হযরত ইমাম মাহদি (আঃ) এর পরিচিতি :
♦নাম ও বংশ :
.
উনার প্রকৃত নাম মুহাম্মদ। (আবু দাউদ, হাদিস নং ৩৬০১)। উপনাম : আবু আব্দুল্লাহ / আবুল কাশেম। উপাধি : মাহদি (আঃ)।
.
হাদিসে এসেছে, মাহদি আমার বংশে ফাতেমা’র সূত্রধরে আগমন করবে। (আবু দাউদ, হাদিস নং ৩৬০৩/৪২৮৪)।
.
হাদিসে আরো এসেছে “মাহদি আমার বংশে হবে। কোনো এক রজনীতে মহান স্রষ্টা তাঁকে ঐশ্বর্য দান করবেন ও সংশোধন করবেন।” (সুনানে ইবনে মাজাহ, বিশৃঙ্খলা অধ্যায়; হাদিস নং ৪০৮৫, সনদ সহিহ) ।
.
উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, আশ্চর্য হচ্ছি এ ভেবে যে, আমার উম্মতের মধ্য হতে একটি দল বায়তুল্লায় আশ্রয় নেয়া এক ব্যক্তিকে আক্রমণ করতে অগ্রসর হবে। যখন তারা মরুপ্রান্তর পাড়ি দেবে তখন তাদেরকে জমিনের ভেতর ধসিয়ে দেয়া হবে।” (সহিহ বুখারি, ব্যবসা অধ্যায়, বাজার পরিচ্ছেদ এবং সহিহ মুসলিম, হা/২৮৮২ ফেতনা অধ্যায়, তিরমিযী হা/১২৭৬) ।
.
এখানে বায়তুল্লায় আশ্রয় নেয়া এক ব্যক্তি বলে ইমাম মাহদি (আঃ)-কেই বুঝানো উদ্দেশ্য। কারণ তিনি কুরাইশী এবং কেয়ামত পূর্বমুহূর্ত আল্লাহ তায়ালার সম্মানিত খলিফা।
.
♦জন্ম ও জন্মভূমি :
.
তিনি স্বাভাবিকভাবে মানুষের মতই মাতাপিতার ওরসে জন্ম লাভ করবেন। তাঁর জন্মস্থল নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে কানজুল উম্মাল কিতাবের (হা/৩৯৬৭১) দুর্বল একটি রেওয়ায়েত দ্বারা বুঝায় যে, তাঁর জন্মস্থল হবে ‘মদিনা’।
.
তবে হযরত ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন “হে কূফাবাসী তোমরা ইমাম মাহদি’র আগমনে অত্যন্ত সৌভাগ্যবান।” এতে এও বুঝা যায় যে, কূফা শহর তাঁর জন্মস্থল হতে পারে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ, হা/৩৩১২১ এবং ৩৮৭৯৮)।
কিন্তু সহিহ রেওয়ায়েত দ্বারা এটি সুস্পষ্ট নয়। তাই মতভেদ হওয়া স্বাভাবিক।
.
♦ইমাম মাহদির বৈশিষ্ট্য :
.
তাঁর শারিরীক গঠন মধ্যম আকৃতির হবে। ললাট দীপ্তিময়, উজ্জ্বল, ডাগর চক্ষুবিশিষ্ট। সম্মুখের উজ্জ্বল দাঁতগুলো ফাঁকা। ঘন দাড়ি বিশিষ্ট। সাদা ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করবেন ইত্যাদি। তখন তাঁর বয়স থাকবে চল্লিশ। (তাবারানী ফিল-কাবীর, হা/৭৪৯৫; এর সনদ দুর্বল হলেও ভিন্ন হাদিস দ্বারা এসব সমর্থিত) ।
.
হাদিসে আরো এসেছে “মাহদি আমার বংশধর। তিনি উজ্জ্বল ললাটের ও বাঁকা নাসিকা বিশিষ্ট হবেন। পৃথিবীকে ন্যায় নীতি ও ইনসাফ দ্বারা ভরপুর করে দেবেন। তিনি সাত বছর শাসন করবেন।” (সুনানে আবু দাউদ : হা/৪২৮৫; এর সনদ সহিহ) । কে হবেন ইমাম মাহদি?
.
“মাহদি” শব্দের অর্থ পথপ্রদর্শক। কেয়ামত পূর্বমুহূর্ত তিনি মুসলিম জাতির প্রাণ রক্ষা ও সহায়তা করবেন বিধায় তাকে মাহদি উপাধি প্রদান করা হয়েছে।
.
যুগে যুগে যেসব স্বার্থান্বেষী মহল নিজে বা অন্যকে “মাহদি” বানিয়ে দাঁড় করিয়ে তামাশার পথ বেচে নিয়েছিল, তাঁরা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। তাই জনস্বাধারণের অবগতির জন্য বেসিক দু’চারটে কথা না বললেই নয়। মনে রাখবেন, হযরত ইমাম মাহদি (আ) তিনি কোনো নবী নন, ফেরেশতাও নন। তাঁর নামের শেষাংশে দোয়াস্বরূপ “আলাইহিস সালাম” যোগ করা হয়। যেমন হযরত খিজির, বিবি মারিয়াম, বিবি আছিয়া প্রমুখ মহামানবদের নামের শেষাংশে করা হয়। তিনি কুরাইশ বংশে হযরত ফাতেমা’র আওলাদ হতে আসবেন। হাদিসে এসেছে “আল্লাহ তায়ালা আমার বংশ হতে এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করবেন। আমার নামেই তাঁর নাম, তাঁর পিতার নাম আমার পিতার নামেই থাকবে।”
(সহিহ আল-জামে, হা/৫০৭৩, মুসনাদে আহমদ ৩/২৬-২৭, তিরমিযী, হা/২২৩২)।
.
ইমাম মাহদি (আঃ) তিনি বায়তুল্লাহ শরিফেই আত্মপ্রকাশ করবেন। দাজ্জাল আর হযরত মসীহে ঈসা এবং প্রতিশ্রুত ইমাম হযরত মাহদি সবার সময়কাল একই হবে। প্রতিশ্রুত ইমাম হযরত মাহদি’র জীবদ্দশাতেই বিশ্বে ইসলামী স্টেট প্রতিষ্ঠা হবে, তিনি ৭/৮/৯ বছর খেলাফত করবেন অতপর স্বাভাবিকভাবে ইন্তেকাল করবেন। যারা উপরুল্লিখিত আলোচনাদি স্মরণে রাখবেন তারা আমৃত্যু ভণ্ডদের ভন্ডামি আর প্রতারণায় কিছুতেই বিভ্রান্ত হবেননা।
.
♦ইমাম মাহদি (আঃ) এর আগমন সম্পর্কে বিশ্বনবীর ভবিষৎবাণী :
ইমাম মাহদি (আ) কেয়ামত পূর্বমুহূর্ত বায়তুল্লাহ শরিফে আশ্রয় নেবেন। দুশমন বাহিনী তাঁকে হত্যা করার জন্য বায়তুল্লাহ শরিফে আক্রমণ করতে চাইবে। বিস্তারিত এই
.
১-
সহিহ মুসলিম শরিফে (হা/২৮৮৪) এবং মুসনাদে আহমদ কিতাবে (হা/২৪৭৮২) এসেছে “আশ্চর্যজনক ব্যাপার হল, আমার উম্মতের একটি দল বায়তুল্লায় আশ্রয় নেয়া এক কুরাইশীকে হত্যাকরার জন্য অগ্রসর হবে। দলটি মরুভূমিতে অবস্থানরত অবস্থায় ভূমিকম্পের সম্মুখীন হবে।” উল্লেখ্য, এখানে “কুরাইশী” বলে ইমাম মাহদি (আ)-ই উদ্দেশ্য।
.
২-
হাদিসে এসেছে “আসমান থেকে এক ব্যক্তির নামধরে ডাকা হবে। তাঁকে কোনো নিম্নশ্রেণীর মানুষ প্রত্যাখ্যান করবেনা, কোনো বিত্তশালী ও ক্ষমতাবান লোকেও অগ্রাহ্য করবেনা।”
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ, হা/৩৭৭৫৫, হাদিসটি হাসান স্তরের হাদিস)।
৩-
হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, সূর্যের মাঝে যখন একটি আশ্চর্যজনক চিহ্ন প্রকাশ পাবে, ইমাম মাহদি তখনি আত্মপ্রকাশ করবেন।
(মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হা/২০৭৭৫, ইমাম বুখারীর উস্তাদ ইমাম নাঈম ইবনে হাম্মাদ, হাদিস নং ৯৫১; হাদিসটির সনদ সহিহ) ।
এখানে ইমাম মাহদি (আঃ)-এর আত্মপ্রকাশ করার কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে।
৪-
হাদিসে এসেছে, রাসূলেপাক (সাঃ) বলেছেন “শেষ যামানায় এক ব্যক্তি খলিফা হয়ে আসবেন। তিনি মানুষের মাঝে সম্পদ বণ্টন করবেন।
(সহিহ মুসলিম, ফেতনা অধ্যায়, মুসনাদে আহমদ, ৩/৮০)।
৫-
হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, আশ্চর্য হচ্ছি এ ভেবে যে, আমার উম্মতের মধ্য হতে একটি দল বায়তুল্লায় আশ্রয় নেয়া এক ব্যক্তিকে আক্রমণ করতে অগ্রসর হবে। যখন তারা মরুপ্রান্তর পাড়ি দেবে তখন তাদেরকে জমিনের ভেতর ধসিয়ে দেয়া হবে।”
(সহিহ বুখারি, ব্যবসা অধ্যায়, বাজার পরিচ্ছেদ এবং সহিহ মুসলিম, হা/২৮৮২ ফেতনা অধ্যায়, তিরমিযী হা/১২৭৬) ।
এখানে বায়তুল্লায় আশ্রয় নেয়া এক ব্যক্তি বলে ইমাম মাহদি (আঃ)-কেই বুঝানো উদ্দেশ্য। কারণ তিনি কুরাইশী এবং আল্লাহ তায়ালার খলিফা।
.
৬-
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : শেষ যামানায় আমাদের বংশ হতে তিন ব্যক্তি আগমন করবেন। ছাফফাহ, মানসূর এবং ইমাম মাহদি।
(বায়হাক্বী, দালায়েলুন নবুওয়াত ৬/৫১৪, তারিখে বাগদাদ ১/৬৩, তারিখে ইবনে কাসীর ৬/২৫১, হাকিম ৪/৫১৪)
৭-
হাদিসে এসেছে, রাসূলেপাক (সাঃ) বলেছেন : আমার উম্মতের মাঝে মাহদির আত্মপ্রকাশ হবে। তিনি সর্বনিম্ন সাত বছর আর সর্বোচ্চ নয় বছর শাসনকার্য পরিচালনা করবেন।
(সুনানে ইবনে মাজাহ, ইমাম মাহদি পরিচ্ছেদ, হা/৪০৮৩; হাদিসটির সনদ সহিহ) ।
৮-
বিশিষ্ট তাবেয়ী ও বুখারীর অন্যতম বর্ণনাকারী হযরত মুহাম্মদ ইবনে শিরীন (রহঃ) হতে বর্ণিত যে, “ইমাম মাহদি (আ) এ উম্মতের মধ্য থেকেই আসবেন। তিনি হযরত ঈসা (আঃ)-এর ইমামতি করবেন। “
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ, হা/৩৮৮০৪)
৯-
বিশিষ্ট তাবেয়ী ও বুখারীর অন্যতম বর্ণনাকারী হযরত সাঈদ ইবনে মুছাইয়্যেব (রহঃ) বলেন, শেষ যামানায় মানুষ নানা দল-উপদলে বিভক্ত হবে। পরস্পরে মতবিরোধ ছড়িয়ে পড়বে। আসমানের দিগন্তে একটি ঝুলন্ত হাত প্রকাশ পাবে আর আসমান থেকে আহবান করবে যে, ওই ব্যক্তিই তোমাদের নেতৃত্বদানকারী মহান পুরুষ।”
(ইমাম বুখারীর উস্তাদ ইমাম নাঈম ইবনে হাম্মাদ, হাদিস নং ৯৭২; হাদিসটির সনদ সহিহ) ।
No comments:
Post a Comment