উত্তম চরিত্রের জন্য আমল ঃ-আল্লাহুম্মাহ দিনি লিআহসানিল আ’মালি ওয়া আহসানিল আখলাক্বি; ফাইন্নাহু লা ইয়াহদি লিআহসানিহা ইল্লা আংতা; ওয়া ক্বিনি সাইয়্যিআল আ’মালি ওয়া সাইয়্যিআল আখলাক্বি; ফাইন্নাহু লা ইয়াক্বি সাইয়্যিআহা ইল্লা আংতা।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাকে সর্বোত্তম কাজ ও উন্নত চরিত্র দান করো। কেননা তুমি ছাড়া অন্য কেউ তা দান করতে পারে না। এবং আমাকে অন্যায় কাজ ও খারাপ চরিত্র থেকে বাঁচাও। কেননা তুমি ছাড়া অন্য কেউ তা থেকে কাউকে বাঁচাতে পারে না। (নাসাঈ)
আল্ লাত্বিফু ঃআল্লাহর গুণবাচক নাম (اَللَّطِيْفُ) ‘আল-লাত্বিফু’-এর জিকিরের আমল ও ফজিলত তুলে ধরা হলো-
উচ্চারণ : ‘আল-লাত্বিফু’
অর্থ : ‘নিজের বান্দার ওপর কোমলতা প্রদর্শনকারী’
আল্লাহর গুণবাচক নাম (اَلْعَدْلُ)-এর আমল
ফজিলত
>> যে ব্যক্তি অর্থ সংকটে পড়ে, অতি কষ্টে জীবন-যাপন করে বা অসুস্থতায় তার কেউ সেবা-শুশ্রূষা করে না অথবা তার কন্যা সন্তানের কেউ খোঁজ খবর নেয় না; ওই ব্যক্তি যেন উত্তম রূপে অজু করে দু’রাকাআত নামাজ পড়ে নিজের উদ্দেশ্য সাধনে আল্লাহ তাআলার পবিত্র গুণবাচক (اَللَّطِيْفُ) ‘আল-লাত্বিফু’ নামটি ১০০ বার পাঠ করে; তবে আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাঁর উদ্দেশ্য সম্পাদন করে দেবেন।
>> এমনিভাবে যে ব্যক্তি ছোট শিশু-বাচ্চাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন, রোগমুক্তি এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজ পরিপূর্ণতার জন্য নিয়মিত আল্লাহ তাআলার পবিত্র গুণবাচক (اَللَّطِيْفُ) ‘আল-লাত্বিফু’ নামটি ১০০ বার পাঠ করা আবশ্যক।
অন্যের বিপদের দোয়া পাঠ ঃউচ্চারণ :
আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আ’ফানি মিম্মাবতালাকা বিহি, ওয়া ফাদ্দালানি আ’লা কাছিরিম মিম্মান খালাকা তাফদিলা।
অর্থ : সকল প্রশংসা সে আল্লাহর জন্য, যিনি তোমাকে বিপদ দ্বারা পরীক্ষায় নিপতিত করেছেন, তা হতে আমাকে নিরাপদ রেখেছেন এবং তার সৃষ্টির অনেকের চেয়ে আমাকে অনুগ্রহ করেছেন। (তিরমিজি)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়ার সব বিপদাপদে হিফাজত করুন। সবাইকে সব বিপদগ্রস্ত লোকদের কল্যাণে এগিয়ে আসার এবং দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
গুনাহ মাফের শ্রেষ্ঠ 5 টি আমল ঃ-পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেন,
যারা কখনও কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেলে কিংবা মন্দ কাজে জড়িয়ে পড়ে। অতঃপর সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহ ছাড়া তাদের পাপ কে ক্ষমা করবেন? (সূরা আল-ইমরান: ১৩৫)।
রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, দয়াময় আল্লাহ তায়ালা রাতের বেলায় ক্ষমার হাত প্রসারিত করে ডাকতে থাকেন দিনের বেলায় গোনাহগারদের ক্ষমা করার জন্য। আর রাত্রিকালীন গোনাহগারদের মাফ করার জন্য দিনের বেলা ক্ষমার হাত প্রসারিত করে ডাকতে থাকেন। এ অবস্থা পশ্চিম আকাশ থেকে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। (সুনানে বায়হাকি : ১৬২৮১)।
তওবা ছাড়াও বিভিন্ন আমল দ্বারা গোনাহ মাফ হওয়ার কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।
এ ধরনের কয়েকটি আমল হলো_ প্রথম আমল- দ্বীনি মজলিসে বসা।
বোখারি শরিফে এসেছে, একদা রাসূলুল্লাহ (সা.) মসজিদে তালিমের মজলিসে ছিলেন। এ সময় তিনজন লোক এলো।
তাদের একজন মজলিসে ফাঁকা জায়গা দেখে বসে পড়ল আরেকজন ভিড় দেখে চলে গেল, অপরজন চলে যেতে লজ্জাবোধ করল এবং পেছনে বসল। রাসূল (সা.) আলোচনা শেষে বললেন, আমি তোমাদের তিন ব্যক্তির অবস্থা শোনাব। তাদের একজন আল্লাহর কাছে আশ্রয় নিয়েছে এবং আল্লাহ পাকও তাকে আশ্রয় দিয়েছেন। আরেকজন মজলিস থেকে চলে যেতে লজ্জাবোধ করল আল্লাহ তায়ালাও তাকে শাস্তি দিতে লজ্জাবোধ করলেন। আর তৃতীয় ব্যক্তি মজলিস থেকে বিমুখ হয়ে চলে গেল আল্লাহ পাকও তার থেকে বিমুখ হলেন। (বোখারি : ৬৬)।
দ্বিতীয় আমল নিদ্রা যাওয়ার সময় তিনবার পাঠ করা_ আস্তাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল কাইয়ুমি ওয়া আতুবু ইলাইহি। সাহাবি আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি শয়নকালে তিনবার উপরোক্ত ইস্তেগফার পড়বে তার পাপরাশি সমুদ্রের ফেনা, আকাশের নক্ষত্ররাজি কিংবা মরুভূমির বালুকণা কিংবা দুনিয়ার দিনগুলোর পরিমাণ হলেও আল্লাহ পাক তা মাফ করে দেবেন। (তিরমিজি : ২৩০৪)।
তৃতীয় আমল প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর উপরোক্ত ইস্তিগফার তিনবার পাঠ করা। হজরত বারা (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর তিনবার এ ইস্তিগফার পড়বে তার গোনাহগুলো মোচন করা হয়, যদিও সে জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করে থাকে। (তাবরানি : ১৪০০)।
চতুর্থ আমল প্রতিদিন ১০০ বার পাঠ করা_সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি দৈনিক উপরোক্ত তাসবিহ ১০০ বার পাঠ করবে তার পাপগুলো সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হলেও মাফ হয়ে যাবে।(বোখারি ও মুসলিম)।
পঞ্চম আমল নামাজে সূরা ফাতেহার পর আমিন বলা। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, ইমাম যখন সূরা ফাতেহা শেষ করে আমিন বলেন, তখন তোমরাও আমিন বলো। কেননা যার আমিন ফেরেশতাদের আমিনের সঙ্গে মিলে যাবে তার গোনাহগুলো মোচন হয়ে যাবে। (নাসায়ী : ১০০০)
১০টি বিপদ থেকে মুক্তি করবে এ সূরা গুলিঃ-১। সূরা ফতিহা আল্লাহর গজব হতে রক্ষার কারণ হয়।
২। সূরা ইয়াসীন কিয়ামতের দিন পিপার্সাত হওয়া থেকে রক্ষার মাধ্যম হবে।
৩। সূরা দুখান কিয়ামতের দিনের ভয়াল অবস্থা হতে রক্ষার মাধ্যম হবে।
৪। সূরা ওয়াকি’আ দরিদ্রতা হতে রক্ষার কারণ হয়।
৫। সূরা মূলক কবরের আযাব হতে রক্ষার মাধ্যম হবে।
৬। সূরা কাওসার শত্রুর অনিষ্ট হতে রক্ষার কারণ হয়।
৭। সূরা কাফিরুন মৃত্যুর সময় কুফরী হতে রক্ষার কারণ হয়।
৮। সূরা ইখলাস মুনাফিকী হতে রক্ষার কারণ হয়।
৯। সূরা ফালাক হিংসুকের হিংসার হতে রক্ষার কারণ হয়।
১০। সূরা নাস যাবতীয় ওয়াসাওয়াসা হতে রক্ষার কারণ।
সালাতুল তাসবিহ এর ফজিলতঃ
হযরত ইবনে আব্বাস(রাঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) হযরত ইবনে আব্বাস(রাঃ) কে বলেন, “হে আব্বাস, আমার চাচা আমি কি আপনাকে একটি দান বা বকশিশ দিব, আপনার সামনে একটি তফফা পেশ করব, আমি কি আপনাকে এমন একটি আমল বলে দিব যা পালন করলে আপনি ১০ টি উপকার লাভ করবেন অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা আপনার অতিত- ভবিষ্যতের, নতুন-পুরাতন, ভুলে বা জেনেশুনে, ছোট – বড়, গোপনে বা প্রকাশে করা সকল গুনাহ এ মাফ করে দিবেন।সেই আমল হল আপনি ৪রাকাত সালাতুল তাসবিহ আদায় করবেন।
আয়াতুল কুরসির ফজিলতঃ আবু হুরাইরাহ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে রমজানের জাকাতের প্রহরী নিযুক্ত করেন। আমার কাছে এক আগমনকারী এসে ওই মাল থেকে কিছু কিছু করে উঠিয়ে নিয়ে সে তার চাদরে জমা করতে থাকে। আমি তাকে ধরে ফেলি এবং বলি, তোমাকে আমি রসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে নিয়ে যাব। সে বলল, আমাকে ছেড়ে দিন। আমি খুবই অভাবী লোক। তখন আমি তাকে ছেড়ে দেই। সকালে রসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে জিজ্ঞেস করেন, তোমার রাতের বন্দী কী করেছিল? আমি বলি, হে আল্লাহর রসুল! সে তার ভীষণ অভাবের অভিযোগ করায় তার প্রতি আমার দয়া হয়, তাই আমি তাকে ছেড়ে দেই। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে। সে আবার আসবে। আমি রসুলুল্লাহ (সা.)-এর কথায় বুঝলাম যে, সে সত্যিই আবার আসবে। আমি পাহারা দিতে থাকলাম। সে খাদ্য উঠাতে থাকল। আমি আবার তাকে ধরে ফেলে বললাম, তোমাকে আমি রসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে নিয়ে যাব। সে আবার ওই কথাই বলল, আমাকে ছেড়ে দিন, আমি খুবই অভাবী।
তার প্রতি আমার দয়া হলো। কাজেই তাকে ছেড়ে দিলাম। সকালে আমাকে রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, হে আবু হুরায়রা! তোমার রাতের বন্দীটি কী করেছে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রসুল! সে অভাবের অভিযোগ করায় আমি তাকে দয়া করে ছেড়ে দিয়েছি। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে। সে আবার আসবে। আমি আবার তৃতীয় রাতে পাহারা দেই। অতঃপর সে এসে খাদ্য উঠাতে থাকল। আমি তাকে বলি : এটাই তৃতীয়বার এবং এবারই শেষ। তুমি বারবার বলছ যে, আর আসবে না, অথচ আবার আসছ। সুতরাং তোমাকে আমি রসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে নিয়ে যাব। তখন সে বলল, আমাকে ছেড়ে দিন। আমি আপনাকে এমন কতগুলো কথা শিখিয়ে দিচ্ছি যার মাধ্যমে আল্লাহ আপনার উপকার সাধন করবেন। আমি বললাম, ওইগুলো কি? সে বলল, ‘যখন আপনি বিছানায় শয়ন করবেন তখন আয়াতুল কুরসি শেষ পর্যন্ত পড়বেন। এতে মহান আল্লাহ আপনার রক্ষক হবেন এবং সকাল পর্যন্ত আপনার সামনে কোনো শয়তান আসতে পারবে না।’ তারা ভালো জিনিসের খুবই লোভী। অতঃপর (আবু হুরায়রা থেকে এ কথাগুলো শোনার পর) নবী করিম (সা.) বললেন, সে চরম মিথ্যাবাদী হলেও এটা সত্যই বলেছে। হে আবু হুরায়রা! তুমি তিন রাতে কার সঙ্গে কথা বলেছ তা কি জান? আমি বললাম, না। তিনি (সা.) বললেন, সে শয়দান। [সূত্র : সহি বোখারি, ফাতহুল বারী হা/২৩১১]
কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ দোয়াঃ
সকাল-সন্ধা তিন বার এই দোয়া পড়বেঃ
بِسْمِ اللهِ الّذِى لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَىْءٌ فِىْ الاَرْضِ وَلاَ فِى السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
উচ্চারণঃ বিসমিলস্নাহিলস্নাযি লা ইয়াদুররম্ন মায়াস্ মিহী শাইউন ফিল আরদী ওয়া লা ফিস্সামায়ী ওয়া হুয়াস্সামীউল ‘আলীম।
সকাল-সন্ধা তিন বার এই দোয়া পড়বেঃ
اَعُوْذْ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
উচ্চারণঃ আউযু বি কালীমাতিলস্নাহিত্ তাম্মাতি মিন শাররী মা খালাকা।
সকাল-সন্ধা তিন বার এই দোয়া পড়বেঃ
اَعُوْذْ بِاللهِ السَّمِيْعِ الْعَلِيْمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ
উচ্চারণঃ আউযু বিলস্নাহিস্ সামীয়ীল ‘আলীমি মিনাশ্ মাইতানির রাযীম।
সকাল সন্ধ্যায় তিন বার قُلْ هُوَ اللهُ শরীফ (সূরাঃ ইখলাস) এবং তিন বার قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ (সূরাঃ ফালাক) পড়িবে, এবং তিন বার قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاَسِ (সূরাঃ নাস) পড়িবে।
সকাল-সন্ধা এই দোয়াটিও বেশি বেশি পড়া যায়-
اللهُمَّ اِنِّى اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الكَسَلِ وَالْحَرَمِ وَسُوْءِ الْكِبَرِ وفِتْنَةِ الدُّنْياَ وَ عَذاَبِ الْقَبْرِ
উচ্চারণঃ আলস্নাহুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিনাল কাসালি ওয়াল হারামী ওয়া সুইল কিবারি ওয়া ফিতনাতিদ্ দুনিয়া ওয়া আযাবিল কবরি।
ভোরে এই দোয়া পড়িবেঃ
اَصْبَحْنَا وَاَصْبَحَ الْمَلِكُ لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ, اَلّلهُمَّ اِنِّىْ اَسْئَلُكَ خَيْرَ هذَا الْيَوْمِ وَفَتْحَه وَنَصْرَه وَنُوْرَه وَبَرَكَتَه وَهُدَاه وَاَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِّمَا فِيْه وَشَرِّمَا بَعْدَه-
উচ্চারণঃ আসবাহনা ওয়া আসবাহাল মালিকু লিলস্নাহি রাব্বীল আলামীন, আলস্নাহুম্মা ইন্নী আসআলূকা খাইরা হাযাল ইয়াওমি ওয়া ফাতহাহু ওয়া নাসরাহু ওয়া নূরাহু ওয়া হুদাহু ওয়া আউযুবিকা মিন শাররী মা ফিহি ওয়া শাররী মা বাদাহু।
এই দোয়াটিও সকাল সন্ধ্যায় পড়া যাবেঃ
اَللّهُمَّ بِكَ اَصْبَحْنَا وَبِكَ اَمْسَيْنَا وَبِكَ نَحْنَ وَبِكَ نَمُوْتُ وَاِلَيْكَ النُّشُوْرُ-
উচ্চারণঃ আলস্নাহুম্মা বিকা আসবাহনা ওয়া বিকা আমসাইনা ওয়া বিকা নাহয়া
দৈনিক সকাল সন্ধ্যা কম পক্ষে দশ বার করিয়া এই কালেমায়ে শাহাদাত অবশ্যই পরিবেঃ
لَا اِلهَ اِلّااللهُ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَه – لَه الْمُلْكُ وَلَه الْحَمْدُ, وَهُوَ عَلى كُلِّ شَيْئٍ قَدِيْرٌ-
উচ্চারণঃ লা ইলাহা ইলস্নালস্নাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুলিস্ন শাইয়িন কাদীর।
এই তসবীহটি সকাল সন্ধ্যায় একশত বার করিয়া পরিবেঃ
سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِه, سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيْمِ*
উচ্চারণঃ সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী, সুবহানাল্লাহি আজীম।
খাবার খাওয়ার কিছু সুন্নত আমলঃ খানা সামনে আসলে এই দোয়া পড়বে –
اَللّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْما رَزَقْتَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা বারিকলানা ফিমা রাজাকতানা ওয়া কিনা আ‘জাবান নার।
খানা খাওয়ার শুরুতে এই দোয়া পড়বে-
بِسْمِ اللّهِ وَ عَلى بَرَكَةِ اللهِ
উচ্চারণঃ বিস্মিল্লাহি ও‘আলা বারাকাতিল্লাহ
খানার শুরুতে দোয়া পড়তে ভুরে গেলে খানার মাঝে স্মরণ আসার পর এই দোয়া পড়বে-
بِسْمِ اللهِ أَوَّلَه وَآخِرَه
উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহি আউয়্যালাহু ওয়া আখীরাহ।
খানার শেষে এই দোয়া পড়বে –
اَلْحَمْدُ لِلّهِ الَّذِيْ اَطْعَمَنَا وَ سَقَانَا وَ جَعَلَنَا مِنَ الْمُسْلِمِيْن.
উচ্চারণঃ আলহামদুলিল্লাহিল্লাজী আতআ‘মানা ওয়া ছাক্বানা ওয়া জাআলানা মিনাল মুসলিমীন।
দাওয়াত খাওয়ার পর এই দোয়া পড়বে –
اَللّهُمَّ اَطْعِمْ مَنْ اَطْعَمَنِيْ وَ اَسْقِ مَنْ سَقَانِيْ
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আতঈম মান আত‘আামনী ওয়া আস্কী মান সাকানী।
রাতে ঘুমানোর পূর্বে আমল ঃরাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলিম যদি দুইটি কাজ নিয়মিত করতে পারে তাহলে জান্নাতে প্রবেশ করবে। কাজ দুইটি খুবই সহজ কিন্তু করার মানুষ খুব কম। প্রথমত, প্রত্যেক সালাতের পরে ১০ বার ‘সুবহানাল্লাহ’, ১০ বার ‘আল-হামদুলিল্লাহ ‘ ও ১০ বার ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে। এতে ১৫০ বার জিহ্বার জিকর হবে এবং আল্লাহর কাছে আমলনামায় বা মিজানে ১৫০০ সাওয়াব হবে। দ্বিতীয়ত, বিছানায় শয়ন করার পরে ৩৪ বার ‘আল্লাহু আকবার’, ৩৩ বার ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ ও ৩৩ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ বলবে। এতে মুখে ১০০ বার ও মিজানে ১ হাজার বার হবে। রাসুল (সা.) আঙুলে গুনে গুনে তা দেখান। সাহাবিরা প্রশ্ন করেন, ‘এই দুইটি কর্ম সহজ হওয়া সত্ত্বেও পালনকারী কম কেন?’ তিনি উত্তরে বলেন, ‘কেউ শুয়ে পড়লে শয়তান এসে এগুলো বলার আগেই ঘুম পাড়িয়ে দেয়। সালাতের পরে এগুলো বলার আগেই তাকে তার বিভিন্ন কথা মনে করিয়ে দেয়।’ (আবু দাউদ, ইবনে হিব্বান, তারগিব)।
আয়াতুল কুরসি : বোখারি বর্ণিত হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি যে, কেউ রাতে বিছানায় শয়ন করার পরে আয়াতুল কুরসি পাঠ করলে সারা রাত আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁকে হেফাজত করা হবে এবং কোনো শয়তান তার কাছে আসতে পারবে না।
সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত : আবু মাসউদ (রা) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যদি কেউ রাতে সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করে তবে তা তার জন্য যথেষ্ট হবে।’ (বোখারি ও মুসলিম)।
সূরা কাফিরুন : নাওফাল আল-আশজায়ী (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বলেছেন, তুমি সূরা ‘কাফিরুন’ পড়ে ঘুমাবে, এ শিরক থেকে তোমার বিমুক্তি।’ (তিরমিজি, আবু দাউদ)।
সূরা এখলাস : আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) তাঁর সাহাবিদের বললেন, ‘তোমরা কি পারবে না রাতে কোরআনের এক-তৃতীয়াংশ তেলাওয়াত করতে? বিষয়টি তাদের কাছে কষ্টকর মনে হলো। তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমাদের মধ্যে কে-ই বা তা পারবে? তখন তিনি বলেন, কুল হুআল্লাহু আহাদ সূরাটি কোরআনের এক-তৃতীয়াংশ।’ আবু দারদা (রা.) থেকে একই অর্থে আরেকটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। (বোখারি ও মুসলিম)।
সূরা এখলাস, ফালাক ও নাস একত্রে (তিনবার) : দুই হাত একত্র করে এ সূরাগুলো পাঠ করে হাতে ফুঁ দিয়ে হাত দুইটি যথাসম্ভব শরীরের সর্বত্র বুলানো- এভাবে তিনবার করতে হবে। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি রাতে বিছানায় গমনের পরে তাঁর মোবারক দুইটি হাত একত্রিত করে তাতে ফুঁ দিতেন এবং তাতে উপরের তিনটি সূরা পাঠ করতেন। এরপর শরীরের যতটুকু স্থান সম্ভব দুই হাত দিয়ে মাসেহ করতেন। মাথা, মুখ ও শরীরের সামনের দিক থেকে শুরু করতেন। এভাবে তিনবার করতেন।’ (বোখারি)।
অজু অবস্থায় ঘুমাতে যাওয়া : ঘুমের জন্য অজু অবস্থায় শয়ন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ মাসনুন ইবাদত। রাসুলুল্লাহ (সা.) এজন্য বিশেষভাবে উৎসাহ প্রদান করেছেন এবং এ জন্য বিশেষ দুইটি পুরস্কারের সুসংবাদ প্রদান করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের দেহগুলোকে পবিত্র রাখবে, আল্লাহ তোমাদের পবিত্র করুন। যদি কোনো বান্দা অজু অবস্থয় ঘুমান, তবে তার পোশাকের মধ্যে একজন ফেরেশতা শুয়ে থাকেন। রাতে যখনই এ ব্যক্তি নড়াচড়া করে তখনই এ ফেরেশতা বলেন, ‘হে আল্লাহ আপনি এ ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিন, কারণ সে অজু অবস্থায় ঘুমিয়েছে।’ (ইবনে হিব্বান, তাবারানি, সহিহুত তারগিব)। অন্য হাদিসে মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে কোনো মুসলিম যদি অজু অবস্থায় (আল্লাহর জিকরের ওপর) ঘুমায়, এরপর রাতে কোনো সময় হঠাৎ তার ঘুম ভেঙে যায় এবং সে (ওই অবস্থায় শুয়ে শুয়ে) আল্লাহর কাছে তার জাগতিক বা পারলৌকিক কোনো কল্যাণ কামনা করে তবে আল্লাহ তাকে তার পার্থিত বস্তু দেবেনই।’ (আবু দাউদ, সহিহ তারগিব, নাসাঈ)। ঘুমের আগে অজু করে সম্ভব হলে ২/৪ রাকাত সালাত আদায় করে ঘুমাবেন। বিশেষত যারা শেষ রাতে তাহাজ্জুদের জন্য উঠতে পারবেন না বলে ভয় পাবেন, তারা ঘুমানোর আগে ২/৪ রাকাত ‘কিয়ামুল্লাইল’ আদায় করে ঘুমাবেন।
No comments:
Post a Comment