবে। এবং সে সমস্ত কথা কাজ ও আমল থেকে পানাহ চাচ্ছি যা আমাকে দোযখের নিকট করে দিবে।
★৬ষ্ঠ চক্করের দোয়া
তাওয়াফের ৬ষ্ঠ চক্করের দোয়ার অনুবাদ- হে আল্লাহ আমার উপর তোমার অনেক হক রয়েছে যা তোমার ও আমার মাঝে রয়েছে যা তোমার ও তোমার সৃষ্টি সমুহের মাঝে রয়েছে এসব হকের মাঝে যা তোমার সাথে রয়েছে তার ভ্রান্তিসমুহ ক্ষমা কর। আর যে সমস্ত হক তোমার সৃষ্টির সাথে তার ক্ষমার ব্যাপারে তুমি জিম্মাদারী নাও। হে আল্লাহ আমাকে হালাল রিযিক দান কর, হারাম থেকে বাঁচিয়ে রাখ, তোমার অনুসরনের তৌফিক দান কর। দয়া করে পরমুখাপেক্ষী হতে বাঁচাও। হে আল্লাহ নিশ্চয়ই তোমার এ ঘর সম্মানিত ঘর। তুমি করিম তুমি হালিম তুমি আজিম। তুমি ক্ষমা করা পছন্দ কর হে প্রভু আমার ভ্রান্তিসমুহ ক্ষমা করে দাও।
★৭ম চক্করের দোয়া
তাওয়াফের সপ্তম চক্করের দোয়ার অনুবাদ- হে আল্লাহ আমি তোমার নিকট তোমার রহমতের উছিলায় পরিপূর্ণ ঈমান এবং সরল বিশ্বাস, প্রশস্থ রিযিক, বিনয়ী অন্তর, জিকিরকারী জবান, হালাল ও পাক পবিত্র রুজি, সরল তৌবা এবং মৃত্যু পূর্বে তাওবা এবং শান্তিময় মৃত্যু এবং মৃত্যুর পর ক্ষমা ও দয়া এবং হিসাবের সময় ক্ষমা এবং জান্নাত অর্জন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি কামনা করছি। হে সম্মানিত ক্ষমাদানকারী আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দাও এবং আমাকে নেককারদের অন্তভূক্ত করে নাও।
৭ম চক্কর পুরা হওয়ার পর হাজরে আসওয়াদের দিকে ফিরে পাট্টির উপর দাঁড়াবেন দু হাত কান পর্যন্ত উঠায়ে (“বিসমিল্লাহি ওয়ালহামদুলিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার ওয়াস্সালাতু ওয়াস্সলামু আলা রাসূলিল্লাহ”) পড়ে হাত নামিয়ে ফেলবেন এরপর হাজরে আসওয়াদকে চুমু বা এস্তেলাম করবেন। সুতরাং আপনার তাওয়াফ হল ৭টা আর এস্তেলাম হল ৮বার।
এখন আপনার তাওয়াফ সম্পূর্ণ হল এবার আপনি আপনার চাদর দ্বারা ডান কাঁধ ঢেকে নিন এবং মকামে ইবরাহিম এর কাছে এসে পাঠ করুন সুরা বাকারার এ আয়াত-(ওয়াত্তাহিজু মিম মাকামে ইবরাহিমা মুছাল্লা) যার অর্থ- তোমরা ইবরাহিম এর দাঁড়ানোর জায়গাকে নামাজের জায়গা বানাও।
এখন আপনি যদি মকামে ইবরাহিম এর নিকট জায়গা পান তাহলে সেখানে দাঁড়িয়ে ২ রাকাত তাওয়াফের নামাজ আদায় করবেন। তবে যদি নিকটে জায়গা না পান তাহলে মসজিদে হারামের যেখানে জায়গা মিলে সেখানে দাঁড়িয়ে ২ রাকাত নামাজ আদায় করবেন তবে যেন মকরুহ ওয়াক্ত না হয়। প্রথম রাকাত সুরা ফাতেহার সাথে সুরা কাফেরুন এবং ২য় রাকাতে সুরা ফাতেহার সাথে সুরা এখলাছ পড়বেন। এ নামাজ ওয়াজিব যদি কোন সমস্যা না থাকে কিংবা মকরুহ ওয়াক্ত না হয় তাহলে তাওয়াফের পর পরই এ নামাজ আদায় করে নেয়া উত্তম। নতুবা পরে আদায় করে নিবেন। অনেক লোক দেখবেন কাঁদ খোলা রেখেই নামাজ পড়ে এটা মকরুহ। কাঁধ খোলা সে সকল তাওয়াফের সময় রাখতে হয় যে তাওয়াফের পর সায়ী করতে হয়।
মকামে ইবরাহীমে ২ রাকাত নামাজ আদায় করে এ দোয়া পাঠ করবেন, হাদীস শরীফে আছে (আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন- যে এ দোয়া করবেন আমি তার গুনাহ মাফ করে দিব, অভাব দুর করে দিব। দোয়া হল-
দোয়া করার পর এবার হজরে আসওয়াদ ও কাবার দরজার মধ্যবর্তী স্থানে এসে লেপ্টে যান এ স্থানটাকে মুলতাজিম বলে, সেখানে আপনি যথাসম্ভব আপনার সিনা, পিট, চেহেরা, হাত লাগান কান্না করেন চোখের পানি ছেড়ে দেন আর নিজের জন্য আর তামাম মুসলমানের জন্য নিজ ভাষায় দোয়া করুন। এটা দোয়া কবুল হওয়ার স্থান।
মুলতাজিমে দোয়া শেষে এবার চলে যাবেন জমজম এর পানি পান করার জন্য। কেবলামুখি হয়ে দাঁড়িয়ে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পাঠ কর।
সম্ভব না হলে দূর থেকে ইশারা করে বিসমিল্লাহে আল্লাহ আকবর ওয়ালিল্লাহিল হামদ্”দোয়াটি পাঠ করা এবং ৩ নং নিয়মের ন্যায় দাড়িয়ে ইশারা করে ‘তাওয়াফ’ শেষ করা।
তাওয়াফের নিয়্যাত
আল্লাহুম্মা ইন্নী উরীদু তাওয়াফা বাইতিকাল হারাম ফায়াচ্ছিরহু-লী, ওয়া তাক্বাব্বাল-হু-মিন্নী, সাবাআ’তা আশ্ওয়াতি্বন লিল্লাহি তায়া’লা। বাংলায় নিয়ত- হে আল্লাহ আমি তাওয়াফ পালনের জন্য নিয়ত করলাম।
সায়ীর নিয়ম
‘হজ্জ ও ওমরাহ’ ছাড়া নফল ‘তাওয়াফে’র কোন সায়ী নাই। কারো নামে ওমরাহ করতে হলেও সায়ী করতে হবে। সায়ী অর্থ দৌড়ানো। এটা ‘ছাফা’ পাহাড় থেকে প্রথমে শুরু করতে হবে। ছাফা থেকে মারওয়া।মারওয়া থেকে ছাফায়। এভাবে সাতবার সায়ীর সময় প্রথম তিন চক্কর সবুজ বাতির মাঝের অংশটুকু দৌড়ে দৌড়ে হেলে দুলে যাওয়া সুন্নাত (পুরুষদের জন্য)। পরের চার চক্কর সাধারণ গতিতে সম্পন্ন করতে হবে।
সায়ীর সহজ দোয়া
সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার ওয়া লা-হাওলা, ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহিল আ’লিয়্যিল আ’যীম, রাবি্বগফির ওয়ারহাম ওয়াআনতাল আ-আজ্জুল আকরাম।
সায়ীর কুরআনী দোয়া
‘ইন্নাছ্ ছাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন্ শাআ’ইরিল্লাহ্ ফামান হাজ্জাল বাইতা আও-ই’ তামারা ফালা জুনাহা আ’লাইহি আইয়াত্ত্বাওয়াফা বিহিমা ওমান তাত্বাওয়াআ খাইরান ফা-ইন্নাল্লাহা শাকিরুণ আ’লীম।” উপরোক্ত দুই দোয়া সাতবার চক্করের সময় হাটতে চলতে পড়তে হবে। পরেরটি না পারলে উপরেরটিই যথেষ্ট হবে।
হজ্জ ও ওমরাহর করনীয়
একনজরে তিন প্রকার হজ্জের জরুরী কাজ, হুকুম ও তারিখ সমূহ।
১ম প্রকার হজ্জে ইফরাদের ১১টি জরুরী কাজ
২য় প্রকার হজ্জে কেরানের জরুরী কাজ
৩য় প্রকার হজ্জে তামাত্তুর ১৫টি জরুরী কাজফরজ
৩টি ফরজ(১) ইহরাম (শুধু হজ্জের জন্য)।
(২) ৯ই জিলহজ্জ উ’কুফে আ’রাফা (সূর্য হেলার পর থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত)।
(৩) ১০ থেকে ১২ই জিলহজ্জ তাওয়াফে যিয়ারাত তবে ১০ই জি্বলহজ্ব তারিখই উত্তম।
(৪) অকুফে মুযদালেফায় ১০ই জিলহজ্জ সুবহে সাদেক সূর্য উদয় পর্যন্ত।
(৫) ১০ই জিলহজ্জ বড় শয়তানকে (জামারাতে আক্কাবায়) ৭টি কঙ্কর মারা। সুর্য হেলার পূর্বে দুপুর ১২টার আগে সুন্নত।
(৬) মাথা মুন্ডানো তবে দম দিতে হবে।
(৭) সায়ী ৯ তারিখের পূর্বে বা পরে) করে দিবেন।
(৮) ১১ তারিখে তিন শয়তানকে (প্রথম ছোট/মেঝ ও পড়ে বড়) ৭ক্ম৩=২১টি পাথর মারা।
(৯) ১২ তারিখে অনুরূপ তিন শয়তানকে ৭ক্ম৩= ২১টি পাথর মারা। সর্বমোট তিন দিনে ৭+২১+২১=৪৯টি কঙ্কর মারা।
(১০) ‘বিদায়ী তাওয়াফে’ (মক্কার বাইরের লোকদের জন্য) বিদায়ের পূর্বে। এটি ওয়াজিব।
(১১) তাওয়াফে কুদুম করা। (মক্কায় গিয়ে সর্বপ্রথম) ৩টি ফরজ
(১) ইহরাম (হজ্জ ও ওমরাহর জন্য)
(২) আরাফাতে অবস্থান।
(৩) তাওয়াফুয যিয়ারাত।১০টি ওয়াজিব
(৪) ওমরাহর তাওয়াফ
(৫) ওমরাহর সায়ী
(৬) হজ্জের সায়ী
(৭) অকুফে মুযদালিফায়
(৮) ১০ই জিলহজ্ব তারিখে বড় শয়তানকে ৭টি পাথর মারা (দুপুর ১২টার পূর্বে) সুন্নত।
(৯) দম দিতে হবে।
(১০) মাথা মুন্ডানো।
(১১) ১১ই জিলহজ্ব তারিখে তিন শয়তানকে পাথর মারা
(১২) ১২ তারিখে তিন শয়তানকে পূর্বের ছকের নিয়মে পৃথক পৃথক ভাবে সূর্য হেলার পরে নিয়ম অনুযায়ী পাথর মারা।
(১৩) বিদায়ী তাওয়াফ। ৪টি ফরজ
(১) ওমরাহর ইহরাম (বাংলাদেশ)।
(২) হজ্জের ইহরাম (৮ তারিখ মক্কায়)
(৩) উ,কুফে আরাফা (৯ই জিলহজ্জ সূর্য হেলার পর থেকে সুর্যস্তের পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত)।
(৪) তাওয়াফে জিয়ারত (১০ তারিখ অথবা ১১, ১২ তারিখ)১১টি ওয়াজিব
(৫) তাওয়াফে ওমরাহ (মক্কায় গিয়েই)
(৬) ওমরাহর সায়ী (ওমরাহ তাওয়াফের পরই)
(৭) মাথা মুন্ডানো (ওমরাহর পর)।
(৮) হজ্জের সায়ী
(৯) বড় শয়তানকে ৭টি পাথর মারা ( ১০ই জিলহজ্ব তারিখ সুর্য হেলার বা ১২টা পূর্বে) সুন্নত।
(১০) কুরবানী করা (পাথর মেরে ১০ তারিখ)।
(১১) মাথা মুন্ডানো দম দিতে হবে।
(১২) ১১ তারিখ তিন শয়তানকে ৭+৭+৭=২১টি পাথর মারা।
(১৩) ১২ তারিখে তিন শয়তানকে ৭+৭+৭=২১টি পাথর মারা (সর্বমোট তিন দিনে ৭+২১+২১=৪৯টি পাথর মারতে হবে)।
(১৪) বিদায়ী তাওয়াফ।
১ম দিন ৮ই জিলহজ্জ
ইহরাম অবস্থায় (ফরয) মক্কা থেকে হজ্জের নিয়্যাতে মিনায় রওয়ানা হোন।
এ দিনের কাজ দু’টি
(১) ইহরাম (ফরজ) (২) ৫ ওয়াক্ত নামাজ মিনায় আদায় করা (সুন্নাত)।
যোহর, আছর, মাগরিব, এশা ও ৯ তারিখ ফজর সর্বমোট ৫ ওয়াক্ত
২য় দিন ৯ই জিলহজ্জ
১। আরাফাতে অবস্থান (ফরজ)। ২। অকুফে মুযদালিফায় (ওয়াজিব)
আরাফাতে অবস্থান
– ফজরের নামাজ মিনায় পড়ে আরাফাতের ময়দানের দিকে রওয়ানা হোন।
– আরাফাতে সূর্য হেলার পর অর্থাৎ ১২টার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করা হজ্জের গুরুত্বপূর্ণ ফরজ।
– ওয়াক্ত মত তাবুতে (মসজিদে নামেরায় না গেলে) বা আরাফার ময়দানে যে কোন স্থানে জোহরের সময় জোহর নামাজ আদায় করুন।
– আসরের নামাজ আসরের সময় আদায় করুন, নির্দিষ্ট সময় বা আগে পরে, পৃথক পৃথক ভাবে।
– উল্লেখ্য: ‘মসজিদে নামেরায়’ জোহর ও আসরের জামাত এক আযান দুই ইকামাতে একত্রে আদায় করলে একত্রে দুই ওয়াক্ত আদায় করতে হয়, ওটার নাম ‘জমে তাক্বদীম’। কিন্তু তাবুতে বা অন্য কোন স্থানে একত্রে নয়। ভিন্ন সময় ভিন্ন ভাবে ওয়াক্ত মত আদায় করতে হবে।)
অকুফে মুযদালিফায় (ওয়াজিব)
– সূর্যাস্তের পর সাথে সাথে মাগরিব না পড়ে মুযদালিফায় রওয়ানা হোন।
– মুযদালিফায় মাগরিব ও এশার নামাজ এক আযান দুই এক্বামাতে একত্রে আদায় করুন। এটা ওয়াজিব এটার নাম ‘জামে তাখীর জামাতে পড়া উত্তম। মুযদালিফায় অবস্থান (ওয়াজিব) মুযদালিফায় থাকাকালীন পাহাড়ে অথবা তার পাদদেশে যে কোন ঘাস দুবলা থেকে খুঁজে খুঁজে পাথর মারার জন্য ৭২টি (চানাবুটের ন্যায় কঙ্কর) ছোট ছোট পাথর সংগ্রহ করে ইহরামের কাপড়ে বেঁধে নিন।
১০/১১/১২ তিন দিনে (৪৯টি পাথর) তিন শয়তানকে মারতে হবে।
– ১ম দিন ৭টি
– ২য় দিন ২১টি
– ৩য় দিন ২১টি
(সর্বমোট তিন দিনে ৭+২১+২১=৪৯টি )। তবে মিসিং হতে পারে বলে বেশী (৭২) নেওয়া সুন্নাত।
৩য় দিন ১০ই জিলহজ্জ
এ দিনের মোট কাজ ৪টি (১) বড় শয়তানকে পাথর মারা (২) কুরবানী (৩) মাথা মুন্ডানো (৪) তাওয়াফে যিয়ারাত করা
– মুযদালিফায় ফজরের নামাজ পড়ে সূর্য উদয়ের আগ পর্যন্ত অবস্থান করুন (ওয়াজিব)।
– মিনায় পৌছে বড় শয়তানকে ৭টি পাথর সূর্য হেলার আগে (১২টার পূর্বেই) মারুন। (সুন্নাত)।
– তারপর তামাত্তু ও কি্বরান হজ্জকারীগণ কুরবানী করুন (ওয়াজিব)।
– এরপর ইহরাম খুলে হালাল হয়ে স্বাভাবিক পোষাক পরিধান করুন। কিন্তু কোরবানী পূর্বে নয়। (তবে ইফরাদ হজ্জকারী কুরবানী না করলেও চলবে)।
– চুল ছাড়া বা মুন্ডানোর পর মক্কায় গিয়ে (সম্ভব হলে উত্তম) আজই তাওয়াফে যিয়ারত করুন। আজ করা সর্বোত্তম। (এটা ফরজ)তাওয়াফ শেষে মিনায় এসে রাত্রি যাপন করুন সুন্নাত।
৪র্থ দিন ১১ই জিলহজ্জ
– ১০ তারিখে কুরবানী, চুল ছাটা ও তাওয়াফে যিয়ারত না করে থাকলে আজ করুন।
– সূর্য হেলার পর থেকে (১২টার পর) মিনায় তিন শয়তানকে সূর্যাস্তের পূর্বে (প্রথম ছোট, তারপর মেজ অতঃপর বড়) ৭+৭+৭=২১টি পাথর মারুন (ওয়াজিব)। মিনায় রাত্রি যাপন করুন (সুন্নাত)।
৫ম দিন ১২ই জিলহজ্জ
– তাওয়াফে যিয়ারত ১০/১১ তারিখে না করে থাকলে আজ সূর্যাস্তের পূর্বে অবশ্যই করুন।
– মিনায় সূর্য হেলার পর থেকে (সুন্নাত সময় হল) সূর্যাস্তের পূর্বে ৭+৭+৭=২১টি পাথর (ছোট, মেজ ও বড় ) শয়তানকে মেরে সূর্যাস্তের পূর্বে) মক্কায় রওয়ানার চেষ্টা করুন।
১. তওয়াফের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ইজতেবা করা। ইজতেবা মানে- ডান কাঁধ খালি রেখে চাদরের মাঝের অংশ বগলের নীচ দিয়ে এনে চাদরের পার্শ্ব বাম কাঁধের উপর ফেলে দেয়া। তওয়াফ শেষ করার পর চাদর পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিবে। কারণ ইজতেবা শুধু তওয়াফের মধ্যে করতে হয়।
২. তওয়াফের প্রথম তিন চক্করে রমল করা। রমল মানে হচ্ছে- ছোট ছোট পদক্ষেপে দ্রুত হাঁটা। আর বাকী চার চক্করে রমল নেই বিধায় স্বাভাবিক গতিতে হাঁটবে। সাত চক্কর তওয়াফ শেষ করার পর ডান কাঁধ ঢেকে নিয়ে মাকামে ইব্রাহিমে আসবে এবং পড়বে-
( وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِإِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى )
(অর্থ- আরতোমরা মাকামে ইব্রাহিমকে তথা ইব্রাহীমেরদাঁড়ানোরজায়গাকেনামাযেরজায়গাবানাও।) [সূরা বাকারা, আয়াত: ১২৫]অতঃপর মাকামে ইব্রাহিমের পিছনে দুই রাকাত নামায আদায় করবে। প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা কাফিরুন পড়বে। দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস পড়বে। নামায শেষ করার পর হাজারে আসওয়াদের নিকট এসে সম্ভব হলে হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করবে। এক্ষেত্রে শুধু স্পর্শ করা সুন্নত। যদি স্পর্শ করা সম্ভবপর না হয় তাহলে ফিরে আসবে; ইশারা করবে না।
তিন: সায়ী
এরপর মাসআ (সায়ীস্থল) তে আসবে। যখন সাফা পাহাড়ের নিকটবর্তী হবে তখন পড়বে
(إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ)
(অর্থ-“নিঃসন্দেহে সাফা ও মারওয়া আল্লাহ তা’আলার নিদর্শনগুলোর অন্যতম”)[সূরা বাকারা, আয়াত: ১৫৮]এরপর বলবে: (نبدأ بما بدأ الله به)(অর্থ- আল্লাহ যা দিয়ে শুরু করেছেন আমরাও তা দিয়ে শুরু করছি)
অতঃপর সাফা পাহাড়ে উঠবে যাতে করে কাবা শরিফ দেখতে পায়। কাবা নজরে আসলে কাবাকে সামনে রেখে দুই হাত তুলে দুআ করবে। দুআর মধ্যে আল্লাহর প্রশংসা করবে এবং যা ইচ্ছা দুআ করবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দুআর মধ্যে ছিল-
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ أَنْجَزَ وَعْدَهُ وَنَصَرَ عَبْدَهُ وَهَزَمَ الأَحْزَابَ وَحْدَهُ.
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহ। লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহ, আনজাযা ওয়াদাহ, ওয়া নাসারা আবদাহ, ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহদা।
(অর্থ- “নেই কোন উপাস্য এক আল্লাহ ব্যতীত। তিনি নিরঙ্কুশ। রাজত্ব তাঁর-ই জন্য। প্রশংসা তাঁর-ই জন্য। তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। নেই কোন উপাস্য এক আল্লাহ ছাড়া। তিনি প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছেন। তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং তিনি একাই সর্ব দলকে পরাজিত করেছেন।)[সহিহ মুসলিম (১২১৮)] এই যিকিরটি তিনবার উচ্চারণ করবেন এবং এর মাঝে দুআ করবেন। একবার এই যিকিরটি বলবেনএরপর দোয়া করেন। দ্বিতীয়বার যিকিরটি বলবেন এবং এরপর দুআ করবেন। তৃতীয়বার যিকিরটি বলে মারওয়া পাহাড়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে যাবেন। তৃতীয়বারে আর দুআ করবেন না। যখন সবুজ কালার চিহ্নিত স্থানে পৌঁছবেন তখন যত জোরে সম্ভব দৌঁড়াবেন। কিন্তু কাউকে কষ্ট দিবেন না। দলিল হচ্ছে- হাদিসে সাব্যস্ত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাফা-মারওয়ার মাঝখানে সায়ী (প্রদক্ষিণ) করেছেন এবং বলেছেন: “আবতাহ দৌঁড়িয়ে পার হতে হবে।” [সুনানে ইবনে মাজাহ (২৪১৯), আলবানী হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন] আবতাহ হচ্ছে- বর্তমানে দুইটি সবুজ রঙে চিহ্নিত স্থান। দ্বিতীয় সবুজ রঙ চিহ্নিত স্থান থেকে স্বাভাবিক গতি হাঁটবে। এভাবে মারওয়াতে পৌঁছবে। মারওয়ার উপরে উঠে কিবলামুখি হয়ে হাত তুলে দুআ করবে। সাফা পাহাড়ের উপর যা যা পড়েছে ও বলেছে এখানে তা তা পড়বে ও বলবে। এরপর মারওয়া থেকে নেমে সাফার উদ্দেশ্যে হেঁটে যাবে। স্বাভাবিকভাবে হাঁটার স্থানে হেঁটে পার হবে; আর দৌঁড়াবার স্থানে দৌঁড়ে পার হবে। সাফাতে পৌঁছার পর পূর্বে যা যা করেছে তা তা করবে। মারওয়ার উপরেও আগের মত তা তা করবে। এভাবে সাত চক্কর শেষ করবে। সাফা থেকে মারওয়া গেলে এক চক্কর। মারওয়া থেকে সাফাতে এলে এক চক্কর। তার সায়ীর মধ্যে যা খুশি যিকির, দুআ, কুরআন তেলাতেয়াত করতে পারবে।
জ্ঞাতব্যঃ
(إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ)
(অর্থ-“নিঃসন্দেহে সাফা ও মারওয়া আল্লাহ তা’আলার নিদর্শনগুলোর অন্যতম”)[সূরা বাকারা, আয়াত: ১৫৮] এই আয়াতটি শুধু সায়ীর শুরুতে সাফার নিকটবর্তী হলে পড়বে। সাফা-মারওয়াতে প্রতিবার আয়াতটি পড়বে না যেমনটি কিছু কিছু মানুষ করে থাকে।
চার: মাথা মুণ্ডন বা চুল ছোট করা:
সাত চক্কর সায়ী শেষ করার পর পুরুষ হলে মাথা মুণ্ডন করবে অথবা মাথার চুল ছোট করবে। মুণ্ডন করলে মাথার সর্বাংশের চুল মুণ্ডন করতে হবে। অনুরূপভাবে চুল ছোট করলে মাথার সর্বাংশের চুল ছোট করতে হবে। মাথা মুণ্ডন করা চুল ছোট করার চেয়ে উত্তম।
পবিত্র হজ্জ ইসলামের মহান একটি রূকন বা স্তম্ভ। আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজীদে পরিস্কার ভাষায় সামর্থবান মুসলিম নর-নারীর উপরে জীবনে একবার এ মহান ইবাদতটি ফরয করে দিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন: “এবং সামর্থ্যবান মানুষের উপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ্জ করা ফরয। আর যে ব্যক্তি কুফরী করে, তবে আল্লাহ তো নিশ্চয় সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী।”
[সূরা আলে ইমরান-৯৭]
আর্থিক সামর্থ। অর্থাৎ পরিবার-পরিজন, চাকর-বাকরদের ভরণপোষণ নিশ্চিত করে কোন ব্যক্তির নিকট হজ্জে যাওয়া-আসা ও পাথেয় খরচ থাকলে তার উপর হজ্জ ফরয। বাসস্থান, প্রয়োজনীয় গৃহসামগ্রী, পোষাক-পরিচ্ছদ, ব্যবহৃত বাহন, পরিবার-পরিজন, চাকর-বাকরের যাবতীয় ব্যয় চালনার জন্য ন্যূনতম কৃষিজমি অথবা ন্যূনতম ব্যবসা অথবা চাকুরীর পর অতিরিক্ত যে স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি থাকে তা থেকে হজ্জের ব্যয় নির্বাহ সম্ভব হলেই হজ্জ ফরয হবে।
হজ্জের মাধ্যমে মু’মিনদের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সৌভাগ্যের দুয়ার খুলে যায়। ইহরাম গায়ে হাজীর লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক (আমি আপনার দরবারে হাজির হে আল্লাহ আমি হাজির) ধ্বনি মূলতঃ আল্লাহর নির্দেশিত ইবরাহীম (আঃ)-এর আহবানের সাড়া দিয়ে এগিয়ে যাওয়া।
আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেন- এবং (হে ইবরাহীম) মানুষের মধ্যে হজ্জের ঘোষণা দাও। তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সকল প্রকার কৃশকায় উটের পিঠে চড়ে দূর-দূরান্ত থেকে (সূরা হজ্জ, আয়াত-২৭)
এরপরই আল্লাহ ঘোষণা দেন – তাদের এ আগমন হবে যেন তারা তাদের কল্যাণের স্থানে পৌঁছে। (সুরা হজ্জ, আয়াত-২৮)
এ আয়াতে হজ্জের ব্যাপক উপকারিতার প্রতি ঈঙ্গিত করা হয়েছে।
বায়তুল্লাহ শরীফের হজ্জ আদায় করা ইসলামের অন্যতম একটি রুকন ও মূল ভিত্তি। দলীল হচ্ছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী:
“ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। এই সাক্ষ্য দেয়া যে, নেই কোন সত্য উপাস্য শুধু আল্লাহ ছাড়া এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল (বার্তাবাহক)। নামায কায়েম করা। যাকাত প্রদান করা। রমজান মাসে রোযা রাখা। বায়তুল্লাতে হজ্জ আদায় করা।”
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর হজ্জ ফরজ করেছেন। সুতরাং তোমরা হজ্জ আদায় করো।”
হজ্জ ফরজ হওয়ার শর্ত পাঁচটি:
এক: ইসলাম। ইসলামের বিপরীত হচ্ছে- কুফর। সুতরাং কাফেরের উপর হজ্জ ফরজ নয়। কাফের যদি হজ্জ আদায়ও করে তাহলে সে আমল কবুল হবে না।
দুই: সাবালগ হওয়া। সুতরাং যে সাবালগ হয়নি তার উপর হজ্জ ফরজ নয়। যদি নাবালগ কেউ হজ্জ আদায় করে তবে তা নফল হজ্জ হিসেবে আদায় হবে এবং সে এর সওয়াব পাবে। সে যখন সাবালগ হবে তখন ফরজ হজ্জ আদায় করতে হবে। কারণ সে সাবালগ হওয়ার আগে যে হজ্জ করেছে- এর দ্বারা ফরজ হজ্জ আদায় হবে না।
তিন: বিবেকবুদ্ধি। এর বিপরীত হচ্ছে- বিকারগ্রস্ততা। সুতরাং পাগলের উপর হজ্জ ফরজ নয় এবং পাগলকে হজ্জ আদায় করতে হবে না।
চার: স্বাধীন হওয়া। সুতরাং ক্রীতদাসের উপর হজ্জ ফরজ নয়। যদি সে হজ্জ আদায় করে তবে তার হজ্জ নফল হিসেবে আদায় হবে। যদি সে স্বাধীন হয়ে যায় তাহলে তাকে ফরজ হজ্জ আদায় করতে হবে। কারণ দাস থাকাকালীন সে যে হজ্জ আদায় করেছে সেটা দ্বারা ফরজ হজ্জ আদায় হবে না। তবে কিছু কিছু আলেম বলেছেন: যদি ক্রীতদাস তার মালিকের অনুমতি নিয়ে হজ্জ আদায় করে তাহলে সে হজ্জ দ্বারা তার ফরজ হজ্জ আদায় হয়ে যাবে। এটাই অগ্রগণ্য মত।
পাঁচ: শারীরিক ও আর্থিক সামর্থ্য থাকা। মহিলার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত একটি সামর্থ্য হলো- হজ্জের সঙ্গি হিসেবে কোন মোহরেম পাওয়া। যদি নারীর এমন কোন মোহরেম না থাকে তাহলে তার উপর হজ্জ ফরজ নয়।
★★হজ্জের ফরজ ৩টি★★
১। ইহরাম বাধা ২। উ’কুফে আ’রাফা (আরাফাতের ময়দানে অবস্থান) ৩। তাওয়াফুয্ যিয়ারাত
হজ্জের ওয়াজিব ৬টি
(১) ‘সাফা ও মারওয়া’ পাহাড় দ্বয়ের মাঝে ৭ বার সায়ী করা।
(২) অকুফে মুযদালিফায় (৯ই জিলহজ্জ) অর্থাৎ সুবহে সাদিক থেকে সুর্যদয় পর্যন্ত একমুহুর্তের জন্য
হলেও অবস্থান করা।
(৩) মিনায় তিন শয়তান (জামারাত) সমূহকে পাথর নিপে করা।
(৪) ‘হজ্জে তামাত্তু’ ও ‘কি্বরান’ কারীগণ ‘হজ্জ’ সমাপনের জন্য দমে শোকর করা।
(৫) এহরাম খোলার পূর্বে মাথার চুল মুন্ডানো।
(৬) মক্কা থেকে বিদায়কালীন তাওয়াফ করা।
এছাড়া আর যে সমস্ত আমল রয়েছে সব সুন্নাত অথবা মুস্তাহাব।
ওমরাহর ফরজ, ওয়াজিব
দুইটি ফরজ: (১) ইহরাম পরিধান করা (২) তাওয়াফ
দুইটি ওয়াজিব: (১) সাফা ও মারওয়া মধ্যবর্তী (সবুজ বাতি) স্থানে সাতবার সায়ী করা (২) মাথার চুল
মুন্ডানো বা ছাটা।
তালবিয়াঃহাদীসগ্রন্থে বর্ণীত তালবিয়ার শব্দগুলো নিম্নরূপঃ
لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لاَشَرِيْكَ لَكَ
”লাব্বাঈক আল্লাহুম্মা লাব্বাঈক, লাব্বাঈক, লা-শারীকা-লাকা লাব্বাঈক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্ নি’মাতা লাকা ওয়াল-মুল্ক, লা শারীকালাক।”
অর্থ: আমি হাজির হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত! আপনার ডাকে সাড়া দিতে আমি হাজির। আপনার কোন অংশীদার নেই। নিঃসন্দেহে সমস্ত প্রশংসা ও সম্পদরাজি আপনার এবং একচ্ছত্র আধিপত্য আপনার।
আপনার কোন অংশীদার নেই।
ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজঃ-
(১) সেলাইযুক্ত যে কোন কাপড় বা জুতা ব্যবহার, এক্ষেত্রে স্পঞ্জ সেন্ডেলের ব্যবহার করা।
(২) মস্তক ও মুখমন্ডল (ইহরামের কাপড়সহ যে কোন কাপড় দ্বারা) ঢাকা,
(৩) পায়ের পিঠ ঢেকে যায় এমন জুতা পরা।
(৪) চুলকাটা বা ছিড়ে ফেলা।
(৫) নখকাটা।
(৬) ঘ্রানযুক্ত তৈল বা আতর লাগানো।
(৭) স্ত্রীর সঙ্গে সংগম করা।
(৮) যৌন উত্তেজনামূলক কোন আচরণ বা কোন কথা বলা।
(৯) শিকার করা।
(১০) ঝগড়া বিবাদ বা যুদ্ধ করা।
(১১) চুল দাড়িতে চিরুনী বা আঙ্গুলী চালনা করা, যাতে ছিড়ার আশংকা থাকে।
(১২) শরীরে সাবান লাগানো।
(১৩) উকুন, ছারপোকা, মশা ও মাছিসহ কোন জীবজন্তু হত্যা করা বা মারা।
(১৪) কোন গুনাহের কাজ করা, ইত্যাদি।
হজ্জের প্রকার ও নিয়তসমূহঃ-
প্রথম প্রকার হজ্জে ইফরাদ
বর্ণনা: ওমরাহ্ ব্যতিত শুধু হজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধা এবং হজ্জের সাথে ওমরাহকে না মিলানো। (বদলী হজ্জের জন্যও এই হজ্জ)।
নিয়্যাত: আল্লাহুমা ইন্নী উরীদুল হাজ্জা ফায়াসছির হুলিওয়াতা কাব্বালহুমিনি্ন। (বাংলা নিয়ত- আল্লাহ আমি ইফরাদ হজ্জের উদ্দেশ্যে আপনার সন্তুষ্টির জন্য ইহরাম বাধলাম। তা সহজ করে দিন ও কবুল করে নিন)।
দ্বিতীয় প্রকার হজ্জে কি্বরান
বর্ণনা: একত্রে একই স্থান থেকে হজ্জ ও ওমরার নিয়্যাত করে হজ্জের সাথে ওমরাহকে মিলানো এবং একই ইহ্রামে উভয়টি আদায় করা।
নিয়্যাত: আল্লাহুমা ইন্নী উরীদুল উ’মরাতা ফায়াচ্ছির লী-ওয়াতাক্াব্বাল মিন্নী। বাংলা নিয়ত- হে আল্লাহ আমি আপনার উদ্দেশ্যে হজ্জে কি্বরানের জন্য ইহরাম বাধলাম তা সহজ করে দিন ও কবুল করে নিন।
★তৃতীয় প্রকার হজ্জে তামাত্তু
বর্ণনা: একই সফরে পৃথক পৃথক ভাবে ‘ইহরাম’ পরিধান করে ‘হজ্জ ও ওমরাহ’ আদায় করা। প্রথম ইহ্রামে ওমরাহর নিয়্যাত করে তা পালন শেষে চুল কেটে ‘ইহরাম’ খুলে হালাল হয়ে দ্বিতীয় বার নতুন করে হজ্জের নিয়্যাতে ৮ই জিলহজ্জ ‘মক্ক শরীফ’ থেকে হজ্জের জন্য ইহরাম বাধা। তামাত্তু করার ইচ্ছা থাকলে প্রথমে ওমরার নিয়্যাত করে এহরাম বাঁধুন।
শুধু ওমরাহর নিয়্যাত
আল্লাহুমা ইন্নী উরীদুল উম’রাতা ফায়াচ্ছির লী-ওয়াতাক্াব্বাল মিন্নী। বাংলা নিয়ত- হে আল্লাহ আমি ওমরাহ্ পালনের জন্য ইহরাম বাধলাম তা সহজ করে দিন এবং কবুল করে নিন।
শুধু হজ্জের নিয়্যাত
আল্লাহুম্মা ইন্নী উরীদুল হাজ্জা ফায়াচ্ছিরহু-লী অ-তাকাব্বালহু মিন্নী। বাংলা নিয়ত- হে আল্লাহ আমি পবিত্র হজ্জ পালনের জন্য ইহরাম বেধে নিয়ত করলাম তা সহজ করে দিন এবং কবুল করে নিন।১. আল্লাহর জন্য মুখলিস (একনিষ্ঠ) হওয়া। অর্থাৎ সে ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালকে উদ্দেশ্য করা; প্রদর্শনেচ্ছা বা প্রচারপ্রিয়তার উদ্দেশ্যেনা করা অথবা অন্য কোন দুনিয়াবী উদ্দেশ্যে না করা।
২. কথা ও কাজে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ বা আদর্শ জানা ছাড়া তাঁকে অনুসরণ করা সম্ভব নয়। সুতরাং যে ব্যক্তি উমরা, হজ্ব বা অন্যকোন ইবাদত পালনের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে চায় তার কর্তব্য হলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ শিখে নেয়া; যাতে তার আমল রাসূলের সুন্নাহ মোতাবেক হয়। নিম্নে আমরা সুন্নাহরআলোকেউমরা আদায়ের পদ্ধতি সংক্ষেপে তুলে ধরব।উমরার কাজ চারটি:
এক:ইহরাম
ইহরাম মানে হচ্ছে- নুসুকে তথা হজ্ব বা উমরাতে প্রবেশের নিয়ত।
কেউ যদি ইহরাম করতে চায় তখন সুন্নত হচ্ছে- সে ব্যক্তি কাপড়-চোপড় ছেড়ে ফরজ গোসলের মত গোসল করবে, মাথা বা দাঁড়িতে মিসক বা অন্য যে সুগন্ধি তার কাছে থাকে সেটা লাগাবে। সুগন্ধির আলামত যদি ইহরাম করার পরেও থেকে যায় তাতে কোন অসুবিধা নেই। যেহেতু সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ইহরাম করতে চাইতেন তখন নিজের কাছে সবচেয়ে ভাল যে সুগন্ধিটা আছে সেটা ব্যবহার করতেন। ইহরাম করার পরে আমি তাঁর মাথা ও দাঁড়িতে সে সুগন্ধির ঝিলিকদেখতে পেতাম।[সহিহ বুখারি (২৭১) ও সহিহ মুসলিম (১১৯০)] নর-নারী উভয়ের ক্ষেত্রে ইহরামের জন্য গোসল করা সুন্নত। এমনকি হায়েয ও নিফাসগ্রস্ত নারীদের ক্ষেত্রেও। কেননা আসমা বিনতে উমাইস (রাঃ) নিফাসগ্রস্ত ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে ইহরামের জন্য গোসল করার ও রক্ত প্রবাহের স্থান একটি কাপড় দিয়ে বেঁধে নিয়ে ইহরাম করার নির্দেশ দিয়েছেন।[সহিহ মুসলিম (১২০৯)]
গোসল ও সুগন্ধি ব্যবহারের পর ইহরামের কাপড় পরিধান করবে। এরপর ফরজ নামাযের ওয়াক্ত হলে ফরজ নামায আদায় করবে। ফরজ নামাযের ওয়াক্ত না হলে ওজুর সুন্নত হিসেবে দুই রাকাত নামায আদায় করবে। নামাযের পর কিবলামুখি হয়ে ইহরাম বাঁধবে। ইচ্ছা করলে বাহনে (গাড়ীতে) উঠে যাত্রার প্রাক্কালে ইহরাম করতে পারেন। তবে মীকাত থেকে মক্কার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার আগে ইহরাম করতে হবে। এরপর বলবেন:
لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ بِعُمْرَةٍ
লাব্বাইকাল্লাহুম্মা বি উমরাতিন (অর্থ- হে আল্লাহ! উমরাকারী হিসেবে আপনার দরবারে হাজির)। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে তালবিয়া পড়েছেন সেভাবে তালবিয়া পড়বে। সেই তালবিয়া হচ্ছে-
لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ ، لَبَّيْكَ لا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لا شَرِيكَ لَكَ
লাব্বাইকাল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইকালা শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক। লা শারিকা লাক।
(অর্থ- হে আল্লাহ! আমি আপনার দরবারে হাজির। আমি আপনার দরবারে হাজির। আমি আপনার দরবারে হাজির। আপনি নিরঙ্কুশ। আমি আপনার দরবারে হাজির। নিশ্চয় যাবতীয় প্রশংসা, যাবতীয় নেয়ামত আপনার-ই জন্য এবং রাজত্ব আপনার-ই জন্য। আপনি নিরঙ্কুশ।)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামআরও একটি তালবিয়া পড়তেন সেটা হচ্ছে-
لَبَّيْكَ إِلَهَ الْحَقِّ
লাব্বাইকা ইলাহাল হাক্ব (অর্থ- ওগো সত্য উপাস্য! আপনার দরবারে হাজির)।
ইবনে উমর (রাঃ) আরেকটু বাড়িয়ে বলতেন:
لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ بِيَدَيْكَ وَالرَّغْبَاءُ إِلَيْكَ وَالْعَمَلُ
লাব্বাইকা ওয়া সাদাইক। ওয়াল খাইরু বি ইয়াদাইক। ওয়ার রাগবাউ ইলাইকা ওয়াল আমাল। (অর্থ- আমি আপনার দরবারে হাজির, আমি আপনার সৌজন্যে উপস্থিত। কল্যাণ আপনার-ই হাতে। আকাঙ্ক্ষা ও আমল আপনার প্রতি নিবেদিত)। পুরুষেরা উচ্চস্বরে তালবিয়া পড়বে। দলিল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: জিব্রাইল (আঃ) এসে আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন আমি যেন আমাদের সাহাবীদেরকে ও আমার সঙ্গিদেরকে উচ্চস্বরে তালবিয়া পড়ার আদেশ দিই।[সহিহ আবু দাউদ গ্রন্থে (১৫৯৯) আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন] আরেকটি দলিল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “উত্তম হজ্ব হচ্ছে আল-আজ্জ ও আল-সাজ্জ।”[সহিহুল জামে গ্রন্থে (১১১২) আলবানী হাদিসটিকে হাসান বলেছেন] আল-আজ্জ (العَجّ) শব্দের অর্থ হচ্ছে- উচ্চস্বরে তালবিয়া পড়া। আর আল-সাজ্জ (الثَجّ) শব্দের অর্থ হচ্ছে- হাদির রক্ত প্রবাহিত করা।
আর নারী এতটুকু জোরে তালবিয়াপড়বে যাতে পাশের লোক শুনতে পায়। তবে পাশে যদি কোন বেগানা পুরুষ থাকে তাহলে মনে মনে তালবিয়াপড়বে।
যে ব্যক্তি ইহরাম করতে যাচ্ছেন তিনি যদি কোন প্রতিবন্ধকতাযেমন রোগ, শত্রু বা গ্রেফতার ইত্যাদি কারণে নুসুকতথা হজ্ব বা উমরা শেষ করতে না পারার আশংকা করেন তাহলে ইহরাম বাঁধার সময় শর্ত করে নেয়া বাঞ্ছনীয়। ইহরামকালে তিনি বলবেন:
إِنْ حَبَسَنِيْ حَابِسٌ فَمَحِلِّيْ حَيْثইন হাবাসানি হাবেস ফা মাহিল্লি হাইসু হাবাসতানি (অর্থ- যদি কোন প্রতিবন্ধকতা- যেমন রোগ, বিলম্ব ইত্যাদি আমার হজ্ব পালনে- বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাহলে আমি যেখানেপ্রতিবন্ধকতার শিকার হই সেখানে ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যাব)। কেননা দুবাআ বিনতে যুবাইর (রাঃ) অসুস্থ থাকায় ইহরাম বাঁধাকালে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে শর্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন: “তুমি যে শর্ত করেছ সেটা তোমার রবের নিকটগ্রহণযোগ্য।”[সহিহ বুখারি (৫০৮৯) ও সহিহ মুসলিম (১২০৭)] যদি ইহরামকারী শর্ত করে থাকে এবং নুসুক সম্পন্ন করণে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয় তাহলে সে ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যাবে। এতে করে তার উপর অন্য কোন দায়িত্ব আসবে না। আর যদি নুসুক সম্পন্ন করণে কোন প্রতিবন্ধকতার আশংকা না থাকে তাহলে শর্ত না করাই বাঞ্ছনীয়। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শর্ত করেননি এবং সাধারণভাবে সবাইকে শর্ত করার নির্দেশ দেননি।দুবাআ বিনতে যুবাইর (রাঃ) অসুস্থ হওয়ার কারণে শুধু তাকে শর্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। ইহরামকারীর উচিত অধিক তালবিয়া পাঠ করা। বিশেষতঃ সময় ও অবস্থার পরিবর্তনগুলোতে। যেমন উঁচুতে উঠার সময়। নীচুতে নামার সময়। রাত বা দিনের আগমনকালে। তালবিয়া পাঠের পর আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত প্রার্থনা করা এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা।
উমরার ক্ষেত্রে ইহরামের শুরু থেকে তওয়াফ শুরু করার আগ পর্যন্ত তালবিয়া পড়া বিধান রয়েছে।তওয়াফ শুরু করলে তালবিয়া পড়া ছেড়ে দিবে।
মক্কায় প্রবেশের জন্য গোসল: মক্কার কাছাকাছি পৌঁছলে সম্ভব হলে মক্কায় প্রবেশের জন্য গোসল করে নিবে। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা প্রবেশের সময় গোসল করেছিলেন।[সহিহ মুসলিম (১২৫৯)]
দুই: তওয়াফ
মসজিদে হারামে প্রবেশের সময় ডান পা আগে দিবে এবং বলবে:
بِسْمِ اللهِ والصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ الَّلهُمَّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوْبِيْ وافْتَحْ لِى أَبْوَابَ رَحْمَتِكَأَعُوذُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ
(অর্থ- আল্লাহর নামে শুরু করছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক। হে আল্লাহ! আমার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিন। আমার জন্য আপনার রহমতের দুয়ারগুলো খুলে দিন। আমি বিতাড়িত শয়তান হতে মহান আল্লাহর কাছে তাঁর মহান চেহারারমাধ্যমে, তাঁর অনাদি রাজত্বেরমাধ্যমে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।)
এরপর তওয়াফ শুরু করার জন্য হাজারে আসওয়াদের দিকে এগিয়ে যাবে। ডান হাত দিয়ে হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করবে ও চুমু খাবে। যদি হাজারে আসওয়াদে চুমু খেতে না পারে হাত দিয়ে স্পর্শ করবে ও হাতে চুমু খাবে (স্পর্শ করার মানে হচ্ছে- হাত দিয়ে ছোঁয়া)। যদি হাত দিয়ে স্পর্শ করতে না পারে তাহলে হাজারে আসওয়াদের দিকে মুখ করে হাত দিয়ে ইশারা করবে এবং তাকবির বলবে; কিন্তু হাতে চুমু খাবে না। হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করার ফজিলত অনেক। দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “আল্লাহ তাআলা হাজার আসওয়াদকে পুনরুত্থিত করবেন। তার দুইটি চোখ থাকবে যে চোখ দিয়ে পাথরটি দেখতে পাবে।তার একটি জিহ্বা থাকবে যে জিহ্বা দিয়ে পাথরটি কথা বলতে পারবে। যে ব্যক্তি সঠিকভাবে পাথরটিকে স্পর্শ করেছে পাথরটি তার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে।[আলবানী আল-তারগীব ও আল-তারহীব (১১৪৪) গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
তবে উত্তম হচ্ছে- ভিড়না করা। মানুষকে কষ্ট না দেয়া এবং নিজেও কষ্ট না পাওয়া। যেহেতু হাদিসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে তিনি উমরকে লক্ষ্য করে বলেছেন- “হে উমর! তুমি শক্তিশালী মানুষ। হাজারে আসওয়াদের নিকট ভিড় করে দুর্বল মানুষকে কষ্ট দিও না। যদি ফাঁকা পাও তবে স্পর্শ করবে; নচেৎ হাজারে আসওয়াদমুখি হয়ে তাকবীর বলবে।[মুসনাদে আহমাদ (১৯১), আলবানী তাঁর ‘মানাসিকুল হাজ্জ ও উমরা’ গ্রন্থে হাদিসটিকে ‘কাওয়ি’ (শক্তিশালী) মন্তব্য করেছেন] এরপর ডানদিক ধরে চলতে থাকবে। বায়তুল্লাহকে বামদিকে রাখবে। যখন রুকনে ইয়ামেনীতে (হাজারে আসওয়াদের পর তৃতীয় কর্নার) পৌঁছবে তখন সে কর্নারটি চুমু ও তাকবীর ছাড়া শুধু স্পর্শ করবে। যদি স্পর্শ করা সম্ভব না হয় তাহলে তওয়াফ চালিয়ে যাবে; ভিড় করবে না। রুকনে ইয়ামেনী ও হাজারে আসওয়াদের মাঝখানে এলেবলবেন:
(رَبَّنَا آَتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآَخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ)
(অর্থ- হে আমাদের রব! আমাদিগকে দুনিয়াতেও কল্যাণ দান করুন এবং আখেরাতেও কল্যাণ দান করুন এবং আমাদিগকে দোযখের আযাব থেকে রক্ষা করুন।)[সুনানে আবু দাউদ, আলবানী ‘সহিহ আবু দাউদ’ গ্রন্থে হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন]
যখনই হাজারে আসওয়াদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করবে তখনই হাজারে আসওয়াদ অভিমুখী হয়ে তাকবীর বলবে। তওয়াফের অন্য অংশে যা কিছু খুশি যিকির, দুআ ও কুরআন তেলাওয়াত করবে।তওয়াফের মধ্যে পুরুষকে দুইটি জিনিশ করতে হয়।তাওয়াফের ওয়াজিব সমূহ
(১) শরীর পাক-সাফ রাখা, ওজু করা। মহিলাদের হায়েজ নেফাছ অবস্থায় তাওয়াফ করা জায়েজ নাই।
(২) ছতর ঢাকা। অর্থাৎ যেটুকু ঢাকা প্রত্যেক পুরুষ-নারীর জন্য ফরজ।
(৩) ‘হাতীমে কা’বার’ বাইরে থেকে ‘তাওয়াফ’ করা।
(৪) পায়ে হেঁটে ‘তাওয়াফ’ করা। অম ব্যক্তি খাটিয়ার মাধ্যমে ‘তাওয়াফ’ করতে পারেন।
(৫) ‘হাজ্রে আস্ওয়াদ’ থেকে শুরু করে ডানদিক দিয়ে ‘তাওয়াফ’ শুরু করা।
(৬) এক নাগাড়ে বিরতিহীন ভাবে ‘সাতবার চক্কর’ দিয়ে ‘তাওয়াফ’ পূর্ণ করা।
(৭) ‘সাত চক্করে’ এক ‘তাওয়াফ’, এটা পূর্ণ হলেই ‘তাওয়াফের’ নামাজ পড়া।
তাওয়াফের সুন্নত কার্যাবলী
(১) ‘তাওয়াফে’র শুরুতে ‘হাজারে আসওয়াদ’ এর দিকে মুখ করা।
(২) সম্ভব হলে ‘হাজ্রে আস্ওয়াদ’ চুম্বন করা। নতুবা হাত দ্বারা দূর থেকে ইশারা করা, এবং মুখে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আক্বার ওয়ালিল্লাহিল হ্ামদ’ বলা।
(৩) ‘হা্জ্রে অস্ওয়াদ’ বরাবর দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহরিমা’র ন্যায় উভয় হাত সিনা পর্যন্ত উঠান।
(৪) যে ‘তাওয়াফে’র পরে ‘সাঈ’ আছে তাতে ‘এযতেবা’ করা। অর্থাৎ ইহরামের চাদরের (উপরের অংশের) দুই মাথা ডান বগলের নিচ দিয়ে বাম কাঁধের উপর ফেলে দেওয়া।
(৫) ‘সাঈ’ যুক্ত ‘তাওয়াফে’র প্রথম তিন চক্করে ‘রমল’ করা। অথর্াৎ বীরের মত হেলে দুলে জোর ক্বদমে (একের পর এক পা ফেলে) চলা।
(৬) বাকী চার চক্কর সাধারণ গতিতে (ধীরে ধীরে) সম্পন্ন করা।
(৭) প্রত্যেক চক্কর তাওয়াফ শেষ করে এবং শেষ চক্করেরও পরে ‘হাজ্রে অস্ওয়াদ’কে চুম্বন করা।দোয়া সমুহ উচ্চস্বরে পড়া উচিত নয়। বরং এমন আওয়াজে পড়েন যাতে আপনার নিজ কানে শুনা যায়।
★১ম চক্কর তাওয়াফের দোয়াঃ-
তাওয়াফের সময় ১ম চক্করের দোয়ার মানে হল- আল্লাহ তায়ালা পাক পবিত্র, সকল প্রসংশা তার জন্য, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই, আল্লাহ মহান, গুনাহ থেকে বাঁচা ও নেকী করার তৌফিক আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়।যিনি মহান সম্মানিত, রহমত নাযিল হউক রাসুলুল্লাহর উপর, হে আল্লাহ তোমার প্রতি ঈমান এনে তোমার কিতাবের সত্যতা স্বীকার করে, তোমার সাথে কৃত ওয়াদা পুরন করতে, তোমার নবীর সুন্নতের অনুসরনে তাওয়াফ আরম্ভ করেছি। হে আল্লাহ আমি তোমার নিকট গুনাহ সমুহ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। বিপদ-আপদ থেকে সদা হেফাজতের, দ্বীন ও দুনিয়া এবং আখিরাতে এবং জান্নাত হাছিলে সফলতার এবং জাহান্নামের থেকে মুক্তির দরখাস্ত করছি।
এ তাওয়াফের দোয়া আপনি রোকনে এয়ামনিীতে পৌছার আগে আগে শেষ করে নিবেন, এখন আপনি রোকনে এয়ামানি থেকে রুকনে আসওয়াদ এর দিকে যাবেন। আর রোকনে এয়ামানী থেকে রুকনে আসওয়াদ পর্যন্ত এ জায়গাটা দোয়া কবুল হওয়ার জায়গা সুতরাং এ জায়গাটুকুতে আপনি চলতে চলতে দোয়া নিজের জন্য ও তামাম মুসলমানের জন্য দোয়া করবেন এবং দরুদ শরীফ পাঠ করে কুরআনের এ আয়াত পাঠ করবেন (রাব্বানা আতেনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতে হাসানাতাও ওয়াকেনা আজাবান নার)
মনে রাখবেন তাওয়াফ কালীন আপনি কাবাতুল্লাহর দিকে ফিরবেন না, আপনার সিনা যেন কাবার দিকে না হয়। তবে যদি কাবা ঘরের খুব কাছ দিয়ে তাওয়াফ করেন তখন হাত বাড়িয়ে রুকনে এয়ামানিকে ছুয়ে দিতে পারেন বরকতের জন্য। কিন্তু আপনি যদি দুরে থাকেন তখন সে দিকে ফিরে ইশারা করার প্রয়োজন নাই।
যখন আপনি রুকনে আসওয়াদ এর দিকে অগ্রসর হবেন দেখবেন দেওয়ালে সবুজ রং এর টিউব লাইট আছে। সেখানের বরাবর ফ্লোরে যে পাট্টি আছে তাতে এসে হাজরে আসওয়াদ এর দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে যাবেন, নামাজের তাকবিরের সময় যেভাবে হাত উঠাতে হয় সেভাবে হাত উঠায়ে পড়বেন “বিসমিল্লাহি ওয়ালহামদুলিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার ওয়াস্সালাতু ওয়াস্সলামু আলা রাসূলিল্লাহ” এটা পড়ার পর হাত নিচে করে নিবেন। এবং সম্ভব হলে হাজরে আসওয়াদকে চুমু দিবেন অথবা হাতে ইশারা করে হাতে চুমু খাবেন এটাকে এস্তেলাম বলে। এবং হাজরে আসওয়াদ থেকে সামান্য ডান দিকে সরে গিয়ে যখন দেখবেন হাজরে আসওয়াদ আর আপনার সোজসোজি রইল না তখন সাথে সাথে আপনার দিক পরিবর্তন করে নিবেন ফলে কাবাতুল্লাহ আপনার বাম দিকে হয়ে যাবে। এখন আবার রমল করতে করতে ২য় চক্কর শুরু করবেন।
★২য় চক্কর তাওয়াফের দোয়া-
তাওয়াফের ২য় চক্করের দোয়ার বাংলা অনুবাদ- হে আল্লাহ এ ঘর তোমার ঘর, এ হারাম তোমার হারাম, এখানের নিরাপত্তা তোমার নিরাপত্তা, সকল বান্দা তোমারই বান্দা, আমিও তোমারই বান্দা, তোমারই এক বান্দার সন্তান, এ স্থানটা জাহান্নাম থেকে পানাহ চাওয়ার জায়গা, তুমি আমার শরীর ও শরীরের গোস্তকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দাও, হে আল্লাহ আমার জন্য ঈমানকে প্রিয় করে দাও, আমার অন্তরে তার আগ্রহ সৃষ্টি করে দাও, আমার অন্তরে কুফুরী বদকারী ও নাফরমানিকে অপছন্দনীয় করে দাও, আমাকে হেদায়েতপ্রাপ্তদের মধ্যে গন্য করে নাও। হে আল্লাহ যেদিন তুমি তোমার বান্দাগনকে পুনরুজ্জিবীত করবে সেদিন আমাকে আযাব থেকে রক্ষা করিও, হে আল্লাহ তুমি আমাকে বিনা হিসাবে জান্নাত দান কর।
২য় চক্করের দোয়া রোকনে এয়ামনী পৌছাঁর আগে আগে শেষ করে নিবেন। রোকনে এয়ামানি থেকে রুকনে আসওয়াদ পর্যন্ত আপনার নিজের জন্য সহ সকল মুসলমানের জন্য দোয়া করবেন, এবং দরুদ শরীফ পাঠ করে কুরআনের এ আয়াত পাঠ করবেন (রাব্বানা আতেনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতে হাসানাতাও ওয়াকেনা আজাবান নার)
এরপর হাজরে আসওয়াদের দিকে ফিরে পাট্টির উপর দাঁড়াবেন দু হাত কান পর্যন্ত উঠায়ে (“বিসমিল্লাহি ওয়ালহামদুলিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার ওয়াস্সালাতু ওয়াস্সলামু আলা রাসূলিল্লাহ”) পড়ে হাত নামিয়ে ফেলবেন এরপর হাজরে আসওয়াদকে চুমু বা এস্তেলাম করবেন। এবার পুনরায় ৩য় চক্কর শুরু করবেন রমল সহকারে।
★৩য় চক্কর তাওয়াফের দোয়া- বাকী আমল আগের মত ...
তাওয়াফের ৩য় চক্করের দোয়ার বাংলা অনুবাদ- হে আল্লাহ আমি সন্দেহ, শিরিক, নেফাক, সত্যের বিরোধীতা, খারাপ চরিত্র, খারাপ দৃশ্য, পরিবার, মাল ও সন্তানদের উপর কু প্রভাব থেকে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে প্রভু আমি তোমার সন্তুষ্টি এবং জান্নাত প্রার্থনা করছি। তোমার গজব এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় পার্থনা করছি। হে প্রভু আমি কবরের দুঃখ এবং জীবনে এবং মৃত্যুর সময়কালীন ফিতনা থেকে তোমার আশ্রয় প্রাথনা করছি।
এবার পুনরায় ৪র্থ চক্কর শুরু করবেন তবে এখন থেকে পরবর্তী চক্করসমুহে আর রমল বা জোড়ে হেলেদুলে চলা লাগবে না। স্বাভাবিক ভাবে চলে দোয়া পড়তে পড়তে চলবেন।
★৪থ চক্কর তাওয়াফের দোয়া-
তাওয়াফের সময় ৪ নং চক্করের দোয়ার বাংলা অনুবাদ- হে আল্লাহ আমার হায়াত কে বরকতময় এবং আমার চেষ্টাসমুহকে সফলতা দান কর। গুনাহসমুহের ক্ষমার মাধ্যম এবং কবুলযোগ্য নেক আমল এবং ক্ষতিছাড়া তেজারত করে দাও। হে অন্তরযামী, আমাকে গুনাহের অন্ধকার থেকে ছাওয়াবের আলোর দিকে বের করে নাও। হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে তোমার রহমত হাছিলের বিষয়বস্তু এবং তোমার ক্ষমার বিষয়বস্তুসমুহ এবং সমস্ত গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে এবং সকল নেক আমলের তওফিক এবং জান্নাতে যাওয়া এবং জাহান্নামের থেকে মুক্তির দরখাস্ত করছি। হে আল্লাহ আমাকে দেওয়া রিযিকসমুহে বরকত দান কর। সকল ক্ষতিসমুহে তোমার দয়ায় আমার জন্য নেয়ামতে পরিবর্তন করে দাও
★৫ম চক্কর এর দোয়া-
তাওয়াফে ৫ম চক্করের দোয়ার বাংলা অনুবাদ- হে আল্লাহ আমাকে সে দিন আরশের ছায়ায় জায়গা দিও, যেদিন তোমার আরশের ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবেনা এবং তুমি ছাড়া কেহ বাকী থাকবেনা। নবী করিম (দঃ) এর হাউজে কাউছার থেকে এমন তৃপ্তির সাথে পান করাইও যাতে কখনো আমার পিপাসা না লাগে। হে আল্লাহ আমি তোমার নিকট সে সকল বিষয়ের ব্যাপারে মঙ্গল কামনা করছি যা তোমার নবী মুহাম্মদ (দঃ) তোমার নিকট চেয়েছেন। েএবং ঐ সমস্ত বিষয়গুলোর খারাপ পরিনতি থেকে পানাহ চাচ্ছি যা থেকে তোমার নবী পানাহ চেয়েছেন। হে আল্লাহ আমি তোমার নিকট জান্নাত এবং তার নেয়ামতসমুহের এবং সে সকল কথা কাজ এবং আমলের তৌফিক এর প্রার্থনা করছি যা আমাকে জান্নাতের নিকটবর্তী করে দিবে। এবং সে সমস্ত কথা কাজ ও আমল থেকে পানাহ চাচ্ছি যা আমাকে দোযখের নিকট করে দিবে।
★৬ষ্ঠ চক্করের দোয়া
তাওয়াফের ৬ষ্ঠ চক্করের দোয়ার অনুবাদ- হে আল্লাহ আমার উপর তোমার অনেক হক রয়েছে যা তোমার ও আমার মাঝে রয়েছে যা তোমার ও তোমার সৃষ্টি সমুহের মাঝে রয়েছে এসব হকের মাঝে যা তোমার সাথে রয়েছে তার ভ্রান্তিসমুহ ক্ষমা কর। আর যে সমস্ত হক তোমার সৃষ্টির সাথে তার ক্ষমার ব্যাপারে তুমি জিম্মাদারী নাও। হে আল্লাহ আমাকে হালাল রিযিক দান কর, হারাম থেকে বাঁচিয়ে রাখ, তোমার অনুসরনের তৌফিক দান কর। দয়া করে পরমুখাপেক্ষী হতে বাঁচাও। হে আল্লাহ নিশ্চয়ই তোমার এ ঘর সম্মানিত ঘর। তুমি করিম তুমি হালিম তুমি আজিম। তুমি ক্ষমা করা পছন্দ কর হে প্রভু আমার ভ্রান্তিসমুহ ক্ষমা করে দাও।
★৭ম চক্করের দোয়া
তাওয়াফের সপ্তম চক্করের দোয়ার অনুবাদ- হে আল্লাহ আমি তোমার নিকট তোমার রহমতের উছিলায় পরিপূর্ণ ঈমান এবং সরল বিশ্বাস, প্রশস্থ রিযিক, বিনয়ী অন্তর, জিকিরকারী জবান, হালাল ও পাক পবিত্র রুজি, সরল তৌবা এবং মৃত্যু পূর্বে তাওবা এবং শান্তিময় মৃত্যু এবং মৃত্যুর পর ক্ষমা ও দয়া এবং হিসাবের সময় ক্ষমা এবং জান্নাত অর্জন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি কামনা করছি। হে সম্মানিত ক্ষমাদানকারী আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দাও এবং আমাকে নেককারদের অন্তভূক্ত করে নাও।
৭ম চক্কর পুরা হওয়ার পর হাজরে আসওয়াদের দিকে ফিরে পাট্টির উপর দাঁড়াবেন দু হাত কান পর্যন্ত উঠায়ে (“বিসমিল্লাহি ওয়ালহামদুলিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার ওয়াস্সালাতু ওয়াস্সলামু আলা রাসূলিল্লাহ”) পড়ে হাত নামিয়ে ফেলবেন এরপর হাজরে আসওয়াদকে চুমু বা এস্তেলাম করবেন। সুতরাং আপনার তাওয়াফ হল ৭টা আর এস্তেলাম হল ৮বার।
এখন আপনার তাওয়াফ সম্পূর্ণ হল এবার আপনি আপনার চাদর দ্বারা ডান কাঁধ ঢেকে নিন এবং মকামে ইবরাহিম এর কাছে এসে পাঠ করুন সুরা বাকারার এ আয়াত-(ওয়াত্তাহিজু মিম মাকামে ইবরাহিমা মুছাল্লা) যার অর্থ- তোমরা ইবরাহিম এর দাঁড়ানোর জায়গাকে নামাজের জায়গা বানাও।
এখন আপনি যদি মকামে ইবরাহিম এর নিকট জায়গা পান তাহলে সেখানে দাঁড়িয়ে ২ রাকাত তাওয়াফের নামাজ আদায় করবেন। তবে যদি নিকটে জায়গা না পান তাহলে মসজিদে হারামের যেখানে জায়গা মিলে সেখানে দাঁড়িয়ে ২ রাকাত নামাজ আদায় করবেন তবে যেন মকরুহ ওয়াক্ত না হয়। প্রথম রাকাত সুরা ফাতেহার সাথে সুরা কাফেরুন এবং ২য় রাকাতে সুরা ফাতেহার সাথে সুরা এখলাছ পড়বেন। এ নামাজ ওয়াজিব যদি কোন সমস্যা না থাকে কিংবা মকরুহ ওয়াক্ত না হয় তাহলে তাওয়াফের পর পরই এ নামাজ আদায় করে নেয়া উত্তম। নতুবা পরে আদায় করে নিবেন। অনেক লোক দেখবেন কাঁদ খোলা রেখেই নামাজ পড়ে এটা মকরুহ। কাঁধ খোলা সে সকল তাওয়াফের সময় রাখতে হয় যে তাওয়াফের পর সায়ী করতে হয়।
মকামে ইবরাহীমে ২ রাকাত নামাজ আদায় করে এ দোয়া পাঠ করবেন, হাদীস শরীফে আছে (আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন- যে এ দোয়া করবেন আমি তার গুনাহ মাফ করে দিব, অভাব দুর করে দিব। দোয়া হল-
দোয়া করার পর এবার হজরে আসওয়াদ ও কাবার দরজার মধ্যবর্তী স্থানে এসে লেপ্টে যান এ স্থানটাকে মুলতাজিম বলে, সেখানে আপনি যথাসম্ভব আপনার সিনা, পিট, চেহেরা, হাত লাগান কান্না করেন চোখের পানি ছেড়ে দেন আর নিজের জন্য আর তামাম মুসলমানের জন্য নিজ ভাষায় দোয়া করুন। এটা দোয়া কবুল হওয়ার স্থান।
মুলতাজিমে দোয়া শেষে এবার চলে যাবেন জমজম এর পানি পান করার জন্য। কেবলামুখি হয়ে দাঁড়িয়ে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পাঠ কর।
সম্ভব না হলে দূর থেকে ইশারা করে বিসমিল্লাহে আল্লাহ আকবর ওয়ালিল্লাহিল হামদ্”দোয়াটি পাঠ করা এবং ৩ নং নিয়মের ন্যায় দাড়িয়ে ইশারা করে ‘তাওয়াফ’ শেষ করা।
তাওয়াফের নিয়্যাত
আল্লাহুম্মা ইন্নী উরীদু তাওয়াফা বাইতিকাল হারাম ফায়াচ্ছিরহু-লী, ওয়া তাক্বাব্বাল-হু-মিন্নী, সাবাআ’তা আশ্ওয়াতি্বন লিল্লাহি তায়া’লা। বাংলায় নিয়ত- হে আল্লাহ আমি তাওয়াফ পালনের জন্য নিয়ত করলাম।
সায়ীর নিয়ম
‘হজ্জ ও ওমরাহ’ ছাড়া নফল ‘তাওয়াফে’র কোন সায়ী নাই। কারো নামে ওমরাহ করতে হলেও সায়ী করতে হবে। সায়ী অর্থ দৌড়ানো। এটা ‘ছাফা’ পাহাড় থেকে প্রথমে শুরু করতে হবে। ছাফা থেকে মারওয়া।মারওয়া থেকে ছাফায়। এভাবে সাতবার সায়ীর সময় প্রথম তিন চক্কর সবুজ বাতির মাঝের অংশটুকু দৌড়ে দৌড়ে হেলে দুলে যাওয়া সুন্নাত (পুরুষদের জন্য)। পরের চার চক্কর সাধারণ গতিতে সম্পন্ন করতে হবে।
সায়ীর সহজ দোয়া
সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার ওয়া লা-হাওলা, ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহিল আ’লিয়্যিল আ’যীম, রাবি্বগফির ওয়ারহাম ওয়াআনতাল আ-আজ্জুল আকরাম।
সায়ীর কুরআনী দোয়া
‘ইন্নাছ্ ছাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন্ শাআ’ইরিল্লাহ্ ফামান হাজ্জাল বাইতা আও-ই’ তামারা ফালা জুনাহা আ’লাইহি আইয়াত্ত্বাওয়াফা বিহিমা ওমান তাত্বাওয়াআ খাইরান ফা-ইন্নাল্লাহা শাকিরুণ আ’লীম।” উপরোক্ত দুই দোয়া সাতবার চক্করের সময় হাটতে চলতে পড়তে হবে। পরেরটি না পারলে উপরেরটিই যথেষ্ট হবে।
হজ্জ ও ওমরাহর করনীয়
একনজরে তিন প্রকার হজ্জের জরুরী কাজ, হুকুম ও তারিখ সমূহ।
১ম প্রকার হজ্জে ইফরাদের ১১টি জরুরী কাজ
২য় প্রকার হজ্জে কেরানের জরুরী কাজ
৩য় প্রকার হজ্জে তামাত্তুর ১৫টি জরুরী কাজফরজ
৩টি ফরজ(১) ইহরাম (শুধু হজ্জের জন্য)।
(২) ৯ই জিলহজ্জ উ’কুফে আ’রাফা (সূর্য হেলার পর থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত)।
(৩) ১০ থেকে ১২ই জিলহজ্জ তাওয়াফে যিয়ারাত তবে ১০ই জি্বলহজ্ব তারিখই উত্তম।
(৪) অকুফে মুযদালেফায় ১০ই জিলহজ্জ সুবহে সাদেক সূর্য উদয় পর্যন্ত।
(৫) ১০ই জিলহজ্জ বড় শয়তানকে (জামারাতে আক্কাবায়) ৭টি কঙ্কর মারা। সুর্য হেলার পূর্বে দুপুর ১২টার আগে সুন্নত।
(৬) মাথা মুন্ডানো তবে দম দিতে হবে।
(৭) সায়ী ৯ তারিখের পূর্বে বা পরে) করে দিবেন।
(৮) ১১ তারিখে তিন শয়তানকে (প্রথম ছোট/মেঝ ও পড়ে বড়) ৭ক্ম৩=২১টি পাথর মারা।
(৯) ১২ তারিখে অনুরূপ তিন শয়তানকে ৭ক্ম৩= ২১টি পাথর মারা। সর্বমোট তিন দিনে ৭+২১+২১=৪৯টি কঙ্কর মারা।
(১০) ‘বিদায়ী তাওয়াফে’ (মক্কার বাইরের লোকদের জন্য) বিদায়ের পূর্বে। এটি ওয়াজিব।
(১১) তাওয়াফে কুদুম করা। (মক্কায় গিয়ে সর্বপ্রথম) ৩টি ফরজ
(১) ইহরাম (হজ্জ ও ওমরাহর জন্য)
(২) আরাফাতে অবস্থান।
(৩) তাওয়াফুয যিয়ারাত।১০টি ওয়াজিব
(৪) ওমরাহর তাওয়াফ
(৫) ওমরাহর সায়ী
(৬) হজ্জের সায়ী
(৭) অকুফে মুযদালিফায়
(৮) ১০ই জিলহজ্ব তারিখে বড় শয়তানকে ৭টি পাথর মারা (দুপুর ১২টার পূর্বে) সুন্নত।
(৯) দম দিতে হবে।
(১০) মাথা মুন্ডানো।
(১১) ১১ই জিলহজ্ব তারিখে তিন শয়তানকে পাথর মারা
(১২) ১২ তারিখে তিন শয়তানকে পূর্বের ছকের নিয়মে পৃথক পৃথক ভাবে সূর্য হেলার পরে নিয়ম অনুযায়ী পাথর মারা।
(১৩) বিদায়ী তাওয়াফ। ৪টি ফরজ
(১) ওমরাহর ইহরাম (বাংলাদেশ)।
(২) হজ্জের ইহরাম (৮ তারিখ মক্কায়)
(৩) উ,কুফে আরাফা (৯ই জিলহজ্জ সূর্য হেলার পর থেকে সুর্যস্তের পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত)।
(৪) তাওয়াফে জিয়ারত (১০ তারিখ অথবা ১১, ১২ তারিখ)১১টি ওয়াজিব
(৫) তাওয়াফে ওমরাহ (মক্কায় গিয়েই)
(৬) ওমরাহর সায়ী (ওমরাহ তাওয়াফের পরই)
(৭) মাথা মুন্ডানো (ওমরাহর পর)।
(৮) হজ্জের সায়ী
(৯) বড় শয়তানকে ৭টি পাথর মারা ( ১০ই জিলহজ্ব তারিখ সুর্য হেলার বা ১২টা পূর্বে) সুন্নত।
(১০) কুরবানী করা (পাথর মেরে ১০ তারিখ)।
(১১) মাথা মুন্ডানো দম দিতে হবে।
(১২) ১১ তারিখ তিন শয়তানকে ৭+৭+৭=২১টি পাথর মারা।
(১৩) ১২ তারিখে তিন শয়তানকে ৭+৭+৭=২১টি পাথর মারা (সর্বমোট তিন দিনে ৭+২১+২১=৪৯টি পাথর মারতে হবে)।
(১৪) বিদায়ী তাওয়াফ।
১ম দিন ৮ই জিলহজ্জ
ইহরাম অবস্থায় (ফরয) মক্কা থেকে হজ্জের নিয়্যাতে মিনায় রওয়ানা হোন।
এ দিনের কাজ দু’টি
(১) ইহরাম (ফরজ) (২) ৫ ওয়াক্ত নামাজ মিনায় আদায় করা (সুন্নাত)।
যোহর, আছর, মাগরিব, এশা ও ৯ তারিখ ফজর সর্বমোট ৫ ওয়াক্ত
২য় দিন ৯ই জিলহজ্জ
১। আরাফাতে অবস্থান (ফরজ)। ২। অকুফে মুযদালিফায় (ওয়াজিব)
আরাফাতে অবস্থান
– ফজরের নামাজ মিনায় পড়ে আরাফাতের ময়দানের দিকে রওয়ানা হোন।
– আরাফাতে সূর্য হেলার পর অর্থাৎ ১২টার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করা হজ্জের গুরুত্বপূর্ণ ফরজ।
– ওয়াক্ত মত তাবুতে (মসজিদে নামেরায় না গেলে) বা আরাফার ময়দানে যে কোন স্থানে জোহরের সময় জোহর নামাজ আদায় করুন।
– আসরের নামাজ আসরের সময় আদায় করুন, নির্দিষ্ট সময় বা আগে পরে, পৃথক পৃথক ভাবে।
– উল্লেখ্য: ‘মসজিদে নামেরায়’ জোহর ও আসরের জামাত এক আযান দুই ইকামাতে একত্রে আদায় করলে একত্রে দুই ওয়াক্ত আদায় করতে হয়, ওটার নাম ‘জমে তাক্বদীম’। কিন্তু তাবুতে বা অন্য কোন স্থানে একত্রে নয়। ভিন্ন সময় ভিন্ন ভাবে ওয়াক্ত মত আদায় করতে হবে।)
অকুফে মুযদালিফায় (ওয়াজিব)
– সূর্যাস্তের পর সাথে সাথে মাগরিব না পড়ে মুযদালিফায় রওয়ানা হোন।
– মুযদালিফায় মাগরিব ও এশার নামাজ এক আযান দুই এক্বামাতে একত্রে আদায় করুন। এটা ওয়াজিব এটার নাম ‘জামে তাখীর জামাতে পড়া উত্তম। মুযদালিফায় অবস্থান (ওয়াজিব) মুযদালিফায় থাকাকালীন পাহাড়ে অথবা তার পাদদেশে যে কোন ঘাস দুবলা থেকে খুঁজে খুঁজে পাথর মারার জন্য ৭২টি (চানাবুটের ন্যায় কঙ্কর) ছোট ছোট পাথর সংগ্রহ করে ইহরামের কাপড়ে বেঁধে নিন।
১০/১১/১২ তিন দিনে (৪৯টি পাথর) তিন শয়তানকে মারতে হবে।
– ১ম দিন ৭টি
– ২য় দিন ২১টি
– ৩য় দিন ২১টি
(সর্বমোট তিন দিনে ৭+২১+২১=৪৯টি )। তবে মিসিং হতে পারে বলে বেশী (৭২) নেওয়া সুন্নাত।
৩য় দিন ১০ই জিলহজ্জ
এ দিনের মোট কাজ ৪টি (১) বড় শয়তানকে পাথর মারা (২) কুরবানী (৩) মাথা মুন্ডানো (৪) তাওয়াফে যিয়ারাত করা
– মুযদালিফায় ফজরের নামাজ পড়ে সূর্য উদয়ের আগ পর্যন্ত অবস্থান করুন (ওয়াজিব)।
– মিনায় পৌছে বড় শয়তানকে ৭টি পাথর সূর্য হেলার আগে (১২টার পূর্বেই) মারুন। (সুন্নাত)।
– তারপর তামাত্তু ও কি্বরান হজ্জকারীগণ কুরবানী করুন (ওয়াজিব)।
– এরপর ইহরাম খুলে হালাল হয়ে স্বাভাবিক পোষাক পরিধান করুন। কিন্তু কোরবানী পূর্বে নয়। (তবে ইফরাদ হজ্জকারী কুরবানী না করলেও চলবে)।
– চুল ছাড়া বা মুন্ডানোর পর মক্কায় গিয়ে (সম্ভব হলে উত্তম) আজই তাওয়াফে যিয়ারত করুন। আজ করা সর্বোত্তম। (এটা ফরজ)তাওয়াফ শেষে মিনায় এসে রাত্রি যাপন করুন সুন্নাত।
৪র্থ দিন ১১ই জিলহজ্জ
– ১০ তারিখে কুরবানী, চুল ছাটা ও তাওয়াফে যিয়ারত না করে থাকলে আজ করুন।
– সূর্য হেলার পর থেকে (১২টার পর) মিনায় তিন শয়তানকে সূর্যাস্তের পূর্বে (প্রথম ছোট, তারপর মেজ অতঃপর বড়) ৭+৭+৭=২১টি পাথর মারুন (ওয়াজিব)। মিনায় রাত্রি যাপন করুন (সুন্নাত)।
৫ম দিন ১২ই জিলহজ্জ
– তাওয়াফে যিয়ারত ১০/১১ তারিখে না করে থাকলে আজ সূর্যাস্তের পূর্বে অবশ্যই করুন।
– মিনায় সূর্য হেলার পর থেকে (সুন্নাত সময় হল) সূর্যাস্তের পূর্বে ৭+৭+৭=২১টি পাথর (ছোট, মেজ ও বড় ) শয়তানকে মেরে সূর্যাস্তের পূর্বে) মক্কায় রওয়ানার চেষ্টা করুন।
১. তওয়াফের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ইজতেবা করা। ইজতেবা মানে- ডান কাঁধ খালি রেখে চাদরের মাঝের অংশ বগলের নীচ দিয়ে এনে চাদরের পার্শ্ব বাম কাঁধের উপর ফেলে দেয়া। তওয়াফ শেষ করার পর চাদর পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিবে। কারণ ইজতেবা শুধু তওয়াফের মধ্যে করতে হয়।
২. তওয়াফের প্রথম তিন চক্করে রমল করা। রমল মানে হচ্ছে- ছোট ছোট পদক্ষেপে দ্রুত হাঁটা। আর বাকী চার চক্করে রমল নেই বিধায় স্বাভাবিক গতিতে হাঁটবে। সাত চক্কর তওয়াফ শেষ করার পর ডান কাঁধ ঢেকে নিয়ে মাকামে ইব্রাহিমে আসবে এবং পড়বে-
( وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِإِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى )
(অর্থ- আরতোমরা মাকামে ইব্রাহিমকে তথা ইব্রাহীমেরদাঁড়ানোরজায়গাকেনামাযেরজায়গাবানাও।) [সূরা বাকারা, আয়াত: ১২৫]অতঃপর মাকামে ইব্রাহিমের পিছনে দুই রাকাত নামায আদায় করবে। প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা কাফিরুন পড়বে। দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস পড়বে। নামায শেষ করার পর হাজারে আসওয়াদের নিকট এসে সম্ভব হলে হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করবে। এক্ষেত্রে শুধু স্পর্শ করা সুন্নত। যদি স্পর্শ করা সম্ভবপর না হয় তাহলে ফিরে আসবে; ইশারা করবে না।
তিন: সায়ী
এরপর মাসআ (সায়ীস্থল) তে আসবে। যখন সাফা পাহাড়ের নিকটবর্তী হবে তখন পড়বে
(إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ)
(অর্থ-“নিঃসন্দেহে সাফা ও মারওয়া আল্লাহ তা’আলার নিদর্শনগুলোর অন্যতম”)[সূরা বাকারা, আয়াত: ১৫৮]এরপর বলবে: (نبدأ بما بدأ الله به)(অর্থ- আল্লাহ যা দিয়ে শুরু করেছেন আমরাও তা দিয়ে শুরু করছি)
অতঃপর সাফা পাহাড়ে উঠবে যাতে করে কাবা শরিফ দেখতে পায়। কাবা নজরে আসলে কাবাকে সামনে রেখে দুই হাত তুলে দুআ করবে। দুআর মধ্যে আল্লাহর প্রশংসা করবে এবং যা ইচ্ছা দুআ করবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দুআর মধ্যে ছিল-
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ أَنْجَزَ وَعْدَهُ وَنَصَرَ عَبْدَهُ وَهَزَمَ الأَحْزَابَ وَحْدَهُ.
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহ। লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহ, আনজাযা ওয়াদাহ, ওয়া নাসারা আবদাহ, ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহদা।
(অর্থ- “নেই কোন উপাস্য এক আল্লাহ ব্যতীত। তিনি নিরঙ্কুশ। রাজত্ব তাঁর-ই জন্য। প্রশংসা তাঁর-ই জন্য। তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। নেই কোন উপাস্য এক আল্লাহ ছাড়া। তিনি প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছেন। তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং তিনি একাই সর্ব দলকে পরাজিত করেছেন।)[সহিহ মুসলিম (১২১৮)] এই যিকিরটি তিনবার উচ্চারণ করবেন এবং এর মাঝে দুআ করবেন। একবার এই যিকিরটি বলবেনএরপর দোয়া করেন। দ্বিতীয়বার যিকিরটি বলবেন এবং এরপর দুআ করবেন। তৃতীয়বার যিকিরটি বলে মারওয়া পাহাড়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে যাবেন। তৃতীয়বারে আর দুআ করবেন না। যখন সবুজ কালার চিহ্নিত স্থানে পৌঁছবেন তখন যত জোরে সম্ভব দৌঁড়াবেন। কিন্তু কাউকে কষ্ট দিবেন না। দলিল হচ্ছে- হাদিসে সাব্যস্ত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাফা-মারওয়ার মাঝখানে সায়ী (প্রদক্ষিণ) করেছেন এবং বলেছেন: “আবতাহ দৌঁড়িয়ে পার হতে হবে।” [সুনানে ইবনে মাজাহ (২৪১৯), আলবানী হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন] আবতাহ হচ্ছে- বর্তমানে দুইটি সবুজ রঙে চিহ্নিত স্থান। দ্বিতীয় সবুজ রঙ চিহ্নিত স্থান থেকে স্বাভাবিক গতি হাঁটবে। এভাবে মারওয়াতে পৌঁছবে। মারওয়ার উপরে উঠে কিবলামুখি হয়ে হাত তুলে দুআ করবে। সাফা পাহাড়ের উপর যা যা পড়েছে ও বলেছে এখানে তা তা পড়বে ও বলবে। এরপর মারওয়া থেকে নেমে সাফার উদ্দেশ্যে হেঁটে যাবে। স্বাভাবিকভাবে হাঁটার স্থানে হেঁটে পার হবে; আর দৌঁড়াবার স্থানে দৌঁড়ে পার হবে। সাফাতে পৌঁছার পর পূর্বে যা যা করেছে তা তা করবে। মারওয়ার উপরেও আগের মত তা তা করবে। এভাবে সাত চক্কর শেষ করবে। সাফা থেকে মারওয়া গেলে এক চক্কর। মারওয়া থেকে সাফাতে এলে এক চক্কর। তার সায়ীর মধ্যে যা খুশি যিকির, দুআ, কুরআন তেলাতেয়াত করতে পারবে।
জ্ঞাতব্যঃ
(إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ)
(অর্থ-“নিঃসন্দেহে সাফা ও মারওয়া আল্লাহ তা’আলার নিদর্শনগুলোর অন্যতম”)[সূরা বাকারা, আয়াত: ১৫৮] এই আয়াতটি শুধু সায়ীর শুরুতে সাফার নিকটবর্তী হলে পড়বে। সাফা-মারওয়াতে প্রতিবার আয়াতটি পড়বে না যেমনটি কিছু কিছু মানুষ করে থাকে।
চার: মাথা মুণ্ডন বা চুল ছোট করা:
সাত চক্কর সায়ী শেষ করার পর পুরুষ হলে মাথা মুণ্ডন করবে অথবা মাথার চুল ছোট করবে। মুণ্ডন করলে মাথার সর্বাংশের চুল মুণ্ডন করতে হবে। অনুরূপভাবে চুল ছোট করলে মাথার সর্বাংশের চুল ছোট করতে হবে। মাথা মুণ্ডন করা চুল ছোট করার চেয়ে উত্তম।
Subscribe to:
Comments (Atom)
কোরআনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
০১) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনুল কারীমে কতটি সূরা আছে? উত্তরঃ ১১৪টি। ০২) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের প্রথম সূরার নাম কি? উত্তরঃ সূরা ফাতিহা। ০৩) প্রশ্ন...
-
০১) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনুল কারীমে কতটি সূরা আছে? উত্তরঃ ১১৪টি। ০২) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের প্রথম সূরার নাম কি? উত্তরঃ সূরা ফাতিহা। ০৩) প্রশ্ন...
-
ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) ছিলেন হযরত নূহ (আঃ)-এর সম্ভবত: এগারোতম অধঃস্তন পুরুষ। নূহ থেকে ইবরাহীম পর্যন্ত প্রায় ২০০০ বছরের ব্যবধান ছিল। হযরত ছা...